আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যান্টিভাইরাস ছাড়া পিসি! আদৌ সম্ভব?

সাবধানে থাকুন ...

কম্পিউটার ব্যবহার করলে ভাইরাসের মুখোমুখি হওয়া যেনো অনিবার্য একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের অসীম দুনিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে হাজারো ভাইরাস। কম্পিউটারকে এসব হাজারো ম্যালওয়্যার, অ্যাডওয়্যার, ট্রোজান হর্স থেকে বাঁচাতে প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক হিসেবে অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করার কথা বলে কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক বিষয়ক প্রতিটি সিকিউরিটি ফার্মই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানুষের বেলায় ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’ বলে যেমন একটি কথা রয়েছে, তেমনি একই কথা কি কম্পিউটারের বেলায়ও খাটে? ওষুধ না খেয়েও যেমন আমরা সুস্থ থাকতে পারি, কম্পিউটারকেও কি অ্যান্টি-ভাইরাস ছাড়া আদৌ নিরাপদ রাখা সম্ভব? এ নিয়েই এবারের মূল ফিচার। অনেকেই অ্যান্টিভাইরাস পছন্দ করেন না।

এটি পছন্দ না করারও সঙ্গত কারণ রয়েছে। অ্যান্টিভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচে বড় অভিযোগ হচ্ছে- এটি কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়। কারণ ছাড়াই ভাইরাস অ্যালার্ট, আর বারংবার স্ট্যাটাস পপ-আপ দিয়ে বিরক্তও কম করে না। সেইসঙ্গে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিনতে গুচ্ছের গাঁটের পয়সাও খরচ করতে হয়। এমনকি প্রতি বছর নতুন আপডেটের সঙ্গে লাইসেন্স ফি হিসেবেও বেরিয়ে যায় বিস্তর পয়সা।

কিন্তু অ্যান্টিভাইরাস না নিয়ে কম্পিউটার নিরাপদ রাখা কি সম্ভব? উত্তরটি হলো, হ্যাঁ সম্ভব। ‘সচেতন’ থাকলে অ্যান্টিভাইরাস ছাড়াই কম্পিউটার নিরাপদ রাখা সম্ভব। এখন আবারো প্রশ্ন ওঠে, এই সচেতনতার মানে কি? অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, অ্যান্টিভাইরাসের ঝামেলা ছাড়াই কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে হলে কিছু নিরাপদ কম্পিউটিং এর অভ্যাস করতে হবে। আসুন জেনে নেই এই বিষয়গুলোর বিস্তারিত- ভাইরাস বনাম অ্যান্টি-ভাইরাস ভাইরাস মুলত এক ধরনের প্রোগ্রাম যা নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবহারকারীর চোখের আড়ালেই তার কম্পিউটারের ক্ষতি করতে থাকে। অন্যদিকে, অ্যান্টি-ভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা ভাইরাসের সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয় এবং নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

স্রেফ গেম খেলার কম্পিউটারে ভাইরাস তেমন বড় আকারের সমস্যা হিসেবে দেখা না দিলেও যারা কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট যাদের জন্য দরকারি উপাদান, তাদের জন্য এটি একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতিদিন ইন্টারনেটে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের ছোট-বড় ক্ষতিকারক সব ভাইরাস। অ্যান্টিভাইরাস তৈরির প্রতিষ্ঠান এভিজি-র মতে প্রতিদিন ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ ভাইরাস যুক্ত হচ্ছে ইন্টারনেটে। এসব ভাইরাস পিসির প্রয়োজনীয় ফাইল মুছে ফেলে, পিসির অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাশ থেকে শুরু করে পুরো হার্ডডিস্কেরই ক্ষতি করতে পারে। অন্যদিকে অ্যান্টিভাইরাস ভাইরাসের এই বিশাল জগতে আপনার পিসির পাহারাদার।

ডাউনলোড বিষয়ে সচেতনতা যদি কেউ শুধু কমার্শিয়াল সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং কখনও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা সফটওয়্যার ইনস্টল না করেন তবে ভাইরাসের শঙ্কা কম। কোনো বন্ধুর সঙ্গে কোনো ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা প্রোগ্রাম ইনস্টল করলেও ভাইরাস দেখা দিতে পারে। আর কম্পিউটারে অন্য কোনো ডিভাইস যেমন- ফ্লপি, সিডি রম, আলাদা হার্ডডিস্ক এবং বিশেষ করে পেনড্রাইভের মাধ্যমে ফাইল আদান-প্রদানে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আর এগুলো না করা হলে ভাইরাস আক্রান্ত হবার পথ খোলা থাকে কেবল ওয়েবসাইট এবং ই-মেইলএর মাধ্যমে। আর অ্যান্টিভাইরাসের ঝামেলা এড়িয়ে ভাইরাসমুক্ত থাকতে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব কমন সেন্স এর বিষয়টি।

