আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাস আমি তোমাকে ভালোবাসব

১. সেটি ’৭৮ সালের ১৫ আগস্টের কথা। তখনো স্কুলের গণ্ডি পার হইনি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি থমথমে। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির জন্য অন্ধকার সময়। আওয়ামী লীগ নামের রাজনৈতিক দলটির নেতা-কর্মীরা তখনো কারাগারে।

সশস্ত্র প্রতিবাদী ও প্রতিরোধযুদ্ধে যাওয়া কর্মীরা নির্বাসনে। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া অনেকটাই দুঃসাহসের ব্যাপার। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের মার্শাল লর ওই জমানায় একদিকে শাসকরা অন্যদিকে রাজনীতির উগ্রপন্থি সশস্ত্র অতিবিপ্লবীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের জন্য রীতিমতো মূর্তিমান আতঙ্ক। পায়ে পায়ে বিপদ। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে খুনি মোশতাক হয়ে জেনারেল জিয়ার সেনাশাসন পর্যন্ত স্বৈরশাসনের পাথরে চাপা পড়ে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের হƒদয়।

জেলখানায় চার নেতা হত্যাকাণ্ডসহ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে ও নির্বাসনে আবার কাউকে পলাতক ফেরারি বানিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই কঠিন সময়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলকে সংগঠিত করতে স্বামী হারানোর বৈধব্য নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবদুল মালেক উকিল ও মিজানুর রহমান চৌধুরীরা সঙ্গে ছিলেন। পরে ’৭৮ সালের কাউন্সিলে কারামুক্ত আবদুর রাজ্জাক দলের সাধারণ সম্পাদক ও আবদুল মালেক উকিল সভাপতি হয়ে সারা দেশে দলকে সংগঠিত করেন। সারা বাংলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন অনন্যসাধারণ সংগঠক আবদুর রাজ্জাক।

মিজানুর রহমান চৌধুরী একাংশ নিয়ে বেরিয়ে গেলেও আবদুর রাজ্জাকই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারিত্বের পতাকা নিয়ে, আদর্শবান কর্মীনির্ভর প্রজ্ঞাবান সংগঠকদের নিয়ে দলকে বিকশিত করতে থাকেন। তার সঙ্গে আরও অনেক নেতা ছিলেন। কারাবন্দী ওবায়দুল কাদের ও মুক্ত বাহলুল মজনুন চুন্নু ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীর, ফজলুর রহমান, রবিউল আলম মুক্তাদির চৌধুরীসহ অনেকেই ছাত্রলীগ পুনর্গঠনে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন।

সেই ’৭৮ সালের ১৫ আগস্ট বাদ আসর সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টসংলগ্ন পুরনো কলেজের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জাতির জনক ও তার পরিবার-পরিজনের আÍার মাগফিরাত কামনায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন।

সেই মাহফিলে শরিক হয়েছিলাম গভীর আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে। তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন আমার অগ্রজ অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর। সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন আর তাদের শক্তি ও সাহসের উৎস হয়েছিলেন বর্তমান নিউইয়র্কপ্রবাসী মারুফ চৌধুরী, আমির হোসেন রেজা, শাহামাল মিয়াসহ কেউ কেউ। ’৭৬ সালে মতিউর রহমান পীরকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ’৭৮ সালে প্রথম ও ’৮০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো জেলা সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

সেদিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মরহুম অ্যাডভোকেট আবদুর রইছ ও সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুজ জহুর। সেই মিলাদ মাহফিলে গিয়ে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর জন্য সবার আবেগ-অনুভূতি। সবারই মন ছিল বিষণœ। বেঁটে-খাটো দলীয় কার্যালয়ের পিয়নটিও বঙ্গবন্ধুর জন্য কেঁদেছিল। সেই সময় বিশাল বিশাল প্যান্ডেল বেঁধে মাইক বাজিয়ে পথে পথে কাঙালিভোজের আয়োজন করতে না পারলেও সবাই আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা-শ্রদ্ধায় আল্লাহর দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাত করেছিলেন।

তখন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের টাকা-পয়সা ছিল না। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পকেট ফাঁকা। বাপ-মার কাছ থেকে পাওয়া হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে খেয়ে না খেয়ে রাত-দিন সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ করতেন। শুভাকাক্সক্ষীরা গোপনীয়তার সঙ্গে যে যা পারেন সাহায্য করতেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে যারা নয়ছয় করে দলকে বদনামি করেছিলেন সেই দুঃসময়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

