আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মডার্ন অতিথি




শহরের এক বিয়ের নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলাম। অনেক লোকের সমাগম, হই হুল্লোড় আর আনন্দে ভরপুর বিয়ের আসর। সবার মাঝে কেমন যেন উৎসবের আমেজ। আড্ডা,হাসাহাসি,নবদম্পতিকে ঘিরে নানান রসাত্মক ইঙ্গিত – সবকিছুই সমানে চলছে। কিশোরীদের নতুন শাড়ি পরার শিহরণ দেখতে অপূর্ব লাগছে যেন বাঙ্গালী মেয়েদের দেহের সৌন্দর্যটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।


আমার বন্ধু রক্তিমের বিয়ে। বেশ ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় হল ভাড়া করা হয়েছে। গমগমে বিয়ের অনুষ্ঠান রমরমে সাজ। বর-বধুর স্টেজ ছোট বড় কাঁচা ফুলে ফুলে সুশোভিত।

মাখনের মত ফুলের রঙ। ফুলের রূপলাবণ্য ও সৌরভ চোখ এবং মনের তৃষ্ণা ও পিপাসা মিটিয়ে অনাবিল আনন্দে ক্ষণিকের জন্যে মনকে দোলা দিচ্ছিলো এবং বিমোহিত করছিলো, এর সৌন্দর্য পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে ।
লম্বা ও মনোরম গদির চেয়ারে বর-বধু বসে আছে। চেয়ারের দুই হাতলে দুটো বাঘের মাথা, সোনালী কারুকার্য খচিত। স্টেজের সামনে মানুষের ভীড়।

ভীড় উপেক্ষা করে অনেকে বর-বধুর চেহারা- ছুরত কেমন তা দেখার জন্যে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। গ্রামের বিয়েতে মহিলারা দেখেন বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দিয়ে। আর শহুরে বিয়েতে বর-কনে দেখার চেয়ে নিজেদের সাজগোজ দেখানোর প্রতিযোগিতাই বেশি।
বর-বধু কী অপরূপ সাজে সজ্জিত। ! বরের মাথায় লাল পাগড়ী, গায়ে নীল পাঞ্জাবী, পায়ে ঘিয়া রঙের নাগরা জুতো।

লাজুক বধুর গায়ে লাল বেনারসী শাড়ী, তাতে সাদা চকচকে পাথর বসানো। মাথায় রয়েছে পানের আকৃতির টিকলি, কপালে দুলছে। টিকলির মধ্যখানে বড় লাল রুবি পাথর। মেহেদী রাঙ্গা হাতে একগোছা সোনার চুড়ি। ডান হাতের আঙ্গুলে, সাদা, লাল ও সবুজ পাথরের আংটি।

কানে বড় আকারের সোনার দুল। মনে হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।
ভীড়ের মাঝে খালাম্মার বয়সের এক ভদ্রমহিলা ভীড় ঠেলে চেঁচিয়ে বললেন, ‘সরেন, সরেন,
বউ দেখবো, আহ্‌! কি সোনায় সোহাগা। ’
খালাম্মার সাজু গুজু ও স্বর্ণালঙ্কারের বাহার কোন কমতি নেই। তিনি তাড়াতাড়ি স্টেজের উপর উঠলেন, বর-কনের পাশে বসতে যাচ্ছেন।

এমন সময় এক মহিলা অতিথির সঙ্গে জোরে ধাক্কা লাগল। অনেকটা ট্রাকের সঙ্গে রিকশার ধাক্কা লাগার মত।
অতিথি রাগান্বিত হয়ে খালাম্মার দিকে কটমট করে তাঁকিয়ে বললেন, ‘ভদ্রতার বালাই নেই। ’
খালাম্মা মাথা ঘুড়িয়ে চোখ বড় বড় করে মহিলার দিকে এক পলক দৃষ্টি দিয়ে পরক্ষণে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তন্ন তন্ন করে ক্যামেরাম্যানকে খুঁজতে লাগলেন। ওনার যে ছবি ওঠানো খুব দরকার! বর-বধুর পাশে বসে একটা ছবি না ওঠালেই নয়।

