আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি সাইফাই গল্প গ্রন্থের কথা



ব্লগে এসে ব্লগ পড়ে যখন ভাবলাম এখানে আমার নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়া দরকার- তখন কিছু জিনিস পড়া হয়েছিল। কিছু সাই-ফাই, কিছু কবিতা, কিছু গল্প, কিছু আলোচনা। অবশ্যই আরো অনেক মজার কিছু এবং জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু পড়া হয়েছে। এবং সব মিলেই ব্লগকে নজরে রাখার মত কিছু মনে হয়েছিলো।

ব্লগের প্রথম দিকে সাইফাই যাদের পড়ি তাদের একজনের বই আজ পড়ে শেষ করলাম। এনামুল আজিম রানা। তিনি তার গল্পগুলো লিখে রেখেছিলেন ইংরেজিতে। সামহোয়ারইনের ব্লগার পারভেজ তার বড় ভাই, তার মৃত্যুর পর সেগুলো খুঁজে বের করে বাংলা করে ব্লগে প্রকাশ করতেন। এই বছর বইমেলায় গল্পগুলি তার বাংলা অনুবাদসহ প্রকাশিত হয়।

প্রথম গল্পটি স্বপ্ন । এটি কারো একজনের দুঃস্বপ্নের কথা। শেষে এসে একটা চমক। এবং তখন সবটা আবার ভাবতে, এবং যে জীবনে এই দুঃস্বপ্ন দেখা যায় তার শূন্যতার কথা ভেবে গা শিউরে উঠতে পারে। যদি তার গভীরতাটা অনুভব করা যায়।

এখানে আমি মনে করি সহজ ভাষায় লেখা হলেও অনেকে অনেক শূন্যতা একই মাত্রায় সব সময় অনুভব করে না। একেক সময় আমাদের একেক ধরনের লেখা পড়তে ভালো লাগে। কখনোও আমরা শূন্যতার গল্প ভালো বুঝি কখনোও পূর্ণতার। দ্বিতীয় গল্প মৃত্যুর খেলা অনেকটা হালকা ধাঁচে প্রথমটির তুলনায়। তৃতীয় গল্প ক্যানভাস ।

মূলত এই ধরনের ভাবনাই লেখকের ট্রেডমার্ক বলা যায়। স্রষ্টা এবং সৃষ্টি এবং নিয়ম এবং এসবের অর্থহীনতা, ভঙ্গুরতা, অসারতা এবং কষ্ট। এই কষ্ট যা চিন্তাশীল মানুষ কৈশোরে-যৌবনেই পায় এবং কেউ হয়তো ধামাচাপা দেয়, কেউ হয়তো নানানভাবে নিজেকে স্বান্তনা দেয়। আর কেউ শূন্যতাকে বরণ করে। গল্পের কথক শূন্যতা কে বরন করে নিলো।

এখানে ভাবনার যে স্রোত তা পরবর্তি গল্পগুলোতে আরেকটু পরিপূর্ণতা পেয়েছে, আরেকটু সুগঠিত হয়েছে। চতুর্থ গল্প ভালোবাসা কিংবা ভালো না বাসার গল্প বইটির সবচেয়ে বড় গল্প। এবং হয়তো সবচেয়ে ক্লান্তিকরও বটে। একজন শূন্য মানুষ যে নিয়মের উর্ধে, যে জানে আসলে কোনো নিয়মের কোনো অস্তিত্ব নেই, যার কাছে সবই অসার, চরম আত্মকেন্দ্রিক - তার প্রেমের খেলার গল্প। সে কিভাবে একটা মেয়েকে জয় করতে চায়, তার উপর দখল রাখতে চায়, তার উপর নিজের মানসিক শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে চায়, আবার তাকে চায়ও না।

গল্পের কথোপকখন অংশটি মজবুত ভাবে বানানো কিন্তু একটা গ্যাপ হলো মেয়েটির বুদ্ধিমত্তা। মেয়েটিকে অনেক বুদ্ধিমতী দেখানো হলেও তাকে জিততে দেয়া হয়নি। এবং এজন্যই এটা ক্লান্তিকর। পরের গল্প দেবদূত এ যেন আগের গল্পটির একরকম সাফাই দেয়া হয়। যেটা বেশ সিনেমাটিক কিন্তু যদি ধরি ইবলিসও ফেরেশতাদের একজন এবং তারও মানবিয় কিছু বৈশিষ্ঠ থাকতে পারে, তখন প্রশ্ন ওঠে তাহলে নায়িকা শীনা বাদে বাদ বাকি মেয়েগুলোর কথা নিয়ে।

