আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মরণ: কবি শামসুর রাহমান এবং তার বারোটি কবিতা

নর্দমার রাত, হিরন্ময় তাঁত

তিনি চলে গেছেন চারটি বছর হয়ে গেলো। আজ সেই ১৭ আগষ্ট। তাঁর কবিতা পড়ে তাকে স্মরণ করি। ..................................................................................................... তুমি বলেছিলে দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ, লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।

দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি। পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মানচিত্র, পুরনো দলিল। মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে সাধের আশ্রয় ত্যাগী হয় মৌমাছির ঝাঁক, তেমনি সবাই পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্বিদিক। নবজাতককে বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী বনপোড়া হরিণীর মত যাচ্ছে ছুটে।

অদূরে গুলির শব্দ, রাস্তা চষে জঙ্গী জীপ। আর্ত শব্দ সবখানে। আমাদের দু'জনের মুখে খরতাপ। আলিঙ্গনে থরো থরো তুমি বলেছিলে, ‌'আমাকে বাঁচাও এই বর্বর আগুন থেকে, আমাকে বাঁচাও, আমাকে লুকিয়ে ফেলো চোখের পাতায় বুকের অতলে কিংবা একান্ত পাঁজরে আমাকে নিমেষে শুষে নাও চুম্বনে চুম্বনে। ' দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার, আমাদের চৌদিকে আগুন, গুলির ইস্পাতী শিলাবৃষ্টি অবিরাম।

তুমি বলেছিলে আমাকে বাঁচাও। অসহায় আমি তাও বলতে পারিনি। _________________________________ ট্রেন ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে অই। ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই ? একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায় মাঠ পেরুলেই বন। পুলের ওপর বাজনা বাজে ঝন ঝনাঝন ঝন।

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে নেইকো ঘোরার শেষ। ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি, দিন কেটে যায় বেশ। থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি একটু কেশে খক। আমায় নিয়ে ছুটবে আবার ঝক ঝকাঝক ঝক। ______________________ বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো জো, তুমি আমাকে চিনবে না।

আমি তোমারই মতো একজন কালো মানুষ গলার সবচেয়ে উঁচু পর্দায় গাইছি সেতুবন্ধের গান, যে গানে তোমার দিলখোলা সুরও লাগছে। জো, যখন ওরা তোমার চামড়ায় জ্বালা-ধরানো সপাং সপাং চাবুক মারে আর হো হো করে হেসে ওঠে, যখন ওরা বুটজুতোমোড়া পায়ে মারে তোমাকে, তখন ধূলায় মুখ থুবড়ে পড়ে মানবতা। জো, যখন ওরা তোমাকে হাত পা বেঁধে নির্জন রাস্তায় গার্বেজ ক্যানের পাশে ফেলে রাখে, তখন ক্ষ্যাপাটে অন্ধকারে ভবিষ্যৎ কাতরাতে থাকে গা' ঝাড়া দিয়ে ওঠার জন্যে। যদিও আমি তোমাকে কখনো দেখিনি জো, তবু বাইবেলের কালো অক্ষরের মতো তোমার দুফোঁটা চোখ তোমার বেদনার্ত মুখ বারংবার ভেসে ওঠে আমার হৃদয়ে, তোমার বেদনা এশিয়া, আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকায় ব্যাপ্ত, জো। ___________________________________________ কখনো আমার মাকে কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।

সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না। যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি, যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়, পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়, ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।

যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে রেখেছেন বন্ধ ক'রে আজীবন, এখন তাদের গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে ! _______________________________ স্বাধীনতা তুমি স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল। স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতা তুমি মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।

স্বাধীনতা তুমি অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক। স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ। স্বাধীনতা তুমি চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ। স্বাধীনতা তুমি কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা। স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।

স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন। স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ। স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার। স্বাধীনতা তুমি গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম। স্বাধীনতা তুমি খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা, খুকীর অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা।

স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা। ________________________________ তিনি এসেছেন ফিরে লতাগুল্ম, বাঁশঝাড়, বাবুই পাখির বাসা আর মধুমতি নদীটির বুক থেকে বেদনাবিহ্বল ধ্বনি উঠে মেঘমালা ছুঁয়ে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধু তাঁরই কথা বলে; মেঘনা নদীর মাঝি যখন নদীতে ভাটিয়ালী সুর তোলে, তার পালে লাগে দীর্ঘদেহী সেই পুরুষের দীর্ঘশ্বাস, যখন কৃষক কাস্তে হাতে ফসলের যৌবনের উদ্ভিন্ন উল্লাস দেখে মাতে, তখন মহান সেই পুরুষের বিপুল আনন্দধ্বনি ঝরে ফসলের মাঠে, যখন কুমোর গড়ে মাটির কলস, ঘটিবাটি, নানান পুতুল চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে, তখন সৃজনশিল্পে তার জেগে ওঠে মহান নেতার স্বপ্নগুলি, উচ্ছ্বসিত লাউডগা, কচুপাতা, কুয়োতলা, পোয়াতি কুমোর বউ। ওরা তাঁকে হত্যা ক'রে ভেবেছিল তিনি সহজে হবেন লুপ্ত উর্ণাজাল আর ধোঁয়াশায়, মাটি তাঁকে দেবে চাপা বিস্মৃতির জন্মান্ধ পাতালে- কিন্তু তিনি আজ সগৌরবে এসেছেন ফিরে দেশপ্রেমিকের দীপ্র উচ্চারণে, সাধারণ মানুষের প্রখর চৈতন্যে, শিল্পীর তুলিতে, গায়কের গানে, কবির ছন্দের আন্দোলনে, রৌদ্রঝলসিত পথে মহামিছিলের পুরোভাগে। _______________________________________ বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।

মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে শিউলিশৈশবে 'পাখী সব করে রব' ব'লে মদনমোহন তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি, অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন, ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে। আজন্ম আমার সাথী তুমি, আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ'ড়ে পলে পলে, তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে আমারই বন্দরে। _____________________________________ একটি কবিতার জন্য বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলি ; দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ? বৃক্ষ বলে আমার বাকল ফুঁড়ে আমার মজ্জায় যদি মিশে যেতে পারো, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা ! জীর্ণ দেয়ালের কানে বলি ; দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ? পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে, এই ইঁট সুরকির ভেতর যদি নিজেকে গুঁড়িয়ে দাও, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা ! একজন বৃদেধের নিকট গিয়ে বলি, নতজানু, হে প্রাচীন দয়া ক'রে দেবেন কি একটি কবিতা ? স্তব্ ধতার পর্দা ছিঁড়ে বেজে ওঠে প্রাজ্ঞ কণ্ঠে - যদি আমার মুখের রেখাবলী তুলে নিতে পারো নিজের মুখাবয়বে, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা।

কেবল কয়েক ছত্র কবিতার জন্যে এই বৃক্ষ, জরাজীর্ণ দেয়াল এবং বৃদ্ধের সম্মুখে নতজানু আমি থাকবো কতোকাল ? বলো কতোকাল ? __________________________________ তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মত চিৎকার করতে করতে তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র। তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম। তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাডায় প্রভূর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর। তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুডো উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নডছে চুল। স্বাধীনতা, তোমার জন্যে মোল্লাবাডির এক বিধবা দাঁডিয়ে আছে নডবডে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের। স্বাধীনতা, তোমার জন্যে হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে বসে আছে পথের ধারে। তোমার জন্যে, সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক, কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা, মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি, গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস এখন পোকার দখলে আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো সেই তেজী তরুণ যার পদভারে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে – সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে, মতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক এই বাংলায় তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা। ______________________________ অভিশাপ দিচ্ছি আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে অভিশাপ দিচ্ছি। আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ঞপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে, মগজের কোষে কোষে যারা পুতেছিলো আমাদেরই আপনজনের লাশ দগ্ধ, রক্তাপ্লুত, যারা গনহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু সেই সব পশুদের। ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নিমিষে ঝা ঝা বুলেটের বৃষ্টি ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না। হত্যাকে উতসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে ক্যাম্পাসে বাজারে বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভতস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে, আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না কামনা।

আমাকে করেছে বাধ্য যারা আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিড়ি ভেন্গে যেতে আসতে নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেইখানে দজ্জালদের। ___________________________________ আসাদের শার্ট গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় । বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায় বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে । ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শেভিত মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট শহরের প্রধান সড়কে কারখানার চিমনি-চূড়োয় গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে উড়ছে, উড়ছে অবিরাম আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে, চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় । আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ; আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।

_____________________________________ বারবার ফিরে আসে বার বার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে, ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে। হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে হাতে, মিছিলে পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট। বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার, বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম। 'আবার আসবো ফিরে' ব'লে সজীব কিশোর শার্টের আস্তিন দ্রুত গোটাতে গোটাতে শ্লোগানের নিভাঁজ উল্লাসে বারবার মিশে যায় নতুন মিছিলে, ফেরে না যে আর। একটি মায়ের চোখ থেকে করুণ প্লাবন মুছে যেতে না যেতেই আরেক মায়ের চোখ শ্রাবণের অঝোরে আকাশ হ'য়ে যায়।

একটি বধূর সংসার উজাড়-করা হাহাকার থামতে না থামতেই, হায়, আরেক বধূর বুক খাঁ-খাঁ গোরস্থান হ'য়ে যায়, একটি পিতার হাত থেকে কবরের কাঁচা মাটি ঝ'রে পড়তে না পড়তেই আরেক পিতার বুক-শূন্য-করা গুলিবিদ্ধ সন্তানের লাশ নেমে যায় নীরন্ধ্র কবরে। .................................................................................. প্র্রতিকৃতি: আমার আঁকা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।