আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদশের গণমাধ্যমে বিশ্বকাপ ফুটবলের সংবাদ উপস্থাপনা



স¤প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ ফুটবলের। বরাবরের মতো এবারো বিশ্বকাপের ১৯তম এ আসর ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশের শহর-গ্রামের প্রতিটি ক্রীড়ামোদী মানুষের মনেপ্রাণে। বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। প্রিয় দেশের পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল দেশের আনাচে কানাচে। বিশ্বকাপককে ঘিরে বাঙালির উৎসাহ-উন্মাদনা দেখে মনে হয়েছে আমাদের জাতীয় উৎসবকেও তা ছাড়িয়ে গেছে।

আসর চলাকালে মানুষের আলোচনা-সমালোচনা, রেষারেষি-মন কষাকষি সবকিছু ছিল বিশ্বকাপকে ঘিরে। আর তাদের এ সময়ে গণমাধমে উঠে এসেছে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ, বিশ্বকাপ ভেন্যু, ফেভারিট দল, তারকা খেলোয়ার, কোচ, ম্যাচ বিশ্লেষণসহ অতীতের বিশ্বকাপসমূহের রেকর্ড। মোটের ওপর গণমাধ্যমের খেলার আয়োজনের পুরোভাগেই ছিল বিশ্বকাপ ফুটবল। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মিডিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের সংবাদ উপস্থাপনের ধরণ ও প্রবণতা তুলে ধরা বর্তমান রচনার উদ্দেশ্য। খেলা চলাকালীন সময়ে প্রথম সারি থেকে শুরু করে র্সবস্তরের গণমাধ্যম মেতেছিল ফুটবল নিয়ে।

পাঠকপ্রিয়তা বাড়াতে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদ পরিবেশের হিংসভাগ ছিল বিশ্বকাপকে ঘিরে। দেশের প্রধান চারটি সংবাদপত্র যথাক্রমে প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল ও ডেইলি স্টার এবং চারটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, এনটিভি ও বাংলাভিশনে গত দু’মাসের বিশ্বকাপ সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছি। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০: দ: আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপ ফুলবল ছিল ৩৯ তম আসর। আর এবারের দুনিয়া কাপানো আসরে অংশ নেয় ৩২টি দেশ। দেশগুলো ৮টি গ্র“পে ভাগ হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ গ্র“পে ছিল ফ্রান্স, দণি আফিকা, মেক্সিকো, উরুগুয়ে, গ্র“প বি’এ আর্জেন্টিনা, নাইজেরিায়, দণি কোরিয়া ও গ্রিস, গ্র“প সি’এ ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়া, স্লোভেনিয়া, গ্র“ ডি’ এ জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সার্বিয়া ও ঘানা, গ্র“প ই’এ হল্যান্ড, ডেনমার্ক, ক্যামেরুন ও জাপান, গ্র“প এফ’এ ইতালি, প্যারাগুয়ে, নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া, গ্র“প জি’ ব্রাজিল, উত্তর কোরিয়া, পর্তুগাল ও আইভরিকোস্ট, এবং গ্র“প এইট’এ স্পেন, সুইজারল্যান্ড, হন্ডুরাস, চিলি। নানা ঘটন-অঘটনের জন্ম দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ। শুরু থেকে হট ফেভারিট বলে যাদের ধরা হতো তাদের কেউ তেমন ভালো খেলা উপহার দিতে পারে নি এবার। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা ও বিশ্লেষকদের বিশ্লেষনকে পাশ কাটিয়ে হল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরোপীয় চাম্পিয়ন স্পেন কাপ নিজেদের ঘরে তুলে নেয়। বিশ্বকাপ পূর্ব আয়োজন: বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগ থেকেই আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত সংবাদ বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচার হতে থাকে।

