আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডাইনামিক্সের ছোট্ট দুর্বলতা? (পর্ব – ২)



পর্ব - ১ জন ডাল্টনের পরমাণুবাদ - ইংরেজ রসায়নবিদ জন ডাল্টন মিশ্রিত গ্যাসের গঠন, বিভিন্ন তাপমাত্রায় বাষ্পের চাপ, বাষ্পীভবন, গ্যাসের thermal expansion ইত্যাদি নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে পরমাণুর রাসায়নিক ধারণা তৈরী করেন। তিনি ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন কেন কোন কোন গ্যাস পানিতে অন্য গ্যাসের তুলনায় বেশী দ্রবীভূত হয় – “Why does not water admit its bulk of every kind of gas alike? This question I have duly considered, and though I am not able to satisfy myself completely I am nearly persuaded that the circumstance depends on the weight and number of the ultimate particles of the several gases.” (পঠিত – 21 October 1803, মুদ্রিত – 1805) তিনি ধারণা করেন বস্তু সমূহ atom দিয়ে তৈরী। বিভিন্ন গ্যাসের পরমাণু বিভিন্ন ধরণের। কোনটি হাল্কা আবার কোনটি ভারী। ভারী গ্যাসের পরমাণুগুলো জোর খাটিয়ে পানির পরমাণুর ভেতর জায়গা করে নেয়।

তাই তারা বেশী দ্রবীভূত হয়। ১৮০৮ সালে তিনি A New System of Chemical Philosophy বইয়ে এ সম্বন্ধে তার ধারণা লিপিবদ্ধ করেন। তার ধারণাসমূহের মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – ক. পরমাণু সমূহ স্বতন্ত্র কণা যাদের মাঝে শুন্যতা বিরাজ করে খ. প্রত্যেক মৌলের নিজস্ব স্বকীয় পরমাণু রয়েছে গ. একটি মৌলের পরমাণুরা সবাই একই প্রকারের ঘ. পরমাণু অবিভাজ্য ঙ. যত প্রকার মৌল রয়েছে তত প্রকারের পরমাণু রয়েছে (তিনি নিজস্ব কিছু প্রতীক ব্যবহার করেছেন) চ. একপ্রকারের পরমাণু অন্য প্রকারের পরমাণুতে পরিবর্তন সম্ভব নয় ছ. রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণু সমূহ কেবল নতুনভাবে বিন্যস্ত হয় তিনি বলেন যে দু’টি মৌলের একটি করে পরমাণু যোগ হলে তা হয় সবচেয়ে প্রাথমিক অণু। যেমন CO। তিনি compound atom শব্দটি ব্যবহার করেন।

আবার একটি কার্বন আর দু’টি অক্সিজেন যোগ হলে হবে CO2। এভাবে তিনি Law of Multiple Proportions ব্যাখ্যা করেন। এ দিয়ে প্রাউস্টের Law of Definite Proportions ধারণাও সত্য বলে প্রমাণিত হয়। ডাল্টনের পর অবশ্য বেশ দ্রুত পরমাণুর ধারণা বিকাশ লাভ করে। ১৮০০ সালে ইটালীর পদার্থবিদ আলেসান্দ্রো ভোল্টা (Alessandro Giuseppe Antonio Anastasio Volta) ইলেক্ট্রিক ব্যাটারী তৈরী করেন।

তার কয়েক সপ্তাহ পরেই সে ধরণের ব্যাটারী ব্যবহার করে প্রথম ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে পানিকে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে বিভাজন করা হয়। ১৮৩২ সালে মাইকেল ফ্যারাডে তার ইলেক্ট্রোলাইসিসের পরীক্ষার সূত্র ধরে কিছু সূত্র প্রণয়ন করেন। তিনি ডাল্টনের মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেন তবে ধারণা করেন যে ইলেক্ট্রিসিটি হচ্ছে সেই শক্তি যা পরমাণুসমূহকে যৌগে ধরে রাখে। মোটামুটিভাবে Joseph John Thomson এর ইলেক্ট্রন আবিষ্কারের পর পরমাণু বিজ্ঞান নতুন ধারায় বিকশিত হয়। আসুন আমরা সে বিষয়ে আলোচনার আগে কিছু অখ্যাত পরমাণুর মডেল সম্বন্ধে জেনে নেই।

