আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাগলে কি না কয়? -- পর্ব ১

আলো নয় আধার খুজি ,সত্যের জন্যে নয় মিথ্যের বিরুদ্ধে যুঝি।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আজকের এই আজাইরা পোস্টের আলোচনার বিষয়বস্তু হইল কতিপয় মানসিক রোগ এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ফিরিস্তি। যারা নিজে নিজেকে পাগল ভাবেন,যাদের অন্যেরা পাগল মনে করে,যারা অন্যদের পাগল মনে করেন অথবা যারা সমাজ-স্বীকৃত (সনদপ্রাপ্ত অথবা লাইসেন্সধারী) পাগল অথবা যারা অতি-শীঘ্র পাগল হইতে যাচ্ছেন অথবা পাগল হইতে ইচ্ছুক তারা এই পোস্টে স্বদলবলে আমন্ত্রিত। পোস্টে আমন্ত্রিত সকল পাগল-ব্লগারদের জন্য বিশেষ আপ্যায়নের ব্যাবস্থা রয়েছে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে যত খুশি মন্ডা-মিঠাই গলাধঃকরন করতে পারেন,এমনকি লোকচক্ষুর তোয়াক্কা না করে পকেট কিংবা ব্যাগেও নিতে পারেন।

তবে আমন্ত্রিত লোকজন ব্যাতীত অন্য কারো মন্ডা-মিঠাই কুক্ষীগতকরণ পাগলা-দন্ডবিধী মোতাবেক দন্ডনীয় পাগলামী বলে গন্য করা হবে। অনেক হইছে, এখন যাবতীয় আউলা প্যাচাল বাদ দিয়া আমরা আজকের আলোচনা শুরু করি... ১। Boanthropy: এই রোগে আক্রান্ত লোকজন নিজেকে গবাদি পশু ভাবতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে সেরকম আচরন করতে আরম্ভ করে। এদের অনেককেই গবাদি পশুর ন্যায় ঘাস খেতে দেখা যায়। অনেক খ্রিস্টানদের মতে ব্যাবিলনীয় রাজা Nebuchadnezzar এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

["He was driven away from people and ate grass like cattle." (Daniel 4:33)] ২। Stendhal syndrome: এই রোগে আক্রান্তদের মাঝে অধিক পরিমানে শিল্পকর্ম,ঐতিহাসিক নিদর্শন ইত্যাদি একসাথে দর্শনে অস্বাভাবিক আতঙ্ক,উত্তেজনা,মাথাঘোরা এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে হেলুসিনেশন লক্ষ্য করা যায়। এই রোগটির নামকরণ করা হয় বিখ্যাত ফরাসী লেখক Stendhal এর নামে যিনি সর্বপ্রথম নিজ অভিজ্ঞতা হতে এই রোগের কথা তার বই 'Naples and Florence: A Journey from Milan to Reggio' তে বর্ননা করেন। ৩। Capgras delusion/syndrome: এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা সবসময় এই ভুল ধারনায় ভোগে যে তাদের কাছের কোন মানুষকে ঠিক একইরকম দেখতে আরেকজন মানুষ দিয়ে বদলানো হয়েছে অর্থাৎ একইরকম চেহারার অন্য কোন লোক তার প্রিয় মানুষটি সেজে তার সাথে অভিনয় করছে।

কারো কারো ক্ষেত্রে এই ভুল ধারনা কোন নির্দিষ্ট জায়গা বা বস্তুর ক্ষেত্রেও হতে পারে। ৪। Fregoli delusion: এই রোগে আক্রান্ত লোকের কাছে মনে হয় যে কোন একজন ব্যাক্তি তার আশেপাশে বিভিন্ন ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করছে। অর্থাৎ যে ভিন্ন ভিন্ন লোকদের সাথে তার দেখা বা কথা হচ্ছে তারা আসলে একই ব্যাক্তির ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মবেশ। এই রোগটির নামকরণ করা হয় বিশিষ্ট ইতালীয় অভিনেতা Leopoldo Fregoli এর নামে যিনি মঞ্চে অতি দ্রুত ছদ্মবেশ ধারনের পারদর্শিতার কারনে জনপ্রিয় ছিলেন।

৫। Cotard/nihilistic/negation delusion: এই রোগের নামকরণ করা হয় ফরাসী স্নায়ুতত্ববিদ Jules Cotard এর নামানুসারে। যিনি ১৮৮০ সালে প্যারিসে তার দেয়া এক বক্তৃতায় এই রোগের কথা সর্বপ্রথম বর্ননা করেন। তবে এই রোগটি ২০০৭ সালের এপ্রিলে বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি পায়। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে নিজ অস্তিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়।