আর ধাক্কাধাক্কি না করলে কী ছবি ওঠানো যায়, এতে লজ্জা কিসের?
খালাম্মার ওজন তাঁর উচ্চতার তুলনায় অনেক বেশী তাই হাঁটার সময় টলমলে পা ফেলে টেনে টেনে বহুত কষ্ট করে হাঁটেন। ওজনের ভারে বেশীক্ষণ দাঁড়াতে পারেন না তাই বলে তিনি সারাদিন বসে কাটাবেন, মোটেই না, টুনটুনি পাখির মত ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে বেড়ান। ওনার মুখের আকৃতি ত্রিভূজের মত। মোটাসোটা চেহারা। যা ন্যাকামি-সাজগোজ-হেয়ারস্টাইল।


পাশের টেবিলে রাখা ডালা থেকে কয়েকটা পান পটাপট নিয়ে নিলেন। খালাম্মা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করেফেলেছেন। কাজেই লিপস্টিকের কোন প্রয়োজন পড়ে না। পানের রস গাল দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আহ্ বিয়ে বাড়িতে কেউ না আবার দেখে ফেলে, নব বধুর মতো লজ্জাও পাচ্ছেন।

ওনার ফিলোসফি হলো পান হচ্ছে গিয়ে বেহেস্তের ফুল আর যে পান খাবে সে নির্ঘাত বেহেস্তে যেতে পারবে। বেহেস্তে পদ্মার ইলিশ না থাকলেও চলবে তবে পান থাকা চাই। তাই ওনার বেহেস্তে যাবার খুব শখ। এক গুচ্ছো পান শাড়ির আঁচলে বেঁধে আঁচল দুলিয়ে দুলিয়ে মন্থর ছন্দে হেলে-দুলে চলেছেন। পান চিবাতে চিবাতে খালাম্মার চোখ গিয়ে পড়ল ক্যামেরাম্যানের ওপর।


বেশ দাপের সঙ্গেই খালাম্মা খঁক খঁক করে কেশে ডাক দিলেন, ‘এই যে ক্যামেরা ভাই, এদিকে আমার দিকে তাকান। আমার একটা ছবি ওঠান। ’
চট করে কনের পাশে গিয়ে বসে পড়লেন খালাম্মা ও ছবি তোলার পোজ দিতে লাগলেন, সিনেমার নায়িকার মত বিচিত্র পোজ। বাধাকপির মত পরচুলার খোপা খুলে যাবার উপক্রম, সেটা হাত দিয়ে সেট করে নিলেন। চোখের কাল কাজল ছড়িয়ে গেছে, অনেকটা প্যান্ডার চোখের বৃত্তাকার কাজলের মত।

পরনে অসহ্য ক্যাটক্যাটা কমলা রংয়ের শাড়িটা গুছিয়ে নিলেন। গায়ে সস্তা পারফিউমের উদ্ভট গন্ধ, সস্তার বার অবস্থা।
খালাম্মার তৎপরতা দেখে ক্যমেরাম্যানভাই ভেবেছে খালাম্মা হয়তো বর বা বধুর কোন নিকট আত্মীয় ফাত্মীয় হবেন। খালাম্মার ডাকে তাই দ্রুত সাড়া দিয়ে ক্যমেরাম্যানভাই ঝটপট ওনার কয়েকটা ফটো উঠিয়ে নিল।
ব্যাঙের মত থপথপ করে মাটি কাঁপিয়ে তুলে খালাম্মা বললেন, ‘এই যে ভাই, ভিডিওম্যান, এবার আপনি আমার পোজ ওঠান।


হোমরা চোমরা হবে ভেবে ভিডিওম্যানভাইও খালাম্মার চেঁচামেচিতে দৌঁড়ে আসে। কিন্তু এদিকে ঘটে গেল এক মহা ঝামেলা। ভিডিওম্যান ভিডিওক্যামেরার তারের ওপর হোচট খেয়ে চিৎপটং। তাই দেখে কয়েকজন অতিথি হো হো করে হেসে উঠল। একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ সেদিকে কিন্তু খালাম্মা কোন ভ্রুক্ষেপ করলেন না।

উনি বিভিন্ন পোজের কৌশল প্রেকটিসে ব্যস্ত। ওনার বিভিন্ন সৃজনশীলপোজের দৃশ্য দেখে অনেকে মুখ চেঁপে চেঁপে হাসছিল।
একজন পুরুষ অতিথি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে ভারী গলায় বললেন, ‘এ বয়সে মহিলার কি ঢং!’
প্র্যাকটিস সেশন শেষে খালাম্মা স্টেজ থেকে নেমে পড়লেন। খুব স্পীডে নামার সময়, তাঁর চার ইঞ্ছি হাইহিল জুতোর চাপ গিয়ে পড়ল এক তরুণী অতিথির পায়ের আঙ্গুলের উপর। হাইহিল পড়তে জানেননা তাই নির্যাতন করে পায়ে শিকল লাগালে যেমন ভাবে মানুষ হাঁটে সে ভাবে টেনে টেনে হাঁটছিলেন।