একবার অন্যান্য মসজিদের মতো ১৫ আগস্টের এক মিলাদ মাহফিলে ষোলঘর গম্বুজওয়ালা মসজিদে মাগরিবের পর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিলের জন্য আমাকে ও তুহিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তবারকসহ। মসজিদের ইমাম সাহেব যখন বললেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এখন মিলাদ মাহফিল হবে, আপনারা থাকবেন। তখন দুই ব্যক্তি উঠে চলে গিয়েছিলেন। তাদের চলে যাওয়ার দৃশ্য আমার ও তুহিনের চোখে পানি এনে দিয়েছিল। সেই সময় আমরা হাতে লেখা পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে দেখতাম অগ্রজরা লাগাতেন।

লেখা থাকত- ‘এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে। তুমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাস আমি তোমাকে ভালোবাসব। ’ শেষ স্লোগানটি আমাদের হƒদয়ে খুব দাগ কেটেছিল। পরে আমরাও এটি দেয়ালে দেয়ালে লিখেছি যেখানে সেখানে।

সেই দিন এখন অতীত। ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হয়ে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেছিলেন। তিনি এসে দীর্ঘ সংগ্রামের পথে আওয়ামী লীগকে দুইবার গণরায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনেছেন। সেইসব সংগ্রামে সাহসী মিছিলে আদর্শবান ত্যাগী নেতা-কর্মীর দল ছিল আওয়ামী লীগ। আজ এই আওয়ামী লীগ কতটাই না বদলে গেছে।

তবু আল্লাহর কাছে আমাদের বড় শুকরিয়া যারা পঁচাত্তর-উত্তরকালে মনে করেছিলেন আর কোনো দিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না, শেখ মুজিবের নাম কেউ নেবে না সেই তারা মানুষের ঘৃণার দৃষ্টি সয়ে আÍগ্লানিতে ডুবে ডুবে দেখেছেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাকের নামের আগে মীরজাফর যুক্ত হয়েছে। একাকিত্বের যন্ত্রণা নিয়ে মরতে হয়েছে। আর আজ লাখো মুজিবই ঘরে ঘরে। ২. আওয়ামী লীগ দুইবার ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট এলে বার বার দেখেছি অলিগলিতে মাইক বেঁধে গরু জবাই করে কাঙালিভোজের আয়োজন করতে।

একদিকে ক্ষমতার ছায়া অন্যদিকে অর্থবিত্তের প্রভাব থাকলেও সেই ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দুঃসময়ে যে শোক দিবস পালন করতেন এখনকার শোক দিবসের সঙ্গে তার পার্থক্য যোজন যোজন। এখন টাকা আছে, লোকবল আছে, আয়োজন আছে নেই শুধু প্রাণ, আবেগ ও ধর্মীয় গাম্ভীর্য। তখন টাকা-পয়সা ও ক্ষমতার ছায়া না থাকলেও শোক দিবসের আয়োজনে কী আলোচনায়, কী মিলাদ মাহফিল বা কাঙালিভোজে সবখানেই নেতা-কর্মীদের প্রাণ, আবেগ ও অনুভূতি গভীরভাবে উপলব্ধি করা যেত। উপলব্ধি করা যেত ভাবগাম্ভীর্যের। জাতীয় শোক দিবসে যারা আবেগ, অনুভূতি, শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশের চেয়ে, মন-প্রাণ উজাড় করে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত চাওয়ার চেয়ে লোক দেখানো গরু জবাই ও কাঙালিভোজের প্রতিযোগিতা করেন তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা কতটা লালন-পালন ও বিশ্বাস করেন তা নিয়ে সংশয় জাগে।

শোকের এই মাসটিতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাসহ পরিবার-পরিজন সবাই ভীষণ কষ্টে থাকেন। সাধারণ মানুষ সেই আবেগ ও অনুভূতি রাখেন। আজকের আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বাস করা একটি সুবিধাবাদী অংশ সেই আবেগ-অনুভূতি রাখেন না বলেই শোক দিবসের সেই প্রাণ দেখা যায় না। প্রতি বছর ধানমন্ডির বাড়িতেই কেবল মহিলা আওয়ামী লীগের মিলাদ মাহফিলে সেই গাম্ভীর্য পাওয়া যায়।

