আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজোড়া ক্লান্ত চোখ আর মায়াবী চেহারার গল্প

আজও নিজের মাঝে অসাধারণতার ছাপ খুঁজে বেড়াই কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে খুব সাধারণরূপে আবিষ্কার করি। মন্দ কি...ভালই তো আছি।
ছবিঃ ইন্টারনেট মেয়ে মানুষ নিয়ে কেনাকাটা করতে যাওয়ার বিড়ম্বনা এতদিন কেবল লোক মুখেই শোনে এসেছি। আজ পুরাই হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম। অভিজ্ঞতা জিজ্ঞাস করলে বলব ওই বিশেষ ২/৩ ঘন্টা ক্ষেত্রবিশেষে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় নিজেকে মেহমান আপ্যায়নের জন্য ব্যবহৃত চায়ের স্ট্রেচার ছাড়া বেশি কিছু মনে হওয়ার কথা না।

আর তখনকার অনুভূতির কথা আসলে সিচ্যুয়েশানটা দাঁড়ায় আপনি বিয়ের পাত্রী দেখতে গেছেন। সামনে মেয়ের চাচাতো ভাইয়ের মামতো ভাই থেকে শুরু করে সবাই বসা। আর ঠিক তখনই আপনি বেখেয়ালীপনা হেতু গরমাগরম চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিয়েছেন! মানেটা ঠিক বুঝতে পারছেন তো!! এই যখন অবস্থা তখন 'বাস আসিবার পূর্বেই প্রেমিক ভিমড়ী খেল' এর পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর হেতু বেচারা আমি সেই শপিং কন্যার সাথে কয়েক ডজন বিষদৃষ্টি বিনিময় শেষে আনন্দ ছিঃনেমা হলের সামনে এসে ৬ নম্বর গার্লফ্রেন্ড থুক্কু বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এই বিরাট দেহের অধিকারী ও অতিরিক্ত ডিমান্ডধারী বাসখানা মাঝে মাঝে গার্লফ্রেন্ডের পেরাকেও হার মানায়। ভাবখানা এমন যেন তার সাথে আমার সেই কস্মিনকাল থেকেই দা-কুমড়া সম্পর্ক চলে আসছে!! যার দরুন ভুল বশতই হোক অথবা অনবরত ছ্যাকা খাওয়ার কারণেই হোক প্রায়শই এর মাঝে গার্লফ্রেন্ড পজেটিভ (+) খুঁজে পাই।

এতদিন জানতাম কেবলমাত্র পুকুর বা খালে বিলের পানির পরিমাণ নির্দেশ করতেই 'টুইটুম্বুর' শব্দখানার ব্যবহার খাটে। কিন্তু যেদিন থেকে এই বাসে প্রথম চড়েছি সেদিন থেকেই এই শব্দটির বহুমুখিতা আবিষ্কার করলাম। যাই হোক সেদিকে আর গেলাম নাহ। যথারীতি বিরক্তির প্যারামিটার ব্লাস্ট হওয়ার পর মানে গলা ফাটিয়ে দুচারটা চিতকুর দেয়ার পর বাঁশ তথাপি বাস ছাড়ল। রোজার দিন হওয়ায় শরীরের উপরও খুব একটা নিয়ন্ত্রন রাখতে পারছিলাম না।

ঠিক সে মুহূর্তেই পিছনের দিকে একটি সোনার হরিণ আই ম্যিন খালি সিট নজরে আসল। আমিও দেরি না করে কৌশলে টুপ করে বসে পড়লাম। ভাড়া মিটিয়ে চুপচাপ বসে আছি। চোখদুটোও টলতে শুরু করেছে। হঠাতই কনট্রাক্টর মামার চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পাই।

বাস ততক্ষণে বিজয় সরণির সিগন্যালে। 'ওই উঠ উঠ, এইডা কি ঘুমানোর জাগা? কই যাবি তুই?' হকচকিয়ে আশপাশ তাকিয়ে দেখি পাশের সিটে একগাদা পেপার হাতে বসে থাকা ছোট্ট ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচাচ্ছে। তার সাথে আবার ভদ্রপল্লীর কয়েকজনও নাক সিটকিয়ে সুর মেলাচ্ছে! বেচারা এদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ না করেই আবারও চেহারায় একরাশ ক্লান্তির ছাপ নিয়ে চোখ বন্ধ করল। আমি কেবল তার মুখপানে তাকিয়ে আছি। কত আর বয়স হবে? এই বড়জোর সাত কি আট।