ওই অসাধারণ অস্ত্র ব্যবহার করাতে তাই এক অতিথি তরুণীর তোপের মুখে পড়েছেন। তরুণীর চুল খোলা, চুল ঢেউয়ের মত খেলছে। চুলে গেঁথেছেন দুটি লাল গোলাপ। বেশ ছিমছাম ফিগার।
তরুণী অতিথী ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলেন, ‘উফ্, আপনি কি আপনার চোখের মাথা খেয়েছেন? দেখে
পথ চলতে পারেন না।


খালাম্মা তো তাজ্জব বনে গেলেন। তরুণী কি বলল আমাকে? ওনার মুখে খই ফুটতে লাগল।
তেড়ে এসে তরুণীকে কষিয়ে বললেন, ‘এই মেয়ে, তুমি নিজেকে কি মনে কর, হ্যাঁ? আমার
পাশে দাড়িয়ে ছিলে কেন? পা তো পড়বেই। ’
তরুণী নাক সিটকালেন ও রেগে মেগে বললেন, ‘এ বয়সে ওরকম হিল না পড়লে হয় না?’
‘কি বললে, আমার বয়স বেশী, আমি বুড়ি, এই মেয়ে, সাবধানে কথা বলবে। ’
মহিলার ব্যবহার বড় কপট।

মনে যাতনা নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে খালাম্মাকে ঐ
অপমানসূচক বস্ত হাইহিল ফ্যাসনের জন্যে অভিশাপ দিচ্ছেন, পিঠ ব্যাথা, হাঁটু ব্যাথা হোক ঐ
মহিলার। হাইহিল পড়ে রূপবতী হবার কী অপচেষ্টা! এই হচ্ছে হাইহিল জুতা পড়ার পরিণতি। তারপর
অনেকের ভীড়ে হারিয়ে গেলেন তরুণী।
ইফতার তাড়াতাড়ি করা, সাহরী তাড়াতাড়ি খাওয়া, ভয় ভীতির সময় তাড়াতাড়ি চলা, কাউকে তাড়াতাড়ি পারিশ্রমিক দান করা উত্তম কাজ। তবে স্টেজ থেকে তাড়াতাড়ি না নামাই সমীচীন তাও আবার হাইহিল জুতা পড়ে, সবকিছুতেই পলিটিক্স খোঁজার ধান্দা ভাল না।


খুনসুটি আর ঝগড়াঝাটি হয়ে গেল, হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ালে দৃশ্যটা দেখতে কেমন হতো কে জানে!
খালাম্মার অভিযান এখন অন্যদিকে। তিনি মুক্ত বিহঙ্গের মত সামনে এগুচ্ছেন। মানুষের জটলা। কিসের
এত হইচই? বিয়ের আসরে এক ছোকরা চোর ধরা পড়েছে তাই এত শোরগোল। ছেলেটা বিয়ে বাড়ির বয়
টয় হবে হয়তো।

ওর হাতে একটা রুপালি চুমকির হ্যান্ডব্যগ ছিল। কয়েকজন উৎসুক অতিথি এগিয়ে এসে
তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলল ও জেরা করতে লাগল।
একজন অতিথি পন্ডিতগিরি শুরু করে দিলেন, ছেলেটাকে বকা-ঝকা দিতে লাগলেন, ‘এই ছেলে, ব্যগ চুরি
করেছিস কেন? তোকে পুলিশে দেবো। ’
ছেলেটা ভয়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে বলল, ‘স্যার, আমি ব্যগটা মাটিতে কুড়িয়ে পেয়েছি, আমি চুরি
করিনি স্যার, আমি ব্যাগের আসল মালিককে খুঁজছিলাম। ’
আরেকজন অতিথি অদ্ভূত অঙ্গভঙ্গী করে বললেন, ‘মার দে ছেলেটাকে।


ওখানে কি হচ্ছে? দেখি, দেখি, বলে খালাম্মা হাত দিয়ে অতিথিদের ধাক্কা দিয়ে ভীড় ঠেলে
বেরিয়েপড়লেন।
হ্যান্ডব্যগের দিকে আঙ্গুল প্রদর্শন করে খালাম্মা বললেন, ‘এই ছোকরা, এটা তো আমার হ্যান্ডব্যগ। ’
ঈগলের থাবার বেগে এক টান দিয়ে তিনি ছেলেটার হাত থেকে ব্যগটা ছিনিয়ে নিলেন। আর বেশী
কথা না বাড়িয়ে এক নাগাড়ে পা চালিয়ে সট্কে পড়লেন।

