আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সারাক্ষণ হাতে চাই গানের বাকশো যেতে যেতে গান গাবো তাই.......

নভেরা হোসেন

..১৯৯০ সালের এপ্রিল মাস। লিটল ম্যাগাজিন, ফ্রানৎস কাফকা, সুবিমল মিশ্র, ঢাকার শিল্প-সাহিত্য-এসব কিছুর সাথে বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে কবি শামীম কবীরের সাথে পরিচয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শামীমের সংবেদনশীল চরিত্র আর তীক্ষ্ম মেধার পরিচয় পেলাম। ধনেশ পাখির মতো গম্ভীর অথচ ভেতরে ভেতরে অশান্ত কবির অবয়ব। সেঁকোবিষ আর পোড়া মদ দিয়ে তৈরি যার তারুণ্য;করতোয়ার স্রোতহীন জলের সাথে অন্তর্গত বাক্যালাপের পর নিরন্তর সে গেঁথে চলেছিল একটার পর একটা কবিতার ব্রীজ।

একমুখী সে ব্রীজে ভরশূন্য পরিভ্রমণ। নিজস্বতায় ঋদ্ধ নাগরিক ব্যক্তির- নৈঃসঙ্গ্য, যন্ত্রণা, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি আর বিচ্ছিন্নতাবোধের চর্মহীন কঙ্কাল যেন শামীমের কবিতা। তবে লোকজ ও স্থানিক উপাদান তাঁর কবিতায় অনুষঙ্গ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। তিরিশের কবিদের ধারাবাহিকতায় বাংলা কবিতায় আধুনিক নিঃসঙ্গ মানুষের যে নৈর্ব্যক্তিক উপস্থিতি; শামীম কবিতায় তারই ব্যবচ্ছেদ করেছেন মর্গের দমবদ্ধ ঘরে। সাড়ে চব্বিশ বছরের স্বল্পায়ু জীবনের প্রায় অনেকটা সময়জুড়ে কাটিয়েছেন কবিতার অনুষঙ্গে।

“বিনিদ্র লাল কালো অনেকগুলো চোখ ফুটে চেয়ে আছে নলাকার কাঠ থেকে”-এই ছিল তাঁর দেখবার যন্ত্র। জীবনের ভেতরে থেকে দর্শক হয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ শেষে অরো একটি চাঁদের দেখা পেয়েছিলেন শামীম। আর সে অভিযাত্রায় চান্দ্র ড্রাগনের শ্বাসে ঘাড় পুড়ে শক্ত হয়ে গেল। অতর্কিত একটি পিছল কাঁখ তাঁকে বহন করে নিয়ে যায় যুদ্ধের বাইরে- যে গর্তে তলা নেই তার। জ্ঞানী কবরের স্কন্ধে চ’রে তাঁকে বলতে দেখা যায়-“কাঁদে বালিহাঁস/কাঁদে উঁচু চিল/ কাঁদে মধ্যবর্তিনীরা আর সবুজ ফাঙ্গাস/ আমি জানিনা আমি কী খুঁজি/ আমি ক্যানো যে কাঁদি না।

” কখনও আবার তাঁকে লিখতে দেখি-“তোমার বিপুল গড়নের মধ্যে কোনোখানে এক টুকরো জটিল উল্লাস আছে তার স্পর্শে বদলে যায় প্রভাতের ঘ্রাণ”-এরকম সব আপ্ত বাক্য। ঢাকায় আশির দশকে শুরু হওয়া লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের কবিতায় শামীম বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে লিখে গেছেন। ঔপনিবেশিক প্রাতিষ্ঠানিকতা ও আগ্র্রাসী, শোষণধর্মী কাঠামোর প্রতি শামীমের নঞর্থকতা শুধুমাত্র লেখার মধ্যে প্রকাশিত হয়নি; তাঁর জীবন দর্শন ও আচরণেও তা প্রকাশ পেত। শামীমের ভেতরে বোহেমিয়ান সত্তার উপস্থিতি ছিল প্রবল। প্রচলিত ধর্ম, মূল্যবোধ, লৈঙ্গিক ও শ্রেণীগত রাজনীতি ইত্যাদির অসারতা, নির্মমতা, প্রাণহীন অস্তিত্ব তাঁকে বাধ্য করেছিল সকল ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক অবয়বের বাইরে থাকতে-যা হয়তো একজন সংবেদনশীল কবির সহজাত স্বভাব।