এদের অনেকেই নিজেকে মৃত মনে করে থাকেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এরুপ ভাবেন যে তাদের দেহের সব রক্ত অথবা অভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চুরি করা হয়েছে। অনেকের মধ্যে আবার চিরঞ্জীব হওয়ার বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। ৬। Reduplicative Paramnesia: 'reduplicative paramnesia' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যাবহার করেন চেক স্নায়ুতত্ববিদ Arnold Pick ১৯০৩ সালে।

এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে একই স্থাপনা,ব্যাক্তি বা বস্তু একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করার ভুল ধারনা বা বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। তাদের কেউ কেউ মনে করে যে তাদের পরিচিত কোন একটা স্থানকে অন্য কোন একটা জায়গায় সরিয়ে ফেলা হয়েছে বা তার প্রতিরুপ তৈরী করা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা সাধারণত ডান সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার এবং উভয় ফ্রন্টাল লোব এ আঘাতের ফলে হতে দেখা যায়। ৭। Alien hand/anarchic hand/Dr. strangelove syndrome: এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা মনে করেন যে তারা তাদের কোন একটি হাতের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছেন এবং ঐ হাতটি এখন নিজে নিজে অথবা অন্য কারো দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

এপিলেপ্সি এর চূড়ান্ত পর্যায়ে যদি মস্তিস্কের দুই হেমিস্ফিয়ারকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে আলাদা করে দেয়া হয় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়াও মস্তিস্কে কোন প্রকার অস্ত্রপচার, সংক্রমন(infection) অথবা স্ট্রোক এর ফলে এ রোগ হতে পারে। ৮। Micropsia/alice in wonderland/todd's syndrome: এই রোগে আক্রান্তদের স্থান,কাল এবং পাত্রের জ্ঞান অনেকটা লোপ পায়। এদের কাছে নিজেকে আকৃতির দিক থেকে অন্য সবকিছু এবং সবার থেকে অনেক বড় মনে হয়।

কারো কারো ক্ষেত্রে নিজের দেহের বিভিন্ন অংশের মাঝেও আকৃতিগত অসামঞ্জস্য দেখা যায়। এই রোগকে Lilliput sight or Lilliputian hallucinations ও বলা হয়। ৯। Trichotillomania: এই রোগে আক্রান্তদের বেশীরভাগের ক্ষেত্রেই নিজের মাথার চুল হাত দিয়ে টেনে তুলে ফেলার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। এমনকি দাড়ি,গোফ,পশম এবং চোখের পাপড়ি তুলে ফেলার প্রবণতাও দেখা যায়।

এদের অনেককে নিজের তুলে আনা চুল চিবাতে বা গিলে ফেলতেও দেখা গেছে। এই রোগের কোন নির্দিষ্ট কারন এখনো জানা যায়নি। ১০। Bibliomania: এই রোগে আক্রান্তদের বই সংগ্রহের প্রতি প্রচন্ডরকম obsessed দেখা যায়। তাদের অনেকেই বই খুব একটা না পড়লেও একই বইয়ের ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রন,ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মুদ্রন একাধিক বা ততোধিক কপি সংগ্রহ করেন।

এমনকি অনেককে সম্পত্তি বিক্রি করে, চুরি-ডাকাতি করেও বই কিনতে দেখা গেছে। বইয়ের প্রতি আগ্রহ কখনোই খারাপ না কিন্তু সেই আগ্রহ যখন স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে ব্যাক্তিগত সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন তা মানসিক রোগের পর্যায়ে পড়ে। আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। এখন বলেন আপনারা কে কে কোন কোন ক্যাটাগরীতে পড়লেন? আর যেই পাগলরা এখনো নিজেরে কোন ক্যাটাগরীতে ফেলতে পারেন নাই তাদের নিরাশ হওয়ার কোন কারন নাই। তারা আরামসে পাগলামী চালাইয়া যান আর নেক্সট্‌ পর্বের জন্য অপেক্ষা করেন,সেই পর্বে আপনি নিশ্চই কোন না কোন ক্যাটাগরীতে পড়ে যাবেন ।

আর বলেন মন্ডা-মিঠাই এবং যাবতীয় আপ্যায়নের আয়োজন কেমন লাগল?আর যারা পাগল না হইয়াও মন্ডা-মিঠাইয়ে ভাগ বসাইছেন তারা হাত তুলেন। আপনারা অবশ্যই আগামী পর্বের আগে পাগলের কাতারে সামিল হইবেন নাহইলে কইলাম খপর আছে । যাউজ্ঞা আজকের প্যাচাল এইখানেই শেষ,আগামী পর্বে কথা হবে......সেই পর্যন্ত পাগলামী করতে থাকেন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।