আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাগলে কি না কয়? -- পর্ব ২

আলো নয় আধার খুজি ,সত্যের জন্যে নয় মিথ্যের বিরুদ্ধে যুঝি।
পাগলে কি না কয়?-এর ২য় পর্বে সকল পাগল ও পাগল-পদপ্রার্থীদের স্বাগতম। যারা চিহ্নিত ও স্বীকৃত পাগল আছেন তারা নিজ নিজ জ্ঞান বর্ধনের নিমিত্তে এই পোস্ট পড়তে পারেন। কিন্তু যেসকল পাগল এখনো কোন ক্যটাগরীতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারেন নাই তাদের জন্য এই পোস্ট পড়া ফরয। এইবার আসল প্যাচালে যাই- ১।

Hybristophilia: এই রোগটি সাধারণত মেয়েদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বা আসামীদের প্রতি মানসিক ও শারিরীকভাবে প্রচন্ডরকম আকৃষ্ট হন। এ সম্পর্কে 'The guardian' এ প্রকাশিত একটি আর্টিকেল -এ এরকম একটা case study এর কথা তুলে ধরা হয় "Ian Huntley, the man charged with the Soham murders, gets bundles of fan mail every day. Meanwhile, more than 100 British women are engaged or married to men on death row in the US." hybristophilia মূলত ২ ধরনের passive এবং aggressive। passive hybristophilia তে আক্রান্ত রোগীরা শুধুমাত্র অপরাধীর প্রতি আসক্ত হন যে আসক্তির মূলে থাকে সাধারণত করুণা,সমবেদনা ইত্যাদি,অপরাধের প্রতি এদের কোনরকম আকর্ষন থাকে না। এদের আসক্তির ধরনও ততটা জোড়াল হয় না।

এদের বেশীরভাগই কোন অপরাধীকে ডজনখানেক প্রেমপত্র পাঠিয়েই ক্ষান্ত দেন। কিন্তু aggressive hybristophilia তে আক্রান্তদের মধ্যে বিশেষ কোন অপরাধের প্রতি আকর্ষন লক্ষ্য করা যায়। যেমন কেউ কেউ শুধুমাত্র খুনীদের প্রতি আকৃষ্ট হন কেউবা আবার শুধুমাত্র ধর্ষকদের প্রতি আকৃষ্ট হন। এদের কারো কারো মধ্যে প্রচন্ডরকম অপরাধপ্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। ২।

Mythomania: এই রোগটিও ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্তরা কারনে অকারনেই মিথ্যা বলে। সাধারণ মিথ্যুকের সাথে এই রোগে আক্রান্তের পার্থক্য এই যে সে তার মিথ্যেকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এ রোগ এতটা প্রকট হতে পারে যে সে নিজের মিথ্যেকে সমর্থন করার জন্য আরো অনেক কাল্পনিক ঘটনা ও চরিত্রের সৃষ্টি করে। কেউ কেউ নিজের তৈরী এরকম কোন মিথ্যে জগতের বাসিন্দা হয়েই থেকে যায়।

৩। kleptomania: এই রোগটিও মেয়েদের মধ্যে প্রকট। kleptomania সর্বপ্রথম ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৬০ সালে সনাক্ত করা হয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চুরি করার প্রতি তীব্র আকর্ষন থাকে। তবে এরা মূলত কোন অর্থনৈতিক চাহিদা পূরনের জন্য চুরি করে না অর্থাৎ এদের চুরি করা দ্রব্যগুলো মূলত ছোটখাট ও কমদামী হয়।

এদের অনেকেই চুরি করার পর সে কথা ভুলে যায়। ৪। Genital retraction syndrome/koro: এই রোগে আক্রান্তরা মনে করে যে তাদের বিশেষ কোন বহিরাঙ্গ (কারো কারো ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ) দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং এভাবে একসময় তা শরীরে বিলীন হয়ে যাবে এবং ফলশ্রুতিতে সে মারা যাবে। রোগীদের কেউ কেউ এর কারন হিসেবে ভূত-প্রেত বা অভিশাপকে বিশ্বাস করেন। ১৯৮৪-৮৫ সালে চীনে এই রোগ ব্যাপক হারে দেখা গিয়েছিল।

