আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমন - (চতুর্থ পর্ব)

সবার আগে দেশপ্রেম

প্রথম পর্ব = Click This Link দ্বিতীয় পর্ব = Click This Link এবং তৃতীয় পর্ব = Click This Link এর পর --- শিলিগুড়ি বাসস্টান্ডে দালালরা টানাটানি করতে শুরু করে দিলো, দার্জিলিং যাবেন দার্জিলিং। আমাদের নিজস্ব হোটেল আছে। এখান থেকেই বুকিং দিতে পার্বেন। বুকিং না দিয়ে গেলে ওখানে গিয়ে ছিট পাবেননা। এইসব নানাকথা অগ্রাহ্য কর্তে কর্তে আমাকে এগুতে হচ্ছে।

মনে মনে ভাবছি ৩দিনের ভিসা আছে দার্জিলিং ঘুরে আসবো নাকি পরে তো আর এমন সুযোগ না ও পেতে পারি। পরে ভাব্লাম দার্জিলিং গেলেও আজ আর যাবোনা। আজ এখানে কোন হোটেলে থেকে সিদ্ধান্ত নিবো তার পর আগামী দিনের ভাবনা ঠিক করবো। অনেক খুজে সস্তা দামের কোন হোটেল না পেয়ে দরকষাকষি করে ২৫০ টাকায় (ইন্ডিয়ান রূপি) একটা হোটেল ঠিক করে নিলাম। বিকালে হাটতে বের হয়ে শিলিগুড়ির নানান এলাকা দেখলাম।

ব্রিজ পার হয়ে দক্ষিন দিকে যেতে একটা পার্ক দেখা গেল। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে কাটালাম। অনেকরে সাথে কথা হলো। কেউ জিজ্ঞেস কর্লো কোথা থেকে এসেছেন? বল্লাম, অনেক দূর থেকে। বলল, কত দূর থেকে? বল্লাম, বাংলাদেশ থেকে।

বল্ল, ওরে বাব্বা এত দূর থেকে এসেছেন। সন্ধ্যার পর হেটে হেটে শিলিগুড়ির উত্তর দক্ষিন ঘুরে ঘুরে অন্য একটা হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে চলে এলাম। রাত ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পর্লাম। সকালে হোটেলে রিসিপশনে বল্লাম, নেপাল যাব কিভাবে যাব? ওরা বল্ল, এখান থেকে টেক্সিক্যাবে নেপালের বডার পর্যন্ত যেতে পার্বেন। অথবা বড় রাস্তা থেকে লোকাল বাসে মাত্র ১৫ টাকায় চলে যেতে পার্বেন।

আমি বড় রাস্তায় আস্তেই একজন বল্ল কোথায় যাবেন? আমি বল্লাম, কাটমুন্ডু। সে আমাকে বল্ল, আমরা এখান থেকে কাটমুন্ডুর গাড়ীর টিকেট দেই। আমি বল্লাম, আমি আগে কাকরভিটা দেখবো তার পর কাটমুন্ডু যাব। তারা বলল, অসুবিধা নেই। আগে টিকেট কেটে নিন।

বল্লাম, আমার লোক আছে কাটমুন্ডুতে তার সাথে আগে যোগাযোগ করে তার পর টিকেট কাটবো। এসময় তারা আমাকে ভয় দেখালো, বলল, আপনাকে এখন পুলিশে দেব বাংলাদেশের লোক হয়ে কাটমুন্ডুতে আপনার লোক থাকে কেমন করে? আমি বল্লাম, ঠিক আছে পুলিশ ডাকেন। অন্য একজন তাকে বলল, বাদ দাওতো দাদা। আমি রাস্তা পার হয়ে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা কর্তে লাগ্লাম। গাড়ীও এসে গেল।

আমি গাড়ীতে উঠেগেলাম। যায়গাটার নাম তালতলা না কি যেন ঠিক মনে নেই কাকরভিটার এপারের বাসস্টান্ড। বাসস্টান্ডে নেমে দেখলাম লোকজন পাসপোর্ট নেই ভিসা নেই ব্রিজ বেয়ে সবাই নেপালে চলে যাচ্ছে। আমিও ব্রিজ বেয়ে হাটতে হাটতে নেপাল পৌছে গেলাম। এখানে দেখলাম ইমিগ্রেশনের অফিস।

অফিসে যোগাযোগ না কর্লেও কেউ বাধা দিচ্ছে না। আমি ইমিগ্রেশন অফিসে যোগাযোগ কর্লাম। আমার পাসপোর্টে ভিসা রয়েছে। সেখানে সিল মার্তে হবে। আমি আমার পাসপোর্ট দেখালাম।

এখানে কেউ বাংলা জানে না। আমাকে এই প্রথম অন্য কোন ভাষায় কথা বল্তে হলো। এখানের সবাই নেপালী ভাষায় কথা বলছে। আমি নেপালী ভাষা জানিনা। কেউ একজন মনে হয় হিন্দিতে কি যেন জিজ্ঞেস করলো।