বিশেষ করে এ সময়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ও স্বগাতিক দেশের বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রচার করা হয়। গণমাধ্যমগুলোর নিয়মিত আলোচ্য বিষয় ছিল বিশ্বকাপ শুরুর কাউন্ড ডাউন, স্বাগতিক দেশের স্টেডিয়াম, নিরাপত্তা, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থান, অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলের চুলচেরা বিশ্লেষণ, তারকা খেলোয়ারদের প্রফাইল, কোচদের পরিচিতি ও বাকযুদ্ধ, অধিনায়ক ও কোচদের দল ও কাপ নিয়ে প্রত্যাশা, দেশি ও বিেেদশি ক্রীড়া বিশ্লেষকদের কলাম, মতামত ও ভবিষ্যদ্বানী, বিভিন্ন দেশ ও তারকাদের সর্মথকদের নিয়ে জরিপ, সমর্থকদের উন্মদনার চিত্র, বিশ্বকাপের বর্ণিল আয়োজন। বাংলাদেশের সংবাদমধ্যমগুলোতে নির্ধারিত খেলার পাতা ছাড়াও প্রথম ও শেষ পাতাতে বিশ্বকাপ আসরের জন্য বেশ কিছু অংশ নিয়মিত বরাদ্দ ছিল। এই অংশগ্রলোতে ক্রীড়ামোদীদের চাহিদ অনুযযায়ী বিশ্বকাপ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ধারাবাহিকভাবে স্থান পেয়েছে এবং পত্রিকাগুলোর মধ্যে বিশ্বকাপ সংক্রান্ত প্রচার নিয়ে একটি অঘোষিত প্রতিযোগিতা ল্য করা গেছে। কে কতটা চমকপ্রদ ব্যতিক্রমর্ধমী তথ্যবহুল ও নতুন সংবাদ পরিবেশন করতে পারে।

এই সংবাদের পাশাপাশি নানা মাপের রঙিন আবেদনমীয় ছবি ও স্থান পেয়েছে সমান তালে। অর্থাৎ পাঠককে আকৃষ্ট করাই ছিল মূল্য উদ্দেশ্য। জুন-জুলাই মাসের পত্রিকা বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্যানুযায়ি প্রচার সংখ্যার শীর্ষে থাকা প্রথম আলো পত্রিকাতে প্রথম ও শেষ পাতা এবং খেলার অংশ ছাড়াও প্রতিদিন বিশ্বকাপের বাশি নামে আলাদা পাতা বের করে। আর্জেন্টিনার প্রতি বেশ ঝোক ল্য করা গেছে পত্রিকাটিতে। এই সংবাদপত্রটিতে প্রায়ই কলাম ছাপা হয়েছে ইতালির ফুটবলার পাওলো রসি, জার্মানির ফুটবলার লোথার মাথাউথ ও বাংলাদেশের ফুটবলার কাজী সালাউদ্দীনের।

এই কলামগুলোতে তারা বিভিন্ন দল, খেলোয়াড় তারকদের নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী মতামত তুলে ধরেন। এ পত্রিকাতে সংবাদরে চেয়ে ছবিকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পক্রিকাটিতে আরো ল্যনীয় যে আর্জেনিটনা ও ব্রাজিলের সংবাদ যতাটা গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষনীয় ভাবে ছাপা হয়েছে অন্যান্য দেশের সংবাদ সমানভাবে ছাপা হয়নি। ছরি েেত্রও এইকই চিত্র দেখা গেছে। এইই চিত্র দেখা গেছে দৈনিক কালের কন্ঠ পক্রিকাটিতে।

এ দৈনিকটির খেলার পাতা ছাড়াও আলাদা করে বিশ্বকাপ প্রতিদিন নামে বিশেষ পাতা প্রতিদিন প্রকাশ করেছে। কালের কন্ঠে দখা গেছে তারা ব্রাজিলেকে বেশি প্রধান্য দিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করেছে। এ পত্রিকাটিতে ম্যারাডোনা , দৃঙ্গা, রোমরিও ও এনামুল নিয়মিত কলাম লিখতেন। এদের কলমেও বিভিন্ন দল, কোচ খেলোয়াড়দেও নিয়ে নানা রকম বিশ্লেষণ প্রকশিত হয়েছে। তাছাড়া তারা বিশ্বকাপ নিয়ে ভবিষ্যদ্বানীও করেছেন।

পক্রিকটিতে দেখা গেছে তারা সংবাদের পাশাপশি ছবিও বেশি মাত্রায় প্রকাশ করেছে। দৈনিক সমকালের েেত্র দেখা যায় পত্রিকাটি গতানুগতিক ধরার বাইওে গিয়ে বিশ্লেষনধর্মী সংবাদ বেশি প্রকাশ করেছে। প্রথম আলো ও কালের কন্ঠ যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে নিয়ে ব্যস্ত সেখানে পক্রিকাটি এবারের ফেভারিট অন্যান্য দেশের সংবাদ তুলে ধরছে। যার মধ্যে স্পেন, জার্মানি, হল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল উল্লেখ্যযোগ্য। কলামের েেত্র এই পতিক্রাটি দেশি ক্রীড়াবিদদের প্রধান্য দিয়েছে।

