আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চীনের শেনচেন গিয়ে পৃথিবী দেখুন(Window of the World)

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

চীনের শেনচেন গিয়ে পৃথিবী দেখুন(Window of the World) শেনচেন কে বলা হয় Window of the World । চীনের দক্ষিনাঞ্চলীয় একটি প্রদেশের নাম গুয়াংন্ডং। গুয়াংনডং এর একটি শহরের নাম শেনচেন। মাত্র ৪০ বছর পুর্বে এই অঞ্চলটি ছিল একটা জেলে পল্লী। সেই জেলে পল্লী আজ বিশ্ববাসীর এক অন্যতম আকর্ষন।

প্রায় ২০০০ বর্গ কিঃমিঃ আয়তনের এবং ৪’৬৭ মিলিয়ন লোক সংখ্যার শেনচেন চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্যাস্ততম শিল্প এবং বন্দর নগরী সাংহাইয়ের পরেই এর স্থান। চীনের এক একটা প্রদেশ এক এক কারনে বিখ্যাত। সরকারের পরিকল্পিত রাস্ট্রীয় উন্নয়নের জন্যই এমনটি হয়েছে। আমাদের দেশের মত চীনের সব কিছুই রাজধানী কেন্দ্রীক নয়।

"ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০১০" দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম- শেনচেন বেড়িয়ে যাব। এবার বাংলাদেশ থেকে আমরা সমমনা ১৪ জন ব্যাবসায়ী বন্ধু একসাথে সাংহাইতে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ফেয়ার গিয়েছিলাম। সমায়াভাবে ৪বন্ধু ফিরে যান ঢাকায়। আমরা ১০ জন -বেড়াতে যাচ্ছি শেনচেন Window of the World দেখতে। আমি এবং অশোক ছারা অন্য আট বন্ধুই এই সিটিতে এই প্রথম এসেছেন।

ব্যক্তি উদ্যোগে চায়না গেলে আমরা অনেকেই শরণাপন্ন হই ঢাকার ছেলে শাহিন মল্লিকের। প্রচন্ড পরিশ্রমী এবং দৃঢ় প্রত্যই ৩৪/৩৫ বতসরের শাহিন মল্লিক অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এখন চায়নায় থীতু হয়েছে। পুরোনো ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং’এ অনার্স পরীক্ষার পর উচ্চাভিলাশী কয়েক বন্ধুর সাথে ১৯৯৭ সনে অবৈধ ভাবে জাপান যাবার আশায় ৯/১০ লক্ষ টাকা খরচ করে দালালের হাত ধরে হংকং পৌঁছে সর্বস্ব হারায়। তারপর শুরু হয় শাহিন মল্লিকের বেঁচে থাকার লড়াই... কখনো হংকং, কখনো চায়না করতে করতে শেষ পর্যন্ত চায়নাতে থীতু হয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল এক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান! বর্তমানে বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীদের ইন্টারপ্রেনার(দোভাষী), গাইড এবং গেস্ট হাউজ/হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যাবসার ছোট খাট এক সাম্রাজ্য। শাহিন মল্লিক সম্পর্কে আমি আলাদা একটি পোস্ট দেবো-যা পড়ে অনেক শিক্ষিত তরুন নিজেদের আত্মপ্রত্যয়ী করে জীবন চলার পথ খুঁজে নিতে মানষিক সহায়তা পাবেন।

সাংহাই থেকে আমরা যথা সময়ে Shenzhen Baoan International Airport পৌঁছি। Shenzhen Baoan International Airport অনেক বড় এয়ারপোর্ট। আমাদের জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের চাইতে অনেক বড়। প্রতি দিন চীনের ৫০ টি সিটির সাথে ৮০ টি ডমেস্টিক ফ্লাইট এবং ৫৬ টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এই বিমান বন্দর থেকে পরিচালিত হয়। আমাদের সুবিধার্থে শাহিন মল্লিক আগেই আমাদের জন্য বিমান বন্দরে অপেক্ষা করছিল।