৫। Somatoparaphrenia: কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা বা সার্জারীর পর কেউ কেউ তাদের কোন একটি অঙ্গ বা দেহের কোন একটি অংশকে তাদের দেহের অংশ বলে অস্বীকার করে। এই রোগটির নাম somatoparaphrenia। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিজের দেহের ঐ অংশটিকে অন্য কারো রেখে বা ফেলে যাওয়া অংশ মনে করে। কেউ কেউ আবার ঐ অংশটির অস্তিত্বই অস্বীকার করে।

৬। Wendigo psychosis: wendigo, Algonquian রুপকথার একটি চরিত্র বা সত্বা যা কোন মানুষের উপর ভর করে তাকে নরখাদকে পরিণত করতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নরমাংসের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষন তৈরী হয় এবং তারা ধীরে ধীরে নরখাদকে পরিণত হওয়ার ভীতিতে সবসময়ই সন্ত্রস্ত থাকে। তবে এদের মধ্যে খুব কম জনকেই নরখাদকে পরিণত হতে দেখা গেছে। ৭।

Celebriphilia: এটি মোটেও কোন দূর্লভ রোগ নয় বরং বর্তমান বিশ্বে লোকজন অহরহ এই মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেলিব্রিটি বা বিখ্যাত লোকদের প্রতি প্রচন্ড রকম আকর্ষন ও তাদের প্রতি চূড়ান্ত পর্যায়ের obsession মূলত এই রোগের লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই প্রিয় সেলিব্রিটি'র বিয়ে বা মৃত্যুতে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারেন। এই রোগটিও মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রকট। ৮।

Triskaidekaphobia: অনেকেই কিছু বিশেষ সংখ্যাকে অশূভ ভাবেন বা ভয় পান আর এই ভয় যখন স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করে তখনই তা পরিণত হয় মানসিক রোগে। Triskaidekaphobia-তে আক্রান্ত রোগীরা ১৩ কে প্রচন্ড রকম ভয় পান। আবার Tetraphobia-তে আক্রান্ত রোগীরা ৪ কে ভয় পান। friday the 13th এর ভয়কে paraskavedekatriaphobia বা friggatriskaidekaphobia বলা হয়। ৯।

Synthesia: synthesia অনেক ধরনের হতে পারে যেমন - color synthesia,scent/smell synthesia,taste synthesia ইত্যাদি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি আবেগ,অনুভুতি বা কোন শব্দের রং,গন্ধ বা স্বাদ অনুভব করে। যেমন-color synthesia তে আক্রান্ত ব্যাক্তির কাছে সুখ লাল,দুঃখ নীল,মাসের নাম হলুদ এরকম হতে পারে। scent/smell synthesia তে আক্রান্ত কারো কাছে সুখের গন্ধ ফুলের মত হতে পারে। taste synthesia তে আক্রান্ত কেউ গানের স্বাদ মিষ্টি আর দুঃখের স্বাদ কলার মত বলতে পারে।

১০। Doromania: এই রোগটি রোগী'র জন্য ভাল না হলেও তার আশেপাশের লোকজনের জন্য খুবই লাভজনক হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি কারনে অকারনে পরিচিত অপরিচিত লোকদের উপহার বিলিয়ে থাকেন। Doromania'র রোগীরা তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও অন্যদের উপহার বিলাতে থাকেন। আজকের প্যাচাল এখানেই শেষ।

যারা যারা নিজের ক্যাটাগরী পেয়ে গেছেন তারা খুশী মনে পাগলামী করতে থাকেন। আর যারা এখনো কোন ক্যাটাগরী পান নাই তাদের সাথে 'পাগলে কি না কয়?' এর ৩য় পর্বে দেখা হবে। আর যারা নতুন পাগলের দলে যোগ দিলেন তারা চাইলে নিচের লিঙ্ক থেকে 'পাগলে কি না কয়?' এর ১ম পর্ব থেকে ঘুরে আসতে পারেন। **পাগলে কি না কয়? - পর্ব ১
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।