আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত মাতৃত্বকালীন ছুটি ও একজন কর্মজীবি নারীর ভাবনা

"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃত্বকালীন ছুটিকে ছয় মাস করার প্রস্তাবনা দিয়েছেন সম্প্রতি। তিনি সেই সাথে প্যাটারনিটি লিভের কথাও বলেছেন। সদ্য প্রসূত সন্তানের সাথে মা-বাবা দু’জনের বন্ধন গড়ে তুলতে এবং সদ্য মা হওয়া নারীকে যেন স্বামী সর্বাঙ্গীন সহায়তা প্রদান করতে পারেন- সেদিক বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাব প্রশংসার দাবীদার নিঃসন্দেহে। সরকারী প্রতিষ্ঠানে এসব নিয়ম মেনে চলার জন্য হয়তো একটা প্রজ্ঞাপন জারি ই যথেষ্ট হবে।

কিন্তু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যারা কোম্পানী আইনে কিংবা অন্যান্য আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এবং যারা শ্রম আইন এবং সরকারী বিভিন্ন নীতিমালা মানতে বাধ্য নন তাদের কথা আমরা কেউই বলতে পারি না। বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশে সন্তান জন্মদান অন্য যে কোন স্বাভাবিক কাজের মতোই ভাবা হয়। এসময় একজন নারীর কি ধরনের অনুকূল পরিবেশ দরকার তা জানা থাকা সত্ত্বেও অনেকেইে তা উপেক্ষা করতে যেমন পিছপা হন না তেমনি যিনি গর্ভবতী হয়েছেন তার প্রতি অবজ্ঞা, তাকে দিয়ে এখন আর আগের মতো কাজ করানো যাবে না এসব চিন্তায় তাকে হেয় করতে ও কসুর করেন না। ব্যতিক্রম সর্বত্রই আছে কিন্তু আমাদের কাছে চলমান ঘটনাগুলোই উদাহরন হিসেবে আসে প্রতি সময়। কেউ লক্ষ্য করেছেন কি জানি না আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে জন্মহার দিনে দিনে আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

একার রোজগারে বর্তমান বাজারে সৎভাবে চলা দুষ্কর হওয়াতে, নারীরা আগের চাইতে কিঞ্চিৎ বেশি সচেতনতা লাভ করাতে অনেক নারীই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছেন। সময়ের অভাবে হোক বা পরিবার পরিকল্পনার স্লোগনে উদ্বুদ্ধ হয়েই হোক মধ্যবিত্ত ২জনের বেশি সন্তান নিচ্ছে না। কাজে কাজেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী ভবিষ্যত প্রজন্ম কমে যাচ্ছে, নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মাঝে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রবণতা একই রয়ে গেছে। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একজন নারী কি তার চাকুরী বজায় রেখে পারিবারিক জীবন বয়ে সঠিক সময়ে মা হতে পারবেন? আসুন আমরা একটা তুলনামূলক ছক দেখি। অফিস সময় ৯-৫ টা যখন (১) ঘুম ভাঙ্গা সকাল ৬.৩০, অফিসের দূরত্ব বাসা থেকে ৩০ কি.মি, যাত্রা শুরু সকাল ৭.৪০-৪৫ এর মধ্যে ৫টার অফিস বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যা ৬টা-৬.৩০, বাসায় সন্ধ্যা ৭.৩০-৮.১৫ এর মধ্যে পৌঁছনো যেত অফিস সময় ১০-৬ টা যখন (২) ঘুম ভাঙ্গা সকাল ৬.৩০, অফিসের দূরত্ব বাসা থেকে ৩০ কি.মি, যাত্রা শুরু সকাল ৭.৪৫-৮ এর মধ্যে ৬টার অফিস বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যা ৭টা-৭.৩০, বাসায় রাত ৯-৯.৪৫ এর মধ্যে পৌঁছনো যায় সময়ের হিসেবে লাভ/ক্ষতি রাস্তায় (১) নম্বর অফিস টাইমে থাকতে হতো ১-১.১৫ ঘণ্টা, (২) নং অফিস টাইমে থাকতে হয় ২-২.১৫ ঘণ্টা নিজেকে এবং পরিবারকে দেয়ার মতো সময় (১) নং টাইমে প্রায় ৪ ঘণ্টা থাকতো (২) নং এ থাকে ২-২.৪৫ ঘণ্টা আমি এখানে বিবাহিত নারীর যে বাড়তি কাজ রান্না করা, বাচ্চার দেখাশোনা, পরিবারের অন্যদের খোঁজ নেয়া, নিজের এবং অন্যদের পরের দিনের পরিধেয় কাপড়, টিফিন, লাঞ্চ ঠিক করা এসব বাদ দিলাম।

এমন জীবন যাপন করে একজন সদ্য বিবাহিত নারী বা পুরুষ কি সন্তানের মুখ দেখতে পারবেন? সন্তান এলেও তাদের সুষ্ঠুভাবে সময় দিয়ে পারিবারিক বন্ধন নিশ্চিত করতে পারবেন? জানি সরকারের সদিচ্ছা আছে, অন্তত একজন সরকার প্রধান তো আমাদের কথা ভেবেছেন। কিন্তু আনুসঙ্গিক অন্য বিষয়গুলোর উপর জোর না দিলে একটি সিদ্ধান্ত আমাদের খুব বেশি উপকৃত করতে পারবে না। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সময় পুনঃবিবেচনা করুন। আমাদের রাস্তায় থাকার সময়টা সংক্ষিপ্ত করে দিন। ট্রেন সার্ভিস চালু করুন, বাস মালিক সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে থেকে পিছিয়ে গেলে ভূমিদস্যুরা আজ যেমন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠেছে তেমনই হবে পরিবহন খাতও।

দয়া করে শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা করুন। দৈনন্দিন যাপনের এমন বেখাপ্পা অসম রুটিন নিয়ে (যেখানে ৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত চাকুরী করলে এখনকার হারে জ্যাম অব্যাহত থাকলে জীবনের ৪ বছর রাস্তায় কাটাতে হবে) আর যাই হোক মা-বাবা স্বাভাবিক উপায়ে হওয়া হবে না। ৬মাসের ঐ ছুটিও আমাদের কাজে আসবে না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন অফিস টাইমটা পূর্বের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক, চাই কি গ্রীষ্মকালে সকাল ৮-৪ টাও করে দিতে পারেন। অনেকের সাথে কথা বলে জেনেছি তাদের এতে কোন আপত্তি নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.