আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদিন আকাশ দেখতে ইচ্ছে হইলে/ ইলিয়াস কমল

আমি আমার পৃথিবীর রাজা

(লেখাটা পূর্বে একটা পোস্ট দিছিলাম Click This Link ) আমাদের চারপাশে ধীরে ধীরে হাইরাইজ বিল্ডিং উঠে উঠে আমাদের মতো নীচুতলার মানুষদের জানালা দিয়ে আকাশ দেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জানালায় সকালের সূর্যও ইদানিং দেখতে পাই না। সকালের সূর্যও অন্য কারো জানালায় ঊঁকি দিয়ে আমাদের বাসি মুখ দেখায়। অথচ কত রাত পার করেছি সকালের সূর্যদয় দেখার জন্য তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রায়শই আমাদের রাত শুরু থেকে শেষ হইতো স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে।

একটার পর একটা, একজনের পর আরেকজনের ছোট বড় সকল স্বপ্নের বৃত্তান্ত আমরা ধীরে ধীরে বর্ণনা করতে করতে নিশি রাত কাটিয়ে আলোর ভোরের জন্য অপো করতাম। হ্যা, ব্রহ্মপুত্র সাক্ষ্মী, সাক্ষ্মী তার বয়ে যাওয়া জল আর নদীর কলকল। এক বর্ণ মিথ্যে আমাদের তখন ছিলো না। কেবল এক অমোঘ সত্যের পাশাপাশি আমি আর সে নিশ্চুপ হাঁটতাম। পড়ন্ত বিকেলে হলুদ রোদের ঘ্রাণ নিতে আমরা দিগন্ত রেখা বরাবর ছুটতাম।

ছুটতে ছুটতে কখনো আমাদের কান্তি আসে নি। ঈশ্বর জানে, জানে পেরিয়ে যাওয়া ঘড়ির কাটা; আর কেবল জেনেছিলো সবুজ বিছানার সুতি চাঁদর। আমার ঘুসঘুসে স্যাতস্যাতে ঘরে প্রতিদিন সন্ধ্যা রাত্রী’র পর যখন তার ছায়া পড়তো নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ শুকে শুকেই চিনে ফেলতাম আমরা পরস্পর। অথচ আমরা পরস্পর জীবনের রং ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম মানুষের মাঝে। দেখেছিলাম কোন এক নদীর পাশে কলার ভেলার পেছনে ছুটছে ছোট্ট বালক।

যার এক হাতে একটি ছোট্ট লাঠি। যদিবা বাগে পাওয়া যায় ভেলা; তবে তাই হয়ে উঠবে বৈঠা। আমরা এরকম দীবসের রাত্রীদিনের গল্প বলতে পারি অজস্র। আমাদের তাই বাউন্ডুলের বৃত্তান্ত দিন চলেছিলো অসম্পূর্ণ রকম সমাপ্তির দিকে। যেখানের কোন নির্দিষ্ট সীমা রেখা ছিলো না।

অথবা ছিলো হয়তো। আমরা ধরতে পারি নি। আর আমাদের না ধরার মাঝে সেই সীমারেখা অতিথি পাখির মত হঠাৎই চলে গেছে সোনালী নদীর জলের মতো। আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরও আকাশে একদিন পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে। একদিন আমাদের পৃথিবীতে আসবে তুমুল বন্যা; নিয়ে আসবে পলির আস্তরণ।

সেখানে আমাদের শব্দশিল্পের চাষ হবে এক আনন্দের মহোৎসব নিয়ে। নবান্নের উৎসবে চারপাশের দুঃখী মানুষের মুখে অন্নের নিশ্চয়তা। এভাবেই ভবিষ্যতের চারা রোপনের স্বপ্ন দেখতাম আমরা। ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্নের টেবিলে ধূলোর স্তর জমতে থাকে। একদিন আমরা ভুলে যেতে থাকি আমাদেরও কিছু স্বপ্ন ছিলো।

ছিলো এক একটি নিজস্ব আকাশ। বন্ধু আমার, আমার পৃথিবীর আকাশও আজ অনেকটা ঘুটঘুটে। কিছু কিছু রোদের ঝিলিক থাকলেও আছে অনেক দেয়াল। সে দেয়ালের ওপারে আমাদের গন্তব্যের রঙিন আকাশ। কিছু কিছু সময়ে সেই আকাশের রং দেখার জন্য আজও মাঝে মাঝে ছুটে যাই বিভিন্ন প্রান্তে।

দেখি সাদা, লাল, নীল, ধূসর, বাদামী নানান রঙের নানান মনের মানুষ। আমার একার তৃষ্ণা মেটে না। মেটে না মনের আশা। সাধ তবুও অতৃপ্ত আত্মার মত কেবলই ধূলো পড়া টেবিলের পুস্তকের মতো বসে থাকে স্মৃতির জানালায়। আমাদের জন্য বসে থাকে সোমেশ্বরীর জল, ব্রহ্মপুত্রের পূর্ণিমা, গারো পাহাড়ের আদিবাসী নারীরা।

