বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিকদলই তাদের দলীয় প্রধানের একক ইচ্ছায় পরিচালিত হয় । এমনকি সরকারে গেলেও ঐ একক ব্যক্তির ইচ্ছায়ই সরকারও পরিচালিত হইতে বাধ্য । সুতরাং সরকার তথা দলীয় প্রধান যদি দেশের সত্যি সত্যি ভালো চান, তবে যেমন দেশের ভালো করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, তেমনি খারাপ চাইলেও খারাপ কাজের যথেষ্ট সুযোগও বিদ্যমান । সেই হিসেবে এই কথা নির্দিধায় বলা যায় যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চাইলেই বর্তমানের শ্বাসরুদ্ধকর অশান্তিময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য সমাধান দিতে পারেন-কোন দলের সাথে কোনরুপ আলোচনা ছাড়াই ।
আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই জানেন যে, বিরোধী দলীয় নেত্রীর চাহিদা কতটুকু এবং কি করলে বর্তমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ন ও সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য সমাধান সম্ভব ।
আর এটা জানেন বলেই তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সকলের পরামর্শ প্রত্যাখান করেন । আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী রাজনীতির চাল চালেন অনেকটা দাবার গুটি চালের মতো, অত্যন্ত ভেবেচিন্তে ও ধীরস্থিরভাবে । একটা চাল দেওয়ার পর তা তিনি গভীরভাবে দীর্ঘ সময় নিয়ে পর্যবেক্ষন করেন-পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তা দেখার জন্য এবং তারপর পরিস্থিতির নিরিখে আবার নূতন চাল চালেন । যে কোন ভয়াবহ পরিস্থিতিও তাকে বিচলিত করতে পারে না, কারন স্বজন হারানোর অতিকষ্ট ও বেদনায় তার মন ও হ্রদয় পাষানের মতো কঠিন হয়ে গিয়েছে । যেই তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসাবে জামায়াতকে সাথে নিয়ে দিনের পর দিন হরতাল দিয়ে অর্থনীতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে শেষপর্যন্ত তা সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করেছিলেন, সেই তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবার সুকৌশলে আদালতের মাধ্যমে বাতিল করিয়েছেন বর্তমানে তিনি সরকারে থাকার সুবাদে ।
আবার তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যাতে বিরোধীদল আন্দোলনে সুবিধা করতে না পারে, তার জন্য রাজাকারের বিচারের নামে বিএনপি জামায়াত জোট ভাংগার জন্য অত্যন্ত কূটচাল চেলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার বিপদজনক খেলায় মেতে উঠেছেন, যদিও রাজনীতির এই খেলা ভুল চালে অত্যন্ত করুন পরিনতি ডেকে আনতে পারে, যা আমরা অতীতে অবলোকন করেছি । শেখ হাসিনার এই খেলার চালে বেগম খালেদা জিয়াকে হয় তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হারাতে হবে, না হয় জামায়াতের সংগ ছাড়তে হবে । যদি বেগম খালেদা জিয়াকে তত্বাবধায়কের বিনিময়ে জামায়াতকে ছাড়তে হয়,তবে আবার উচ্চআদালতের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারদের সাজা বাতিল হওয়ার দৃশ্য দেখাও আমাদের জন্য কোন অবাক করা বিষয় হবে না- কারন, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কোন দু:সাহসিক ও ঝুকিপূর্ন কাজ নাই, যে তিনি করতে ভয় পান । আমার ধারনা, শেষ পর্যন্ত মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী একঢিলে দুই পাখি মারার চালে অন্ততপক্ষে একটি পাখি হলেও তিনি মারতে সক্ষম হবেন । কারন, বর্তমান সরকারের সাথে আতাঁত করা ছাড়া জামায়াতের নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে বাচাঁনোর আর কোন পথ খোলা নেই ।
মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই চালে কিন্ত জামায়াতেরও লাভ দুইদিকে-একদিকে শীর্ষনেতাদের মৃত্যুর হাত থেকে বাচাঁনো যাবে এবং সেইসাথে নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুবিধাও পাওয়া যাবে, যার একটিও কিন্ত বিএনপির সাথে থাকলে পাওয়ার সম্ভাবনা নাই । এমন সুযোগ জামায়াত হাত ছাড়া করবে-তা ভাবার কোন কারন আছে বলে আমার মনে হয় না । আর দেশের বর্তমানের মারমুখী শ্বাসরুদ্ধকর রাজনীতির অবসানের জন্যও সরকারের সাথে জামায়াতের আতাঁতের কোন বিকল্প নাই । আর যদি এই চালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ হন, তবে একদিকে জামায়াতের নেতাদের প্রান যাবে- তা যে কোন মূল্যেই হোক । ফলে দেশে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে, যার পরিনতি কি দাড়াবে, তা আমরা হয়ত অনুমানও করতে পারছি না ।
সেইসাথে তিনি সংবিধানে এমন কিছু পরিবর্তন আনবেন, যাতে আগামীতে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলেও বর্তমান সরকারের দূর্নীতি নিয়ে বেশী কিছু করতে না পারেন, উপরোন্ত এমন কিছু ইস্যু তিনি বর্তমান সরকারে থাকাবস্থায়ই সৃষ্টি করে যাবেন, যাতে ঐ সকল ইস্যু নিয়ে বিরোধীদলের আন্দোলন ঠেকাতে ঠেকাতেই পরবর্তি সরকারের মেয়াদ পার হয়ে যায় । পরিশেষে, আমি এই ধারনা পোষন করি যে, শেষ পর্যন্ত মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতটুকু পারা যায় কম সুবিধা দিয়ে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূনরায় সংবিধানে সংযোজন করবেন, যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনানুযায়ী জামায়াতের সংগ থেকে বিএনপিকে ছুটানো যায় । বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কোন ক্রমেই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আসতে দিবেন না, এটা আমার জোরালো বিশ্বাস ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।