আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চালের নামে পপি বীজ আমদানি

মারাত্মক মাদকদ্রব্য হেরোইন, মরফিন ও আফিম চাষের জন্য বাংলাদেশে আসছে নিষিদ্ধ পপি বীজ। এর প্রমাণ মিলেছে আমদানি নিষিদ্ধ ২৪ হাজার কেজি পপি বীজ আটকের ঘটনায়। ঢাকার কমলাপুর আইসিডি কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় উন্নতমানের চালের চালানে ধরা পড়েছে নিষিদ্ধ পপি বীজ আমদানির চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ঢাকার একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান থেকে বাসমতি চাল আমদানির নামে পপি বীজের চালান খালাসের চেষ্টা করে ধরা পড়ে; কিন্তু পরে তা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে সুকৌশলে। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে বাসমতি চালের কনটেইনারে ২৪ হাজার কেজি পপি বীজ আমদানির ঘটনাটি ধরা পড়লেও এখনও তা রয়ে গেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অগোচরে।

চালানটি বাজেয়াপ্ত না করে নতুনভাবে খালাস করতে কাস্টম হাউস থেকে গায়েব করা হয় শুল্কায়ন সংক্রান্ত মূল নথি; কিন্তু এজন্য সংশ্লিষ্ট কাউকেই শাস্তি পেতে হয়নি। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। প্রায় ১০ মাস ধরে আটক চালের ৩টি কনটেইনার জরুরি ও পচনশীল পণ্য হিসেবে খালাস নেয়ার জন্য শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তদবির। সরকারের একাধিক মন্ত্রী চালান খালাসে তদবির করেছেন বলে স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন মন্ত্রী লিখিত সুপারিশ করেছেন যাতে দ্রুত চালের ওই চালানটি খালাস দেয়া হয়; কিন্তু মূল নথি হারিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার কনটেইনারের ভিড়ে পোস্তদানার সেই চালানটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাটি শুনে অবাক হয়ে যান কমলাপুর আইসিডি কাস্টমস কমিশনার একেএম নুরুজ্জামান। তাৎক্ষণিকভাবে নথি খুঁজেও তিনি পাননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তের জন্য পপি চালান আটকের নথি ২৮ ডিসেম্বর অগ্রগামী করা হয় কমিশনারের কাছে; কিন্তু তার কাছে পৌঁছার আগেই নথি গায়েব হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষও বিষয়টি গোপন রাখে। এতো বড় ঘটনা নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামায়নি।

ঘটনার সত্যতা পেয়ে গতকালই কাস্টমস কমিশনার অভিযুক্ত আমদানিকারক এবি এন্টারপ্রাইজ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মিনার এজেন্সিজের সব পণ্য চালান খালাসে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। একই সাথে কনটেইনার খুঁজে বের করে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ তা ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন। কমিশনার জানান, যদি চালানটির নথি খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং সংরক্ষণকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, আমার কাছে এমন কোনো নথি আদৌ আসেনি। আপনার কাছেই প্রথম বিষয়টি জানলাম।

তবে চাল আমদানির চালানটি খালাসে তদবির ছিলো বলে তিনি স্বীকার করেন। চালের নামে যে নিষিদ্ধ পপি বীজ পাওয়া গেছে, এ ঘটনাও তাকে জানানো হয়নি। এখন দ্রুত আইনানুগভাবে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বর্তমান আমদানিনীতিতে পপি সিড বা কাঁচা পোস্তদানা আমদানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এতে বলা হয়েছে, মশলা হিসেবে বা অন্য কোনোভাবেও কাঁচা পোস্তদানা আমদানিযোগ্য হবে না।

মরফিন, আফিম ও হেরোইন তৈরির জন্য পপি চাষ ছাড়াও এ বীজ উন্নতমানের মাদকসহ ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এনার্জি ড্রিংকস তৈরিতেও এর ব্যবহার হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে পপি চাষ বা মাদক তৈরিতে ব্যবহার হওয়ায় পপি বীজ আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের ২০০৯-১২ আমদানিনীতি আদেশে সব ধরনের পপি বীজ বা তাজা পোস্তদানা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়; কিন্তু অবাক করা বিষয় হলেও সত্য, পাকিস্তান থেকে চালের আড়ালে অবাধে আসছে এ নিষিদ্ধ পণ্যটি। এ ধরনের একাধিক চালান খালাস হয়ে যাওয়ার পর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এ ধরনের একটি চালান আটক করেছে ঢাকার কমলাপুরস্থ আইসিডি কাস্টম।

সম্পূর্ণ শূন্য শুল্কে আমদানিকারক পাকিস্তান থেকে সমুদ্রপথে চাল আমদানির ২৮ হাজার ৬২০ কেজি বাসমতি চালের ঘোষণা দেয়। আমদানিকারকের পক্ষে বিল অব এন্ট্রি জমা দেয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মিনার এজেন্সিজ। দ্রুত চালানটি খালাস নেয়ার প্রাক্কালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কায়িক পরীক্ষায় ৩টি কনটেইনারে চাল পাওয়া যায় মাত্র ৫শ কেজি। বাকি পণ্য চাল না হওয়ায় রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা যায়, তা মাদক তৈরি ও উৎপাদনের কাঁচামাল পপি বীজ। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে চালানটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করার পর সুকৌশলে এর মূল নথি গায়েব করে ফেলে আমদানিকারক চক্রটি।

আর এতে বিপাকে পড়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী আমদানি চালানটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার পর তা ধ্বংস করতে হবে; কিন্তু ১০ মাস অতিবাহিত হতে চললেও সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। হাজার হাজার কনটেইনারের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া চালানটি উদ্ধার করা কিছুটা দুঃসাধ্য। কিন্তু আমদানিকারকরা থেমে নেই। পাকিস্তানের সরবরাহকারীর ওপর দায় চাপিয়ে পণ্য চালান খালাসে রাজনৈতিক তদবির শুরু হয়েছে।

আমদানিকারকের লিখিত আবেদনে মন্ত্রীর সুপারিশ পেয়ে বিব্রত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।