১৮৬৭ সালে আইরিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম টমসন (লর্ড কেলভিন নামে খ্যাত) প্রথম পরমাণুর ফিজিক্যাল মডেল তৈরীর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন যে পরমাণু হচ্ছে এক ধরণের Vortex Tube এর knot বা গেড়ো। তার কথাবার্তার সাথে বর্তমান String Theory’র কিছু মিলও পাওয়া যায়। যাহোক সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ট্র্যাক এর বিষয়। ১৯০২ সালে Gilbert Newton Lewis “Cubical Atom” মডেল ডেভেলাপ করেন।

এখানে পরমাণুর রাসায়নিক বন্ধনীর ব্যাপারটায় আলোকপাত করা হয়। এখানে বলা হয় পরমাণুগুলো ঘনকের মত, আর ইলেকট্রনগুলো ঘনকের আটটি কোনায় থাকে। পরমাণু সমূহ কোণাকুণি বা প্রান্ত বরাবর যোগ হয়ে যৌগ গঠন করে। ১৯০৪ সালে জাপানী পদার্থবিদ Hantaro Nagaoka “Saturnian Model” ডেভেলাপ করেন। এটা ছিলো অনেকটাই সৌরজগতের অনুকরণে।

অর্থাৎ ১টি খুব ভারী নিউক্লিয়াস আর তার চতুর্দিকে চক্রাকারে ইলেক্ট্রন ঘূর্ণায়মান। ইলেকট্রনগুলো ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ফোর্সের কারণে আবদ্ধ থাকে। এটা শনি গ্রহের বলয়ের স্থিতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিলো। শনি গ্রহটি বলয়ের তুলনায় খুব ভারী আর বলয় গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্সের কারণে আবদ্ধ। রাদারফোর্ডের মডেল তৈরীতে এ মতবাদের সামান্য অবদান রয়েছে, যা রাদারফোর্ড তার লেখায় উল্লেখ করেছিলেন।

এছাড়া ১৯০৩ থেকে ১৯১০ পর্যন্ত বেশ ক’টি মডেলের প্রস্তবনা আসে যেমন – ১৯০৩ – ডাইনামিক মডেল – ফিলিপ লেনার্ড (ইনি ক্যাথোড রে’র ব্যাপারেও অবদান রাখেন) ১৯০৬ – ইলেক্ট্রন ফ্লুইড মডেল – Lord Rayleigh (ব্ল্যাকবডি রেডিয়েশান বিষয়ে অবদান রয়েছে) ১৯০৬ – ভাইব্রেটিং ইলেক্ট্রন মডেল – জে. এইচ. জিনস্ (ব্ল্যাকবডি রেডিয়েশানের বিষয়ে এরও অবদান রয়েছে) ১৯০৬ – এক্সপ্যানডিং ইলেক্ট্রন মডেল – G.A. Schott ১৯১০ - The archion model - জে. স্টার্ক এগুলো বর্তমানে কেবল ঐতিহাসিক তথ্য। কোন বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নেই। আলোচনার ধারাবাহিকতার স্বার্থে উল্লেখ করা হোল কেবল। ক্যাথোড রে আবিষ্কার – ১৬৫০ সালে জার্মান বিজ্ঞানী অটো ভন গেরিক (Otto von Guericke) ভ্যাকিউম পাম্প আবিষ্কারের পর থেকেই তড়িৎ গবেষকবৃন্দ কাঁচের টিউবের ভেতর থেকে বায়ু বের করে (rarefied air) তার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চালনার পরীক্ষা শুরু করেন। ১৮৩৮ সালে ইংরেজ রসায়ন ও পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে একটি আংশিক বায়ুশুন্য কাঁচের টিউবের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চালনা করেন।