একটি সংবাদের অংশবিশেষ গল্পটির মূল বিষয় বিশ্বাস। স্বর্গ খেলোনা গল্পের মূল বিষয় প্রেমের শৈশব কেন স্বর্গে নয় পৃথিবীতে। এবং স্বর্গ উপভোগের জন্য পৃথিবীর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। প্রত্যাবর্তন চক্র কাছাকাছি থিমে আরেকটু মজার গল্প। ট্রেন গল্পটির মূল ভাবনা আমার মনে হয়েছে ক্যানভাস গল্পটির কাছাকাছি।

এটিতে আরেকটু বেশি রূপকের সাহায্য নিয়ে বক্তব্য আরেকটু সংহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোন একরাতে গল্পটায় আধুনিক একটা চালাকি আছে - ঝাড়ুদার যদিও বলে তার মতো দেখতে সাবেক লেখক আসলে তার ভাই, তবু সন্দেহ যেন কিছুতেই পাছ ছাড়ে না। পল ম্যাথিয়াস ও চকচকে গোল জিনিস এরকম বাকপটু আধুনিক চালাকির গল্প। তারা দুজনে টা মনে হয় বইটির সবচেয়ে রোমান্টিক গল্প। এবং নায়িকার বর্ননাটা এখানে বেশ ভালো লাগে।

গণনা সেকেলে গল্পের আধুনিক রূপ। প্রতিধ্বনি র বিষয় হারানো দ্বিতীয় সত্তা- যেটা লেখকের একটি প্রিয় বিষয় যেটা সারক্ষন বার বার আসে এই বইটিতে বিভিন্ন ভাবে। যুদ্ধ এবং ভালোবাসা , এবং সংশপ্তক গল্প দুইটিতে আছে যুদ্ধ বিষয়ে ভাবনার কথা। পাগলামি গল্পটাতে পাগলামি বেশ পর্যাপ্ত পরিমাণেই আছে। চক্র গল্পটা আবারও লেখকের একটা নিয়মিত থিমে এবং এরকম ছোট্ট গল্প ভালো লাগে।

শেষে কথক যে প্রশ্নটা করে তার উত্তর আমরা জানি, এবং এতই ঠোঁটের ডগায় জবাবটা এসে যায় যে মনে হয় উত্তরটা বলে দেই, এবং কেমন সহজে জবাবটা দিয়ে দিচ্ছি ভেবে অবাক লাগে। অতঃপর বিদায় স্মৃতি জীবন ও মৃত্যু নিয়ে। টোডলক এবং শেষ বিচারের দিন গল্প দুইটা মনে হয় আমি এখনোও ঠিক ভাবে অনুভব করি নাই। টোটাল রিকল , সিমুলেশন , সময় , খেলনা , স্বপ্নে বসবাস , গল্পের ভবিষ্যত এসবই প্রথগত সাইফাই। এগুলোর বেশির ভাগ (সবগুলি নয়) একটি বিশেষ ক্যাটেগরির গল্প, এই ধরনগুলোতে স্রষ্টা এবং সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্নগুলোই গল্পের কেন্দ্র হয়, এবং এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্যাটাগরিগুলোর একটি।

সমাপ্তি গল্পটিও একই ক্যাটাগরির, এবং থিমে ট্রেন এবং ক্যানভাসের কাছাকাছি। মোট কথা একটি উপভোগ্য ভ্রমন এই বইটি। এবং বইটি পড়বার পরের ঝিম ভাবটা এতগুলি লাইন টাইপ করার পরও আমার কাটছে না। বইটি পড়ার কিছু সময় পরেই এটি লিখে ফেললাম, খুব বেশি ভেবে লেখা নয়, কারন খুব বেশি আসলে আমি গুছিয়ে ভাবতেও পারি না। পড়ার সাথে সাথে যে ভালো লাগা সেটাই শেয়ার করলাম।

আশা করি সকল ত্রুটি মার্জনা করবেন। পূর্বে চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.