আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাঁস পালন করে তিন যুবক কোটিপতি!

মা বাবার সেবা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত

পাবনা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দুলাই ইউনিয়ন। ইউনিয়নের চারপাশে রয়েছে বিশাল বিল। এর নাম গাজনার বিল। এই বিল এলাকার তিন বেকার যুবক এক অবাস্তবকে বাস্তব গল্পে রূপ দিয়েছেন। এখানে তারা শুধু হাঁস পালন করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

তাও আবার মাত্র দুই বছরে। বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও এটিই এখন সত্য। সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামের ৩ যুবক মোহাম্মদ ফিরোজ (২৫), গুলজার হোসেন লাল (২৩) এবং আবদুল আওয়াল (২৪) ২০০১ সালে দুলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় তিনজনই ইংরেজিতে ফেল করেন। হতাশা আর লজ্জায় তিন বন্ধু পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

কিন্তু বিদেশ যাওয়ার সব টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন তারা। এতে হতাশা তাদের আরও ঘিরে ধরে। একদিকে পড়া লেখা বন্ধ অন্যদিকে কোনো কাজকর্ম না পেয়ে পিতামাতার বোঝা হয়ে দাঁড়ান। সবাই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকে। তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

অবশেষে তিন বন্ধু ২০০৭ সালে ১৫ হাজার টাকা জোগাড় করেন। ব্যবসা করার জন্য একদিন বাজারে যান। কোনো ব্যবসার পথ না পেয়ে দুশ' হাঁস কিনে বাড়ি ফেরেন। এতে পরিবারের লোকজন তাদের আরও তিরস্কার করেন। কারও কথায় কান না দিয়ে হাঁসগুলো পালাক্রমে তিন বন্ধু গাজনার বিলে চড়াতে থাকেন।

কিছুদিন পর হাঁসগুলো প্রতিদিন ১৯০টি করে ডিম দিতে থাকে। ৬ মাসের ব্যবধানে পালনের খরচ বাদে তারা আয় করেন ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা ব্যয় না করে পরের মাসে আরও ৮শ' হাঁস কিনে খামার সল্ফপ্রসারণ করেন। খামারের নাম দেন রাজলক্ষ্মী হাঁস হ্যাচারি। এ সময় তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস জন্ম হয়।

শুরু হয় নিজেদের খুঁজে পাওয়ার লড়াই। ২০০৮ সালের শেষের দিকে ১ হাজার হাঁস থেকে তাদের আয় হয় ৮ লাখ টাকা। এই টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন বিশাল হাঁস হ্যাচারি। অবশিষ্ট ৫ লাখ টাকা দিয়ে আরও ২ হাজার হাঁসের বাচ্চা কেনেন। বর্তমানে তাদের হ্যাচারিতে মোট ৩ হাজার হাঁস রয়েছে।

সেই তিন বেকার যুবক এখন ডিমের মহাজন। তাদের হ্যাচারিতে এখন ৮ জন বেতনভুক্ত কর্মচারী কাজ করেন। দলে দলে ভাগ হয়ে তারা বিলে হাঁস চড়াচ্ছে। বর্তমানে হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। ৮/১০ দিনের মধ্যে প্রতিদিন ২ হাজার ৮শ' করে ডিম দিবে, যা থেকে তাদের আয় হবে অর্ধ কোটি টাকা।

হ্যাচারি মালিক মোহাম্মদ ফিরোজ সমকালকে জানান, কোনো মহামারী রোগে আক্রান্ত না হলে ২০১১ সালে তারা কোটি টাকার মালিক হবেন। তিনি বলেন, লেখাপড়া করে শুধু চাকরির অপেক্ষায় থাকা উচিত নয়। কারণ আমাদের আয়ের সঙ্গে কখনও চাকরিজীবীর আয়ের তুলনা হয় না। এ ছাড়া লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশ যাওয়ার চেয়ে দেশেই অনেক আয় করা সম্ভব। রাজলক্ষ্মী হ্যাচারির ডিম এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা।

প্রতিটি হাঁস ৩৬৫ দিনে ৩০০টি করে ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা দরে। অর্থাৎ এক একটি হাঁস বছরে ১ হাজার ৮শ' টাকার ডিম দেয়। ডিম দেওয়া শেষে সেই হাঁস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। হ্যাচারির মালিক তিন যুবক সমকালকে জানান, এসব হাঁস পালনে কোনো অতিরিক্ত খাবার দিতে হয় না।

বিলের শামুক খেয়ে তারা বেঁচে থাকে। এছাড়া এসব হাঁসের তেমন কোনো রোগবালাই হয় না। শুধু মাঝে মাঝে ভ্যাকসিন দিতে হয়। কিন্তু তারা অভিযোগ করেন, তাদের এত বড় সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও সরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা সহযোগিতা করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট অফিসে গেলে তাদের কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না।

সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা দেশের শ্রেষ্ঠ ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবেন বলে দাবি করেন। http://www.shamokal.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।