আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্ন দেখি এমন হব......

আমি শিক্ষানবীশ এবং কর্মী । সবার কাছ থেকেই শিখছি । সারা জীবনই হয়ত শিখে যাব। টিপিটিপ বৃষ্টিতে ভিজেই ফজরের নামাজ শেষে ঘরে ফিরল মেঘ। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়াল।

বাতাস হচ্ছে খুব, সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সিগারেটটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধরাতেই পারল না সে। ঘরে ঢুকে সিগারেটটা ধরিয়ে আবার বারান্দায় ফিরে গেল মেঘ। শেষরাতের দিকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দিয়েছে। সারারাত কারেন্ট না থাকায় ফোনও চার্জশূণ্য, নেট কানেকশনও পাচ্ছে না।

তাই বলতে গেলে বাইরের পৃথিবীর সাথে মোটামুটি তার আর যোগাযোগ নেই। ভার্সিটি বন্ধ দিয়েছে অনেক আগেই। বন্ধুদের সবাই আগেই বাড়ি চলে গেছে। সে ইচ্ছা করেই যায়নি। খুব ছোটবেলা থাকেই তার কাছে একাকীত্ব ব্যাপারটি উপভোগের মনে হত।

এছাড়া বাড়ির লোকজন তাকে তেমন পছন্দও করেনা। বাবা সবসময় রেগে থাকে, ডাক্তার বোন খোটা মারে। তারচেয়ে বরং এইজীবনই ভালো লাগছে। রাস্তার অপরদিকের বিল্ডিংটার একটা জানালা খোলা। হঠাৎ হঠাৎ একটা মেয়ে এসে ঝড় কতদূর এল তা হয়ত দেখে যাচ্ছে।

একবার চোখাচুখিও হল, ওটাই কাল হল। মেয়েটা মুখ বিকৃত করে জানালা লাগিয়ে দিল। ছাতামাথায় সাইকেলে চড়ে এক ট্রাফিক পুলিশ চলে গেল কাজে। এই ঝড়ে সে কি ট্রাফিক সামলাবে! বেচারার জন্য খারাপ লাগছে ওর। তৃতীয় শ্রেণীর মানুষদের কখনও দায়িত্ব থেকে নিস্তার নেই, এটাই বোধহয় অলিখিত নিয়ম।

ওপাশের বেকারীর চুল্লি থেকে ধোয়া উড়ছে। আজ অনেক সকাল সকাল পাউরুটি বানাচ্ছে কেন? -কি রে মামা! আর কতদিন? বাড়ি কি যাবি না নাকি? নাকি বিয়া করছস এইখানে? নিচ থেকে ডাক পড়ল মেঘের। ওর ক্লাসের তিনজন মেহেদী, রিফাত আর অঙ্কন ব্যাগ হাতে ওপরে তাকিয়ে আছে। -বাড়ি যাচ্ছস? -হ। তর মত তো আর বউ বানাই নাই এইখানে! -তো এতদিন কি করলি? আগে যাস নাই যে? -কাজ ছিল একটু বুঝতে দেরি হল না মেঘের।

সব পড়াশোনা শেষ করেই এরা বাড়ি যাচ্ছে যাতে পিছিয়ে না পড়ে। তিনজনে গ্রুপস্টাডি করেছে বোধহয়। কতকিছুই না ভেবে চলে ওরা! একটু অবাকই হয় মেঘ। -থাক মামা, যাই -আচ্ছা যা। ভালভাবে যাস।

-তুইও যা গা। এমনে আর কতদিন? -আছিতো। যাব… তোরা যা। বাতাসটা বাড়ল বোধহয়। ওরা তিনজন দৌড় লাগাল বড় রাস্তার দিকে।

মাঝে মাঝে খুব হাসি পায় এদের দেখে। এরা পড়াশোনাটা খুব গোপনে করে। কাউকে বলে না, দেখায়ওনা যে পড়ছে। কিন্তু রেজাল্ট এরা বড় গলায় বলে বেড়ায়। ভাল ছাত্রের বুঝি এটাই নিয়ম, মনে মনে ভাবে মেঘ।

হঠাৎ ফিক করে হেসে দিল ও। ওদের তিনজনের একজন কাদায় পড়ে গেছে, বাকি দু’জনে ওকে রেখেই বাসের দিকে দৌড়াচ্ছে। জানালাটা আবার খুলেছে। তবে আগের মেয়েটি নেই, একটা বাচ্চা মেয়ে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মিনিটখানেক পর বড় মেয়েটি এসে বাচ্চা মেয়েটিকে টেনে সরিয়ে জানালাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিল।

এবারও বড় মেয়েটি গরম চোখে তাকাল ওর দিকে। মেয়েটির জানালা বিষয়ক খেলেটা মজা লাগছে ওর। “একটি জরুরী ঘোষণা, সবাইকে সতর্ক করা যাচ্ছে যে……” মসজিদের মাইক থেকে সতর্ক সংকেতের আপডেট দিচ্ছে। এখন সাত নম্বর চলছে। আর চার-পাচ ঘন্টার মধ্যেই নাকি ঝড় আসবে।

এমন অবস্থায় ঘরে থাকার মানে হয় না। বাস্তবে ফিরে এল মেঘ। ঘরে ঢুকে কবিতার বইটা খোলার ইচ্ছা ছিল ওর। প্ল্যান একেবারেই বাতিল হয়ে গেল। মানুষের জীবনের জন্য কখনও কিছু করতে পারেনি মেঘ।

আজ যখন নিজেও বিপদে তখন আর বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না। পাড়ের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে। আজ একটা মানুষের জীবন নিরাপদ করতে পারলে যে জীবনে স্বার্থক ওর। উহু, আর এক মুহুর্তও ঘরে থাকবে না মেঘ। শার্টটা গায়ে গলিয়েই বেড়িয়ে পড়ল ও।

মানুষ বাচাতে… ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.