নব্বই থেকে চুরানব্বইয়ে ঢাকার সমসাময়িক তরুণ কবিদের সাথে লেখালেখি, তরল-কঠিন-বায়বীয় নানা ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পরিভ্রমণ কবিকে নিঃসঙ্গ করে তুলেছিল। তাঁর স্বেচ্ছা জীবন- প্রক্রিয়া, মনস্তত্ত্ব, কবিতার ধরণ অনেকটাই বোধগম্যতার বাইরে ছিল অনেকের কাছে এমনকী সাহিত্য পরিমন্ডলেও, যা এখনও অনেকটা রয়ে গেছে। তাঁর কবিতার আলোচনা মূলধারার সাহিত্যে খুব কমই দেখা যায়। কবিতায় পুরাতন, অন্তঃসারশূন্য চিন্তাকে আঘাত করে নতুন চিন্তা ও শব্দের ব্যবহার শামীমকে করে তুলেছিল স্বতন্ত্র, নিজস্ব স্টাইলে দক্ষ যা সমসাময়িককালোত্তীর্ণ। কবিতায় তাঁর প্রকাশভঙ্গি ছিল ব্যক্তিগত যে জন্য তাঁর পাঠকও মুষ্টিমেয় এবং বলা যায় পরবর্তী সময়ের ও নতুন ভাবনার পাঠকের জন্যই তৈরি হয়েছিল তাঁর কবিতা।

“হয়তো আমরা দুইজনই পৃথিবীতে সবুজ পাতাঅলা গিরিবাজ তৈ তৈ তৈ তৈ তৈ....”.এরকম সব বাক্য লেখার পর শামীম তৈরি করেছেন “ম্যান সাইজ আরশি কিংবা আত্মহত্যা বিষয়ে গল্প’র মতো কবিতা। দ্রষ্টব্য থেকে প্রকাশিত ’শামীম কবীর সমগ্র’-তে কবির অধিকাংশ কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালে শামীমের স্বেচ্ছামৃত্যু‘র দু'বছর পর। এই প্রকাশনার দীর্ঘ বিরতির পর অ্যাডর্ন পাবলিকেশন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করে নির্বাচিত কবিতাঃ শামীম কবীর। শামীম কবীর খুব ক্রুর মুখোশের মতো মনে হয় এই নাম। অতিকায় রূপালী তিমির মতো আমার মর্মমূলে এই খুব নিবিড় আপন নাম নিদ্রিত রেখেছে এক বিশুদ্ধ আগুন (তন্দ্রায় নিবে গ্যাছে তার সব তুখোড় মহিমা)-এই প্রিয় সশরীর নাম খুব দাঁতাল মাছির মতো অস্তিত্বের রৌদ্র কুঁরে খায় রাত্রিদিন; আষ্টেপৃষ্টে কাঁটাতার হোয়ে আছে-শামীম কবীর এই তুছতর নাম : ত্বকের নিচে খুব নিরুপায় এক আহত শিকারি নামের মোহন ফাঁকে জড়ায় তিমির।

ইতিহাসে অমরতা নেই। পরিবর্তে রাশি রাশি বুলেটের দক্ষ কারুকাজ করোটিতে, দগ্ধ লাশময় দীর্ঘ উপত্যকা আর নীলিমার বোঁটা থেকে অনর্গল—নির্ভার নিঃস্বদের জাতীয় সঙ্গীত ঝ’রে পড়ে; ক্যাবল কুচক্রী এই নাম—পাকা নিকারীর মতো রোয়েছে অমন য্যান, আমার সকল পথে অক্ষয় জালের ব্যুহ কোরেছে আরোপ কোন দুর্বার শপথে। এই ঘরে একজন কবি এই ঘরে একজন কবি আছে রক্তমাখা গালিচায় শুয়ে কুয়াশার মতো-তার নিদ্রামগ্ন ‘ভাসমান চোখে ধীর লয়ে শীর্ণ এক নদীর প্রতিমা ফ্যালে সুরময় ছায়া, শতাব্দীর শুদ্ধতম শিলাখণ্ড শিয়রে তার-ঠিক একগুঁয়ে ধীবরের মতো : ছিন্নভিন্ন-ছেড়াঁ জালে কৌশলে মরা নদীর শ্রোণী থেকে অপরাহ্নে রূপালী ইলিশ ছেঁকে নেবে; পচা ঘা’য়ে গোলাপের মধু ঢালা-অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে য্যান। ভীষণ অস্থির হাতে সে ক্যাবল বিষণ্ণ খুঁড়ে চলে শব্দের গোপন তিমির। কবির আঙুল থেকে অনর্গল রক্ত ঝরে আর মূর্তিবৎ অন্ধকারে প’ড়ে থাকে সে-ক্যামন মর্মন্তুদ অদৃশ্য বল্কলে ঢেকে অস্তিত্বের ক্ষত।