আর বসে থাকে টিটকারী দিতে অবাধ্য সময়। তুমি জানো একদিন সময়ের ঘড়িতে টান পড়লে কেবল স্মৃতির ঝাঁপি খুলে নিয়ে বসে থাকতে হবে। আর সে সময় তোমার আর আমার নীরব পাথর কোন এক বেহুলার বিষে বিষাক্রান্ত হয়ে নীল হয়ে হয়ে লীন হয়ে যাবে কালের অতল গহীনে। অথচ আমরা আমাদের একখন্ড আকাশ দিয়ে যে ধূসর মেঘের রং দেখি তা থেকে ঝড়াতে পারি তুমুল বৃষ্টি। মনে পড়ে, একদিন হেমন্তের সন্ধ্যায় আমরা বাউন্ডুলে ডানা মেলে দিয়েছিলাম বাউলের কাছাকাছি? তোমার সেলুলয়েডের ফিতায় ধীরে ধীরে কেবল অস্পৃশ্যতার ডানা ভর করছে।

শুনতে পাচ্ছ হেমিলনের বাঁশির সুর? আমি বন্ধু এখনও মাঠের বুকে সবুজ বালকের সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির ন্যায় উড়ে চলেছি। তোমার তো ইদানিং দারুণ আকাল। চারপাশের অন্ধকারে নিজেরই মুখ তুমি চিনতে পারছো না। কেন এমন হলো বলতে পার? তোমার কাছে এর উত্তর আছে কি না জানা নেই। তবে আমি জানি সত্ত্বার গভীরে প্রবেশ করলে হৃদয়ের কার্পণ্য কোনদিন এক অদ্ভুত বিমূর্ততা এসে গ্রাস করে।

ণে ণে সে বিমূর্ত প্রেত হয়ে উঠে রাসের প্রতিমূর্তি। তুমি কি সেই রাসের কোন চিহ্ন দেখতে পাও চারপাশে? আমার চারপাশে ইদানিং বরফ জমে, জানো? না, তেমন কিছু না। তবুও বরফের স্বেত শুভ্রতার মাঝেও একধরণের উষ্ণতা আছে সে আমি বুঝতে পারছি ইদানিং। আমি তো মানুষ নই। আপাদমস্তক এক ঘোড়া।

যে কিনা দৌড়াতে পারে বটে। রেসে হেরে গেলেই কতল! জান, একদিন আমাকে এক পরি জিজ্ঞেস করেছিলো- পরাজয়ের স্বাদ কেমন? আমি বলেছিলাম- আমিতো আজন্ম পরাজিত, জয়ের স্বাদই জানিনা। পরাজয়ের তাই আলাদা কোন অনুভূতি নেই। সেইসব সুখানুভূতির পুরনো কাসুন্দি আর না ঘাঁটি। এসো আমরা বিদিত প্রান্তরে কোন এক সরিষােেতর সৌন্দর্যের কথা বলি।

আমিতো ধীরে ধীরে একটি নিজস্ব আবাস গড়ে তুলছি। সেখানে কোন ভবন নেই। কেবল বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে আছে শশ্য ভান্ডার। যাকে আমরা তে বলি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্তে সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের চাষ হবে।

আমরা খোলা আকাশের নীচেই অতিবাহীত করবো সমস্ত জীবন। কোন ভুল আর ভ্রান্তির যুগ মুছে কেবল নিজস্ব সৃষ্টির ল্েয আমাদের ছুটে চলা হবে সমস্ত পাপের উর্ধে। সত্যি বলতে কি আমার সেই নিজস্ব পৃথিবীর একটা চমৎকার চোখ জুড়ানো আকাশ রয়েছে। সেই আকাশের না নানান সময়ে নানান রং। আমাদের প্রেমের কালে সে না একদিন বাসন্তি রঙে সেজেছিলো।

তার সাথে প্রায়ই আমার কথা হয়। তার আঁচলে মুখ ঢাকতে আজ আর আমার কোন দ্বিধা কাজ করে না। তখন মনে হয় কেবল আকাশের নীচেই পৃথিবী নয় আকাশের মাঝেও রয়েছে আরো এক অপার আকাশ। অথচ তেমন একটা আকাশ তোমারও থাকার কথা ছিলো। কোন এক পূর্ণিমা রাতে সে আকাশের জোছনায় গা ভেজানোর কথা ছিলো আমাদের সকলের।

সকলেই এখন কেমন আছে? কি করেই বা তারা আকাশের এক একটি রংয়ের কথা ভুলে গেল? আমার কাছে এর কোন হিসেব মেলে না। সে হিসাবের টালি খাতা খুলে বসলে স্বয়ং রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরও আমাদের কাছে অনেক পাওনা দেখা দেবে। সে কথা থাক। আমাদের নিজস্ব ভূবনের আকাশ তোমাকে মাঝে মাঝে নিমন্ত্রণ জানায়। ইচ্ছে হলে তুমি যে কোন সময় চলে আসতে পারো।

আমার কাছে তোমার কোন বাঁধা নেই। এ কথা মনে রেখ। তবে তুমি যে একদিন ‘দিগন্তের উপারে’ নিশ্চয়ই দাঁড়াবে। আর তখন সকল শঙ্কার রং হৃদয় হতে মুছে একদিন আকাশ দেখতে ইচ্ছে হইলে চলে এসো আমার এখানে। আমার সবুজ ছাদের নীচে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.