যে হাতদুটোতে প্রাইমারীর বই আর খেলনা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর কথা সেই কচি হাতদুটো আজ চাপা পড়েছে সংসারের ঘানিতে। হয়তো তার পথপানে চেয়ে আছে কয়েক জোড়া চোখ। একদিন ৫০ টাকা আয় কম হলেই খুব সম্ভবত না খেয়ে থাকতে হবে পরিবারের বড় সদস্যটিকে! হঠাত করেই বাসের ময়লা গদিতে গা এলিয়ে হা করে বসে বসে ঘুমানো ছোট্ট শীর্ণকায় দেহের ছেলেটির উপর কেমন মায়া জন্মে গেল। ভিতরটায় এক অদ্ভুত মরুময় হাহাকার দিয়ে উঠল। মনে মনে ভাবছি ছেলেটিকে ডেকে তুলে মানিব্যাগে ৫০/১০০ যাই আছে ধরিয়ে দিব।

কিন্তু আর পারলাম কই? বাস ততক্ষণে মহাখালি ওয়্যারলেস পার হয়ে ব্র্যাক এর সামনে। কোন রকমে একগাদা লোকের ভিড় ঠেলে আমিও হারিয়ে গেলাম নাগরিক কোলাহলে। স্মৃতির মানসপটে তখনও কেবল একটি নিষ্পাপ চেহারা আর ঘুমাচ্ছন্ন দুটি চোখ। নিজের স্বভাবজাত চরিত্রের বিপরীতে এক টুকরা তাচ্ছিল্যের হাসি এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল "লুজার...ইউ আর দ্যা আল্টিমেট লুজার" [কিছু কথাঃ আমি জানি না লেখাটি পড়ে কে কিরকম ভাববে নাকি নিছক একটি ফুটানি মনে করেই উড়িয়ে দিবে। জানার প্রয়োজনও বোধ করি না।

শুধু বলব এই চেহারাটি আমি কখনই ভুলতে পারি না। হয়ত পারবও না। সময়ে অসময়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে। নাহ...আমি আর লুজার হতে চাই না। কে কি করল না করল সাথে থাকল কি থাকল না এত কিছু ভাববার সময় নেই।

ঠিক করলাম প্রতি মাসে নিজের খরচ থেকে এটলিস্ট ১০০ টাকা বাঁচিয়ে এই শিশুদের মুখে একটু হাসি ফুটানোর চেষ্টা করব। সবার নিকট দোয়াপ্রার্থী। ] মেয়ে মানুষ নিয়ে কেনাকাটা করতে যাওয়ার বিড়ম্বনা এতদিন কেবল লোক মুখেই শোনে এসেছি। আজ পুরাই হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম। অভিজ্ঞতা জিজ্ঞাস করলে বলব ওই বিশেষ ২/৩ ঘন্টা ক্ষেত্রবিশেষে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় নিজেকে মেহমান আপ্যায়নের জন্য ব্যবহৃত চায়ের স্ট্রেচার ছাড়া বেশি কিছু মনে হওয়ার কথা না।

আর তখনকার অনুভূতির কথা আসলে সিচ্যুয়েশানটা দাঁড়ায় আপনি বিয়ের পাত্রী দেখতে গেছেন। সামনে মেয়ের চাচাতো ভাইয়ের মামতো ভাই থেকে শুরু করে সবাই বসা। আর ঠিক তখনই আপনি বেখেয়ালীপনা হেতু গরমাগরম চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিয়েছেন! মানেটা ঠিক বুঝতে পারছেন তো!! এই যখন অবস্থা তখন 'বাস আসিবার পূর্বেই প্রেমিক ভিমড়ী খেল' এর পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর হেতু বেচারা আমি সেই শপিং কন্যার সাথে কয়েক ডজন বিষদৃষ্টি বিনিময় শেষে আনন্দ ছিঃনেমা হলের সামনে এসে ৬ নম্বর গার্লফ্রেন্ড থুক্কু বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এই বিরাট দেহের অধিকারী ও অতিরিক্ত ডিমান্ডধারী বাসখানা মাঝে মাঝে গার্লফ্রেন্ডের পেরাকেও হার মানায়। ভাবখানা এমন যেন তার সাথে আমার সেই কস্মিনকাল থেকেই দা-কুমড়া সম্পর্ক চলে আসছে!! যার দরুন ভুল বশতই হোক অথবা অনবরত ছ্যাকা খাওয়ার কারণেই হোক প্রায়শই এর মাঝে গার্লফ্রেন্ড পজেটিভ (+) খুঁজে পাই।