খালাম্মার বয়স হলে কি হবে, এখনও চটক এবং দাপট দুই-ই বেশ ভালই আছে।


হুট করে ম্যাজিকের মত পুনরায় খালাম্মার আগমন ঘটল। কিন্তু হ্যান্ডব্যগেটাতো চোখে পড়ল না। ম্যাজিশিয়ান খালাম্মা ছুঁ মান্তার ছুঁ বলে ওটা কবে অদৃশ্য করে দিয়েছেন। এবার কৌতুহলী চোখ এদিক সেদিক করছে, পেয়ে গেলেন এক হলুদ শাড়ি পড়া অতিথি, মনে হচ্ছে পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত বরণে হলুদ শাড়িতে উৎসবে মেতে উঠেছেন। যাই, তাঁর সঙ্গে আলাপ করি।


খালাম্মা ঢাক পেটাতে লাগলেন, ‘জানেন ভাবী, ওই যে দূরে বাড়িটা দেখছেন …..ছয় তলা বাড়িটা,
ওটানা আমার বাড়ি। ’
অতিথি ভাবী তাঁর শাড়ির কুচি স্টাইল করে ধরে বললেন, ‘আপনিকার পক্ষের? বর না কনে?’
বেলুন ফুটা না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রেখে খালাম্মা বললেন, ‘আমি বর পক্ষের। বরপক্ষ আমার
আত্মীয় হয়। ’
খালাম্মার দিত্বীয় ফিলোসোফি হলো মিথ্যা কথা বললে আয়ু ক্ষয় হয়ে যায় অথচ খালাম্মার বাঁচার ইচ্ছে প্রবল। গানের সঙ্গে বাজনার মিল আর কথার সঙ্গে কাজের সঙ্গতি এটাই স্বাবাভিক।

খালাম্মার কথার মধ্যে কোন ভারসাম্য নেই। কী মুসিবত!
এবার খালাম্মার দুই চোখ গিয়ে পড়ল ভাবীর আঙ্কটির ওপর। ওনার চোখ দুটোও আকাশের তারার মত ঝিলমিল করছিলো। মানুষ যেমন পশ্চিম আকাশে ঈদের এক ফালি বাঁকা চাঁদ উৎসুক নয়নে খুঁজে ফিরে, খালাম্মাও বিস্ময়ের চোখে আঙ্কটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবীকে বললেন, ‘ভাবী, আপনার আংটিটা বেশ চকচকে, সুন্দর তো, কোথা থেকে কিনেছেন?’
‘আমার স্বামী জাপান থেকে এনেছেন। ’
‘ওটা কি হীরার তৈরি?’
‘হ্যাঁ।


‘আপনার হাতে খুব সুন্দর মানিয়েছে। ’
‘আমারও অনেক হীরার আংটি রয়েছে। এ বয়সে কি এত হীরার আংটি পড়া যায়। তাই ওগুলো বাড়িতেই
রয়েছে, পড়ে আসিনি। ’
‘আপনার আংটিটা একটু দেখতে পারি?’
‘হ্যাঁ এই যে নেন, দেখুন?’
‘বাহ্, কি চমৎকার।

আহ্, পাথরগুলো কি চকচকে। আহা, আংটিটা যে পড়ে গেল। ’

অতিথি ভাবী হতচকিত হলেন। মুহূর্তের মধ্যে এ কি ঘটে গেলো! ভাবী খালাম্মার দিকে কটাক্ষ চাহনি
দিলেন।
তিনি মনঃক্ষুন্ন হয়ে অতঃপর গম্ভীর ও ব্যথিত কন্ঠে বললেন, ‘কি আতান্তরে পড়লাম! আমার আংটি ফেরৎ
দেন।


ভাবীর চেঁচামেচি শুনে ও বেহাল অবস্থা দেখে অন্তত এক ডজন অতিথি ঘটনাস্থলে ছুটে আসলো।
সবাই মিলে আংটি খুঁজতে লাগল। পরিশেষে আংটির খোঁজ আর মিললো না। আর মিলবেই বা কি করে,
খালাম্মা যে ম্যাজিক জানেন, আংটি গায়েব করার ম্যাজিক। এদিকে সেয়ানে সেয়ানে খালাম্মাও উড়ন্ত
সসারের মত চোখের নিমিষে লাপাত্তা হয়ে গেলেন।

