আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ প্লাস ও হতাশার গল্প।

আমার জীবনের স্মরণীয় সময় পার করেছি স্কুল জীবনে। আজ স্কুল জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করবোঃ আমার আব্বু ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন, সেই সুবাধে তার সাথে আমরা সারা দেশ চষে বেরিয়েছি, তার কারনে আমি বন্ধু পেয়েছি যেমন বিস্তর, হারিয়েছিও তেমনি, ঠিক দিপু নাম্বার টু ছবির দিপুর মত। । যেই স্কুলে এস এস সি দেই সেই স্কুলে এবং সেখানকার যে এলাকায় থেকেছি তা এখনো আমি প্রায় রাতে স্বপ্ন দেখি। আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন আমাদের এলাকায় মহামারির মত ক্রিকেট এর প্রচলন শুরু হয় যায়, তখন জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষ আর বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে।

পড়ালেখা বাদ দিয়ে তাই ক্রিকেট আমাদের ধ্যান- জ্ঞান হয়ে দাঁড়ালো। টানা দুইদিন কাজ করে আমরা জনা দশেক বালক পাশের ধানিখেত টাকে ক্রিকেট মাঠ এর রুপ দিলাম, টিফিনের পয়সা বাচিয়ে আমি ক্রিকেট ব্যাট কিনলাম,বল কিনলাম আর স্ট্যাম্প কিনার দরকার আমরা কোনকালেই অনুভব করিনি, গাছের ডালকে নির্ভাবনায় স্ট্যাম্প হিসেবে চালিয়ে দিতাম তখন । আমরা স্কুল থেকে বাসায় ফিরতাম বিকেল চারটায় তারপর নাকে-মুখে কিছু গুজে সবাই মাঠে নামতাম এবং যতক্ষণ চোখে বল দেখতাম ততক্ষন টানা খেলা চালিয়ে যেতাম। আর শুক্রবার সকাল ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত ম্যারাথন খেলা চলত। মানুষ বেশী হলে দুই দলে ভাগ করে খেলতাম আর কম হলে নাম্বারিং করে খেলা চলত।

ব্যাট বল আমার ছিল তাই স্বভাবতই আমি সবার আগে ব্যাটিং করতাম , ততদিনে আমাদের এই মাঠ এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে, সারাদিন কেউ না কেউ এই মাঠে খেলা চালিয়ে যেত। আমরা আশেপাশের এলাকার সাথে খেলা ধরতাম, ওদের ওইখানে একদিন খেলতে যেতাম আর ওরা একদিন আমাদের এইখানে খেলতে আসতো (তখন হোম আর আওয়ে ম্যাচ এর নাম জানা ছিলনা)। এই খেলাগুলোতে জেতা বা হারা আমাদের জন্য ভীষণ সম্মানের ছিল, কারন এই খেলা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হইত। আমি যেই বাসায় থাকতাম, সেই বাসার মালিকের ছেলে ছিল আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট, আমি যা করতাম তার অনেকটাই সে অন্ধভাবে অনুসরন করত, আমরা বাসার পাশের ছোট একটি ছায়াঘেরা জায়গা কেটে কুটে পরিস্কার করে নেই এবং এইখানেই যখন কেউ খেলত আসত না মানে ভর দুপুর বেলা যখন কাউকে পেতাম না তখন আমরা দুইজন ওইখানে খেলা চালিয়ে যেতাম। তখন আমার স্কুলের কিছু বন্ধু এলাকার উপজেলার মাঠে খেলতে বলছিল কিছুদিন ধরে, তো একদিন সময় নিয়ে গেলাম, গিয়ে দেখি এ এক এলাহি কারবার দুই দলে ভাগ করে টাকার বিনিময়ে খেলা হচ্ছে, আমার দুই চোখ চক চক করে উঠলো, উত্তেজনায় হাতে কিল দিয়া উঠলাম।

সেইখানে দেদারে টাকা কামাতে এবং খোয়াতে লাগলাম। সেই উপজেলার মাঠে আমরা ফুটবল, হকি, আর ব্যাডমিন্টন সহ আরও অনেক খেলা খেলেছি। আমাদের বাসার একটু দুরেই ছিল এক হিন্দু বাড়ি যার মালিক কয়েকবছর আগে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিল আর বাড়ি দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিল আরেক পরিবারকে তো আসল কথা হচ্ছে সেই বাড়িতে এমন কোন ফলের গাছ ছিলনা যে নেই, তাই আমরা বারোমাস সেই বাড়ির ফলমূল খেতাম। আম,জাম, কাঁঠাল, আনারস, জাম্বুরা, পেয়ারা, আমড়া, লিচু, ডাব, আরও কত কি!! সব খাইছি সবাই মিলে অথবা আমি আর ঐ বাড়ির মালিকের ছেলে দুইজনে মিলে অপারেশন চালাতাম। এইসব করতে করতে ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরিক্ষা দিয়া দিলাম এবং মোটামুটি ভাবে পাশ করে টেনে উঠলাম।

এ প্লাস পাইতে হবে নোটিশ জারি করে বাসা হইতে পড়ালেখার চরম চাপ দিতে লাগল আমার বাপ-মায়। আমি বুদ্ধি করিলাম যে এ প্লাস পাইতে হইলে প্রাইভেট পড়তে হবে আর প্রাইভেট পড়তে যাইতে হইলে আমাকে একটি সাইকেল কিনে দিতে হবে। আমাকে সাইকেল কিন্না দেয়া হইল আর আমি সেই সাইকেল দিয়া আশেপাশের গ্রাম, নদীনালা আবিষ্কার করিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। অঙ্ক ছাড়া আর সব বিষয় আর মোটামুটি ভালই পারতাম, তাই ইচ্ছা ছিল পরীক্ষার আগে একবার সময় করে সব কিছু ধরব, স্কুলের প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় আমার রেজাল্টের চরম বিপর্যয় ঘটিল আর আমার বাপ আমারে কইসা এক ধোলাই দান করিল। ফলাফল স্বরূপ আমি ভালভাবে পরালখা করুম বাকি কয়দিন সিদ্ধান্ত নিলাম।

ইংলিশ প্রাইভেট পড়তে যাইয়া দেখি বাল-ছাল মুখস্ত করাইতাছে সবাইরে আর সবাই মন দিয়া প্রাইভেট এর এক ঘন্টা পড়া মুখস্ত করিয়া খুশি মনে বাড়ি ফেরে তা দেখে আমি বাজারের মাঠে, উপজেলার মাঠে আবার ক্রিকেট খেলতে লাগলাম। তবে অঙ্ক টিচার পরাইছে অনেক ভালা আর বাকি সব মোটামুটি নিজে পইরা পার করছি। মেট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিল স্বভাবতই আমি এ প্লাস পাই নাই, আমার বাপ মা আমার লগে খুব রাগ করছিলো, অবশ্য আমি সেইসব আমলে না নিয়ে ঘুইরা বেরাইছি , তারপর ভালো একটি কলেজে ভর্তি হইলাম, সেইখান থেকে ইউনিভার্সিটিতে, সেই ইউনিভার্সিটিও পাশ দিলাম কয় দিন আগে। । **যার লাইজ্ঞা এত পেচাল পারলাম হেই কথা কই, ছোট ভাই ও বইনরা তোমরা যারা এ প্লাস পাও নাই, একটুও হতাশ হইওনা, জীবন শুধুমাত্র এই একটি ফলাফলে নিরাধারিত হয়না।

হার না মেনে সামনে এগিয়ে চলাটার মানেই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা, ভালো থেকো সবাই, শুভ হোক পথচলা । । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।