বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য তথা আমিষের চাহিদা পূরণে ও বেকারত্ব দূরীকরণে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল দ্রুত বর্ধনশীল। এই জাতের ছাগল বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। ফলে ছাগলের প্রজননের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এরই ফলে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু পালন অনুষদের পশুবিজ্ঞানীরা।
একটি ছাগীকে প্রাকৃতিক নিয়মে পাঁঠা দ্বারা প্রজনন করালে একবারে যে পরিমাণ বীজ ব্যবহৃত হয়, একই পরিমাণ বীজ দ্বারা হিমায়িত কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সাহায্যে ২৫ থেকে ৩০ ছাগীকে প্রজনন করানো যায়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফল পাওয়া যায় প্রাকৃতিক প্রজনন থেকে ২৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি। এই হিমায়িত বীজ ব্যবহার বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন পশুবিজ্ঞানীরা।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার আশা করছেন, বিলুপ্তিপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও কাজে লাগানো যাবে।
ইউএসডিএ’র অর্থায়নে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গলের কৃত্রিম প্রজননে গত দুই বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছে পশুপালন অনুষদের পশু প্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগ। বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া খন্দকার প্রকল্পটির পরিচালক এবং পশুপালন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বিকল্প পরিচালক হিসেবে গবেষণা পরিচালনা করছেন। ব্ল্যাক বেঙ্গলকে পৃথিবীর সেরা জাতের ছাগল হিসেবে অভিহিত করা হলেও আন্তঃপ্রজনন ও অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার কারণে ছাগলের এ দেশি জাতটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উপলব্ধি থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাকৃবিতে কৃত্রিম প্রজননের এ প্রকল্পটি শুরু হয়।
গবেষক জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৭টি সুস্থ-সবল পাঁঠা এবং শতাধিক ছাগী সংগ্রহ করার মাধ্যমে শুরু হয় তাদের গবেষণা।
গবেষণা ফিল্ডে সংগ্রহকৃত পাঁঠার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে উন্নতজাতটি বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত পাঁঠার বীজের গুণাগুণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। বীজ প্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলে তা হিমায়িত করে এআইগানের মাধ্যমে ছাগীকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে উন্নতজাতের পাঁঠা উত্পাদন করা হয়। এভাবে প্রকল্পটির মাধ্যমে দ্রুত ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে একটি পাঁঠার সঙ্গে একটি ছাগীর প্রজননের সময় ছাগী যে পরিমাণ বীজ গ্রহণ করে তার মাত্র কয়েক শতাংশ কাজে লাগে, বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু হিমায়িত বীজ দ্বারা কৃত্রিম প্রজননে ওই পরিমাণ বীজ বেশক’টি ভাগে ভাগ করা হয়, যা ২০ থেকে ২৫টি ছাগী গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে সমপরিমাণ বীজ দ্বারা ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি ফল পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে, এই হিমায়িত বীজের দ্বারা কৃত্রিম প্রজননে ছাগীর বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা ৫০ শতাংশের বেশি, যা গাভীর বাচ্চা ধারণ ক্ষমতার প্রায় সমান। এসব হিমায়িত বীজকে তরল নাইট্রোজেনের মাধ্যমে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব হিমায়িত বীজের গুণাগুণ ৫০ বছর অটুট থাকবে, যা ভবিষ্যতে ছাগলের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করা যাবে।
গবেষকরা আশা করছেন, বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও কাজে লাগানো যাবে।
ভরণপোষণে অল্প খরচ, একসঙ্গে কয়েকটি বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা, সাধারণ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ জাতটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার হতে পারে। বিশেষ করে বাকৃবির বর্তমান এই গবেষণার ফল মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচনসহ পশু পুষ্টির চাহিদা মেটানো ও বেকার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করে মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পশুপালন গবেষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।