অবশ্য মাঝে মাঝে বদ্ধ ঘরময় গলিত বাতাস কাঁপে-অন্তর্গত সজীব গর্জনে : বাঁধা গৎ ভুলে গিয়ে-নিদ্রিত কবির বীণা সহসা কী প্রখর আদলে গড়ে সুরের প্রতিমা, অথচ খোলে না তার অন্ধ চক্ষুদ্বয়। । পৃথক পালঙ্কে (কবি আবুল হাসানকে নিবেদিত) তুমি ঠিক পলাতক নও। আমিতো এখনো দগ্ধ তৃণভূমি থেকে পাই উপবাসী ভেড়াদের বিক্ষুব্ধ শিং-সংঙ্কেত; তুমি কি উটের মতো জ্বলন্ত ক্যাকটাসের জমাট জল তরঙ্গ এখনো শুনতে চাও, নাকি ঘুমের ভেতরে শুয়ে-সমকামী আর হিজড়েদের ত্রুটিহীন ব্রক্ষ্মনৃত্য দেখবে? স্বপ্নভঙ্গ- জানি তুমি অক্লেশে সোয়ে নাও, তবু-রাত্রির মতো নিম্নগামী কালো জলে ভেসে যদি যায়-জননীর মতো অসহায়-বঙ্গ তোমার, তুমিও তো পারবে না ঠিক এড়াতে যন্ত্রণার সঙ্গ। তোমার মর্মমূলে নিসর্গের শীর্ণ লাশ সর্বদা কল্লোলিত শ্মশানের প্রেতী গান গায়, অরণ্য-মঞ্চে এক অন্ধ নায়ক রাতদিন তোমার অনুকরণে করে বৃক্ষপূজা,স্বপ্নাতঙ্কে নীল কিশোরীর বুকে মোহন তোমার বাঁশি বাজে-উন্মোচিত সত্য-সম জানি সব, হে-পাতক স্বর্গের বাগান পলাতক নও তুমি, নির্বাসিত হোয়ে আছো-স্বপ্নহীন পৃথক পালঙ্কে।

। জন্মান্ধের ভূমিকা জন্মাবধি অন্ধ হোয়ে আছি-সশরীর, এড়িয়ে ধুলোর মতো- গাঢ় রৌদ্রালোক দুইচোখে। বয়েসী বটের মূলে গুপ্ত ক্ষত দেখিনি তাকিয়ে কোনোদিন, অথবা আড়ালে থেকে নির্নিমেষ- জ্যোৎস্নালোভী নারীদের পাহাড়ী গ্রীবার ভাঁজে তীব্র অনুদিত গোলাপ শিশু; পরিবর্তে আমার চৈতন্য স্রোতে কি দগ্ধ শেষ নিঃশ্বাস ফেলে ছায়া হয় ইতস্তত ছিন্ন মেঘেরা; ঘুমন্ত ঈশ্বরের মতো, মনে হয়-বহুকাল প’ড়ে আছি জলশেষ শুকনো কাদায়, ত্বকের নিচেও আছেও খুব গাঢ় ছদ্মবেশ। আমার গুহার বার্ণিশে সবুজ সতেজ অর্কিড প্রতিদিন রৌদ্র খায়, বাতাসের উন্মুক্ত গালিচায় নির্ভেজাল প্রাচীন অশথের মতো ছড়ায় শেকড়; ক্যাবল স্মৃতিনষ্ট আফিমে আচ্ছন্ন রোয়েছি বোলে, গুহার আঁধারে আমি মায়াবী পিদিমে খুঁজি রৌদ্রের প্রতিমা, আর ক্রটিহীন জন্মান্ধতা হেতু-করি আরাধনা নর্তকীর : নির্ভুল মুদ্রায় নেচে যদি পাই সিঁড়ি। ।