৩. অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে গণতন্ত্রের সংগ্রামের ডাক দিয়ে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের এই শোক দিবসে দলীয় কার্যালয়ে নেতানেত্রীদের জšদিনের কেক কেটে টিভি ক্যামেরার সামনে একে অন্যের মুখে তুলে দেন, হাসাহাসি করেন তারা নিজেরাও জানেন না এতে তাদের নেতানেত্রীদের খাটোই করেন না, বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে তাদের নিজেদের নির্লজ্জ চেহারা উšে§াচিত করেন।

জাতির মহান নেতার হত্যাকাণ্ডের বেদনাবিধুর দিনে কখনই কোনো গণতন্ত্রকামী মানুষ জন্মদিনের কেক কাটার আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। গতকাল রাস্তায় রাস্তায় যেমন প্রাণহীন কাঙালিভোজের প্রতিযোগিতা দেখে মনে হয়েছে এরা বঙ্গবন্ধুর আÍাকেই কষ্ট দিচ্ছে লোক দেখানো আয়োজন করে, তেমনি বিএনপির পল্টনের কার্যালয়ে দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এককালের ছাত্রলীগ নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন থেকে ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাদের কেক কাটা আর পরস্পরকে মুখে তুলে খাওয়ানোর দৃশ্য কতটা বেমানান, অমানবিক লেগেছে তা তারা বাড়ির স্ত্রী-সন্তানদের কাছে জানতে চাইলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। তাদের নিজস্ব বিচারবোধ হারিয়ে ফেললেও অন্যের কাছ থেকে পূর্ণ সত্য জানতে পারবেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ বা প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, থাকতে পারে বৈরী সম্পর্ক, তাই বলে একটি জাতির স্বাধীনতার জন্য যে নেতা তার জীবন-যৌবন উৎসর্গ করে গোটা বাঙালিকে তার নেতৃত্বে এক করে সশস্ত্র যুদ্ধে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরিবার-পরিজনসহ ঘাতকের হাতে শাহাদাতবরণের শোক দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা জেনারেল জিয়াউর রহমানের রক্ত-ঘামে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির নেতারা আর যাই হোক তার স্ত্রী ও গণতন্ত্রের সংগ্রামের মহান নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কেটে ফটোসেশন করতে পারেন না। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বইটি পড়া উচিত।

আমাদের অনাগত প্রজšে§র জন্য পূর্বসূরি হিসেবে একটি সুস্থ, সুন্দর, সম্মান ও মর্যাদার রাজনৈতিক সংস্কৃতির ঐতিহ্য গড়ে তোলা তাদেরই দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আজকের আওয়ামী লীগ এক নয়। বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালি, বাংলা ও বাংলাদেশ। জাতির এই বেদনাবিধুর দিনে কেক কেটে বিএনপি নেত্রীর জন্মদিন পালন না করলে বঙ্গবন্ধু নয়, আমাদের বিরোধী দলের নেতাই সম্মানিত হবেন। রাজনীতি অনেক মাধুর্য পেত।

৪. বঙ্গবন্ধুর নামে যারা রাজনীতি করেন তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন- জাতির এই মহান নেতার অসমাপ্ত আÍজীবনী পাঠ করেছেন? পাঠ করে না থাকলে বা করে থাকলে সেখান থেকে কতটা অর্জন করে চিন্তা ও চেতনায় লালন করে মানুষের পাশে হাঁটছেন? একজন শেখ মুজিবুর রহমান খোকা থেকেই মানুষের পাশে হেঁটে হেঁটে দীর্ঘ সংগ্রামের পরতে পরতে দেশের মাটি ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের নজির রেখে ভোগবিলাসের বদলে ত্যাগ-তিতিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছিলেন বলেই দুনিয়া কাঁপানো নেতা হয়েছিলেন। বাঙালি জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। মাথা উঁচু করে হেঁটেছিলেন বলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন, আপস করেননি। এমন কর্মীঅন্তপ্রাণ, এমন বীরত্বগাথা জনদরদি ক্যারিশম্যাটিক বাঙালি নেতার আবির্ভাব এই জাতির জীবনে আর কখনো হবে না। তিনিই একবার এই জাতিকে একসুতোয় বেঁধেছিলেন।

