আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপেক্ষার পালা বোধহয় শেষ হতে চল্ল!!মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি সুবিধা আসছে আর কিছুদিনের ভিতরে

আমি একজন ব্লগ ভক্ত মানুষ।

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশে মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি বা এমএনপি সেবা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নম্বর না বদলেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। ফলে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে এই সুবিধা পেতে যাচ্ছেন গ্রাহকরা। গত ১৩ জুন বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি বা এমএনপি সুবিধা আগামী জানুয়ারি-২০১৪ সাল নাগাদ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা জারি করে।

মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি বা এমএনপি কি? : পোর্টেবল শব্দটির অর্থ হলো সহজে বহনযোগ্য। তাই যেসব বস্তু সহজে বহন করা যায়, সেগুলোর নামের আগে পোর্টেবল শব্দটির বহুল ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন পোর্টেবল ডিভাইসের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে সুপরিচিত। কিন্তু ফোন বা মোবাইল নম্বর বহন করা যায় কিভাবে? বেশ অবাক করার মতোই একটি বিষয়। নম্বরের ক্ষেত্রে পোর্টাবিলিটির বিষয়টি হলো একই নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন অপারেটরের সার্ভিস নেয়ার সক্ষমতা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের ফোন বা মোবাইল নম্বরগুলো দেখেই চেনা যায় কোনটি কোন অপারেটরের। কারণ প্রতিটি অপারেটরের নিজস্ব প্রিফিক্স নম্বর রয়েছে, যেমন সিটিসেল ০১১, টেলিটক ০১৫, এয়ারটেল ০১৬, গ্রামীণফোন ০১৭ ইত্যাদি। ল্যান্ডফোন অপারেটরের ক্ষেত্রেও তাই। কেউ যদি বর্তমানে রবি ব্যবহার করেন, তবে তিনি বর্তমান নম্বরটি ঠিক রেখেই অন্য কোনো অপারেটরের সার্ভিস নিতে পারবেন।

সে ক্ষেত্রে নম্বরের প্রিফিক্সের ব্যাপারটি পুরোপুরি গৌণ হয়ে পড়ে। কে কোন অপারেটরের সার্ভিস নিচ্ছেন তার ফোন নম্বর দেখে সেটি বোঝা যাবে না। গ্রাহকের দৃষ্টিকোণ থেকে এটিই হলো নম্বর পোর্টাবিলিটি। এ ক্ষেত্রে এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় পোর্টিং। এতে সুবিধা হলো মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করলেও তাকে আগের নাম্বারটি পরিবর্তন করতে হবে না।

ফলে তিনি আগের নম্বরটি ঠিক রেখেই সুযোগ-সুবিধা, পরিষেবা, চার্জ বিবেচনা করে পছন্দমতো অপারেটরের সার্ভিস নিতে পারবেন। নম্বর পরিবর্তন না করে তিনি পরিচিতজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এড়াতে পারবেন। এমএনপির শুরুর কথা: মোবাইল নাম্বার পোর্টাবিলিটি সুবিধা প্রথম কোথায় চালু হয় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৯৯ সালের ১ মার্চ হংকং প্রথম মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি সুবিধা চালু করে। একই বছরের এপ্রিল মাসে নেদারল্যান্ডসও এই সেবা চালু করে।

গত দেড় দশক ধরে প্রত্যেক বছরেই কোনো না কোনো দেশ নতুন করে এই সেবা চালু করেছে। প্রত্যেক দেশের টেলিকম রেগুলারিটি এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়ার ১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি চলতি বছরের জুন মাসে এটি বাস্তবায়ন করতে প্রায় ৭ মাস সময় দিয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে টেলিকমিউনিকেশনের দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলো এমএনপি চালু করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে এমএনপি সার্ভিস চালু রয়েছে।