অথচ আমার চোখ কেউ কেউ বলে বটে-এ আমার ভুল প্রেম। এ-রকম-খোঁড়া নর্তকীর সাথে রাস্তায় বেড়ানো, আশে-পাশে লক্ষ মানুষের খুব ঝাঁঝালো অবস্থিতি অগ্রাহ্য কোরে-খালা সড়কদ্বীপের ধারে পা ঝুলিয়ে বোসে তার তেজী নৃত্যকলাময়-সুতো ছেঁড়া অতীতের নিখাদ মলিন গন্ধ শোঁকা, খুব অন্যায়। তা-ছাড়া যে সুরের রেশ নেই বর্তমানে, নিহত যে পাখি, এ-তো ঢের বোকামী-তার দগ্ধ পালকের নিচে প্রচ্ছন্ন অবচেতনের ঘোরে প্রকৃত উষ্ণতা অন্বেষণ; এ-তো অতি স্বপ্নেরও বাড়া। অথচ আমার চোখে বিস্ফোরণের মতো লাল-নীল, ঈষৎ ম্লান জ্বলে ওঠে দীপ্র ঝাড়বাতি, চন্দ্রালোকি জলসাঘর- তবলায় তুফান, তুমুল নূপুর ধ্বনি, তন্ময় নহবত কানে বাজে অবশেষে-কুয়াশায় নর্তকীর হিল্লোলিত ঊরু, পদ্মের পাতার মতো পায়ের কাপন আর বক্ষ তোলে ঝড় আমি দেখি, আবার-খোঁড়া নর্তকীর পায়ে তীব্র নাচের শুরু। ।

একজন রৌদ্র [উৎসর্গ : নূর হোসেন] একজন রৌদ্র থেকে গাঢ় স্বরে শোনালো বিষণ্ণ শব্দাবলী-- আমার মৃত্যুর পর, এ-রকম রৌদ্র জেনো উঠবে না আর, ফুলে ঝ’রে যাবে, থেমে যাবে পাখিদের গান, প্রগাঢ় ছায়ার শীতে যাবে বনভূমি মাঠ ছেয়ে, শহরের সবকটা গলি উপগলি ভ’রে যাবে ব্যাঙের ছাতায় আর অনুর্বর পলি জ’মে যাবে শস্য ক্ষেতে; মধ্যরাত ভেদ কোরে কোনো সূর্যরঙ আর পারবে না বানাতে প্রতিমা সুন্দরের, বেবুশ্যার ঢঙ অবলা-মহলে জনপ্রিয় হবে খুব, হবে স্নিগ্ধতার বলি- -আমার মৃত্যুর পরে অনেকেই কোরবে বিলাপ; কী নিবিড় মানবিক বিলাপ ধ্বনিতে যাবে না নাভিমূল ছিঁড়ে স্তব্ধতার, যে ভাবে বিয়োয় শিশু গর্ভবতী নারী, সে-রকমই তিমির বিদারী হবে রৌদ্রহীনতার প্রতিবাদ : মুকুটের কিনার বেয়ে সম্রাটের নিশ্চিত লুটারে ধুলায়, বেজন্মা দেবগণ ঠিক জানি নির্বাসিত হবে-এই বোলে স’রে গ্যালো আরজন। । অনুসরণ একজন অবিকল আমার মতোন লোক আজ সারাদিন আমার সামান্য পিছে চলমান, যে রকম বিশ্বস্ত কুকুর যে দিকেই যাই আমি, এলেবেলে ঘুর পথে, খুব শব্দহীন পেছনে পেছনে সে-ও চলে; পার্কে, নদীর ধারে-শিষ্ট ময়ূর য্যান পেখম গোপন কোরে আমার পেছনে চলে উদাসীন পথিকের মতো। অকস্মাৎ পেছনে তাকালে দেখি, অল্পদূর আনমনে ধরাচ্ছে সিগার সে, অথবা কখনো খুব মিহিন রুমালে মোছে গরদানের ঘাম; বোঝে সে ক্যামন সুচতুর! বুঝি না, সে কী কারণে এমন নাছোড় চলে, এ-তার ক্যামন ব্যবহার : অবিকল আমার নকল কোরে মুখের গড়ন, দৃষ্টির খরতা আর জটদার চুলের বহর, বেশবাস- ক্যাবল ভিন্ন চলার প্রকৃতি তার; আমি চলি একা, আপন খেয়াল, আর সে আমার নিবিড় পেছনে ধায় জ্বলন্ত শ্বাসকোরে সযত্ন গোপনে, অদৃশ্য সঙ্গীন হাতে, নিজস্ব সন্ত্রাস। ।