তিনি এক অদ্ভুত arc দেখতে পান যা ক্যাথোড থেকে শুরু হয়ে প্রায় অ্যানোডে গিয়ে শেষ হয়েছে। ১৮৫৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ হেইনরিখ গেইসলার কাঁচের টিউব থেকে আরও বেশী বায়ু বের করতে সক্ষম হন এবং দেখেন যে arc এর পরিবর্তে একটি glow বা আভা দেখা যাচ্ছে। এখানে ক্যাথোড রে’র ইলেক্ট্রন ভেতরের বায়ুর পরমাণুর সাথে ধাক্কা খেয়ে তাদের বিভিন্ন অর্বিটালের ইলেক্ট্রনকে উত্তেজিত করে উচ্চতর শক্তির লেভেলে নিয়ে যায়। পরে যখন ঐ ইলেক্ট্রনগুলো আবার আগের লোয়ার এনার্জি অর্বিটালে ফেরত আসে তখন বাড়তি শক্তিটা লাইট আকারে নির্গত হয়। এ কারণেই ঐ আভা দেখা যায়।

১৮৭০ সালে ইংরেজ পদার্থবিদ William Crookes ভ্যাকিউম টিউবের আরও উন্নতি করেন। তার টিউবে বায়ুর পরিমাণছিলো খুবই কম। এগুলো Crookes Tube নামেই খ্যাত। খুব উন্নত Crookes Tube এর বেলায় দেখা যায় যে সাড়া টিউবে কোন আভা নেই। কেবল অ্যানোড যেদিকে সেখানে কাঁচের গায়ে আভা দেখা যাচ্ছে।

অর্থাৎ টিউবে বায়ু না থাকায় ইলেক্ট্রনগুলো অত্যধিক বেগে ভ্রমণে সক্ষম হওয়ায় তারা সরাসরি গিয়ে কাঁচের দেয়ালে আঘাত হেনে আভা ঘটাচ্ছ। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা টিউবের ঐ জায়গায় জিঙ্ক সালফাইডের প্রলেপ লাগিয়ে দেন যাতে আভাটি আরও স্পষ্ট হয়। জার্মান পদার্থবিদ ইউজিন গোল্ডস্টাইন এর নাম দেন Kathodenstrahlen বা ক্যাথোড রে। এখানে উল্লেখ করা যায় আরেক জার্মান পদার্থবিদ Wilhelm Conrad Röntgen এই Crookes Tube নিয়ে পরীক্ষা চালাতে গিয়েই ৮ নভেম্বর ১৮৯৫ সালে X-Ray আবিষ্কার করেছিলেন। এ কারণে ১৯০১ সালে পদার্থবিদ্যায় প্রথম নোবেল প্রাইজটি তিনিই পেয়েছিলেন।

ইলেক্ট্রন আবিষ্কার – অবশেষে প্রায় শতবর্ষ আগে (১৮৯৭) ক্যামব্রীজ ইউনিভার্সিটির ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবোরেটরীতে কর্মরত বৃটিশ পদার্থবিদ Joseph John Thomson বায়ুশুন্য কাঁচের টিউবের মাঝে বিদ্যুৎ পরিচালনার বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ইলেক্ট্রন আবিষ্কার করেন। বহুদিন ধরেই তিনি ক্যাথোড রে নিয়ে গবেষণা করছিলেন। অবশেষে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা সমূহ তাকে এক সাহসী বক্তব্য রাখতে উদ্বুদ্ধ করলো। তিনি বললেন এই রহস্যময়ী রশ্মি মূলতঃ এক ধরণের অতি সূক্ষ্ম কণার প্রবাহ যা পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র, শুধু তাই নয় এরা পরমাণুর উপাদান। তিনি অবশ্য corpuscles শব্দটি ব্যবহার করেন।

সে সময়ে তা ছিলো এক বিস্ময়কর বক্তব্য। “Could anything at first sight seem more impractical than a body which is so small that its mass is an insignificant fraction of the mass of an atom of hydrogen” – J.J. Thomson ১৮৭৯ সালে Crookes ধারণা করেন ক্যাথোড রে বস্তুর বিচ্ছুরণ (radiant matter)। জার্মান পদার্থবিদ Heinrich Rudolf Hertz আর তার ছাত্র Philipp Eduard Anton von Lenard দেখান যে ক্যাথোড রে’র সামনে একটি পাতলা সোনার পাত বসালেও পেছনের কাঁচের গায়ে আভা দেখা যায়। আলোর তরঙ্গ যেমন স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে চলে যায় তেমনি এই রহস্যময় রশ্মিও পাত ভেদ করে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ এটা এক ধরণের তরঙ্গ বা ঢেউ।

