আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারামজাদা !

সত্য অপ্রিয় হলেও সুন্দর

-ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবারই শামিল হওয়া উচিত। জহির আজকেই তার বাবার সাথে কথা বলবে। বিপ্লব ঘর থেকেই শুরু করতে হবে নোমান ভাই এই কথাই বলেছেন। নোমান ভাই হলেন জহিরদের লিডার। সংগঠনে অনেক উচু পর্যায়ে আছেন।

উনি হলেন সংগঠনের সাথী। জহির অবশ্য কর্মী পর্যায়ে আছে তবে বড় ভাইরা তার পারফর্মেন্সে খুব খুশি। খুব তাড়া তাড়ি হয়তো তাকে সদস্য করা হবে। জহির রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে সমাজ বিজ্ঞানে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। জহির যে হলে ওঠে সেটা ছিল তাদের সংগঠনের একটা অলিখিত ঘাটি।

হলে উঠার আগে জহির এই সংগঠন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতো না শুধু জানতো এই সংগঠনের কর্মীরা নাকি মনুষের রগ কাটে আর তাদের উপর তলার লিডাররা নাকি একাত্তরে কি কি অপকর্ম করছে। পরবর্তীতে অবশ্য জহিরের সেই সব ভুল ধারনা দুর হয়ে যায়। সংগঠের ভাইরা বলেছেন এইসব হইল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার তাদের লিডাররা কোন অপকর্ম করে নাই বরং মানুষের উপকার করছে । মুক্তি যুদ্ধও নাকি ছিল ভারতের ষড়যন্ত্র, সব হিন্দুয়ানী চাল, দেশে কোন মুক্তি যুদ্ধই হয় নাই ঐটা ছিল একটা গৃহ যুদ্ধ। জহির তার লিডার দের কাছে কৃতজ্ঞ তার ভুল ধারনা গুলো শুধরে দেওয়ার জন্য।

এখন সে মনে প্রানে এক জন সাচ্চা জিহাদী সংগঠনের জন্য নিজের জীবনও কুরবানী দিতে সদা প্রস্তুত। নোমান ভাই বলছে ইসলাম মানেই হল তাদের সংগঠন আর তাদের সংগঠন মানেই ইসলাম, সংগঠনের জন্য জীবন দেওয়া মানে ইসলামের জন্য জীবন দেওয়া। তাদের সংগঠনের স্লোগান হল 'মরলে শহীদ বাচলে গাজী'। সংগঠনের জন্য মারা গেলে নিশ্চিত বেহেস্ত । সুবাহানাল্লাহ্‌।

এই সংগঠন করলে আখীরাতেও ফায়দা ইহ জীবনেও ফায়দা। জহির কিছু ফায়দা অবশ্য এখনই পাওয়া শুরু করেছে সংগঠন থেকে তাকে টিউশনি জোগার করে দেওয়া হয়েছে কোচিংএ টিচার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটা মোবাইল ফোন উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে । লিডাররা আরো বলেছেন ভবিষ্যত নিয়ে তার আর ভাবতে হবে না, তুমি সংগঠনের কাজ কর অন্য কোথাও চাকরি না হলেও আমাদের দলের যে ব্যাংক বিমা আছে সেখানে তোমার চাকরি নিশ্চিত। এত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরেও পোলাপান কেন যে সহজে তাদের সংগঠনের সাথে সামিল হইতে চায় না জহির তা ভেবে পায় না। যাই হোক জহির আজ ডিসিশান নিয়েছে তার বাবার সাথে সে সংগঠনের ব্যাপারে আলাপ করবে তাকে বুঝাবে একজন মুসলমান হিসেবে এই সংগঠন করা কতটা জরুরি।

জহিরের মনে পরে তাদের মূল দলের লিডার আহসান সাহেবের কথা, তিনি বলেছেন আমাদের নিজেদের ঘর থেকে বিপ্লব শুরু করতে হবে, জিহাদী ভাইয়েরা একটা কথা মনে রাখবেন শুধু নামাজ রোজা করলেই হবে না যতক্ষন পর্যন্ত আপনারা আমাদের সংগঠনের ছায়াতলে সামিল না হবেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনাদের পক্ষে সাচ্চা মুসলমান হওয়া সম্ভব না। জহির তার বাবাকে সাচ্চা মুসলমান হিসেবে দেখতে চায়। - আব্বা আমি আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে আলোচনা করতে চাই যদি অনুমতি দেন তো বলি। -হাফিজ উদ্দিন তার ছেলের মুখের দিকে তাকায়। বল বাজান কি বলবা।

