আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানুষের প্রথম ঘর: পাহাড়ের গুহা (পর্ব ০৫)

ছোটবেলায় যখন নানা ধরণের বই পড়তাম, নানা অজানার প্রতি কৌতুহলী হোতাম, মনে হত এই জীবনটা কতই না সুন্দর! জীবনের এই পর্যায়ে এসেও মনে হয়, ঐ জীবনটাই সুন্দর আর শান্তির!!

মজারব্যাপার হল সর্বপ্রাচীনকালের সেই ১০ লক্ষ বছর আগের উদাহরণ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্তও মানুষের সাথে পাহাড়ের গুহার সম্পর্ক বেশ গভীর। আমাদের কাছে বেশ তথ্যপ্রামাণ আছে যে প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন মানুষের ঘরবাড়ি ছিল না, যখন মানুষের কাছে ধাতু বলে কোন পদার্থ ছিল না, যখন পরিবহণের জন্য কোন চাকার ধারণা ছিল না, কেবল সেই সময়েই মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত না, বরং বর্তমান সময়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের জয় জয়কার সময়েও মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করছে। বিশেষত যুদ্ধের সময়ে অথবা বিভিন্ন বিপদকালীন সময়ে মানুষ আজও পাহাড়ের গুহায় বসবাস করছে। এসব উদাহরণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে জনবিচ্ছিন্ন করে দিলে বা জীবনের আশংকায় পড়লে মানুষেরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। পৃথিবীব্যাপি প্রচুর উদাহরণের মধ্যে কিছু উদাহরণ নিচে দেখাচ্ছি: রোমান সাম্রাজ্যের চরম মারামারি কাটাকাটির সময়টাতে অনেক মানুষ বর্তমান ফিলিস্তিনের ‘কুমরান’ এলাকার নিকটবর্তী অঞ্চলে মৃতসাগরের (ডেড সি) তীর ধরের পড়ে থাকা ১১টি গুহায় পালিয়ে বেচেছিল।

১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সালের সময়ের দিকে এগুলো আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছর এগুলো প্রায় কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষিত অবস্থায় পড়েছিল। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের আলাবাম্বা’র দে’সটো গুহামালার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই গুহাগুলোকে আমেরিকার আদিবাসী রেডইন্ডিয়ানরা সমাধীগৃহ হিসেবে ব্যাবহার করে আসছিল। ১৯২০ সালের গোলযোগের সময়টাতে এগুলোকে গুপ্তঘাটি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। একইভাবে সেইন্টলুইসের গুহাগুলোও ছিল পাতাল যোগাযোগের জন্য বহুল ব্যবহৃত গুপ্তস্থান।

আবার ১০০০ থেকে ১৩০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার ‘পুয়েবলো’ মানবগোষ্ঠির কথা উল্লেখ করা যায়। পুয়েবলো মানুষেরা ওখানকার খাড়া পাহাড়গুলোর নিচে গর্ত খুড়ে একটি গ্রাম তৈরি করে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছিল। ১৯৭০ এর দিকে ফিলিপাইনের কোতাবাতো’র নিকটে অনেকগুলো পাহাড়ের গুহায় এই এলাকার ‘তাসাদায়’ সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসতি স্থাপন করেছিল। বর্তমানে স্পেনের গ্রানাডা’র নিকটবর্তী ‘সাক্রোমন্তে’ গুহামালায় এই অঞ্চলের ‘গিতানো’ নামক সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০০০ মানুষ বসবাস করছে। এই গুহামালার মধ্যে এক কক্ষের ছোট ছোট স্থান থেকে শুরু করে বড় বড় গুহা মিলিয়ে প্রায় ২০০টির মত কক্ষে ‘গিতানো’ মানুষেরা তাদের গির্জা, বিদ্যালয়, গুদামঘর প্রভৃতি সহকারে বসবাস করছে।

মিশৌরি, সিসিলি, কাপাদকিয়া এবং স্পেনের অনেক পরিবারকে দেখা যায় তারা পাহাড়ের গুহার ভেতরে আধুনিক বাড়ি তৈরি করছে অথবা পুরুনো আবাসকে নতুন করে তৈরি করছে। এক্ষেত্রে তুরস্কের ‘কাপাদকিয়া’র কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজধানী আঙ্কারা থেকে নিকটবর্তী ও তুরস্কের মধ্যবর্তী অঞ্চল কাপাদকিয়া’র পর্যটনের সৌন্দর্য্য হিসেবে উচু উচু সূঁচালো পাহাড়গুলো খুবই বিখ্যাত। তবে এই পাহাড়গুলোকে ভেতরে ভেতরে কেটে শত শত বছর ধরে মানুষেরা বসবাস করে আসছে। এক একটা পাহাড়ের মধ্যে দোতলা বা তিনতলা পর্যন্ত ভবন করা হয়েছে।

দূর থেকে এগুলোকে ছোট ছোট পাখির বাসার মত মনে হলেও বাস্তবিক অর্থে এগুলো সমতলে তৈরি করা চারতলা বা পাঁচতলা ভবন থেকেও বড় ও প্রশস্ত এবং এগুলোর প্রত্যেকটিতেই আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ঘুম, গোসল, পয়:প্রণালি ও বৈঠকখানা রয়েছে। কাপাদকিয়ার এই ঘরগুলো উত্তরাধিকার মালিকানাও স্বীকৃত। বর্তমান চীনে প্রায় ৩ কোটি (৩০ মিলিয়ন) মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করছে। মজার ব্যাপার হলো চীনের এই ৩ কোটি মানুষ উপরে বর্ণিত মানুষদের মত কষ্ট, জীবনের ভয় বা সৌন্দর্য্যের জন্য বসবাস করছে না। এই গুহাগুলোতে মানুষ বসবাস করছে এই জন্য যে এগুলো শীতের সময়ে বেশ গরম এবং গরমের সময়ে খুব শীতল থাকে।

চীনের অনেক বিত্তশালী মানুষের কাছেই রাজধানীর সর্বাধুনিক সুবিধাসম্বলিত সুউচ্চ ভবনের চেয়ে ওসব পাহাড়ের গুহায় থাকাটা আরো বেশি আভিজাত্যের বলে বিবেচিত। (চলবে)। প্রথম পর্বের লিংক: Click This Link দ্বিতীয় পর্বের লিংক: Click This Link তৃতীয় পর্বের লিংক: Click This Link চতুর্থ পর্বের লিংক: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.