সত্যি! এটা কেউ ভাবতে পারে?
আবার সদা চঞ্চলা খালাম্মার আচমকা আবির্ভাব। তিনি হাসতে হাসতে হন্তদন্ত হয়ে এদিকে
ছুটে আসছেন। হুড়মুড় করে পিছলে পড়লেন গিয়ে ক’জন অতিথির উপর। তাই দেখে তাঁরই মত এক
মধ্যবয়সী ম্যাজেন্ডা রঙ্গের সিল্কের শাড়ি পড়া এক অতিথি সাহায্য করার জন্যে কোমর বেঁধে গটগট করে
এসে পড়েছেন। খালাম্মাকে সোজা খাঁড়া করলেন।

কোন রকম উঠে দাঁড়ালেন খালাম্মা। ব্যাস্, এরই মধ্যে
অসামান্য দৃশ্য তৈরি হয়ে গেল। একগাদা অতিথির বেদম হাসি পেল। জনসমক্ষে এ কী লজ্জা! খালাম্মার
মুখটা ক্ষণিকের জন্যে উদাস দুঃখীর মত দেখালো। আর নয়, এবার যাওয়া যাক।


ছুটে গেলেন তিনি তাঁর রক্ষাকারীর নিকট। ধন্যবাদ জানাতে নয় বরং দুজনেতে মিলে খেঁজুড়ে
আলাপ জুড়ে দিতে।
খালাম্মা শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, ‘আপা, আপনাকে চেনা চেনা লাগছে।
চকবাজারে দেখেছি। আমি আমার গাড়ি থেকে নামছিলাম আর আপনি আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, মনে
পড়ছে কি না দেখুন? আমরা একসাথে বাজারে ঢুকেছিলাম, ভেবে দেখুন, নিশ্চয় চিনতে পেরেছেন।


বলতে বলতে তিনি একটা চেয়ার টান দিলেন। ওজনের ভারে খালাম্মা বেশীক্ষণ হাঁটতে পারেন না অতএব
চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লেন।
‘আপা, আসেন আসেন, বসেন বসেন, পরিচয় যখন হল, চলেন চুটিয়ে গল্প করি। আপনি কার পক্ষের,
কনে না বর?’
অতিথি বললেন, ‘আমি কনে পক্ষের। ’
খালাম্মা ডাহা মিথ্যা কথা বললেন, ‘আমিও কনে পক্ষের।


‘তাই নাকি? আপনি কনের কি হোন?’
‘আমি কনের খালা। ’
‘আমিও। ’
‘কিরকম খালা?’
‘আপন খালা, কনে আমার আপন বোনের মেয়ে। ’
‘আচ্ছা আপা, আমাকে একটা জরুরী ফোন করতে হবে তো………..’
মানুষ কি করে পারে জেনে শুনে এমন প্রতারণা করতে! খালাম্মার প্রাণের সঞ্চালন বুঝি থেমে গেল। ধরা
পড়ে গেলেন বুঝি!কিছু পরে খালাম্মা অদৃশ্য হয়ে গেলেন, কোনো গর্তের ভেতর আচমকা পড়ে গেলেন
নাকি!
খালাম্মার বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে।

এ জাতটাই ওরকম, ক্ষিদে না পেলেও খেতে চায়। এদিক সেদিক
ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন। অমনি দেখা হয়ে গেল মামা গোছের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। ভালই হল। গল্প
করতে করতে খাবার হলে যাওয়া যাবে।


মামা বললেন, ‘আচ্ছা ছেলেদের খাবারের হল কোন দিকে?’
খালাম্মা বললেন, ‘আমিও মেয়েদের খাবারের হল খুঁজছি। ’
‘চলেন এক সঙ্গে খুঁজি। ’
‘আপনি কনের কি হন। ’
‘আমি কনের মামা। ’
‘তাহলে একটু আগে নিশ্চয়ই আপনার বোনের সাথেই আমার দেখা হয়েছিল।