যেখানে জুয়েল রানা, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, কানন এর মতো দেশি তারকা খেলোয়ারদের ফুটবল চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে। পত্রিকটিতে ল্য করা যায়, ছবির চেয়ে সংবাদ, জনসমর্থনের চেয়ে পারফরম্যান্সের, আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিশ্বকাপ সংবাদ প্রচারের েেত্র সমকাল নিরপে দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টার বিশ্বকাপ নিয়ে ওর্য়াল্ড কাপ স্পেশাল নামে কএকটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এ পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষনে দেখা গেছে সংবাদ সংস্থা ও ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদই বেশি ছেপেছে।

অন্যান্য বাংলা পত্রিকার মতো এদের নিজস্ব সংবাদদাতা এবং বিশ্লেষকদের কলাম ও ভবিষ্যদ্বানী ছিল না। আর ছবির েেত্র এরা মাঠের বাইরেরও দর্শক গ্যালারি এবং বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনকে তুলে এনেছে। এ পত্রিকায় সংবাদের বিশ্লেষণের চেয়ে মাঠের বাইরের নানা আয়োজন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এরা খেলোয়ারদের নৈপুন্যের চেয়ে তাদের ব্যক্তিগত সংবাদ প্রকাশ করে দর্শকদের বিনোদিত করতে চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ তারা খেলাকে শুধু বিনোদনের চোখে উপস্থিপিত করেছে।

বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিশ্বকাপ আসর নিয়ে সংবাদ পরিবেশন ছিল চোখে পড়ার মতো। খেলা চলাকালীন দু’মাসের চারটি টিভি চ্যানেল (এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, এনটিভি ও বাংলাভিশন) প্রাইম টাইমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্বকাপ সংক্রান্ত সংবাদ বেশি ছিল এবং বিশ্বকাপ নিয়ে আলাদাভাবে সংবাদের উপস্থাপনা ছিল। তাছাড়া ক্রীড়া বিশ্লেষকদের নিয়ে নিয়মিত টকশোর আয়োজন ছিল। এসব অনুষ্ঠানের পুরো অংংশ জুড়েই ছিল বিশ্বকাপের আলোচনা। এ চ্যানেলগুলোতে বিশ্বকাপ নিয়ে সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।

এসব টিভি চ্যানেলের প্রত্যেকটি দলের অনুশীলন পযার্য় দেখানো হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন দলের তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন, নৈপুন্য তুলে ধরা হয়েছে। এদের প্রচারে কর্পোরেট মিডিয়ার নাম ও পণ্যের প্রচারই বেশি উঠে এসেছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন তারকাদের বান্ধবী ও স্ত্রীদেরকে আবেদনমীয় করে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলেল অনেক সাংবাদিক দণি আফ্রিকায় গিয়ে লাইভ সংবাদ পরিবেশন করেন।

এছাড়া বিশ্বকাপের সর্বশেষ সংবাদ নিয়ে নিউজ এলার্ট ছিল সব চ্যানেলে। উদ্বোধীন অনুষ্ঠান: দণি আফ্রিকার জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়মে জমকালো আফ্রিকান সংস্কৃতি ও ঐহিত্যের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী বিশ্বকাপের পর্দা উন্মেচন করা হয়। অনুষ্ঠানে কলম্বিয়ান গায়িকা শাকিরার ওয়াকা ওয়াকা গানটি সারা বিশ্বের মানুষকে মাতিয়ে তোলে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে প্রধান শিরোনাম হিসেবে উপস্থাপন করে। দেশের প্রতিটি সংবাদপত্র এ সংবাদটি ছবিসহ লিড আকারে প্রকাশ করে।

টিভি চ্যানেলগুলো এ অনুষ্ঠানের সংবাদ দীর্ঘ সময় ভিডিও ফুটেজ দিয়ে পরিবেশন করে। বিটিভি এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি প্রচার করে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন চ্যানেল এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রচার করে। শাকিরার আবেদনময়ী ও আকর্ষনীয় ওয়াকা ওয়াকা গানটি চ্যানেলগুলো খেলাধুলার বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবেশন করে। যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