এতদিন জানতাম কেবলমাত্র পুকুর বা খালে বিলের পানির পরিমাণ নির্দেশ করতেই 'টুইটুম্বুর' শব্দখানার ব্যবহার খাটে। কিন্তু যেদিন থেকে এই বাসে প্রথম চড়েছি সেদিন থেকেই এই শব্দটির বহুমুখিতা আবিষ্কার করলাম। যাই হোক সেদিকে আর গেলাম নাহ। যথারীতি বিরক্তির প্যারামিটার ব্লাস্ট হওয়ার পর মানে গলা ফাটিয়ে দুচারটা চিতকুর দেয়ার পর বাঁশ তথাপি বাস ছাড়ল। রোজার দিন হওয়ায় শরীরের উপরও খুব একটা নিয়ন্ত্রন রাখতে পারছিলাম না।

ঠিক সে মুহূর্তেই পিছনের দিকে একটি সোনার হরিণ আই ম্যিন খালি সিট নজরে আসল। আমিও দেরি না করে কৌশলে টুপ করে বসে পড়লাম। ভাড়া মিটিয়ে চুপচাপ বসে আছি। চোখদুটোও টলতে শুরু করেছে। হঠাতই কনট্রাক্টর মামার চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পাই।

বাস ততক্ষণে বিজয় সরণির সিগন্যালে। 'ওই উঠ উঠ, এইডা কি ঘুমানোর জাগা? কই যাবি তুই?' হকচকিয়ে আশপাশ তাকিয়ে দেখি পাশের সিটে একগাদা পেপার হাতে বসে থাকা ছোট্ট ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচাচ্ছে। তার সাথে আবার ভদ্রপল্লীর কয়েকজনও নাক সিটকিয়ে সুর মেলাচ্ছে! বেচারা এদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ না করেই আবারও চেহারায় একরাশ ক্লান্তির ছাপ নিয়ে চোখ বন্ধ করল। আমি কেবল তার মুখপানে তাকিয়ে আছি। কত আর বয়স হবে? এই বড়জোর সাত কি আট।

যে হাতদুটোতে প্রাইমারীর বই আর খেলনা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর কথা সেই কচি হাতদুটো আজ চাপা পড়েছে সংসারের ঘানিতে। হয়তো তার পথপানে চেয়ে আছে কয়েক জোড়া চোখ। একদিন ৫০ টাকা আয় কম হলেই খুব সম্ভবত না খেয়ে থাকতে হবে পরিবারের বড় সদস্যটিকে! হঠাত করেই বাসের ময়লা গদিতে গা এলিয়ে হা করে বসে বসে ঘুমানো ছোট্ট শীর্ণকায় দেহের ছেলেটির উপর কেমন মায়া জন্মে গেল। ভিতরটায় এক অদ্ভুত মরুময় হাহাকার দিয়ে উঠল। মনে মনে ভাবছি ছেলেটিকে ডেকে তুলে মানিব্যাগে ৫০/১০০ যাই আছে ধরিয়ে দিব।

কিন্তু আর পারলাম কই? বাস ততক্ষণে মহাখালি ওয়্যারলেস পার হয়ে ব্র্যাক এর সামনে। কোন রকমে একগাদা লোকের ভিড় ঠেলে আমিও হারিয়ে গেলাম নাগরিক কোলাহলে। স্মৃতির মানসপটে তখনও কেবল একটি নিষ্পাপ চেহারা আর ঘুমাচ্ছন্ন দুটি চোখ। নিজের স্বভাবজাত চরিত্রের বিপরীতে এক টুকরা তাচ্ছিল্যের হাসি এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল "লুজার...ইউ আর দ্যা আল্টিমেট লুজার" [কিছু কথাঃ আমি জানি না লেখাটি পড়ে কে কিরকম ভাববে নাকি নিছক একটি ফুটানি মনে করেই উড়িয়ে দিবে। জানার প্রয়োজনও বোধ করি না।

শুধু বলব এই চেহারাটি আমি কখনই ভুলতে পারি না। হয়ত পারবও না। সময়ে অসময়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে। নাহ...আমি আর লুজার হতে চাই না। কে কি করল না করল সাথে থাকল কি থাকল না এত কিছু ভাববার সময় নেই।

ঠিক করলাম প্রতি মাসে নিজের খরচ থেকে এটলিস্ট ১০০ টাকা বাঁচিয়ে এই শিশুদের মুখে একটু হাসি ফুটানোর চেষ্টা করব। সবার নিকট দোয়াপ্রার্থী। ]
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।