অন্যদিকে ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাউনলোড-এ আসক্ত হলে ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা শতভাগ। বিভিন্ন লোভনীয় এবং চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সেখানে ঢুকলেই সর্বনাশ। বলা হয়ে থাকে এগুলো হলো ‘ভাইরাসের আখড়া’। যেসব শেয়ারিং এবং ওয়ারেজ সাইট বিনামুল্যে কমার্শিয়াল সফটওয়্যার বা অ্যান্টিভাইরাসের ডাইনলোড করতে বলে সেগুলো আসলে সফটওয়্যারের ছদ্মবেশে ভাইরাস। এছাড়াও বিভিন্ন পর্নো সাইট ও ম্যালওয়্যারভিত্তিক অজানা সাইটগুলোও ভাইরাসের খনি।

এগুলোতে ঘোরাঘুরির অভ্যাস থাকলে অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করার বিকল্প নেই। যারা এসব সাইটে যান না তারা স্রেফ কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করলেই অ্যান্টিভাইরাস ছাড়াও নিরাপদ থাকতে পারবেন। পপ আপ রিমুভার ‘পপআপ’ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে সবচে বিরক্তিকর বিষয়গুলোর একটি। মনোযোগ দিয়ে কোনো ওয়েবপেজ ব্রাউজ করছেন তখন অনাকাঙ্ক্ষিত এড্রেসবিহীন কিছু পেজ বারবার এসে সাধারণ কাজকে যেমন ব্যাহত করে তেমনি বিজ্ঞাপন দেখায় কিছু পণ্যের কিংবা লটারির। এসব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া সাইট।

পপআপমুক্ত পিসি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই পপআপ প্রটেকশন সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে। মোজিলা ফায়ারফক্স সহ বেশ কয়েকটি ব্রাউজারের সঙ্গেই দেয়া থাকে পপআপ ব্লক করার উপায়। এ ছাড়াও ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায় পপআপ প্রটেকশনসহ টুলবার। এক্ষেত্রে গুগলের ফ্রি টুলবারটি যে কোনো ব্যবহারকারীর জন্য ভালো সমাধান হতে পারে। ব্রাউজারের আপগ্রেড এখনকার অধিকাংশ ব্রাউজারের সিকিউরিটি কন্ট্রোল আছে।

ডাউনলোড করার সময়ই এসব ব্রাউজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইরাস আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। অ্যান্টিভাইরাস বিভিন্ন টুল যোগ হওয়াতে এসব ব্রাউজার নিজেই অনেক ভাইরাস প্রবেশে বাধা দেয়। এ জন্যই ভালো ব্রাউজারে ভাইরাস আক্রমণের হার অনেক কম। তাই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ঝামেলা এড়াতে ব্রাউজারের সর্বশেষ সংস্করণটিই ব্যবহার করা শ্রেয়। এক্ষেত্রে ফায়ারফক্স, ক্রোম বা সাফারি ব্যবহারেও আপনি ব্রাউজারটি আপডেট করে নিতে পারবেন।

কখনও জেনেশুনেও যদি ক্ষতিকর কোনো সাইট খুলতে চান সে ক্ষেত্রেও প্রচলিত অনেক ওয়েব ব্রাউজারই স্ক্রিনে সেটি দেখানোর আগেই সতর্ক করে দেবে। সার্ফিং করার সময় সময় আরো বেশি নিরাপত্তা অনুভব করতে ম্যাকাফি সাইট অ্যাডভাইজার টুল (http://www.siteadvisor.com) ব্যবহার করা যেতে পারে। এই টুল সার্চ রেজাল্টের সঙ্গে ক্ষুদ্র সাইট রেটিং আইকন দেখায়। এবং ব্রাউজারে একটি নতুন ব্রাউজার বাটন এবং অপশনাল সার্চ বক্স অপশন যোগ করে। এই দুটি অপশন একত্রে ভালো কাজ করে।

