আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভিন্ন প্রাচীন উপকথায় পাখি এবং ইকারাসের আকাশে ডানা মেলা পাখিদের কিছু কথা

যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
কবুতরঃ যাহাকে আমি ভালোবাসি পাখি সৃষ্টিকর্তার এক সুন্দর সৃষ্টি। ফুল আর পাখি অধিকাংশ মানুষেরই খুব প্রিয়। কত শত কবি সাহিত্যিক তাদের কবিতা গল্প উপন্যাসে বার বার টেনে এনেছেন উড়ে যাওয়া কোন গাংচিলের কথা অথবা জলাশয়ের ধারে গভীর ধ্যানী দৃষ্টিতে বসে থাকা মাছরাঙ্গার কথা।

মানুষ পাখিকে ভালবাসে বলে তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উতসারিত কবিতা ,গান শিল্পকর্মে স্থান দেয় পাখিকে। পাবলো পিকাসোর শ্বেত কপোত আজো শান্তিপ্রিয় মানুষদের কাছে শান্তির প্রতীক হয়ে রয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও পাখি এসেছে বারবার। গল্পে,কবিতায় অথবা উপন্যাসে। ঝরা পালক, ধূষর পান্ডুলিপির কবি জীবনানন্দ দাশ তার রুপসী বাংলা কাব্যের অন্তর্গত "খুজে তারে মরো মিছে" কবিতায় ফেলে আসা দিনগুলোর ছবি কল্পনায় টেনে এনেছেন এক ক্লান্ত দাড়ঁকাকের কথা।

কবির কবিতা থেকে চার লাইন তুলে ধরা হলঃ আমার প্রিয় পাখি কাক খুজেঁ তারে মরো মিছে--পাড়াগাঁর পথে তারে পাবে নাকো আর; রয়েছে অনেক কাক এ উঠানে-তবু সেই ক্লান্ত দাড়ঁকাক নাই আর-অনেক বছর আগে আমে জামে হৃষ্ট এক ঝাঁক দাঁড়কাক দেখা যেত দিন রাত-সে আমার ছেলেবেলাকার কবেকার কথা সব;আসিবে না পৃথিবীতে সেদিন আবার; {খুজে তারে মরো মিছে,রুপসী বাংলা} তেমনি প্রাচীন মানুষের ও অনেক রকম বিচিত্র ধারনা ছিল পাখিদের নিয়ে। দক্ষিনপূর্ব এশিয়ায় কিছু মিথ আছে পাখি সম্পর্কে। যেমন বোর্নিয় র একটা দ্বীপে ইবান মানুষেরা বলত আরা এবং ইরিক নামের দুটি পাখি বা পাখির আত্তা সৃষ্টির সময় পানিতে ভাসতে ছিল। পানি থেকে তারা দুটি ডিম বানাল। একটা দিয়ে আরা বানাল আকাশকে ।

আরেকটা থেকে আর ইরিক বানাল পৃথিবী। । ইরিক যখন পৃথবীকে ঠিক করার জন্য নাড়াছাড়া করল তখন সৃষ্টি হল পাহাড় পর্বত নদী। তারপর তারা প্রথম মানুষের ভিতর পবেশ করল এবং প্রথম মানুষ প্রথম প্রান ফিরে পেয়ে জীবিত হয়ে উঠল। মঙ্গোলিয়ানরা বিশ্বাস করত সোনার বরন কোন এক ইগল পাখি মঙ্গল রাজাকে তার সিঙ্গহাসনে বসিয়ে ছিল।

। জাপানিরাও মনে করত তাদের দ্বীতিয় রাজাধিরাজকে কোন এক পবিত্র পাখি সিঙ্গহাসনে বসিয়ে ছিল। প্রাচীন মিথগুলোতে মৃত্যুর পর মুক্ত আত্তার ভ্রমনে পথপদর্শক হিসেবে অনেক যায়গায় দেখানো হয়েছে পাখিকে। সিরিয়াতে বলা হত ঈগল পাখি মৃত ব্যক্তির মুক্ত আত্তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় স্বর্গে। ইহুদি রা এক্ষেত্রে পথ পদর্শক হিসেবে কবুতরকে মানত।

প্রাচীন গ্রীকরা মনে করত মানুষ মারা গেলে আত্তা পাখি হয়ে উড়ে যায়। এজন্য মৃত ব্যক্তির কবরস্থানের উপরদিকে তারা ছোট একটি ছিদ্র রাখত যাতে পাখি আসা যাওয়া করতে পারে। আমাদের ভাষায় ও একটি কথা আছে প্রানপাখি অর্থাৎ প্রানকে পাখি রুপে ভাবতেই যেন সবার ভাল লাগে। প্রাচীন এই রুপকথা উপকথাগুলোতে অনেক পাখি কথা বলতে পারত বলে উল্লেখ আছে। কোন কোন পাখিকে দেখানো হয়েছে স্বর্গীয় বার্তাবাহক রুপে।