আমি হিন্দি ভাষাও তেমন বুঝিনা। বল্লাম, আই হ্যাভ কাম ফর্ম বাংলাদেশ। এবার তারাও আমার সাথে ইংরেজীতে কথা বলতে শুরু কর্লো। তারা বলল, ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে দেখাননি? আমি বল্লাম, ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন কোথায় আমিতো চিনিনা। তারা বল্ল, ব্রিজের ঐপারে।

ওখানে আগে দেখিয়ে আসেন। আমি আবার ব্রিজের ওপার চলে গেলাম। এখানে রিক্সা চলাচল কর্তো। আমি রিক্সায় চেপে এপারে আস্লাম। ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন প্রায় দেখা যায়না এমন একটা বাড়ীতে আমি সেখানে ঢুকে আমার কাগজ পত্র দেখালাম।

আমাকে ইমিগ্রেশন ফর্ম দিল। আমি পুরণ করে দিলাম। তারা আমার পাসপোর্টে সিল মেরে দিলো। এখানে মোটামুটি ভিড় ছিল। একজন ইন্ডিয়ান ফর্ম কিভাবে পুরণ কর্তে হয় বুঝিয়ে দিচ্ছে।

একজন বাংলাদেশী পাসপোর্ট ধারীকে দেখলাম ফর্ম ভুল পুরণ করে নিয়ে গেছে। তাকে বকা দিচ্ছে আর বুঝিয়ে দিচ্ছে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার। আমার ডাক এল কোন প্রকার টাকা চাওয়া ছাড়াই মনে হলো খুব ভালো একটা সার্ভিস পেলাম। ইমিগ্রেশন কাস্টম্স শেষ করে আবার সেই ব্রিজ পার হয়ে নেপাল পৌছলাম। নেপালের সেই ইমিগ্রেশন অফিসে আবার পাসপোর্ট দেখালাম।

আবার ইংরেজীতে কথা বলা শুরু হলো। খুব সহজেই পাসপোর্টে সিল লেগে যেতে লাগ্লো, অল্পতেই শেষ হলো ইমিগ্রেশন ও কাস্টম্স এর কাজ। এবারে আস্তে আস্তে হেটে হেটে নেপালে প্রবেশের পালা। এই এলাকার নাম কাকরভিটা। বাইপথে নেপাল যাওয়া আসা করা লোকজনদের কাছে খুবই পরিচিত নাম।

অনেকে নেপালে যাওয়া বল্তে এই কাকরভিটাকেই বুঝে। কারণ নেপালের ভিসায় সিল মেরে এই কাকরভিটা থেকেই বেশীর ভাগ মানুষ ফিরে আসে। যাদের শুধু পাসপোর্টে ভিসা লাগানো দরকার তারা। আমি কাকরভিটা বাসস্টান্ডে গিয়ে কাটমুন্ডুর বাস খোজলাম। সকলকেই দেখলাম ইংরেজী কথা বল্তে ও বুঝতে পারে।

মোটামোটি চলার মতো হলেও বুঝে। কাটমুন্ডু বাস ভাড়া চাইলো ৪৮০ রুপি (নেপালী রুপি) যা বাংলাদেশী টাকার সমমান। আমার কাছে কিছু ইন্ডিয়ান রুপি ছিল যা খুব বেশী নয়। এখানে ইন্ডিয়ান রুপিও চলে। আমি ডলার ভাঙ্গাতে চাইলাম।

কয়েকটা মানি চেঞ্জরে দোকানে ডলার ভাঙ্গাতে গেলাম কিন্তু সেখানে ইন্ডিয়ান রুপি ভাঙ্গানো ছাড়া অন্য কোন দেশের টাকা ভঙ্গায়না। কজন আমাকে বল্ল পাশেই নেপালের ব্যাংক রয়েছে সেখানে ভাঙ্গাতে পার্বো। আমি নেপাল ব্যাংকে গেলাম ও ডলার ভাঙ্গানোর কথা বল্লাম। সেখানে আমার পাসপোর্টের ফটোকপি চাইলো। আমার কাছে কোন ফটোকপি ছিলনা।

ফটোকপির জন্য কাকরভিটা বাজারে এসে ফটোকপির দোকান খুজে ১০ ইন্ডিয়ান রুপি খরচ করে ২ টি কপি কর্লাম। ফটোকপি নিয়ে এসে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আমি ডলার ভাঙ্গানো শেষ কর্লাম। প্রতি ডলার ৭০ নেপালী রূপিতে মাত্র ২০ ডলার ভাঙ্গিয়ে আমি বাসস্টান্ডে এসে কাটমুন্ডুর টিকেট কেটে নিলাম। স্থানীয় সময় ২টার সময় বাস ছার্লো। আমি খাওয়া দাওয়া সেড়ে বাসে উঠে বস্লাম।

--- চলবে ---- ভ্রমন সময় ২০০৫ সাল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।