আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজধানীতে আবারো পরকীয়ার বলি?

বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।

রাজধানীতে নিজের শিশুসন্তান খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক মা-কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হালিমা ইয়াসমিন নামের এক গৃহবধূ তাঁর বন্ধুর সহায়তায় নিজের সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। রাজধানীর খিলগাঁও থানার সিপাইবাগের একটি বাড়ির চারতলার সানশেড থেকে গতকাল বুধবার দুপুরে জেনিফা ইসলাম তানহা নামে শিশুটির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

খিলগাঁও থানার পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে হত্যার পর তাকে পাঁচতলার জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু লাশটি চারতলার জানালার সানশেডে আটকে যায়। কয়েক দিন পড়ে থেকে উৎকট গন্ধ বের হলে বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক বশির আহমেদ গতকাল বুধবার এর উৎস খুঁজতে গিয়ে লাশটি দেখেন। এরপর পুলিশ এসে তানহার লাশ উদ্ধার করে এবং তার মাকে গ্রেপ্তার করে। এ বিষয়ে শিশুটির বাবা ফারুক গাজী গতকাল বাদী হয়ে স্ত্রী হালিমা ও তার বন্ধু রাজীবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

গত ২৪ জুলাই মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সামিউল আজিমকে খুনের অভিযোগে তার মা আয়েশা হুমায়রাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আয়েশার সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুর সম্পর্কের বাধা মনে করেই সামিউলকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে ধারণা করা হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে আরেক মায়ের বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার অভিযোগ উঠলো। খিলগাঁও থানার অপারেশন কর্মকর্তা আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির মা হালিমার সঙ্গে রাজীব নামে এক যুবকের সম্পর্ক ছিল। গত ২৭ জুলাই হালিমা মেয়ে জেনিফাকে নিয়ে স্বামীর বাসা থেকে রাজীবের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে সিপাইবাগে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।

গ্রেপ্তার হওয়া হালিমা পুলিশকে বলেছেন, তাঁর বন্ধু রাজিবই শিশুটিকে হত্যা করে পালিয়েছে। তবে তিনি খুনের বিষয়টি জানতেন। অবশ্য হালিমা হত্যাকাণ্ডের দিনক্ষণ সম্পর্কে একেক সময় একেক কথা বলছেন। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হালিমা বলছেন শবে বরাতের পরদিন রাজীব দইয়ের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাইয়ে দিলে তিনি অচেতন হয়ে যান। পরদিন সকালে জ্ঞান ফিরে এলে রাজীব বা মেয়ে জেনিফা কাউকেই তিনি খুঁজে পাননি।

হালিমা একপর্যায়ে আবার অনিশ্চিতভাবে বলেন, ‘ছয় সাত দিন আগে’ এই ঘটনা ঘটেছে। অপারেশন কর্মকর্তা আসলাম জানান, তাঁর বক্তব্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। থানা হেফাজতে হালিমা প্রথম আলোকে জানান, দেড় বছর আগে মিরপুরে রাজিবদের সঙ্গে তাঁরা পাশাপাশি বাসায় থাকতেন। সেখান থেকেই তাঁদের পরিচয় ও পরে সম্পর্ক হয়। গত ২৫ জুলাই তাঁরা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

পরদিন রাজিব সিপাইবাগে বাসা ভাড়া করেন। হালিমা বলেন, ২৭ তারিখে তিনি দেড়লাখ টাকা ও গয়নাগাঁটিসহ মেয়েকে নিয়ে রাজিবের সঙ্গে ওই বাড়িতে ওঠেন। সেখানে দুইদিন থাকার পর ২৯ বা ৩০ জুলাই তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান রাজিব। প্রথম আলোকে হালিমা আরও বলেন, ঘুম ভাঙার পর তিনি উঠে দেখেন রাজিব বাসায় নেই। মেয়ে জেনিফা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।

এরপর তিনিও আবার ঘুমিয়ে পড়েন। হালিমা দাবি করেন, পরদিন উঠে আর জেনিফাকে বিছানায় দেখেননি তিনি। শিশুটির বাবা ফারুক গাজী বলেছেন, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তিনি মিরপুর ১১ নম্বরে থাকতেন। ২৭ জুলাই কাজে যাওয়ার পর দুপুরের দিকে স্ত্রী হালিমা তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘আমি জাহান্নামে চললাম। ’ এরপর থেকে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ২৮ জুলাই তিনি পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ফারুক বলেন, সর্বশেষ গতকাল সকালে তাঁর সঙ্গে হালিমার ফোনে কথা হয়। স্ত্রী তাঁকে জানান, জেনিফা বেঁচে নেই। তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন হালিমা। একবার বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে, আরেকবার বলেন ওপর থেকে পড়ে গেছে।

কখনও বা বলেন তাকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। প্রথম আলোকে ফারুক বলেন, ফোনে এ আলাপের পর তিনি ডিবি অফিসে যান। পরে দুপুর তিনটার দিকে খিলগাঁও থানা পুলিশ তাঁকে ফোন করে লাশের বিষয়টি জানান। ফারুক জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে উভয়ের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে পারিবারিক আয়োজনে তাঁদের বিয়ে হয়। সিপাইবাগের বাড়িটির তত্ত্বাবধানকারী বশির আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, গত ২৭ জুলাই হালিমা ও রাজীব স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।

তাঁরা কিছু অগ্রিম দিয়ে বাকি টাকা ১ আগস্টের মধ্যে দেওয়ার কথা বলে যান। কিন্তু ১ আগস্ট থেকে ওই ফ্ল্যাটে তালা মারা দেখা যায়। এর মধ্যে বাড়িটির আশপাশে উৎকট গন্ধ বের হতে শুরু করেছিল। মঙ্গলবার পাঁচতলার জানালায় হালিমাকে দেখার পর রাতে তাঁর কাছে ভাড়ার জন্য যান বশির। হালিমা তাঁকে জানান, তাঁর স্বামী (রাজীব) বাসায় নেই।

তিনি এলেই ভাড়া দেওয়া হবে। ওই রাতেই ১১টার দিকে হালিমা একটি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির লোকজন তাঁকে আটকায়। গতকাল সকালে ফ্ল্যাটে বৈদ্যুতিক কাজের জন্য গেলে জানালার বাইরে থেকে তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। বশির বলেন, তিনি গ্রিল দিয়ে উঁকি মেরে একটি বাচ্চার হাত দেখতে পান। এর পরই পুলিশকে খবর দেন।

বশির জানান, ওই জানালার গ্রিলে একটা বাচ্চা ঢোকার মতো যথেষ্ট ফাঁক নেই। দৃশ্যত লাশের অংশবিশেষ কেটে কোনোমতে গ্রিল দিয়ে বের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রাজীব সেগুন বাগিচার একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ বলে জানিয়েছেন হালিমা। তবে তাঁর ভাড়া নেওয়া বাসার দরজায় নাম লেখা রয়েছে রায়হান রাজ্জাক চৌধুরী রজব।

পাশের দুই ফ্ল্যাটের ভাড়াটেরা জানান, তাঁরা কেউই বাচ্চাটিকে দেখেননি। তবে কয়েক দিন থেকে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন। (সূত্র প্রথম আলো অনলাইন -০৫ আগস্ট ২০১০)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.