আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংসদে সংবাদপত্রের প্রতি তীব্র আক্রমণ (সমকাল, আমাদের সময় ও প্রথম আলোর প্রতি ক্ষোভ)

মা বাবার সেবা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত

জাতীয় সংসদে গতকাল মঙ্গলবার অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে দুই মন্ত্রী এবং মহাজোটের পাঁচ সাংসদ সংবাদপত্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন। দুই মন্ত্রী সাংসদদের সম্পর্কে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদের উল্লেখ করেন এবং এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। রাত সোয়া সাতটায় শুরু হয়ে এ আলোচনা চলে প্রায় এক ঘণ্টা। স্পিকার আবদুল হামিদও আলোচনার ফাঁকে কয়েক দফা বক্তব্য দেন। এর আগে প্রশ্নোত্তরপর্বে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত একাধিক সংবাদ সম্পর্কে স্পিকারের রুলিং দাবি করে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক। তিনি বলেন, সাংসদদের গাড়ি পাওয়ার বিধান ১৯৮৮ সাল থেকে রয়েছে। ২২ বছর ধরে সাংসদেরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই আইন বাতিল করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, পত্রিকাটি ছেপেছে, সাংসদেরা সংসদে হ্যাঁ-না করেন।

সাংসদদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব সংবাদ ছাপা হচ্ছে। তারা এক-এগারোর পূর্বের অবস্থায় দেশকে নিয়ে যেতে চায়। নইলে এসব সংবাদের অর্থ কী? এক-এগারো ব্যর্থ হলেও তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এ ব্যাপারে সংসদকে রুলিং দিতে হবে, সতর্ক হতে হবে। এরপর স্পিকার বলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সাংসদদের সরকারি গাড়ি দেওয়া হবে।

চালকসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচও সরকারিভাবে দেওয়া হবে। এ জন্য দরপত্র আহ্বানের দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়। এরপর ব্যবসায়ীরা আমার কাছে আসতে শুরু করেন। তাঁরা বলেছেন, আপনি আমাদের গাড়ির দরপত্র দিলে আপনার জন্য দুই-চার-পাঁচটা গাড়ি কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমার খারাপ দোষ থাকতে পারে, আমি চোর না।

হিসাব অনুযায়ী ৮০০ কোটি টাকার টেন্ডার হলে ২০০ কোটি টাকা তাঁরা ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শেষে প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে সরকারি গাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, সাংসদেরা নিজেদের উদ্যোগে গাড়ি কিনুন। এতে সরকারের খরচ অনেক কমে যাবে। প্রথম আলো আমার এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিল।

অথচ এই প্রথম আলোই সাংসদদের পছন্দের গাড়ির বিষয়ে কটাক্ষ করে সংবাদ পরিবেশন করেছে। কার্টুন একে গাড়ির ওপর আওয়ামী লীগ-বিএনপির সাংসদদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সাংসদদের হেয় করা হয়েছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এক-এগারোর আগে যে চক্র চক্রান্ত করেছিল, সেই চক্রই সাংসদদের নিয়ে এসব লিখে যাচ্ছে।

একটি বিশেষ গোষ্ঠী আরেকটি এক-এগারো করতে চাইছে। যারা এক-এগারো সৃষ্টি করেছিল, তারাই এখন সাংসদদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আবারও অগণতান্ত্রিক সরকার এসে ক্ষমতা দখল করবে। প্রথম আলোর সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, এক-এগারোর সময় প্রথম আলোর সম্পাদক কী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা দেখতে হবে। তাঁরা এখনো যা করছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে করছেন।

তাই এখনই এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, সংসদের গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে দেশে কী হবে, সেটা স্পষ্ট। আমাদের ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ির দরকার নেই। আমাদের সরকারি গাড়ি দেন, বাড়ি দেন। যাঁরা সাংসদদের সমালোচনা করেন, তাঁরা দেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের সংসদে তলব করেন, ব্যবস্থা নিন। তিনি বলেন, কিছু সংবাদপত্র ও বুদ্ধিজীবী টকশো-সেমিনারে জনপ্রতিনিধিদের চরিত্র হনন করেন। জনগণের প্রতি তাঁদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাঁদের বাড়িতে ভিক্ষুকও ঢুকতে পারে না। অথচ রাজনীতিবিদদের বাসায় কত লোকের চায়ের বিল দিতে হয়।