কোনো বিপদজনক সাইটে ঢোকার আগে সতর্ক করে দেয়। মেইল পরিষ্কার করা সাধারণ যেসব ভাইরাস সতর্কতা পাওয়া যায় সেগুলো মেইলের মাধ্যমে আসা ভাইরাস হতে পারে। এসব মেইলই ভাইরাস বহন করে ভুলপথে নিয়ে যেতে পারে। সামান্য একটা মেইলেই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। মেইলে কোনো নির্দেশ দেয়া থাকে যা অনুসরণ করলেই চলে আসবে ভয়ঙ্কর সব কম্পিউটার ভাইরাস।

স্প্যাম হলো অদরকারি নানা রকম ই-মেইল। আর এসব মেইলের ছদ্মবেশে আসে ভাইরাস। সে কারণেই অপ্রয়োজনীয় বা অচেনা প্রেরকের মেইল ওপেন না করে বরং ডিলিট করে ফেলাই ভালো। মেইল সার্ভিসের স্প্যাম গার্ড প্রোটেকশন এনাবল করে রাখুন। এতে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়।

এ সুযোগটি ইয়াহু, এমএসএনসহ অনেক ওয়েব মেইলেই পাওয়া যায়। নিশ্চিত না হয়ে বাল্ক (ইটখক) মেইল ওপেন করার কৌতুহল ঝেড়ে ফেলুন। স্প্যাম একবার পিসিতে ছড়িয়ে গেলে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। আর অনাকাঙ্ক্ষিত মেইলের হাত থেকে বাঁচতে যত্রতত্র কোনো সাইটে ই-মেইল এড্রেস দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এছাড়াও আরো একটি উপায় আছে, সেটি হলো মেইলে সিকিউরিটি লেভেল যোগ করা।

এ জন্য ইমেইল প্রোগ্রামটিকে কনফিগার করা লাগবে। এতে ইনকামিং মেসেজগুলো প্লেইন টেক্সট আকারে দেখা যাবে। এসব করলে গ্রাফিক্স ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যাবে ফলে যখন ক্লিক করা হবে তখন ভাইরাস প্রোগ্রাম কাজ করবে না। স্পাইওয়্যার এরা নানাভাবে পিসির ক্ষতি করে। যেমন- অপারেটিং সিস্টেমসহ হার্ডডিস্কের সব ডাটা করাপ্ট করা থেকে শুরু করে দূর থেকে আপনার কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ কিংবা ডেটা চুরির মতো কাজও সংগঠিত হতে পারে এর মাধ্যমে।

আমরা অনেকেই স্পাইওয়্যারের কথা জানি না। এরা মূলত ওয়েব পেজের সঙ্গে পিসিতে ছড়ায়। মাইক্রোসফট করপোরেশনের ওয়েবসাইটে http://www.microsoft.com থেকে স্পাইওয়্যার রিমুভার সংগ্রহ করতে পারেন। এ ছাড়া http://www.download.com থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্পাইওয়্যার রিমুভার সফটওয়্যার সংগ্রহ করে ইনস্টল করে সাপ্তাহিকভাবে রান করান। স্ক্যান শেষে ফাইল বা প্রোগ্রাম এররগুলো সারিয়েও নেয়া যায়।

পিরিয়ডিক স্ক্যান অ্যান্টিভাইরাস ছাড়া পিসি চালাতে গেলে সতর্কতার সঙ্গে ভাইরাসের খোঁজে মাঝে মাঝে স্ক্যান করার প্রয়োজন পড়তে পারে। আর মাঝে মাঝে ভাইরাসের সন্ধানে স্ক্যান করলে নিরাপদ থাকে কম্পিউটার। কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল ছাড়াও পিরিয়ডিক এই স্ক্যান করতে অনলাইন ফ্রি ভাইরাস স্ক্যানার ব্যবহার করা যায়। এইরকম অনলাইনে ফ্রি স্ক্যানার পাওয়া যাবে নানা ওয়েব সাইটেই, তবে নিচের এই তিনটি সাইট নির্ভরযোগ্য। http://www.eset.com/online-scanner, onlinescan.avast.com, এবং housecall.trendmicro.com কোনো অ্যান্টিভাইরাস প্যাকেজ ইনস্টল ছাড়াই সিস্টেম স্ক্যান করার সুযোগ আছে এই অনলাইন স্ক্যানারগুলোতে।

সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশন যদি কোনো সাইটের ফ্রি স্ক্যানার ব্যবহার না করা হয় বা অ্যান্টিভাইরাস নিতেও আপত্তি থাকে তবে সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশন পিসির কোনো ঝুঁকি বা হুমকি শনাক্ত করতে পারে। এই নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশনের খরচও অ্যান্টিভাইরাসের তুলনায় অনেক কম। সৌজন্যে: লিংক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.