‘আমার বোন, ও হ্যাঁ, না… বলছিলাম কি আমার কোন বোন টোন নেই। ’
‘আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি, আপনিও আমার মত………..’
খালাম্মা অগাধ জলের মাছ, দ্রুত প্রস্থান করলেন, হাঁপাতে হাঁপাতে হুট করে চেয়ারে আবার
বসলেন। কি বাঁচাটাই না বাঁচলাম! আটকপালে কাকে বলে?
একটু দূরে এক দল অতিথি মহিলার চাঁদের হাট বসেছে। খালাম্মা আগ্রহের সঙ্গে সেদিকে ভীড়ঁলেন।
অবিলম্বে ওই মহিলা দলের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তুললেন।

খানিক বাদে সকলে গাঁজাখুড়ি গল্পে
মেতে উঠলেন, বিষয় বস্তু ‘ভূত’।
এক অহঙ্কারী অতিথি তিল কে তাল করে বললেন, ‘আমার বাসার ছাদেও ভূতের আনাগোনা। ভূতেরা ধপ্ ধপ্ শব্দ করে হাঁটাহাঁটি করছিলো। ভূতদের কথা শুনতে পেয়েছি, নাকে নাকে কথা বলে, মনে হলো তারা জন্মদিন উদযাপন করছিল। ভূতদের বিকট হাসি, হিঃ হিঃ হিঃ শুনতে পেয়েছি।

কৌতুহল বশে ছাদে গিয়ে দেখি, ও মা! ওরা আমাকে দেখে পালিয়ে গেল, হা হা হা। ’
নিমন্ত্রিত আর এক ব্যক্তি, ধরাকে সরা জ্ঞান করে কর্কশ কন্ঠে বললেন, ‘ভাবীরা শোনেন, আমি এক রাতে মেয়েকে নিয়ে ছাদে হাওয়া খেতে গেলাম। দেখি কি একটা ছায়ার মত কে যেন আমাদের সাথে সাথে হাঁটছে। কি বিশ্রী গলার আওয়াজ! ডূড়ূম, ডূড়ূম, ডূড়ূম। মনে হল মেশিনে পাথর ভাঙ্গা হচ্ছে।

এরপর ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম ভূতটা নেই। চোখের পলকে আবার ভূতটা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি ভূত তাড়াবার কিছু মন্ত্র শিখেছিলাম, সেগুলো বিড় বিড় করে বলতে লাগলাম। ‘ছু …..মান্তার….. ছু…… মান্তার…… ইকি……. বিকি…… মিকি…….. ছু। ’ তারপর, কি হলো জানেন, ভূতটা ভয়ে পালিয়ে গেল, হু হু হু।


এবার খালাম্মার ছটফটানি শুরু হলো, উঁচু স্বরে আমি-আমি করে বলতে লাগলেন, ‘ও আপারা,
আমার ছাদের ভূত কি করেছিল জানেন? রাত দশটায় রাতের খাবার খেয়ে দেয়ে আমি আমার শোবার

ঘরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিলাম কিন্তু আমার ঘুম আসছিলনা। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ
করছিলাম। ভাবলাম ছাদের ওপর উঠে খানিকক্ষণ পায়চারি করি। ছাদে মনের আনন্দে হাঁটছিলাম হঠাৎ
একটা ভয়ঙ্কর চেহারার ভূত দেখলাম। গালের দু’পাশের দু’টা মোটা মোটা দাঁত লম্বালম্বিভাবে বেড়িয়ে
আছে।

দু’টা চোখ আগুনের মত জ্বলজ্বল করছিল। ‘ধাম ধাম ধুম’ শব্দ করছিল। আমি মনে সাহস
জোগালাম। ভূতের সামনে গিয়ে স্থিরভাবে দাড়িয়ে রইলাম, একটুও নড়ছিলাম না। বোকা ভূতটা বোধহয়
আমাকে ভূত ভেবে ভয়ে পালিয়ে গেছে।


খালাম্মার যে কি বিশাল আকৃতি, ভূত তো ভয়ে পালাবেই।
আড্ডাবাজদের হাবিজাবি কথার মোড় এখন ঘুড়ে গেল। হঠাৎ করে জলের যেমন গতি পালটে যায়,
তেমনই পালটে গেল তাদের আলাপের বিষয় ‘ভূত’। ‘সোনার গয়নার’ আলোচনায় এবার সবাই
মনোনিবেশ করল। এ মুহূর্তে খালাম্মার আলাপ করার আর কোন ইচ্ছে নেই।

