আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তর্নিহিত নাট্যমর্ম ও হুশ ফিরে পাওয়া একজন নাট্যকার

নিজেকে হয় নাই চেনা

তরুন প্রজন্মের সফল নাট্যকার শাহেদ জামান, এই বয়সে অন্য কারও নামের আগে “সফল নাট্যকার” কথাটি কেউ বলতে পেরেছিল কিনা তা তার জানা নেই, খুজলেও কেউ পাবে কিনা তা নিয়ে আছে বিস্তর সন্দেহ। এত অল্প বয়সে সাফল্যের শিখরে পৌছানো কজনের কপালে জোটে? কিন্তু আজ তার এ কি হল, পান্ডুলিপির সফেদ পাতায় তার কলম আজ হঠাৎ করেই কেন যেন আর চলছে না। গতরাতে যে নাটকটি তিনি লিখতে বাকী রেখেছিলেন আজ শেষ করবেন বলে, সেই নাটকের জন্য তিনি আর কলম টানতে পারছেন না। কতগুলো প্রশ্ন, কতগুলো চিন্তা তার মনের ভিতর যেন কালবৈশাখির ঝড় তুলে চলেছে। তার ভাবনা গুলো যেন কিছুতেই সামনে এগুতে পারছে না।

শত চেষ্টা করেও ঐ মনের ভেতর অনবরত বাজতে থাকা প্রশ্ন গুলো তিনি দূরে ঠেলে দিতে পারছেন না। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। কিন্তু কিসের উপর এই প্রচন্ড রাগ তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। শখের বশে বা নিছক কৌতুহলের কারনে তিনি এই অঙ্গনে আসেন নি। ছোট বেলা থেকেই তার সরল সহজ মন টিভির পর্দার নাটক নাটিকায় সমাজের অসঙ্গতি গুলোকে ফুটে উঠতে দেখেছে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি নিজেও দেখতে পেতেন সমাজের শত অসঙ্গতি যেগুলো ওই সময়ের নাট্যকাররা তুলে আনার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাই তখন থেকেই তার ভিতরে তীল তীল করে বেড়ে উঠে একটি স্বপ্ন। তিনি তার দেখা সকল অসঙ্গতি গুলো কে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। তখন থেকেই নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে তোলেন। দেখতে দেখতে তিনি নিজেকে একজন পুর্নাঙ্গ নাট্যকারে পরিনত করেন।

বাস্তব জীবনে যখন তিনি কাজে নামলেন তখন দেখলেন তারুন্যের স্পৃহা তার সামনে নিয়ে এল আরেকটি চাহিদা, আর সেটা হল খ্যাতি অর্জনের চাহিদা। থামার মত ব্যক্তিত্ব তিনি মোটেই নন। তাই সমাজের অসঙ্গতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি খ্যাতি অর্জনের পেছনেও ছুটলেন সমান গতীতে। একের পর এক সফল নাটক শুধু লিখেই যান নি, করেছেন পরিচালনা ও প্রযোজনাও। সাড়া জাগিয়েছেন দেশের জোয়ান বুড়ো সকলের মাঝে।

কিন্তু আজ তিনি কোথায় যেন হিসেব মিলাতে পারছেন না। কেন যেন আজ নিজেকে একটি নরকের কীট বলে মনে হচ্ছে। এখন তিনি এতটুকু আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেন যে তিনি আজ নিজের উপরেই প্রচন্ড রাগান্বিত। গতকাল তিনি তরুন সমাজের জন্য সচেতনতা মুলক একটি সেমিনারে গিয়েছিলেন একজন সম্মানিত অতিথী হয়ে। সেখানে তিনি নিজে তরুন হয়ে তরুন সমাজের উদ্দেশ্যে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত বক্তব্য রেখেছিলেন।

বলেছিলেন অনেক কিছু। পেয়েছিলেন মুহুর্মুহু করতালি। দেশের বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবিরা তাকে জানিয়েছিলেন উষ্ণ সম্ভাষন। এটা যেন তার জীবনের এক অন্যরকম প্রাপ্তি ছিল। সেই যে উৎসাহ পেলেন সেখানথেকেই শুরু করেছিলেন এই অসমাপ্ত নাটকটি।