প্রথম রাউন্ড: প্রথম রাউন্ডের খেলার সংবাদ প্রচারের েেত্র ল্য করা যায়, গণমাধ্যমগুলো বড় দলগুলোর সংবাদকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ছোট দলের সংবাদ কম গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করে। গণমাধ্যমগুলো বড় দলেল জয়-পরাজয়ের সংবাদ বড় পরিসরে প্রকাশ করে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মতো দলগুলোর খেলার আগের দিন ও পরের দিন গণমাধ্যম অন্য দলুগলোর সংবাদের চয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করে। বড় দলের কোন খেলোয়ারের গোলে সংবাদ যেভাবে প্রকাশ করা হয়েছে ছোট দলের কোন খেলোয়াড়ের গোলের সংবাদ তেমন একটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়নি।

তাছাড়া বড় দলের তারকা যেমন মেসি, কাকা, রোনালদো, রুনি, রবিনহো, অরি, ভিলা, তেভেজকে নিয়ে মাতামাতি করা হয়েছে। অন্যান্য দলের খেলোয়ারদের নিয়ে ঠিক তেমনটি করা হয়নি। দ্বিতীয় রাউন্ড: ১ম রাউন্ড শেষে গণমাধ্যমগুলো আরো বেশি গুরুত্ব সহকারে বিশ্বকাপের সংবাদ পরিবেশন করা শুরু করে। এ পর্যায়ে সংবাদমাধ্যমগুলো মতামত ও বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করে। ২য় রাউন্ডে গণমাধ্যম প্রতিটি দলেল অধিনায়ক ও কোচের মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরে।

তাছাড়া এখানে দলের গেম প্লানও উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া খেলার আগের দিনে বিভিন্ন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বের ভবিষ্যদ্বানী দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এ পর্যায়ে ১ম রাউন্ডে পরাজিত দলগুলোর পরাজয়ের কারণ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পরিবেশন করা হয়। তবে বাংলাদেশের মিডিয়ার নির্ধারিত টপ ফেভারিট দলগুলো অনেকে ১ম রাউন্ড থেকে বিদায় নিলে তাদের বিশ্লেষণ অনেকটা অতলে হারিয়ে যা। এসব দলেল তারকা খেলোয়ারদের নৈপূর্ন্য নিয়েও আর কোন সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি।

২য় রাউন্ডে দেখা যায় ছোট দলের জয়ের চেয়ে বড় দলের পরাজয়ের সংবাদকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া বড় দলের পরাজয়ের সংবাদিটি বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধলা হয়েছে এবং তারকাদের নৈপূন্যের ঘাটতিও তুলে ধরা হয়েছে। ২য় রাউন্ডের খেলা দেখে ভবিষ্যদ্বানীর সংবাদও পরিবেশন করা হয়েছে। সুপার এইট: এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ঘানা, হল্যান্ড, স্পেন, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেয়।

বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে শেষ আটে এসে সংবাদ প্রচারের েেত্র সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বিদায়। ব্রাজিল হল্যান্ডের কাছে পরাজিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো সবকিছুর উর্ধে স্থান দিয়েছে। কোচের ব্যর্থতা ও দলীয় নৈপুন্যের সমন্বয়হীনতাকে। তখন তাদের প্রচারের হিংসভাগ স্থান পেয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদ। তবে প্রতিপ জামার্নি হওয়ায় সব মিয়িাতে খেলার ভাগ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও আর্জেন্টিনার জয়ের ব্যাপারে প্রত্যাশা ছিল।

কিন্তু আর্জেন্টিনার বিদায়ের পরই বাংলাদেশর মিডিয়ার অর্ন্তঃসারশূন্যতা জনসম্মূখে প্রকাশ পেয়েছে। দর্শকপ্রিয়তা কমার কারণে মিডিয়া হতাশ হয়ে পড়ে। তখন তারা দর্শককে অন্য দলের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে আকর্ষনীয় সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। কাকা, মেসির জায়গায় মিডিয়া নিয়ে এসছে ফোরলান, সুয়ারেন, রোবেন, স্লাইডারকে। যা মিডিয়ার কর্পোরেট প্রতিনির্ধিত্বের বহিঃপ্রকাশ।