যেভাবে কাজ করে এমএনপি : কয়েকটি উপায়ে মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি চালু করা হয়। তবে যে উপায়ই অবলম্বন করা হোক না কেন, সব ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরদের অবকাঠামোগত কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে মূল বিষয় হলো একটি নম্বর পোর্টাবিলিটি ডাটাবেজ তৈরি এবং বিভিন্ন ধরনের কল ও মেসেজ রাউটিংয়ের জন্য সুবিধাজনক রাউটিং পদ্ধতি অবলম্বন করা। কল রাউটিংয়ের ক্ষেত্রে ৪ ধরনের রাউটিং পদ্ধতি রয়েছে। কল রাউটিং প্রধানত দুই ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করা হয় ডিরেক্ট রাউটিং এবং ইনডিরেক্ট রাউটিং।

ডিরেক্ট রাউটিংয়ের অধীনে রয়েছে অল কল কুয়েরি আর ইনডিরেক্ট রাউটিংয়ের অধীনে রয়েছে অনওয়ার্ড রাউটিং, কল ড্রপ ব্যাক ও কুয়েরি অন রিলিজ। এসএমএস ও এমএমএস রাউটিংয়ের জন্য ভিন্ন রাউটিং পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নম্বর পোর্টাবিলিটি ডাটাবেজ বা এনপিডিবি পোর্টেড নাম্বারগুলো এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোকে শনাক্ত করে রাখে। কোনো কল বা মেসেজ কোথায় যাবে, তা নির্ণয় করা হয় এনপিডিবির এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে। নম্বর পোর্টাবিলিটি ডাটাবেজ হতে পারে সেন্ট্রালাইজড কিংবা ডিস্ট্রিবিউটেড।

সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজ মডেলে একটি কেন্দ্রীয় রেফারেন্স ডাটাবেজ থাকে, এই ডাটাবেজ থেকে অপারেটরগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য তাদের অপারেশনাল ডাটাবেজে সমন্বয় ঘটায়। ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ মডেলে সম্পূর্ণ ডাটা সাবসেট হিসেবে অপারেটরগুলো নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে নিয়ে কাজ করে। এমএনপি সেবার লাভ-ক্ষতি : খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএনপি চালু হলে তুলনামূলকভাবে লাভবান হবে গ্রাহক সংখ্যার বিচারে ছোট অপারেটরগুলো। কারণ সেবার মানে সন্তুষ্ট না হলেও অনেক বড় অপারেটরের গ্রাহকই নাম্বার পরিবর্তনের ঝামেলা এড়াতে অপারেটর পরিবর্তন করতে পারেন না। আর গ্রাহক সংখ্যা বেশি হওয়ায় বড় অপারেটরদের এমন গ্রাহকের সংখ্যাও স্বভাবতই বেশি।

ফলে এমএনপি চালু হলে এ ধরনের গ্রাহকরা নম্বর পরিবর্তন না করে অন্য অপারেটরের সেবা নিতে পারবে। এতে বড় অপারেটরগুলো বেশকিছু গ্রাহক হারাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টেলিকম সেবায় গতি আনতে বিশ্বের অনেক দেশে এরই মধ্যেই এমএনপি চালু হয়েছে। মূলত সেলফোন অপারেটরের মনোপলির সুযোগ কমিয়ে আনতে ও অপারেটরদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে সেবাটি চালু করা হয়েছে। এমএনপি চালু হয়েছে এমন দেশগুলোয় অপারেটরের মধ্যে প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

গ্রাহক ধরে রাখার জন্য তাদের প্রত্যেকে সেবার মানের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছে। তৃণমূল গ্রাহকের লাভ: বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই সার্ভিস চালু করেছে তাদের টেলিকম সেবায় গতি আনার জন্য। মোবাইল অপারেটরের মনোপলি চক্র ভেঙে দেয়া, সেই সঙ্গে আন্তঃঅপারেটর প্রতিযোগিতা বাড়ানো উল্লেখযোগ্য কারণ। যেসব দেশে এমএনপি চালু হয়েছে সেখানকার মোবাইল অপারেটরের মধ্যে প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে বেশি। গ্রাহক ধরে রাখার জন্য প্রত্যেকে সেবার মানের দিকে সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছে।

এমন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বেশি লাভবান হয় তৃণমূল গ্রাহক। তবে এমএনপি চালু করার ব্যাপারে বাস্তবে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব দেশের মোবাইল অপারেটরদের মৃদু প্রতিবাদ ও অনীহা দেখা গেছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।