কিন্তু আজ কিছুতেই তিনি ওটা শেষ করতে পারছেন না। খ্যাতি অর্জনের নিমিত্তে মানুষের চাহিদা আর বিনোদন প্রাপ্তির মানষিকতা কে প্রাধান্য দিতে হয়েছিল তাকে। সেজন্য রচনা করে গেছেন সব দম ফাটানো হাসির নাটক। একটা পর্যায়ে এসে দেখলেন যে সমাজের জন্য তিনি নাটক লিখছেন সেই সমাজের চিরাচরিত জীবনের সাথে সামঞ্জস্যশীল কোন গল্প আর অবশিষ্ট নেই। সকল দিক নিয়েই ইতিমিধ্যে রচিত হয়ে গেছে সহস্র নাটক ও সিনেমা।

মানুষ এখন ভিন্নতা চায়। মানুষের সামনে এই ভিন্নতাকে এনেদিতে এবং খ্যাতি অর্জনের জন্য তিনি ছুটে গেলেন পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে। সেখান থেকে তুলে আনলেন “পরকিয়া” নিয়ে আসলেন ভোগ বিলাস, তুলে আনলেন বহুভুজী প্রেমের গল্প, আরও আনলেন লিভটুগেদারের গল্প, সংলাপে আনলেন চটকদার আঠারো প্লাসের জোরালো আঁচ। দর্শকের কাছে এগুলো নিয়ে এল এক ভিন্ন স্বাদ। হুড় হুড় করে জনপ্রিয়তা বেড়ে চল্ল তার।

কাজের সীমাহিন ব্যস্ততা তাকে তার চারপাশের সমাজের দিকে তাকাবার ফুসরত মোটেও দেয়নি। কিন্তু কাল যখন তরুন সমাজের উদ্দেশ্যে তাকে কিছু বলতে হবে বলে জানলেন, তখন সকল কাজ ফেলে, ব্যস্ততাকে দূরে ঠেলে তাকালেন চার পাশে। দেখলেন এক অন্য জগত। অবাক হলেন মাত্র কদিনেই পাল্টেগেল তার চারিপাশ!! পশ্চিমা সমাজের যে কালচার গুলো তিনি তার নাটকে তুলে ধরেছিলেন সেগুলো আজ বাস্তবেই মঞ্চায়িত হচ্ছে এখানে সেখানে। এ যেন এক রাতেই পালতে গেল দৃশ্যপট!! তিনি দেখতে লাগলেন এক এক করে, উন্মাদের মত এযুগের তরুনেরা ছুটে চলেছে জৈবনেশা মেটাবার জন্যে।

ওরা প্রচন্ড ভাবে মাতাল হয়ে পড়েছে। ওদের চিন্তা ভাবনা, কাজ কর্ম, চলাফেরা সব ঐ একটা জিনিস কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে আর সেটা হল বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গ পাবার নেশা। সব কিছু দেখে শুনে তিনি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করেন, কেন এমন হল? এবার দৃশ্যপটে হাজির হয় বিবেক। এক এক করে ভেষে আসে তার কাজের প্রতিফলন কিভাবে এই সমাজকে ধধংশ করে দিচ্ছে। তিনি এখন বুঝতে পারছেন এদেশের যুবক যুবতীরা কখনই এমন ছিলনা।

পাগলকে তিনিই সাকো নাড়াবার কথা স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনিই তার নাটক গুলোর মাধ্যমে ওদের পথ দেখিয়েছেন যে কিভাবে নেশার অন্য এক জগতে আস্বাদ লুটে নিতে হয়। ভিতর থেকে কে যেন ঘৃনাভরে বলে উঠে “হাসাতে হাসাতে একটি ধধংশলীলার সুচনা করে দিলে শাহেদ!! যে লীলা থামাবার সাধ্যি এ সমাজে কারও নাই” আজ তিনি ফিরে গেলেন অতীতের সেই নাটক গুলোতে যেগুলো তাকে এমন নাট্যকারে পরিনত করেছে। আবার নতুনকরে বুঝতে চাইলেন, দেখতে চাইলেন এবং পরখ করতে চাইলেন। এক এক করে তিনি পরখ করছেন আর অন্য এক ইঙ্গিতের সন্ধান পাচ্ছেন।

বয়সের অপরিপক্কতার কারনে তখনকার যে নাটক ও সিনেমা গুলোকে ঘুমন্ত সমাজে অসঙ্গতিকে তুলেধরার অন্যতম উপায় বলে মনে করেছিলেন আজ সেই একই নাটক ও সিনামের মাঝে দেখতে পারছেন স্রেফ অন্য কিছু। বিনোদন আর সমাজের অসঙ্গতি তুলেধরার আড়ালে সেখানে রয়েছে মগজ ধোলাই আর নৈতিকতা ধধংশের বীজ গুলো থরে থরে সাজানো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.