এ পর্যায় থেকেই মিডিয়া প্রকাশ শুরু করে কে হবে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল বিজয়ী। তবে গণমাধ্যমে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে অক্টোপাস পলের ভবিষ্যদ্বানীর সংবাদ। মিডিয়ার সংবাদগুলো থেকে মনে হয় দলের শক্তি নয়, অক্টোপাসের ভবিষ্যদ্বানী পারে কোন দলকে বিজয়ী করতে। সেমিফাইনাল: বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রিয় দলগুলো বাদ যাওয়ার পর সেমিফাইনালে এসে মিডিয়ার প্রধান আর্কষণ ছিল জার্মানি ও স্পেনের দিকে। সংবাদ প্রচারের দিক থেকে জার্মানিকে এগিয়ে রেখেছে মিডিয়া।

তবে স্পেন প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠার কারণে এবং জয়ের সম্ভাবনা থাকার কারণে এই দলটির মিডিয়া কভারেজ ছিল চোখে পরার মতো। এ সময় মূলত দলগুলোর পরিসংখ্যানমূলক সংবাদ বেশি মাত্রায় প্রচার করা হয়। সেমিফাইনালে স্পেনের কাছে জার্মানির পরাজয়ের পর সংবাদের ভাষায় ছিল হতাশার সুর। আবার নতুন একটি দলের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনার চমকপ্রদ সংবাদও প্রচার করে মিডিয়া। এ সময় অক্টোপাসের ভবিষ্যদ্বানী সত্য হওয়ার ঘটনা বেশ গুরুত্বের সহকারে মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়।

এ সময় অক্টোপাসই হয় মিডিয়ার কাছে বিশ্বকাপের র্নিধারক। তৃতীয় স্থান নির্ধারনী: তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে তেমন গুরুত্ব পায়নি। এ ম্যাচটি সাদামাটাভাবে উপস্থাপন করা হয়। ফাইনাল: বাংলাদেশেীদের কাছে এবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের তেমন কোন আবেদন ছিল না। প্রিয় দল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালির বিদায়ের পর অনেকেই খেলা দেখা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিল।

তবে এেেত্র মিডিয়ার ভূমিকা ছিল লনীয়। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল হারার পর মিডিয়ার বাড়াবাড়ি অনেকটাই থেমে যায়। কারণ মিডিয়াই দর্শকদের অধিকাংশ েেত্র মাতিয়ে রেখেছিল। এদিকে বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়ামোদীদের দীর্ঘ প্রত্যাশার অবসান ঘটিয়ে উপস্থিত হয় ফাইনাল ম্যাচ। এ ম্যাচে গণমাধ্যম দলগত বিশ্লেষনের চেয়ে অক্টোপাসের ভবিষ্যদ্বানীকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

মিডিয়ার সংবাদপ্রচারের ধরন দেখে মনে হয়েছে বিশ্বকাপের ফলাফল ছিল পূর্ব নিধারিত। স্বল্পকালের বিশ্লেষনে তারকা সমৃদ্ধ হল্যান্ডের সম্ভাবনার কথাও এসেছে ঘুরে ফিরে। কিন্তু সব কিছুকে পাস কাটিয়ে অক্টোপাসের ভবিষ্যদ্বানীই সত্যি হয়। হল্যান্ডকে হারিয়ে স্পেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরৈাপা তুলে নেয়। তবে স্পেনের বিজয়ের সংবাদ ঘটা করে প্রচার করা হলেও প্রচারের ভাষায় প্রাণছিল না।

উপসংহার: দীর্ঘ প্রচারে কান্ত ছিল মিডিয়া। ফেভারিট দলগুলোর উত্থান-পতনের সাথে মিডিয়া কভারেজেরও পরির্বতন হয়েছে বারবার। বাংলাদেশের শীর্ষ মিডিয়াগুলোর বিশ্বকাপের সংবাদ পরিবেশনের েেত্র দেখা গেছে কান্ডজ্ঞানহীনতা। এছাড়া বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে তাদের সংবাদ বিশ্লেষনে কোন স্বকীয়তা নেই। তারা জনমত দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত।

আর তাদের এজেন্ডা মূল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রা করা। মাস্যবাপী বিশ্বকাপ আসর চলাকালে তাদের এই রূপটির সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.