বা
বিষ্ণু দে
বরিস্ পাস্তেনাক-কে
প্রকৃতিতে মুগ্ধ হও, কারণ প্রকৃতি মনোলোভা,
ভোগ্যা শুধু, উপভোগ্য, পরকীয়া; ভিন্ন, বাহির, সুদূর;
অসম্বন্ধ; মানবিক সামাজিক নয়। তাই নিসর্গের শোভা
দেখ, শোনো, মুগ্ধ হও, যেমনটি হত-ডন যুয়ানেরা
নারীর বিচ্ছিন্ন সঙ্গে, যেহেতু সে সাময়িক বিস্মৃতি মধুর।
এমনকি প্রকৃতির নিয়মনিষেধ- তাও সহজেই ভোলা যায়,
দুর থেকে, সুর্যাস্তের মেঘে তাই বন্যার ক্রন্দন ভোলো
অসংলগ্ন মুহুর্ত-সম্ভোগে, অন্তরঙ্গ প্রকৃতিতে প্রকৃতিস্থ নয়।
অরণ্যের শ্যামলিমা কিংবা শুভ্র তুষার মহিমা
তার মনে কখনো কি প্রান্তরের বাস্তুহারা দাবদাহ জ্বালে?
বাঘের আগুনে ক্ষিপ্র খুশি লাগে, আবার তাকাও অন্যদিকে
হরিণের নাচ দেখ, অথচ হরিণ বাঘের শিকার।
মানুষ হরিণ নয়, বাঘও নয়, ভাবটাই কবিত্বের চুড়ান্ত বিকার।
কি ক’রে মেলাবে বলো দায়িত্বেহীনের ব্যক্তি সভ্যতার লুপ্ত দায়ভাগে
বলো কোন লোভী ভোগী স্বার্থের আড়ালে
মানুষ নিসর্গ হবে, ফলফুল গাছ মাটি নদী বন
সমুদ্র পাহাড় সবকিছু হ’য়ে যাবে নিঃসঙ্গ মানুষ?
অথচ এ প্রেমের তাড়না বাস্তবিক, খাঁটি বটে।
প্রেমিক কি চায় না প্রিয়ার স্বরূপে মেলাতে
নিজেরই স্বতন্ত্র সত্তা? যদিও মিললে আর নারী ও পুরুষ
থাকবে না, লুপ্ত হবে প্রেমিক ও প্রিয়া। চিরন্তন প্রেমের সঙ্কটে
পেশাদার প্রেমে প্রেমে নিরুদ্দেশ হ’য়ে যাবে প্রেম-ই স্বয়ং।
অবশ্য প্রেমের ব্রতে প্রেমের খেলাতে
ভুলচুক স্বাভাবিক, বেসুরে বেতালে আকস্মিকে
নদীই বাঁকতে পারে, শুকাতেও। ভল্গার , গঙ্গার, ইয়াংৎসিব,
টেম্সের, টেনেসিরও।
কিন্তু তাই ব’লে কেউ
চাইবে না পরস্পর দুইপাড়, চাইবে না পরস্পরা পাড়ে পাড়ে ঢেউ?
জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে-
সুতারাং এ জীবনই ত্যাজ্য বলো কবিত্বের ফেউ ধ’রে?
মুক্তি বুঝি জন্মের বিপ্লবে নয়, মুক্তি শুধু শবাগারে আজন্মা উৎসবে?
এ আত্মবঞ্চনা, বন্ধু।
জাতিস্মর বার্ধক্যের সতী নয়, পার্বতীর আজ স্বয়ম্বর,
বৃথা খোঁজো শতচ্ছিন্ন সতীর প্রতীক, কিরাত শঙ্কর তাকে
প্রকৃতিতে ব্যাপ্ত করে, সমাজে যে দগ্ধ আজ আসরের বৈঠকের দক্ষ পঞ্চশর।
ভাবতে অবাক লাগে, এত দেখে এত ঠেকে শিখে
কেন যে অনেকে আজও পশ্চিমের দু’তিন শতকে ভাবি
সভ্যতার আদি আর শেষ! কবন্ধের লোভে দেহমনে আত্মপরে
একক-অনেকে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন কবি শূন্যে স্বয়ম্ভর।
এ নাটে কুমার কোথা? এতে নেই অর্ধনারীশ্বর।
এ নন্দনসর্বস্বতা অসম্বন্ধ অন্ধতাই, এতে নেই পূর্বাপর,
পৃথিবীর মানদন্ড, এ দ্বৈতে অদ্বৈত নেই, এ এক আরেক নেই,
একচক্ষু গবাক্ষে তো মনের আকাশ নেই, বিকাশ বিলাসে রুগ্ন,
বিলাস বিকারে।
একলষেঁড়ের এ খোঁয়াড়ে কোথা কারো চাবি?
আত্মহা এ তত্ত্বের ছলায় শিল্প শুধু পথে পথে খেউড়ে, প্রলাপ।
প্রকৃতি-মানুষে আর মানুষে মানুষে ভেদ অবশ্যাসম্ভাবী।
কুৎসিতের স্থিতাবস্থা চেয়ে কান্না শিল্পে মহাপাপ।
মনের যা অগোচর নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।