প্রিয়তমাসু শান্ত হয়ে আসে মন তোর সাড়া পেলে কোথায় উত্তর আর কোথায় পশ্চিম মরিয়া গতিতে তোর দিন আর রাত্রিজোড়া বেনোমদ বিলি করে টেলিগ্রামে টেলিগ্রামে কণ্ঠনালী ছিঁড়ে নিলি কী ক’রে বা বল কেবল শ্লেষ্মার শব্দ ঘড়ঘড় করে আকণ্ঠ গানের পরে উপচে আসা তানের বাহারে মনে করো বিবাহের অশালীন জোড়া আমাদের কোথায় নিয়েছে আমি তাই শিশ্নহীন জলপুড়ে আগুন বানাই বিনিদ্র চিলের সাথে খ ভ্রমণ করি টিউশনি ফাঁকি দিয়ে জ্বরে ভয়ে যখন ঠক ঠক কাঁপি শান্ত হয়ে আসে মন খ্যাপা তোর সাড়া পেলে পেলে পেলে সিংহ ঋতু অচেনা লণ্ঠন থেকে ঠিকরে আসে গোপন আলোক ক্রমে ক্রমে অর্ধাচারী হয়ে ওঠে চতুর বিন্যাসে কতোকাল কেটে গ্যালো পৃথিবীর মৌল অন্ধকারে দিনান্তে মাতাল সব ফেরারীর হাতে কব্জা ক’রে অটল মেঝের নিচে তাদের সমস্ত ভার জমা কানগুলি উড়িতেছে বহুস্তর শব্দদের লোভে কট্টর স্বরের লোভে আর স্বপ্নে দেখি অবিকল উদর শোধনাগার জ্বলে যেখানে কেশর পুড়ে তৈরি হয় প্রত্যহের ঘুম জানি না কী ভুল থেকে শুরু হয় এই নিদ্রা তবে বর্ষায় আমল খোঁড়া সড়কের বেদনা অবধি রক্তস্রোত আজো আছে প্রহর কম্পিত করা সুরে হত লাল থাবার বঙ্কিম রেশ ঘোরে ফেরে ভেজা বারান্দায় আমাকে বিশ্বাস করো আমি কোনো অপর জানি না এই খেলা সেরে গেলে অন্য বহু অভিধা লাফায় আর আলোক সংবেদ ভেবে ভুল আস্তরণে মাথা কুটে এখন পাগলপারা স্রোতের বিপক্ষে লেনদেন অনেক লালার স্বাদ লেপ্টে আছে কমনীয় ত্বকে নখের চিহ্নের আঁচে উপত্যকা ঘুরে উঠে আসা একটি অচল মোহ ডিঙিয়ে কাতর সেই ত্বক সমস্ত সাধের বিনিময়ে শুধু প্রাণ ভিক্ষা করে সমস্ত সাধ্যের বিনিময়ে আজ প্রাণ ভিক্ষা করে সম্ভবত নৃশংসতা কেটে গ্যাছে মহুয়া প্রভাবে আঠালো বলয় এসে এঁটে বসে রাতজাগা ঘাড়ে এখন সমস্ত দেনা চুকে গেলে বড়ো ভালো হয় এখন গভীর আর অতীত লেহন করা চকিত ভুলের ক্ষমার অযোগ্য কথা ব্যথাতুর থাবাতে মিলায় জানি না কী ভুল থেকে শুরু হয় এই ঘুমঘোর আস্তে আস্তে সিংহপনা মিশে যায় অচেনা আভায় স্রোতে... স্যান্ড্রা! ফালি ফালি চাঁদ ভেসে যায় এবার জাল ফেলেছিলাম গলুইয়ে ব’সে তখন চাঁদ ছিলো না আমি আবিষ্কার করতে চেয়েছিলাম পানির জীবন ক্যামন নোনতা আর চ্যাপ্টা তার কোষতন্ত্র আর উল্লাস রাগে কী রকম থরথরিয়ে কাঁপে তার বাড় অথচ উঠে এলো ভাঙ্গাচোরা একটা দ্বীপের টুকরো টুকরো অঙ্গ রাশি আর তাদের ভেতর শক্ত হয়ে বসা একটা মৎস্য দম্পতির বাসা স্যান্ড্রা প্রিয় মম এই যাত্রায় আমাকে যেতে হবে বহুদূর প্রায় অসীমের কাছাকাছি চক্ষু কর্ণ জিহ্বা নাসিকা ত্বক আর সমুদয় অর্থ সাথে নিয়ে আর ঝিমাই হাঁটু গেড়ে রাতের পর রাত যেখানে ঢেউ ছিলো এখন সেখানে শুধুই জ্যোৎস্না সাঁতার কেটে কেটে ক্লান্ত হয় স্রোতের ওপর জাল থেকে একটা একটা