আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মডার্ন জমিদার ও আমাদের রাজনৈতিক মেন্ডেট

সক্রেটিস

আমি যদি বলি আমরা এখনো জমিদার আমলে আছি তাহলে হয়তো সবাই আমাকে পাগল ভাববে। ১৯৫২ সালের কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর আওতায় এনে সকল জমিদারী সম্পদকে জাতিয়করণ করা হয়েছিল। বেশিরভাগ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারী অফিস হিসেবে এসবের ব্যবহার হচ্ছে। আমার আজকের এই লেখা ওইসব সম্পদ ও তাদের মালিকদের নিয়ে নয়। আজ আমি অঘোষিত এক আধুনিক জমিদার নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব।

মানুষ যখন কোন সম্পদ অর্জন করে তখন সে তা নিরাপদে রাখতে চায় আর চায় তা থেকে সর্বোচ্চ লাভবান হতে। আমাদের বাংলাদেশে আমজনতার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় (সর্বশেষ আশ্রয় ও বলা যায়) হচ্ছে সরকার যাকে সহস্তে ভোট দিয়ে তারাই নির্বাচিত করে। কিন্তু আমাদের দেশে যেন এটা একটা রীতি হয়ে গেছে যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলো তাদের ক্ষমতা বদল করবে কিন্তু সাধারণ মানুষের সরকার বা সাধারণ মানুষের বিরোধী দল হয়ে উঠবে না। সরকারের কাছে যখন সাধারণ নাগরিক কিছু সঞ্চিত রাখেন তখন উভয়পক্ষের মধ্যে একটা চুক্তি হয় যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সঞ্চয়ের বিনিময়ে কিছু সুবিধা দেয়ার কথা উল্লেখ থাকে। আগের দিনে জমিদাররাও একি পদ্ধতি আরেকটু নির্মমভাবে প্রয়োগ করতেন,তখন শর্তগুলো অনেক কঠিন থাকতো আর সবক্ষেত্রেই শাষক শ্রেণীর স্বার্থ প্রাধান্য পেত।

সে আমলে যে অন্যায় অত্যাচার চলত তার বেশিরভাগের সাথে প্রজাদের উপর ধার্জ করা কর জরিত ছিল। ইংরেজ শাষকদের চাহিদা যখন বেরে যেত তখন অন্যায়ভাবে জমিদার শ্রেণী প্রজাদের উপর বাড়তি কর চাপিয়ে দিত। যে জমিদার যত বেশি নিষ্ঠুরতার সাথে এ কাজ সম্পাদন করতে পারত সে তত বেশি যোগ্য শাষক বলে বিবেচিত হত। এবার এ যুগে ফিরে আসি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপর আলোকপাত করে। আমাদের দেশে যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসে তখন সব রাজনৈতিক দলগুলো যার যার মত করে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।

দল ভেদে বেশিরভাগই একি কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে যে গুলো সাধারণত হয় কিছু জাতীয় সমস্যা যে গুলো ১৯৭১ থেকে এখনও চলে আসছে কোন সমাধান হয়নি এবং আদৌ হবে কিনা সন্দেহ আছে। তবে সবসময় কিছু আশার বাণী (নাকি আরব্য রজনীর কোন রাজার দেখা স্বপ্ন) শোনান হয় যেগুলো আমাদের বর্তমান সম্পদ ও অর্থ দিয়ে বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। আর যখন তারা ক্ষমতা দখল করে ফেলে তখন এই 'প্রায় অসম্ভব' শব্দটাকে 'প্রায় একেবারে অসম্ভব' এ পরিণত করে। আর ঠিক তখন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে থাবা বসান গরীব আর মধ্যবিত্তের কষ্টে উপার্জিত সম্পদের দিকে। অতীত বর্তমান সব সরকারই এ পন্থা অবলম্বন করেছেন এবং বর্তমানের চেয়ে অতীতে এটা আরো ভয়াবহ ছিল।

বিভিন্ন মেয়াদে সঞ্চিত রাখা সম্পদ হতে যে ক্ষুদ্র অংশ আসতো তা দিয়েই হয়তো কোন পরিবারকে এই মুদ্রাস্ফিতির যুগে অনেক কষ্ট করে দিনযাপন করতে হত। সেখান থেকে একটা বিরাট অংশ সঞ্চয়ের শুরুতে করা শর্তের বাইরে কেটে নিলে এসব পরিবারের কি অবস্থা হতে পারে তা আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারব যদি জমিদার আমলের প্রাজাদের দুঃখ দুর্দশার কথা জানা থাকে। আজকে ২০১০ সালে এসে আমরা কী শত শত বছর আগের সেই প্রাজাদের চেয়ে খুব ভাল আছি?প্রশ্নটা আসলে কাকে করলাম আমি নিজেও জানি না। আমাদের অবস্থাটাই এখন হয়ে গেছে এমন আমরা কিছুই জানিনা,জানতে চেষ্টাও করিনা। পরিশেষে বলতে চাই দেশে কারো সম্পর্কে কিছু বলার আগেই যেভাবে মামলা হয়ে যাচ্ছে তাতে করে কিছু বলতে আসলে ভয় ই লাগে।

তবুও অনেক সাহস সঞ্চয় করে এতটুকু না বলে পারলাম না। কারো খারাপ লাগলে আশা করছি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.