বিরানীর মিষ্টি সুবাসে মন ভরে
গেল, সেই টানে ওনার ক্ষিদে বেড়ে গেল। উনি চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন। ক্ষিদের জ্বালায় পেটটা চোঁ চোঁ
করছে আর তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কিন্তু খাবারের হল যে কোথায়? ঠিক তখনই, পরনে
গেরুয়া পোষাক, কাঁধে ঝুলি, হাতে দোতারা এক বাউল অতিথিকে একঝাঁক উৎসুক জনতা ঘিরে
রেখেছে। বিয়ের আসরে তাঁর আগমন সবাইকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলল। ব্যান্ড সঙ্গীত, সিনেমার গান, হিন্দি
গান এগুলো কিছুই হবে না।

তবে কী এই বাউল গায়ক দোতারার তালে শ্রোতাদের বোরিং করে দেবে
নাকি! হতভম্ব হওয়ার কি আছে? বিয়ের আসরে একটা নতুন কন্সেপ্ট না হয় যুক্ত হয়েছে, নতুনকে
বরণ করতে দোষ কী?
বিয়ের আসরের এক কোণে ঘোষণা দেয়া হয় বাউল সঙ্গীতের আসর বসবে। আগত অতিথিরা চোখাচোখি
করতে লাগল, এ এক অবিশ্বাস্য ও চমকপ্রদ ঘটনা। দোতারা নিয়ে ছোট্টখাট্ট চেহারার গণি বাউল নেচে
নেচে গাইছেন — ‘মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার…’, এরপর ‘গোলে মালে গোলে মালে পিরীত কোরো না…। ’
একটা না পাওয়ার বেদনার ছোঁয়া যেন সুরের পরতে পরতে ধ্বনিত হচ্ছে আর বিপুল দর্শক গানের টানে
ভীড় করেছে। ছোটবেলা থেকেই গণি বাউল গান বাজনাকেই বেছে নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে।

এক সময়
কাজ করেছিলেন যাত্রাদলে। আজকাল টেলিভিশনের পর্দায় বাউল গান গাইছেন। তাঁর বেশ নামডাক।
অসাধারণ গানের গলা। কণ্ঠটি সুরেলা আর মিষ্টি।

ভীড়টা বেড়ে যায় আরও। আজ নতুন প্রজন্ম
ভুলতে বসেছে আমাদের শেকড়, না ভুল বলা হবে। কিশোর-কিশোরী অতিথিবৃন্দ বাউলের মোহময়ী সুরের
মূর্ছনায় ভেসে গেছে, তারা দলবেঁধে নেচে নেচে মুখোর করে তুলল পুরো উৎসব।
গানের টানে খালাম্মাও গট গট করে চলে আসলেন গানের আসরে, না ঠিক গানে আকৃষ্ট হয়ে নয়, বাউল
গান শুনে তাঁর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করতে।
রাশি রাশি দুঃখ বুকে নিয়ে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।

ছিঃ ছিঃ, এসব কী যন্ত্রণার গান? ‘পাগলু
পাগলু ও মাই পাগলু’ — সিনেমার গানগুলো বাজাতে পারে না? পোলাপানের মুখে মুখে সেই সিনেমার
গানের কলি আওড়াতে আওড়াতে খালাম্মা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
এক বয়স্ক ব্যক্তি ভরপেট খেয়ে টু্থপিক হাতে মুখ হাঁ করে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বিশাল ভাব নিয়ে
খালাম্মার দিকে এগিয়ে আসছেন। এ দৃশ্য খালাম্মাকে খুব পীড়া দিল। এরপর ওই ব্যাক্তি তৃপ্তির ঢেকুর তুলে
লম্বা হাই তুললেন, বোঝা গেল ভালই উদরপূর্তি করেছেন।
কিছুক্ষণপর তিনি পকেট থেকে ফুলের নকশা করা চিরুনী বের করে মাথা আঁচড়াতে লাগলেন।

নিজেকে
ফিট-ফাট রাখা চাই, বিয়ে বাড়ীতো! হি, হি, হি, লোকটা তো ন্যাড়া মাথা। মনে হয় বিবাহ ঝামেলা
থেকে মুক্ত হয়েছেন।
বেল মাথা লোকটা খালাম্মার দিকে এগিয়ে গেলেন ও কুশল বিনিময়ের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হাই। ’
খালাম্মা বেজাড় হয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘হাই তো আপনি তুলেছেন, আমার পেটেতো দানা-পানিও
পড়েনি কাজেই আমার হাই আসবে কোত্থেকে?’
ক্ষুধার কথা মনে হতেই খালাম্মার ক্ষিদে আরও কয়গুণ বেড়ে গেল।
সুট-টাই পরিহিত মধ্যবয়স্ক ন্যাড়া মাথা লোকটার চলনে ও বলনে অনেকটা ওয়েষ্টার্ন বা হলিউডি
স্টাইল।