তার বাগ্মিতা, তার সাহস, তার বার বার জেল খাটা থেকে ফাঁসির মঞ্চে আরোহণ এমনকি পাকিস্তানি জল্লাদদের কবরের পাশে দাঁড়িয়েও নিঃশঙ্কচিত্তে দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অবিচল থাকার নজির আর কেউ দেখাতে পারেননি, পারবেনও না। কিন্তু, তার নামে রাজনীতি করবেন, তার দেশে রাজনীতি করবেন আর বিদেশিদের স্বার্থ রক্ষা করবেন, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি, মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য, রাজনীতির মাধ্যমে অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মালিক হবেন তা হবে না। বঙ্গবন্ধুর জীবন ছিল সাদামাটা। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। যারা আজ তার কথা বলে রাজনীতি করেন, তারা রাতারাতি ব্যাংক-বীমাসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর বিত্ত-বৈভবের মালিক হন কেমন করে? ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়িটিতে গেলে ঘাতকের বুলেটের চিহ্নই দেখা যায় না, বাঙালির মহত্তম নেতা শেখ মুজিবের অতি সাধারণ আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়।

শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দল, দলের কর্মী ও গরিব মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতেন। নিজের বা সন্তানদের ভোগবিলাসের জন্য খরচ করেননি। মানুষের সাহায্য নিয়ে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া করাননি। দামি দামি গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াননি। কষ্ট, নির্যাতন, জেল সয়ে কর্মী তৈরি করেছেন, সংগঠন করেছেন, জনমত পক্ষে টেনেছেন, মানুষের আস্থা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অর্জন করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন।

আজ জনকল্যাণের নামে, শেখ মুজিবের নামে যারা রাজনীতি করে বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছেন, তদবির বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি করে টাকা-পয়সার মালিক হচ্ছেন তারা হারাম রাজনীতি করছেন। তারা কি সত্যি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন? তার আদর্শ লালন করেন? বঙ্গবন্ধুর আÍার সঙ্গে তারা হামেশা বিশ্বাসঘাতকতা করছেন না? নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর আÍা তাদের জন্য অভিশাপ ছাড়া কিছুই দিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম উচ্চতার øেহছায়ায় যেসব নেতা তৈরি হয়েছিলেন তাদেরও কেউ কেউ ভোগবিলাসের পথে পা বাড়ানোর কারণে, গরিবের দল আওয়ামী লীগের আসল পুঁজি কর্মী ও মানুষকে না চিনে বিত্তশালীদের সংস্পর্শে গিয়ে রাজনীতিতে দেউলিয়া হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর øেহসিক্ত জীবন নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে জ্বলে উঠতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর আগে বার বার নেতা-কর্মীদের বলেছেন আÍসংযম, আÍসমালোচনার মাধ্যমে আÍশুদ্ধি করতে।

আজকের বাংলাদেশে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব দলের নেতা-কর্মীদেরই তা বলা যায়। যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন তারা সৎ রাজনীতির পথে হাঁটেন। মানুষকে ভালোবাসেন। অন্যায়, দুর্নীতি, অনিয়ম থেকে দূরে থাকেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন।

জনগণের সুখ-দুঃখের সারথী হন। ভোগবিলাস নয়, ত্যাগের মহিমায় সাদামাটা জীবনযাপনে জনকল্যাণের জন্য যারা গভীর দেশপ্রেম নিয়ে রাজনীতি করেন তারাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন। তারাই কর্মীঅন্তপ্রাণ হন। তারা সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানবলে চলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আদর্শ লালন করলে প্রতিপক্ষ নেতানেত্রীদের প্রতি সম্মান রক্ষা করেই বক্তব্য রাখতে হয়।

প্রতিহিংসাকে নির্বাসনে দিতে হয়। শত্রুর প্রতি, প্রতিপক্ষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা ও আক্রমণের ভাষা তেজস্বী হলেও মার্জিত ছিল। আজ তা নির্বাসনে রাজনীতিতে। সবচেয়ে বেদনার বিষয় জাতির এই মহান নেতাকে নিয়ে কত ধান্ধা-ফিকিরে ব্যস্ত সংগঠন দোকান খুলে। নানা পথে হাঁটে।

কত গণবিরোধী সন্ত্রাসী, গণবিরোধীরা তাদের ছবির সঙ্গে এই মহান নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার-বিলবোর্ড ডিজিটাল করে। দুঃখ হয়। তার প্রতি এই অসম্মান অসহনীয়। এটা সওয়া যায় না।



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.