উন্নত টিউবে ক্যাথোড রের গতিপথে অ্যানোডের কাছাকাছি কোন প্রতিবন্ধবকতা সৃষ্টি করলে অ্যানোডের দিকের দেয়ালে তার ছায়া দেখা যায়। শুধু তাই নয় একসময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী পাতটি গরম হয়ে যায় এমনকি কিছুটা বেঁকেও যায়। জার্মান পদার্থবিদ Johann Hittof ১৮৬৯ সালে প্রথম অনুধাবন করেন যে ক্যাথোড থেকে কিছু একটা সরল রেখায় বিচ্ছুরিত হয়ে এই ছায়ার উৎপত্তি ঘটাচ্ছে। ফরাসী বিজ্ঞানী Jean Perrin দেখান যে ক্যাথোড রে ঋণাত্মক চার্জবাহী। বিজ্ঞানীগণ ক্যাথোড রে’র কাছে চুম্বক ধরলে সেটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত।

হার্টজ দেখান যে যদি রশ্মিটি তড়িৎবাহী কণার হয়ে থাকে তবে ইলেকট্রিক ফিল্ডে তার যতখানি বিক্ষেপ হবার কথা ততখানি হচ্ছেনা। ১৮৯০ সালে জার্মান বংশোদ্ভুত বৃটিশ পদার্থবিদ Arthur Schuster ইলেক্ট্রনের চার্জ টু মাস রেশিও পরিমাপ করেন। কিন্তু তখন এটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ১৮৯৭ সালের জানুয়ারীতে জার্মান বিজ্ঞানী Emil Wiechert দেখেন যে রহস্যময়ী কণার চার্জ টু মাস রেশিও হাজারেরও বেশী। এদিকে লেনার্ড বিভিন্ন গ্যাসের মাঝে ক্যাথোড রে পরিচালনা করে সিদ্ধান্তে পৌছান যে যদি ক্যাথোড রে কণা দিয়ে তৈরী হয় তবে সে কণা গুলো হবে খুবই ক্ষুদ্র।

জার্মান বৈজ্ঞানিকেরা প্রথম থেকেই ইলেকট্রনকে তরঙ্গ ভাবছিলেন আর বৃটিশ বৈজ্ঞানিকেরা এটাকে কণা ভাবছিলেন। অবশেষে জে.জে. টমসন ভাবলেন টিউবের ভেতরের বায়ু যথেষ্ট পরিমাণে বার হয়নি তাই ইলেক্ট্রিক ফিল্ডে ক্যাথোড রে’র ডিফ্লেকশান ভাল হচ্ছেনা। তিনি অতি যত্নের সাথে টিউবের ভেতরের বায়ু প্রায় পুরোপুরি বার করতে সক্ষম হন। এবার দেখা যায় যে ক্যাথোড রে ইলেক্ট্রক ফিল্ডেও যথেষ্ট বেঁকে যাচ্ছে। তিনি নিজে কিছু পরীক্ষা চালান (তিনটি)।

প্রথম পরীক্ষা থেকে তিনি সিদ্ধান্তে পৌছান যে ক্যাথোড রে এবং এর নেগেটিভ চার্জ অবিচ্ছেদ্য। একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা যায় না। দ্বিতীয়টিতে তিনি ক্যাথোডের সামনে ডায়াফ্রাম ব্যবহার করেন যেন রশ্মিটাকে খুব সূক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এবার তিনি দু’টো ধাতব পাত এমনভাবে ব্যবহার করেন যেন একবার একটাকে ধনাত্মক আরেকবার আরেকটাকে ধনাত্মক হিসেব চার্জ দেয়া যায়। দেখা যায় রশ্মিটি ঋণাত্মকের দিক থেকে সরে যাচ্ছে, অর্থাৎ এটি নিজে ঋণাত্মক।

এবার তিনি চৌম্বিক ক্ষেত্র প্রয়োগ করেন। এবার রশ্মির ডিফ্লেকশান অন্য রকম হোল । তিনি দু’টো ডিফ্লেকশান তুলনা করে ইলেক্ট্রনের চার্জ টু মাস রেশিও সূক্ষভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হন। তিনি তার পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরণের গ্লাস টিউব, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে টিউবের ভেতর বিভিন্ন ধরণের সামান্য গ্যাস ব্যবহার করেন। পদার্থবিদ্যার পোস্টে একেবারেই কোন গণিত বা সূত্র ছাড়া ভাল দেখাচ্ছে না।

