আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“তোরা তোদের জন্মদাতা-দাত্রীদের সাথে যে আচরণ করলি, তোদের সন্তানেওরা যেন ঠিক একই আচরন করে”


স্বামীর কবরের পাশে বাস করতে চেয়েছিলেন রাবেয়া গত কয়েকদিন থেকে ইত্তেফাকে ধারাবাহিক ভাবে সমাজে নিজ নিজ আপনজনদের দ্বারা চরম নিগৃহীত প্রবীণদের মর্মস্পর্শী সত্য ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছে। সাংবাদিক আবুল খায়ের তাঁর লেখনীর মেধাতে সেই সব সত্য ঘটনাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা পড়ে বিবেকবান যে কোন মানুষেরই চোখের অশ্রু সংবরণ করা নিতান্তই কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রতিটি পর্ব পড়ছি আর অবাক বিষ্ময়ে হতবাক হচ্ছি কি ভাবে একজন সন্তান সম্পত্তির লোভে, স্বামী/স্ত্রী-র প্ররোচনায় কিংবা অন্য কোন কারণে নিজের জন্ম দাতা-দাত্রীদের সাথে এই রকম অমানবিক আচরণ করতে পারে!!!! মনে পড়ে বেশ কয়েক বছর আগে সাপ্তাহিক "যায় যায় দিনে"র বিশেষ সংখ্যা 'মা'-র এক লেখায় পড়েছিলাম, যেখানে 'মা' নিজের বাড়ীতে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় কয়েকদিন পড়ে থাকার পরেও ব্যাস্ত পেশাজীবি সন্তানদের সময় হয় না মা-র পাশে দু মিনিট বসে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সামান্য একটু ভাল-মন্দের খোঁজ নেবার। সে সময় এক বাড়ীতে থেকেও চরম একাকীত্বে ভোগা অসুস্থ শয্যাশায়ী মা-র সংগী হয় গ্রাম থেকে নিয়ে আসা ১২ কিংবা ১৪ বছরের বাসার 'কাজের মেয়ে' শেফালী (বয়স ও নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না)। শেফালীর অকৃত্রিম ভালবাসা ও সেবা শশ্রুসায় এই বৃদ্বা মা অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেন আর স্বাভাবিক ভাবেই এই অসহায় মা-এর দুর্বলতা ও সমস্ত ভালাবাসা এই গরীব মেয়েটিকেই ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে।

বাংলাদেশে বাসার কাজের মেয়ে/বুয়াদের সাথে সাধারনত: যেভাবে অন্যায় আচরণ করা হয় তার থেকে শেফালী ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু বৃদ্বা মা-এর শেফালীর প্রতি দুর্বলতা আর ভালবাসা দেখে সন্তানেরা ভেবে বসে তাদের মা- বুঝি সহায়-সম্পত্তি এই শেফালীকেই দিয়ে দিবে। আর এই সন্দেহ থেকেই তারা শেফালীকে পরিকল্পিতভাবে চোর বানিয়ে চরম অপমান ও নির্যাতন করে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় (তবু ভালো গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাকা দেয় নি)। এই অপমান আর কষ্টের বোঝা এই বৃদ্বা মা আর শেফালী দুজনের কেউই সহ্য করতে পারে নি। একজন প্রচন্ড মনোকষ্টে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আর আরেকজন ক্ষোভে, দু:খে আর অপমানে গলার ভিতর দিয়ে কীটনাশক ঢেলে দিয়ে এই সুন্দর(!) পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।

উপরের ঘটনাটা গল্প কিংবা জীবন থেকে নেয়া সত্য কাহিনী যাই হোক না কেন, এটাই এখন যুগের সাথে পরিবর্তিত অসহিণ্চু লোভী বাংগালী সমাজের পুরোপুরি না হলেও আংশিক দর্পণ, যার আবার বেশীর ভাগই অপ্রকাশিত থেকে যায়। পাশ্চাত্যের সমাজ ব্যাবস্থায় বয়স্কদের একাকীত্ব থেকে মুক্তি লাভের নানা সুযোগ-সুবিধা থাকার পাশাপাশি শেষ বয়সের আর্থিক আর মানসিক সচ্ছলতায় এই সুন্দর দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার অনেক উপকরণ বিদ্যমান। অন্যদিকে বাংলাদেশে বেসরকারী আর সরকারীভাবে সমন্বিত উদ্যোগ আর গাজীপুর বৃদ্বাআশ্রমের খতিব আব্দুল মজিদ মুকুলের মতো বিশাল হৃদয়ের মানুষ এগিয়ে না আসলে ১০২ বছর বয়সের বৃদ্বা রাবেয়া খাতুনের মতো আরো অনকের ঠিকানা হবে ঐ আজিমপুর কলোনীর সিড়ির চিলেকোঠা কিংবা ডাষ্টবিনের পাশে ময়লা কোন ফুটপাত...........
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.