এয়ারপোর্ট থেকে শেনচেন শহরের দুরত্ব ৩২ কিঃ মিঃ। আমাদের জন্য পুর্ব নির্ধারিত একটি মাইক্রোবাসে আমরা সবাই আমাদের জন্য নির্দিস্ট হোটেলে পৌঁছি। আমরা ২ দিন শেনচেন অবস্থান করব। আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় Sunshine Hotel এ। এই হোটেলটি চীনা মালিকানাধীন একটি থ্রী স্টার হোটেল।

আমাদের জন্য দেশীয় খাবারের ব্যবস্থা শাহিন মল্লিক নিজ দ্বায়িত্বে করেছিলেন সেই সংগে আমাদেরকে শেনচেন ঘুড়িয়ে দেখাবার যাবতীয় ব্যবস্থা। শেনচেন’এ আমাদের বেড়ানোর/ দেখানোর প্যাকেজ করা হয় যথাক্রমে- Window of the World , Splendid China , China Folk Culture Village এবং Happy Valley. বিমান বন্দর থেকে মুল শহরের দিকে যাবার পথে আকাশ ছোঁয়া নয়নাভিরাম অট্টালিকার সারি দেখে, ঝকঝকে তকতকে সড়কে যানবাহন চলাচলের শৃংখলা দেখে আমাদের নিজ দেশের অপরিকল্পিত শহরের দুর্দশার কথা শরণ / তুলনা করে বিষণ্ণ হই। মনে মনে ভাবি-একসময়ের সমাজতান্ত্রিক চীনের মাটিতে কি অপুর্ব সুন্দর পুঁজিবাদের সফল চাষাবাদ হয়েছে! বলা হয়ে থাকে হংকং এর পুঁজিবাদী(যদিও চায়নীজরা এখনো স্বীকার করেনা-তারা পুঁজিবাদের দিকে ধাবমান। বরং তারা নিজেদেরকে "চায়নীজ সমাজতান্ত্রিক" মনে করে) উন্নয়নে উতসাহিত হয়ে শেনচেনেও তেমনই অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শেনচেনে ২০০ মিটারের বেশী উচ্চতার ভবনের সংখ্যা বর্তমানে ২৫ টি।

এর মধ্যে "শুন হিং স্কয়ার" যা বিশ্বে উচ্চতম ভবনগুলোর মধ্যে ৯ নম্বর স্থানে আছে। আরো অনেকগুলো সুপারটল ভবন নির্মাণের পথে। ৪৩৯ মিটার উচ্চতার কিং কি ফিনান্স টাওয়ারের নির্মাণ কাজ আগামী বছরের প্রথম মাসেই শেষ হবে। চীনের বেশীর ভাগ হাইটেক কোম্পানীগুলোর প্রধান কার্যালয় শেনচেনে অবস্থিত। প্রথম দিন আমরা Window of the World দেখতে যাই।

Window of the World শেনচেন সিটির মধ্যে ছোট্ট একটা পৃথিবী। পৃথিবীর যাবতীয় ঐতিহাসিক এবং বিখ্যাত দর্শনীয় জিনিষগুলোর সমাহার এখানে ঘটানো হয়েছে ছোট করে। এখানে এলেই আপনার সামনে উন্মোচিত হবে বিশ্বে তাবত বিস্ময়! কী নেই এখানে? আগ্রার তাজমহল, ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ার, প্যালেস ভার্সেলিস, ইতালীর লিয়ানিং টাওয়ার অব পিস, পিজা ডেলা সিংনোরিয়া, নেদারল্যান্ডের উইন্ডো মিল, মস্কোর ওয়াল য়্যন্ড ক্লক টাওয়ার, স্পেনের কোর্ট অব দ্যা লায়ন্স, আলহামারা কম্পলেক্স, ইতালীর পিয়াজা ডেল পোপোলো, সেন্ট মার্কস পিয়াজা, ভ্যাটিকান সিটি: সুইজারল্যান্ডের ম্যাটারহর্ন মাউন্টেন, যুক্ত রাজ্যের প্যালেস অব ওয়েস্টমিনিস্টার, বাকিংহাম প্যালেস, লন্ডনের টাওয়ার ব্রীজ, থাইল্যান্ডের বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির, ইন্দোনেশিয়ার বরোবুদর, কম্বোডিয়ার য়্যংকর ভাট, মিয়ানমারের সুইডাগন প্যাগোডা, জাপানের মাউন্ট ফুজি, অস্ট্রেলিয়ার অপেরা হাউজ, মিসরের পিরামিড, কেনিয়ার আইভরি গেট, সাফারি পার্ক, আমেরিকার ডিজনীল্যান্ড, হোয়াইট হাউস, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, নাইন ইলেভেন ট্রাডেজীর আগেরকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ ম্যানহাটান, মেক্সিকোর গ্লোবস, কানাডার নায়গ্রা জলপ্রপাত-এমনকি আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন- সবই আছে এখানে। ৪৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে-এধরনের বিখ্যাত ১৩০ টি বিস্ময়কর স্থান ও স্থাপনার রেপলিকা। মুল আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ৩২৪ মিটার।