আসুন আমরা খুব সহজে টমসনের পরীক্ষার ব্যাপারে সামান্য গণিত নাড়াচাড়া করি – তিনি বিদ্যুৎবাহী ধাতব তারের কয়েল দিয়ে চুম্বক তৈরী করেন। একজোড়া কয়েল কে Helmholtz pair এ সাজালে ইউনিফর্ম ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরী হবে। টমসন এমনভাবে কয়েল জোড়া বসান যেন এর ডিফ্লেকশান ইলেক্ট্রিক ফিল্ডের ডিফ্লেকশানের বিপরীতে হয়। এবার দু’টি ফিল্ডকে সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেন দু’টি সমান ফোর্স প্রয়োগ করে। এভাবে দু’টি ফিল্ডের ফোর্স ব্যালান্স করা হোল।

কোন চার্জড্ অবজেক্টের ওপর অনুভূত বল (F) ঐ ইলেক্ট্রিক ফিল্ডের শক্তি (E)এবং ঐ বস্তুর চার্জের (q) গুণফল। অর্থাৎ - F = Eq আবার ম্যাগনেটিক ফিল্ডে কোন চার্জড্ অবজেক্টের ওপর অনুভূত বল (F) ম্যাগনেটিক ফিল্ডের শক্তি (B), তার চার্জ (q) এবং তার বেগের (v) গুণফল। অর্থাৎ - F = Bqv যেহেতু ফোর্স ব্যালান্সড্, সুতরাং – Eq = Bqv Or v = E/B অর্থাৎ বেগ হচ্ছে ইলেক্ট্রিক ফিল্ডের শক্তি আর ম্যাগনেটিক ফিল্ডের শক্তির ভাগফল। যেহেতু টমসন নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন সুতরাং তার এ দু’টি ফিল্ডের শক্তি জানা ছিলো। এভাবে তিনি ক্যাথোড রে’র বেগ নির্ণয় করতে সক্ষম হোন।

এরপর আসে চার্জ টু মাস রেশিও বা স্পেসিফিক চার্জ জানার পালা। বস্তুর স্পেসিফিক চার্জ হচ্ছে তার মোট চার্জ ও ভরের ভাগফল। ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে বন্ধ করে দিয়ে টমসন কেবলমাত্র ইলেক্ট্রিক ফিল্ডে ক্যাথোড রে’র ডিফ্লেকশান পরিমাপ করতে সক্ষম হোন – এই ডিফ্লেকশান ইলেক্ট্রিক ফিল্ডের সমান্তরালে অর্থাং y ডিরেকশানে ক্যাথোড রে’র বেগ অর্জনের জন্য। এই ফিল্ডের লম্বভাবে (x ডিরেকশানে) অবস্থিত কণাসমূহের বেগ অপরিবর্তিত থাকে। ক্ষেত্রের শক্তি (E), যে দূরত্বে তা কাজ করে (d), এবং কোণ (θ) সবই পরিমাপযোগ্য আর টমসন আগেই রে’র বেগ (v) বার করে ফেলেছেন।

সুতরাং ডিফ্লেকশান মেপে তিনি স্পেসিফিক চার্জ (q/m) বার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সাহসী বক্তব্য দেন যে ইলেক্ট্রন হচ্ছে বস্তুর অংশ এবং তা অতি ক্ষুদ্র কণা। অর্থাৎ ইলেক্ট্রন অ্যাটমের উপাদান। প্রথমেই তার সিন্ধান্ত বিনা বাক্যব্যয়ে গৃহীত হয়নি। তার নিজের এবং সমসাময়িক অন্যান্য বৈজ্ঞানিকের পরীক্ষার ভেতর দিয়ে ব্যাপারগুলো স্বীকৃত হয়।

ইলেক্ট্রন শব্দটি ১৮৯১ সালে George Johnstone Stoney ব্যবহার করেছিলেন। বিভিন্ন কেমিকেলের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে তার ইউনিট চার্জের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহৃত হয়েছিলো। পরে আইরিশ পদার্থবিদ George Francis FitzGeral ১৮৯৭ সালে পুনরায় প্রস্তাব করেন যে ক্যাথোড রে’র corpuscles গুলো আসলে ইলেক্ট্রন। এরপর থেকেই electron শব্দটি বিশ্বজনীনভাবে স্বীকৃত হয়। ১৯০৯ সালে মার্কিন বিজ্ঞানীদ্বয় Robert Millikan আর Harvey Fletcher বিখ্যাত “Oil Drop Experiment” চালান।

