আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
ভ্রূণ অবস্থায় তার প্রথম চারটি মাস কেটেছে তরল নাইট্রোজেনের আধারে, হিমরাজ্যে। এরপর ৩৭ সপ্তাহ মায়ের গর্ভে কাটিয়ে শুক্রবার পৃথিবীর আলো দেখল অপ্সরা। বাংলাদেশে হিমায়িত ভ্রূণ থেকে জন্ম নেয়া এই প্রথম শিশুর মা সালমা বেগম (৩৬) একজন গৃহিণী, বাবা আফজাল হোসেন ব্যাংকার।
রাজধানীর মডার্ন হাসপাতালে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপ্সরার জন্ম হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশ নেন।
সফল অস্ত্রোপচার শেষে ডা. রাশিদা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিয়ের ৫ বছরের মাথায় সালমা-আফজাল দম্পতি গতবছর টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রথমবারের চেষ্টা বিফল হয়। এরপর সংরক্ষিত ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সন্তানের মুখ দেখলেন তারা।
ডা. রাশিদা জানান, অপ্সরা সুস্থ আছে। জন্মের সময় তার ওজন ছিল ৩ দশমিক ২ কিলোগ্রাম।
তিনি বলেন, "প্রথমে টেস্টটিউব পদ্ধতিতে ১৪টি ভ্রুণ তৈরি করা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে সালমা বেগমের জরায়ুতে ৩টি ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে সাফল্য পাওয়া যায়নি। বাকি ১১টি ভ্রুণ ৪ মাস হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ৪টি জীবিত থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সালমার জরায়ুতে স্থাপন করা হয় হিমায়িত ভ্রুণ। "
প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে অপ্সরার জন্ম পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি বলে ডা. রাশিদা জানান।
এর আগেও ৫ বার হিমায়িত ভ্রুণ থেকে শিশু জন্ম দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডা. রাশিদা। তবে সফল হননি। ষষ্ঠবারে এসে সাফল্য পেলেন তিনি।
টেস্টটিউব পদ্ধতিতে চিকিৎসা থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সালমা-আফজাল দম্পতির ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রথম দফায় টেস্টটিউট পদ্ধতির জন্য ২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে হিমায়িত ভ্রুণ সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।
হিমায়িত পদ্ধতিতে ভ্রুণ সংরক্ষণ ও শিশুর জন্ম পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. রাশিদা বলেন, টেস্ট টিউব চিকিৎসায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভ্রুণগুলোকে একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পানিশূন্য করে বিশেষ পাত্রে শূন্যের নিচে ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে জীবিত হিমায়িত ভ্রুণ সরাসরি জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
১৯৮৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন ভিক্টোরিয়া মেডিকেল সেন্টারে হিমায়িত ভ্রুণ থেকে বিশ্বের প্রথম শিশুটির জন্ম হয়। এশিয়ায় এ ধরনের প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো সফল হন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সেন্টারের চিকিৎসকরা। এটি ১৯৮৭ সালের ঘটনা।
ডা. রাশিদা জানালেন, সর্বাধিক ১৩ বছর সংরক্ষিত থাকার পর হিমায়িত ভ্রুণ থেকে শিশু জন্ম নেয়ার রেকর্ড রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআরএফ/জেকে/এমএইচবি/১৮১৫ ঘ.
আমার কথা:
আসলে এই সাফল্যের পেছনের বিজ্ঞান কিন্তু খুব সহজ।
অনেক সময় দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কোন প্রকার সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও, বছরের পর বছর সন্তান হয় না। কারন, স্বামীর শুক্রানু কোন অজানা কারনে স্ত্রীর ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারছে না। এটা বেশি দেখা যায় স্ত্রীর বয়স বেশি হলে তখন। বিজ্ঞানীরা এই নিষিক্তকরণের (Fertilization) কাজটুকুই করে দেন। স্বামীর শুক্রানু ও স্ত্রীর ডিম্বানু টেস্টটিউবে নিষিক্ত করা হয় অথবা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে স্ত্রী ডিম্বানুতে স্বামীর শুক্রানুর ক্রোমজোম দিয়ে দেওয়া হয়।
তারপর নিষিক্ত ডিম্বানুকে (ভ্রুন) স্ত্রীর জরায়ুতে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে একদম সাধারন উপায়েই সেটি ধিরে ধিরে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিনত হয়। চাইলে সাথে সাথেই নিষিক্ত ডিম্বানু জরায়ুতে রাখা যায়, অথবা একে তরল নাইট্রোজ়েনে -১৯৬ ডিগি তাপমাত্রায় হিমায়িত করে রাখা যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।