আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমদানি ব্যয় কমেছে প্রথমবারের মতো

এতোদিন রপ্তানি আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আমদানি ব্যয়। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও আমদানি ব্যয় কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশের মতো।
সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যয় কমলেও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। তবে অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখতের আশংকা, শিল্পের কাঁচামালের আমদানি কমায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৩৯৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে।

আর ২০১১-১২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল তিন হাজার ৫৫১ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পণ্য।
এই হিসাবে গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে আমদানি ব্যয় কমেছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
২০১১-১২ অর্থবছরে এই ব্যয় বেড়েছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১০-১১ বেড়েছিল ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) ও গম ছাড়া অন্য সব পণ্যেরই আমদানি কমেছে।

কমেছে জ্বালানি তেল আমদানিও।
২০১২-১৩ অর্থবছরে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর গম আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশের মতো।
অন্যদিকে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি কমেছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ খাতে এলসি খোলার পরিমাণ ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছিল।


শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য খাতেও আমদানি ব্যয় কমেছে।  
আমদানি ব্যয় কমায় বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স) উদ্বৃত্তাবস্থা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে ২৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে ঘাটতি ছিল ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর তার আগের অর্থবছরে (২০১০-১১) ঘাটতি ছিল ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।


আমদনি ব্যয় কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গভর্নর আতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়ায় খাদ্য আমদানি অনেক কমে এসেছে। গত কয়েক বছর বাম্পার ফলনের কারণে বিদেশ থেকে খাদ্য কিনতে হয়নি। ফলে আমদানি ব্যয় কমেছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমাও আমদানি ব্যয় কমে আসার অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন।
“পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

সব মিলিয়ে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ”
রিজার্ভের এই অর্থ দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি বিল মেটানো সম্ভব বলে আতিউর রহমান জানান।
তিনি বলেন, “সামগ্রিক আমদানি ব্যয় কমলেও ক্যাপিটাল মেশিনারিজের আমদানি বেড়েছে। এটা ভালো দিক। শিল্প উৎপাদন বাড়বে।

অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ”
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, “এ কথা ঠিক যে, অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ক্যাপিটাল মেশিনারিজের আমদানি বেড়েছে। এটা হয়েছে মূলত ডলারের দর কমে যাওয়ার কারণে। ”
টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৮৫ টাকায় উঠেছিল। তা এখন ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সায় স্থির হয়েছে।


ডলারের বর্তমান বিনিময় হারে যন্ত্রপাতি আমদানির খরচ তুলনামূলকভাবে কম পড়ছে- এ বিষয়টি হিসাব করেই উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতে শিল্প স্থাপনের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খুলছেন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতের অন্যান্য সমস্যার কারণে উদ্যোক্তারা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। তবে তারা জানেন, এ সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। নির্বাচনের পর অনুকূল পরিবেশ সৃস্টি হবে- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। ”
তখন ডলারের দর বেড়ে গেলেও যাতে যন্ত্রপাতি আমদানিতে লোকসানে পড়তে না হয়- সে বিষয়টি হিসাব করেই উদ্যোক্তারা এখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করছেন এই গবেষক।

 
এতে ভবিষ্যতে দেশে শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশা থাকলেও শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি কমায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন জায়েদ বখত।
তার মতে, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন নাও হতে পারে।
গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেকর্ড ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৭ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.