- আব্বা আমরা তো মুসলমান তাই মুসলমান হিসেবে নিশ্চই কিছু দায় দায়িত্ব আছে। সারা দুনিয়ায় আজ মুসলমানরা পদে পদে লান্ছিত নিপিড়িত ইহুদী, খৃষ্ঠান,নাসারাদের হাতে মার খাচ্ছে পদে পদে। মুসলমানদের এই দুর্গতীর একমাত্র কারন তারা ইসলামীক রাজনীতির সাথে একাত্ব নয়। আমাদের দেশের যে বিশৃঙ্খল অবস্থা আজ যদি কোন ইসলামী দল দেশের ক্ষমতায় থাকতো দেশের এই অবস্থা হত না আমাদের দেশ আজ বেহেস্তের নহর হয়ে যেত। -হাফিজ উদ্দিন ছেলের এমন ভাষন শুনে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়ে।

তার ছেলের হলটা কি? রাজনৈতিক নেতাদের মত ভাষন দেওয়া শুরু করলো কেন ভেবে পায়না হাফিজ উদ্দিন। - জহির বলতে থাকে, আপনারা আমাকে কোন রাজনীতির সাথে জড়াতে নিষেধ করে ছিলেন আমি আপনাদের কথা রাখতে পারিনাই সে জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী তার পরও আপনারা যেনে খুশি হবেন আমি কোন আজে বাজে সংগঠনের সাথে যুক্ত হই নাই। আমি দেশের সবচেয়ে সঠিক এবং বড় যে ইসলামীক দল সেই দলের সাথে যুক্ত হয়েছি। আমরা আজ স্বপ্ন দেখি ইসলামীক বিপ্লবের। যে বিপ্লব আমাদের দেশটাকে দোযখ থেকে জান্নাতে পরিনত করবে।

আব্বা আপনি তো নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামজ পড়েন আপনারও উচিৎ এই সংগঠনকে সমর্থন করা। সংগঠনের কাফেলায় সামিল হওয়া। - হাফিজ উদ্দিন বুঝতে পারতাছে তার ছেলে কোন ইসলামিক দলের কথা বলতাছে। হাফিজ উদ্দিন আশ্চর্য হয়ে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার ছেলের দিকে। তার চোখে হতাশার অন্ধকার।

তার নিজের ছেলেকে কেমন অচেনা ঠেকছে তার। বুকের ভেতর থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে হাফিজের। এই যুগের পোলাপান কত সহজেই ভুলে যাইতাছে তার পুর্ব পুরষদের রক্তের ঋৃন। ওদের আর দোষ দিয়া কি লাভ ওরা তো নিজ চোখে দেখেনাই যুদ্ধের সময় কত কষ্ট করছে মানুষ কত রক্তের বিনিময়ে এইদেশটারে পাইছি আমরা। জহির কি জানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই দলের নেতারাই ছিল আল বদর, আল শামছ, রাজাকারের লিডার কত শত নিরিহ মানুষের রক্ত তাদের হাতে লাইগা আছে? কত মানুষের বাড়িঘরে আগুন দিছে, কত মা বোনের সর্বনাশ করছে ঐসব ইসলামিক লেবাস ধারী ভন্ডরা? , জহির কি জানে ঐ দলের কাজই হচ্ছে ধর্ম বেইচা রাজনীতি করা, ধর্ম তো শুধু তাদের লেবাশ মাত্র , সে কি জানে যাদের কথা বলতেছে দেশটারে জান্নাত বানাবো তারই যে নয় মাস এই দেশটারে দোযখ বানাইয়া রাখছিল? -বাবার উদাশ ভাব দেখে আশ্চর্য হ্য় জহির।

ব্যাপার কি? কি হল তার বাবার এমন থম থমে হয়ে গেল কেন তার মুখ। জহির কিছুটা হতচকিত হয়ে যায় । সে কি ভুল কিছু বলেছে? - হাফিজ উদ্দিন ছেলের দিকে তাকায়। বাবা জহির তুমি যাদের সাথে মিশতাছ ওরা ভালা মানুষ না। ওদের সাথে আর যাইও না বাপ।

- জহিরের মনটা খারাপ হয়ে যায় তার বাবার কথা শুনে। তার খুব খারাপ লাগছে তার বাবাও শেষ পর্যন্ত ঐসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হইল । আব্বা আপনি হয়তো ভুল বুঝতেছেন তারা খুব ভালো লোক সবই তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। সবি হল ইসলামিক রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। - ধ্বক করে জ্বলে উঠে হাফিজ উদ্দিনের চোখ, নিজেকে সে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারে না।

চিৎকার করে উঠে হাফিজ উদ্দিন.... চুপ কর হারামজাদা! যাদের ভয়ে তোর মা তিন দিন তিন রাইত্ নাইল্যাক্ষেতে পলাইয়া আছিল তুই তাগোর রাজনীতি করস? - হতভম্ব জহির কোন কথা বলতে পারে না ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে বাবার মুখের দিকে। -জহুরা বেগম রান্না ফেলে দৌড়ে আসে স্বামীর চিৎকার শুনে। কি হইছে কি হইছে? ত্রস্ত জহুরা বেগম বুঝতে পারে না কিছু। বাপ ছেলের মধ্যে কি হইল আজ। প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় স্বামী আর ছেলের মুখের দিকে।

- জহির মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারে না। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে তার। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় জহিরের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।