মনে হলো আমেরিকায় বহু বছর ধরে আছেন। কর্ম সূত্রে বিদেশে থাকেন আর বিয়ে উপলক্ষ্যে দেশে
এসেছেন, হয়তো কোনো নিকট আত্বীয়ের বিয়ে হবে। বেল মাথা লোকটা কোন দিক থেকে এসেছেন
খালাম্মার চোখ আটকে গেল সেই দিকে। বস্তু হতে আলো এসে আমাদের চোখে পড়লে, তবেই আমরা
দেখতে পাই আর চোখের দিত্বীয় দৃষ্টি বলে একটা ব্যাপার আছে, তাই খালাম্মা দিত্বীয় দৃষ্টিতে বেল মাথা
লোকটিকে বস্তুস্বরূপ দেখতে পেয়েছিলেন। অতএব সেদিকে চলতে লাগলেন, একেবারে মিসাইলের মত সোজা খাবার টেবিলে পৌঁছে গেলেন।


অতিথিরা গোল করে গোল গোল টেবিলে বসে কেউ খাবারের অপেক্ষায়, আবার কেউবা মনের আনন্দে খেয়ে চলেছে। সাদা ধবধবে সাটিন কাপড়ে টেবিলগুলো ঢাকা। প্রত্যেকটা টেবিলের মাঝখানে সাদা টবে লাল গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো। লাল পাগড়ি বাঁধা বেয়ারার দল একে একে টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে — খাসীর বিরানী, রেজালা, চপ, মিষ্টি জর্দা, বোরহানি যেন লাল পিঁপড়ের দল মুখে খাবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রবেশপথে খালাম্মা একটা থালায় মিষ্টি পান বানানো দেখে বেশ পুলকিত হলেন।

ক্ষিদায় প্রাণ যায় যায় তাই নির্দিধায় দু’টা পান মুখে পুড়েদিলেন, আরো দু’টা পান সেই গায়েব হয়ে যাওয়া হ্যন্ডব্যাগে ভরলেন।
লক্ষণীয় বিষয় হল, মুখ বন্ধ করে খাবারের অভ্যেস নেই তাঁর, অতএব মুখ খুলে বিচ্ছিরি শব্দ করে, গছর গছর করে পান চিবাচ্ছেন। পানের রস যে কি মধুর! যে একবার খেয়েছে, সেই বুঝেছে।
খাবার হলে যেন পলাশির যুদ্ধ লেগেছে। এক পরিবারের ছয়জন সদস্যদল বেঁধে খাবার টেবিলে গোল করে বসতে যাচ্ছে, কে কার আগে চেয়ারে বসবে, মিউজিকেল চেয়ারের প্রতিযোগিতা চলছে।

সবাই যে যার মত করে বসে পড়ল। ছয়জনের মধ্যে মাত্র একজনই পুরুষ। মহিলারা সবাই কালো বোড়খা পড়িহিতা, তাদের চোখ দুটোও নেটের কাপড়ে ঢাকা। ক’জন মহিলা আর ক’জন কোন বয়সের বোঝা যাচ্ছি্লো না। একটা মাত্র চেয়ার খালি ছিল, খালাম্মা সেই চেয়ারের দিকে মনঃসংযোগ দিলেন এবং দ্রুত বসে পড়লেন।

তাঁর ভাগ্য মনে হয় এখন সুপ্রসন্ন।
পরিবারের এক মহিলা সদস্য সম্ভবত এক ভাবী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খালাম্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাকে
ঠিক চিনতে পারলাম না, আপনি কোন পক্ষের?’
খালাম্মা বোরখা পরিহিতা মহিলার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো খোঁজার চেষ্টা করছেন এবং বললেন, ‘আমি
কনের ফুফু। ’
‘তাই নাকি? এই যে আমি আপনাকে বিরানী বেড়ে দিচ্ছি। আপনি তো তাহলে আমাদের আত্বীয়। আপনি
কনের কি ধরণের ফুফু?’
‘আমি কনের আপন ফুফু।


‘কিন্তু কনের আপন ফুফু তো গত বছর মারা গেছেন। ’
এই যে সেরেছে! খালাম্মা কথার তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। অগত্যা চেয়ার থেকে ঝটপট কেটে পড়লেন।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.