খুব সূক্ষ্ম nozzle এর মাথা থেকে তেল স্প্রে করা হয়। এটা দু’টো ধাতব প্লেটের মাঝ দিয়ে পরার সময় তাদের পতনের গতি রেকর্ড করা হয়। যেহেতু তেলের ঘনত্ব জানা তাই মাধ্যাকর্ষণ জনিত পতনের হার বার করা সম্ভব। এরপর ধাতব প্লেট দু’টোকে চার্জ দেয়া হয়। আবার এক্স-রে’র মাধ্যমে তেলের ক্ষুদ্র ড্রপলেটগুলোতেও আয়োনাইজেশান ঘটানো হয়।

ফলে ইলেক্ট্রোস্টাটিক ফোর্সের কারণে তেলের ড্রপলেটগুলো উর্দ্ধদিকে বল অনুভব করে। এ থেকে গাণিতিকভাবে খুব সূক্ষ্মভাবে ইলেক্ট্রনের চার্জ বার করা সম্ভব হয়। রবার্ট মিলিক্যানের পরীক্ষার ফল বর্তমান স্বীকৃত মানের খুব কাছাকাছি। তারা এও দেখান যে সব সময়ই ইলেক্ট্রনের চার্জ সমান থাকে। মজার ব্যাপার হোল এই মিলিক্যান আইনস্টাইনের ফটোইলেক্ট্রিক তত্ত্বের সমাধানকে ভুল প্রমাণের চেষ্ট করেছিলেন।

প্রায় দশ বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষার পর পরীক্ষা করে বরঞ্চ আইনস্টাইনের ব্যাখ্যাই সঠিক বলে প্রমাণিত হলো। মিলিক্যানের সান্তনা এই যে এই সিরিজ ধরে পরীক্ষার জন্য তাকে নোবেল দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে জে.জে. টমসনের ছেলে George Paget Thomson এর পরীক্ষায় ইলেক্ট্রনের তরঙ্গ প্রকৃতি ধরা পড়ে। তিনি ১৯৩৭ সালে নোবেল জেতেন। ইলেক্ট্রন কি কণা নাকি তরঙ্গ, নাকি এর দ্বৈত স্বত্ত্বা রয়েছে এই রহস্য কোয়ান্টাম ফিজিক্সের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এ পর্বেই ইলেক্ট্রনের সেই বিখ্যাত Double Slit Experiment উল্লেখ করার ইচ্ছে ছিলো। তাহলে QED’র পথে কিছুটা এগিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু পোস্টের কলেবর বেশী বড় হয়ে যাবার কারণে বাদ দিতে হোল। শেষে একটা বিষয় উল্লেখ করছি; এখানে যে সকল বৈজ্ঞানিকের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে তারাই যে কেবল বিভিন্ন কৃতিত্ত্বের দাবীদার তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সাথে তাদের সহকর্মী বা অধিনস্তরাও কাজ করেছে।

তাদেরও অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। যেমন এখানে Alfred Mayer এর কথা বলা যায়। যিনি ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ডে ১৮৭৮ সালে কতগুলো একই পরিমাণ শক্তির চৌম্বিক শলাকা কর্কে বিঁধিয়ে পানিতে ভাসিয়ে অ্যাটম কিভাবে অণুতে বিন্যস্ত থাকে তা ব্যাখ্যা দেয়ার চেস্টা করেন। অবশেষে আমরা ইলেক্ট্রন পর্যন্ত পৌছে গিয়েছি। আগামী পর্বে রাদারফোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা আর সেই সাথে এ সমস্ত পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির আলোচনা করার ইচ্ছে রইলো।

সেই সাথে Blackbody radiation সংক্রান্ত Kirchhoff এর চ্যালেঞ্জের অবতারণা হতে পারে। এই বিশাল পোস্ট পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আপাতত শেষ করছি। পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। পর্ব - ৩

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.