সংবাদমাধ্যমকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, আমি গতকাল (সোমবার) সংবাদ পরিবেশনে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে যত্নবান হতে বলেছি। ইনকিলাব লিখেছে, আমি প্রতিবেদককে সতর্ক করেছি। কোথায় সতর্ক করেছি? নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, গণমাধ্যমের উচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্মান প্রদর্শন করা। দু-একটি পত্রিকায় ষড়যন্ত্রের চেহারা দেখতে পাই। জরুরি অবস্থার সময় প্রথম আলো এমপি হোস্টেল নিয়ে কুৎসা রটনা করেছিল।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক-এগারোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর শাস্তির দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন হয়েছে। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংসদ ও সংবাদমাধ্যম বিপরীত অবস্থানে থাকতে পারে না। সব সাংবাদপত্র বা সাংবাদিক নয়, কতিপয় সাংবাদিক- পত্রিকা সাংসদদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সংসদকে হেয় করার চেষ্টা করছেন, এটা মোটেও ঠিক নয়। তিনি বলেন, তাঁদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। স্পিকারকে অবমাননা করে কিছু লেখা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ ঠুঁটো জগন্নাথ হতে পারে না। সংসদ ও স্পিকারকে অপমান করে গণতন্ত্র রক্ষা করা যায় না।

গণতন্ত্রের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে কেউ সংবাদ পরিবেশন করলে তা কেউ মেনে নেবে না। সুরঞ্জিত বলেন, এমপিরা পায়ে হেঁটে নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন করবেন আর সরকারি কর্মকর্তারা গাড়িতে চড়ে বেড়াবেন তা কেমন কথা। সংসদ সম্পর্কে যা লেখা হয়, তা আদালত সম্পর্কে লেখা হলে আদালত অবমাননার মামলা হতো। স্পিকার বলেন, সমকাল লিখেছে, সাংসদদের ভ্রমণবিলাস। আমার সময়ে যাঁরা আগে কখনো বিদেশে যাননি, আমি তাঁদের বিদেশে যাবার সুযোগ করে দিয়েছি।

আমার ছেলে ব্যক্তিগত খরচে বিদেশ সফর করেছে। তারা এমনভাবে লিখেছে, যাতে মনে হয় সংসদের টাকায় সে বিদেশ সফর করেছে। তিনি বলেন, আমি আমার অরিজিনাল স্ত্রীকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলাম। অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে গেলে সেটা ভালো খবর হতে পারত। এ ধরনের খবর পরিবেশনের আগে সাংবাদিকদের আরও ভালো করে খোঁজখবর করা উচিত।

তিনি আমাদের সময় পত্রিকার একটি সংবাদের কথা উল্লেখ করেও এর সমালোচনা করেন। নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমে মিথ্যাচারের অভিযোগ করে বলেন, কাল সংসদে হুইপ লিটন চৌধুরী অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর নামে কটাক্ষ করা হয়েছে। পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি যে কাজ করছে, এক-এগারোর পর অনেক সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছে। বাংলাদেশকে অকার্যকর করতে চেয়েছে। শুধু ব্যবসা করার জন্য তারা মিথ্যাচার করছে না, উদ্দেশ্যমূলক ভূমিকাও পালন করছে।

তিনি বলেন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে সংসদে ডেকে জিজ্ঞেস করুন, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে তাঁর ভূমিকা কী ছিল। সাপ্তাহিক একতা থেকে এ পর্যন্ত তাঁর উত্থান কীভাবে হয়েছে, জনগণ তা জানতে চায়। জাসদের মইনুদ্দীন খান বাদল বলেন, সাংবাদিকদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা যে এখন প্রাণভরে লিখতে পারছেন, সাংসদদের গালি দিতে পারছেন, সে অভয় এ সংসদই দিয়েছে। অন্য কোনো শাসনে সাংবাদিকদের এ অধিকার থাকবে না, ছিলও না। সংসদ না থাকলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী কিংবা সাংসদদের বিরুদ্ধে কিন্তু লিখতে পারবেন না।

তাই যাঁরা সংসদ ও সাংসদদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লেখেন, তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সংসদ না থাকলে দেশে কী আসবে, সেটা ভেবে কাজ করতে হবে। হেয় করা ফ্যাশন: এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংসদ ও সাংসদদের অবমাননা ও হেয় করা সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী, যাঁরা এটা করছেন তাঁদের মনে রাখা উচিত, সংসদকে খাটো করার চেষ্টার অর্থ হলো গণতন্ত্রকে হেয় করা। হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশে এলাকার উন্নয়নে সাংসদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সাংসদদের সম্পৃক্ত করলেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে। তাই এ অবস্থায় সংসদ নিয়ে কটাক্ষ করলে এর গতি কিছুটা হলেও ব্যাহত হবে। আশরাফের বক্তব্যের পর স্পিকার বলেন, সাংসদদের যখন এলাকার উন্নয়নের জন্য ১৫ কোটি টাকার কাজ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন একটি মহল যেন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, ১৫ কোটি টাকা এমপিরা খেয়ে ফেলবেন। কিন্তু এমপিরা তো ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প দেবেন। যাঁরা সংসদ বা সাংসদদের সম্পর্কে কথা বলছেন, তাঁদের একটু বুঝে এসব বলা উচিত। সূত্র : Click This Link আমার দেশ মাহমুদুর রহমানের পত্রিকা এইডা না হয় সরকারের বিরুদ্ধে লিখল কিন্তু সব গুলাই কি সরকারের বিরুদ্ধে লিখা শুরু করল নাকি সত্য প্রকাশ হইল?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.