করে খুলে সমস্ত দ্বীপের টুকেরা ছুঁড়ে ফেল্লাম স্রোতে কিন্তু ততোক্ষণে দম আটকে মরে গ্যাছে মাছ দুটো এতো অনায়াসে তারা মরে গ্যালো হে স্রোতের উপর ভেসে থাকা ফালি ফালি চাঁদ তোমরা উড়াল দাও আমাকে যে জেগে থাকতেই হবে এই জলকষ্ট নিয়ে এইখানে থামো ট্রেন এইখানে থামো ট্রেন মাঠের পাশেই একটু হিজলতলা একটু কাঁঠাল বন তারপর খেলা শেষে পঙ্গপাল গৃহে ফিরে যায় ধুলা মেখে একে একে ছুটে আসে স্টেশনেরা কিছুক্ষণ থেমে থাকে ফের ছোটে দূরে আবছা দ্যাখার কথা খালি জেগে জেগে থাকে দ্রুতষ্মান আগের স্টপেজে সোনাভান অবলা সংলাপ কী যে ভুল ঘোর লাগে কাহ্নু বাশি শুনে দুর্বল গাছের ডালে আমার যে প্রাণপাখি বাঁধা আহ আগাই পিছাই শুধু হ্নৎপিণ্ডে খুন্তি ছ্যাঁকা পুরান কাঁথার নক্সা কতো আর চক্ষেসয় জানালায় টিয়া ডাকে তীরন্দাজ কোন সে দর থেকে বুকে মারে বাণ আমারচোখের জলে বন্যা নামে বুঝি আমি কি ফ্যালামকী ছাই প্রাণসখা আমাকে পোছে না কতোজন আসে যায় হাট ভাঙে করল্লার লতাটাও কঞ্চিমাচা জড়িয়ে ধরেছে ওই কলাঝড়ে হাঁটে বুঝি কেউ মর ছাই আলতা গাই ওটা কী যে ভুল নিদ নাই গলায় শাদা নলা নামতে না চায় হায় প্রাণনাথ কোন বনে ঘোরে ঘরে শান্তি মনে নাই আমার যে প্রাণ বিষ কেউ জানলে সর্বনাশ হবে ওলো সই তোকে কই কাহ্নু প্রিয় এলে বলে দিস পোড়ামুখী কলস নিয়ে যমুনা গিয়েছে। যে কোনো বিষয়ে বেশ লেখা যায় (সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ স্মরণে) তা’হলে উদগ্র টিকি গোছগাছ বেড়ে যায় আর তারা পা- হারা-রা মৃত্যুর অবধি শুধু খাড়া হ’য়ে থাকে ইচ্ছা করি এই ফল-অন্য ফলে বিচিবান্ধা থাকে (ফলে) ধরে থাকে লম্বা চওড়া ফল ফল থেকে ফলনের অতীব ভিতর পানে প্রবজ্যার সাহারা কালীন এ বৃথাই পা-ধা-নি-সা অন্ড এঁকে কুসুমদানির মধ্যে সংকোচনে রেখে যেও এ বিষয়ে পরে কথা হবে অথচ এ জ্বালা কতো সুন্দরক সুন্দরক যে চ্যাট বিষয়ে কিছু বলা মানে আরেকবার আত্মহননতা আজানের মধ্যভাগে লিঙ্গ চ্যুত হলে? মালিনীকে জল তুলে দিতে হলে বাগানেই রাত্রপাত হবে কয়েকশো হাজার আর আরও একটি করাতের মধ্যে শুয়ে ঠ্যাং তুলে কে আবার গান গায় তবে সোমবারে গায়(তখন অনেক রাত যখন দুপুর) সৌরালোকে– মধ্যে মধ্যে ছিটকে আসা গোলার্ধগুলিই সাথে সাথে মিলবার সময় যখন তখন কেউ পা-হারার বন্ধনীতে রং নয় রং নয় রক্ত ঝরিতেছে নভেরা একদিন রাতে উপরোক্ত করাত দিয়ে পা কাটবার দৃশ্য স্বপ্নে দেখলাম তারপর জেগে উঠে জ্ঞান হাতড়ে পেলাম যে I have been bitten O the sickness of mine is a cosmic event. ফের বলি : অগ্রাহ্য করি না তবু তবে মালিনীকে জল তুলে দিতে হলে বাগানেই রাত্রপাত হবে যেহেতু পাদুকা আছে জেনে চলে যাই

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.