আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন, সৌখিন কৃষক হই।

বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।

(ঢাকার স্যাটেলাইট টিভিতে প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ল। এক লোক ছোট্ট একটি বালককে চাষার বাচ্চা কিংবা এই জাতীয় কিছু বলে গালি দেয়। ছেলেটির খুবই খারাপ লাগে।

মন খারাপ করে সে তার বাবাকে প্রশ্ন করে: চাষাবাদ কি অনেক খারাপ কাজ, বাবা?? আমার বাসায় বাংলাদেশী টিভি দেখার কোন সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে নেটে দুই এক বার টিভি দেখতে পাই। তাই বিজ্ঞাপনটি আর দেখার সুযোগ হয়নি। তবে সকলের অবগতির জন্য আমি বলি: চাষাবাদ মোটেও খারাপ কাজ নয়। বরং পৃথিবীর সব চেয়ে প্রাচীনতম আর মহান পেশা হচ্ছে কৃষি।

কৃষককে উঁচু তলার মানুষরা সম্মান করুক আর নাই করুক তাতে কৃষকের কিছু যায় আসে না। পেশার দিক দিয়ে কৃষক হচ্ছেন সব চেয়ে সম্মানিত এক মহান ব্যক্তি। আর আমি তো জন্মগত ভাবেই এক জন কৃষক। নিজেকে এক জন কৃষক পরিচয় দিতে পেরে আমি গর্ব বোধ করি। ) প্রায় প্রতিটি মানুষের মাঝেই একটি কৃষক সত্ত্বা কাজ করে।

আর তাই প্রতিটি মানুষই এক জন সৌখিন কৃষক হতে পারেন। এটা একটা নির্মল বিনোদন আর অবসর কাটানোর একটি ভাল মাধ্যম হতে পারে। কেননা, কৃষক মূল কাজ কারবার গাছপালা আর পশুপাখি নিয়ে। তবে সৌখিন কৃষক হবার জন্য যে জিনিসটি সব চেয়ে বেশী দরকার তা হলো গাছপালার ভালা বাসা আর আত্নার টান থাকতে হবে। তখন দেখবেন আপনি গাছের ভাষা বুঝতে পারছেন।

গাছও আপনার ভালবাসার প্রতিদান দেবে নিজেকে উজাড় করে। সৌখিন কৃষক হতে চাইলে বিশাল আকারের জমি থাকার কোন প্রয়োজন নেই। বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা বড় বড় শহর আর রাজধানীতে যারা আছেন তাদের ছাদে কিংবা বারান্দায় করতে পারেন সৌখিন কৃষির চর্চা। তবে আমি মূলত এই আলোচনায় বড় শহরে যেখানে জমি নেই সেখানে সৌখিন কৃষি চর্চার কথাই বলব। রাজধানী ঢাকায় এক টুকরো জমি এখন বেশীর ভাগ মানুষই আর কল্পনা করতে পারেন না।

তবে যাদের নিজের বাড়ী আছে তারা ছাদে বেশ ভাল কৃষির চর্চা করতে পারেন। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তাদের যদি একটু বারান্দা কিংবা করিডোর থাকে তাহলে সেখানে তারা ছোট টবে কৃষির চর্চা করতে পারেন। তাই আমার বাড়ি নেই বলে যে হতাশ হতে হবে বিষয়টি এমন নয় । বাড়ির ছাদের বাগান কেবল শখই নয় আয়ের উৎসও হতে পারে। তবে আয়টা হবে পরোক্ষ।

কেননা, বড় ছাদের কোনায় ড্রামে মাটি ভরাট করে কেউ যদি চাষ করেন তাহলে বিপুল পরিমাণ সবজি, ফল ইত্যাদি উৎপাদিত হতে পারে। কেউ কেউ যদি বেশী আগ্রহী হোন তাহলে ছাদ বানানোর সময় ইট বালি দিয়ে ড্রামের বদলে ভাল ধারক বানাতে পারেন। অনেকটা বাক্সের আকারের এই মাটির ধারক ড্রামের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। ছাদ নষ্ট করবে না। পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা থাকবে।

ছাদে যে সব ফসলের চাষ করা যেতে পারেঃ ছোট আকারের গাছ যেমন লেবু, মরিচ, টমেটো, ধনিয়া, পুইশাক, লাল শাক, পালংশাক, ফুলকপি, বাধাকপি, নানা জাতের ফুলের গাছ। বারান্দায় চাষ করা যেতে পারেঃ লেবু, কাচা মরিচ,টমেটো, নানা জাতের ফুলের গাছ। প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল স্থান নির্ধারণ করা। বাড়ি তৈরী করার সময় কেউ যদি পরিকল্পনা করেন যে ছাদে শখের কৃষি করবেন তাহলে তিনি সেই অনুযায়ী ছাদের নির্দিষ্ট জায়গায় পাকা করে ২/৩ ফুট গভীরতার মাটি ধরে এমন ধারক তৈরি করে নিতে পারেন যা মাটি দিয়ে ভরাট করলেই কৃত্তিম কৃষি জমি হয়ে গেল। যারা এটা করেননি তাদের জন্য কাজ হবে মাটি রাখার জন্য ড্রাম যোগাড় করা এবং সেগুলো ভাল মাটি দিয়ে ভরাট করা।

মাটি ভরার পূর্বে মাটি গুলো আবর্জনা পচা সার দিয়ে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এতে করে মাটিতে গাছের খাবারের কোন অভাব হবে না। মাটি প্রস্তুত হয়ে গেলে মাটি ভর্তি ড্রামগুলো যথাস্থানে রেখে দিতে হবে। তার পর যার যার পছন্দ আর ঋতু অনুযায়ী ফসলের চারা রোপন করতে হবে। ফসল নির্বাচনের সময় স্থানীয় আবহাওয়ায় ভাল হয় এমন ফসল নির্বাচন করাই হবে উত্তম কাজ।

নইলে দেখা যাবে এমন কোন ফসল লাগানো হল যা স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী নয় । এই ধরনের গাছ লাগালে দেখা যাবে হয় তো গাছ হবে কিন্তু ফল হবে না। ফল না হলে আবাদ করে আর কি লাভ? আপনার ছাদের বাগান থেকে প্রতি সপ্তাহে যদি ২ কেজি ফসলও পেতে পারেন তাহলে মাসে প্রায় ১০ কেজি ফসল পাচ্ছেন। যার বাজার মূল্য আপনাকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে পারে। গাছ লাগানোর পর নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।

কোন সমস্যা হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে দেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য কৃষি অফিস ছড়িয়ে আছে তা কিন্তু কৃষকদের জন্যই। তাই তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। তাদেরকে কাজে লাগান। আমাদের সৌখিন কৃষকদেরকে মনে রাখতে হবে, রাসায়নিক সার যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভাল।

রাসায়নিক সার আপনার কৃত্রিম জমিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই আবর্জনা পচা সার, গোবর সার ইত্যাদি ব্যবহার করলেই বেশী ভাল ফল পেতে পারবেন। শখের বাগানে পোকামাকড় ধরলে কীটনাশক ব্যবহার না করাই ভাল । যেহেতু গাছের পরিমাণ খুবই কম তাই পোকা মাকড় হাত দিয়ে ধরে ধরে মেরে ফেলুন। পোকার মারা ওষুধ মানেই কিন্তু মারাত্বক বিষ।

বিষ ব্যবহার না করতে পারলেই তা সব চেয়ে ভাল হবে। জৈব কৃষির ফসল হয় অনেক সুস্বাদু আর পুষ্টিকর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.