এই কথা বলা পাখিগুলোকে প্রায় সব জায়গাতেই উঠে এসেছে জ্ঞানী এবং পরামর্শদাতা হিসেবে। অনেক সময় এরা ভবিষ্যত ও বলতে পারত। ম্যাগপি,রেভেন,এবং কবুতরকে অনেক যায়গায় এরকম ওরাকল হিসেবে দেখানো হয়েছে। ইরানিয়ান মিথগুলোতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে পাখি। আবার মানুষের পাখি হওয়ার কথাও আছে ইন্দোনেশিয়া ও সাইবেরিয়ার উপকথাগুলোতে।

হিন্দু উপকথায় গারুদা নামে এক পাখি অথবা পাখিমানবের সন্ধান পাওয়া যায় যার মাথা ,ডানা ছিল ঈগলের এবং শরীর ছিল মানুষের। উপরের ছবিতে দেখানো হয়েছে হিন্দু দেবতা বিষ্ণু এবং তার স্ত্রী কে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে গারুদা। দক্ষিন আফ্রিকান মানুষেরা বলত হ্যমারবার্ড নামের এক জলচর পাখি নাকী ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেত পানিতে। কারো মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হলে সে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তিনবার কান্নার সুরে ডেকে তা জানান দিত। কাক এবং র্যিভেন কে মিথ গুলোতে দেখনো হয়েছে যুদ্ধ এবং দূর্ভিক্ষের প্রতীক হিসেবে।

ক্যথলিক এবং আইরিশরাও বিশ্বাস করত তাদের দেবীরা মাঝে মাঝে কাকের রুপে যুদ্ধে যোগ দিত। যে পক্ষে যোগ দিত সেই পক্ষকে বরন করে নিতে হত নিশ্চিত পরাজয়। আরেকটা হচ্ছে ফিনিক্স বার্ড, প্রাচীন মিশরের উপকথা অনুযায়ী যা নাকি ৫০০ বছর পর পর জন্ম নেয় এবং প্রতিবার আগুনে পুড়ে চাই হয়ে যায়। সেই ছাই থেকে আবার প্রান ফিরে পায়। ইহুদিদের মিথগুলোতে ফিনিক্স পাখির মত আরেকটি অমর পাখি আছে তার নাম হয়েল।

তার অমরত্ব লাভের ঘটনাটাও সুন্দর। স্বর্গীয় উদ্যান ইডেনে সৃষ্টিকর্তা এডাম এবং ইভ কে রেখে বলেছিলেন নিষিদ্ধ ফল না খেতে। তিনি কৌতুহলী এডাম এই নিষেধ উপেক্ষা করে খেয়ে ফেলেছিলেন নিষিদ্ধ ফল। তারপর ইডেনের সবাইকে ফল দিলেও একমাত্র হয়েল পাখি তা খেতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলস্বরুপ সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়ে তাকে অমরত্ব দান করেন।

এটি কখনো মারা যায় না, কিন্তু মাঝে মাঝে হারিয়ে যায় ঘুমের দেশে। তখন আগুনে পুড়ে চাই হয়ে গেলেও কোথাও না কোথাও তার একটি ডিম থাকে এবং তা থেকে জন্ম নেয় পুর্নাংগ হয়েল পাখি। মুক্ত বিহঙ্গের উড়া দেখে বার বার আকাশে উড়ার স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ হয়েছে মানুষ। রামায়নে পুষ্পক রথ নামক হাসে টানা রথের কথা আছে। গ্রিক পুরানে আছে ইকারাসের কথা যে পিঠে মোমের পাখা লাগিয়ে উড়তে চেয়েছিল অসীম দিগন্তে।

দিগ্বীজয়ী বীর আলেকজান্ডারও নাকী ঈগলটানা রথে যেতে চেয়েছিলেন স্বর্গে। এরকমই ব্যবিলিওনের সম্রাট নমরুদ শকুনটানা রথে রথে স্বররগে যাবার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। পাখির কথার শেষ করছি শামসুর রহমানের "ইকারুশের আকাশ" কবিতার কয়েক লাইনের মাধ্যমে উচুঁতে মেঘের স্তরে স্তরে রৌদ্রের সমুদ্রে নিয়ে গেলো। দ্বিধাহীন আমি উড়ে গেলাম সুর্যের ঠোটেঁ কোনো রক্ষাকবচবিহীন প্রার্থনার মতো।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.