কিন্তু শেনচেনের উইন্ডো অব ওয়ার্ল্ডের আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ১০৮ মিটার হলেও আইফেল টাওয়ারের সব কিছুই ছোট করে হলেও সম্পুর্ণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীর এই জানালাতে রয়েছে-বিশ্ব ইতিহাসের জন্ম থেকে বর্তমান প্রদর্শনী এবং সন্ধার পর তরুনীদের উদ্দাম নাচের প্যারিস নাইট এবং লেজার শো! শেনচেনে Window of the World, China Folk Culture Village বানানোর যথার্থ কারনের মধ্যে অন্যতম এখানকার চমতকার আবহাওয়া। এখানে শীত কালে সর্ব নিম্ন আবহাওয়া ১ ডিগ্রী এবং উষ্ণকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এখানকার এভারেজ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী। এই তাপমাত্রায় পৃথিবীর সব দেশের লোকেরাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।

আমরা ২য় দিন দেখতে যাই চায়নীজ ফোক কালচার ভিলেজ। প্রায় ৪ লক্ষ বর্গ মিটার যায়গা জুড়ে গড়ে তোলা ওই ভিলেজ বা গ্রাম হচ্ছে চায়নার মডেল ২৪ টি গ্রামের সমাহার। যেখানে নিয়মিত চীনের ৫৬ টি নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনের নানান প্রতিচ্ছবি উপ্সথাপন করা হয়। শেনচেনের চায়নীজ ফোক কালচার ভিলেজ গেলেই উপলব্ধি করা যাবে বৃহত্তর চীনের বৈচিত্রময় নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর সমগ্র সাংস্কৃতিক জীবনধারা। চীনা জীবন ধারা প্রত্যক্ষ করতে চাইলে শুধু মাত্র শেনচেন চায়নীজ ফোক কালচার ভিলেজ দেখাই যথেস্ট।

এই ভিলেজের একপ্রান্তে একটি মঙ্গোলীয়ান রেস্টুরেন্ট আছে-যেখানে চীনা মুসলমান শেফদের হাতে "হালাল খাবার" রান্নার এবং পরিবেশনের সুব্যবস্থা আছে। এই রেস্টুরেন্টের বৈশিস্ট হলো-ছোট ছোট তাঁবুর ভিতরে ডিনারের ব্যবস্থা। খাবার পরিবেশন করে মংগোলীয়ান ঐতিয্যবাহি পোষাক পরে চীনা সুন্দরী তরুনীরা। জ্যোতস্না প্লাবিত রাতের আলো আধারিতে আমরা নানরুটি, ভেড়ার রোস্ট এবং সালাদ দিয়ে ডিনার করি। (আমরা শেনচেন থেকে চলে যাই চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের রাজধানী বিশ্বব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত উরুমচিতে।

সেখানে গিয়ে আমরা দেখেছি উইঘুর মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।