আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরিয়ে দাও খেলা

আমি ভাই জিপসী মানুষ । বাংলাতে যাকেবলে যাযাবর । আমি অলটাইম রাস্তা-ঘাটে থাকি । এখান-সেখান ঘুরে বেড়াই । সমাজের হাল-চিএ অবলোকন করি আর ভাবি ।

আজ এ জগতে থাকি তো কাল ওজগতে,আজ মামার বাড়ী কাল চাচার বাড়ী। কখনো বিজনেস করি কখনো জব । কখনো পড়াশোনা করি কখনো......শ

পুলিশ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মানবাধিকার সংস্থা_সবার জরিপ থেকেই জানা গেছে, গত এক মাসে দেশে অপরাধের হার ছিল অনেক কম। ইভ টিজিংয়ের ঘটনা আগের ছয় মাসের তুলনায় কমেছে ৯০ শতাংশ। হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধ কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের এক জরিপে বলা হয়েছে, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় গত এক মাসে দেশে অপরাধের মাত্রা ৬৫ শতাংশ কমেছে। ইভ টিজিং কমেছে সবচেয়ে বেশি। মহিলা পরিষদ, আইন শালিস কেন্দ্র, মহিলা আইনজীবী পরিষদসহ অনেক সংস্থার জরিপেই এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে। আর অপরাধ কমার একটাই কারণ_বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপের উন্মাদনা এ দেশে এতটাই প্রবল থাকে যে অপরাধীরা পর্যন্ত মেতে ওঠে খেলায়।

তারা সারা রাত ব্যস্ত খেলা দেখায়; সারা দিন ব্যস্ত আলোচনায়। অপরাধ করার সময় কোথায়? খেলাধুলার নির্মল আনন্দে মনও হয়ে ওঠে নির্মল, সুন্দর। হয়তো ইচ্ছাও জাগে না অপরাধের। তাই বিশ্বকাপের এই উন্মাদনাকে কাজে লাগানোর তাগিদ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিপথগামী তরুণ ও যুবসমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনার এটাই সুযোগ।

খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলে মাদক, সন্ত্রাস, ইভ টিজিংসহ নানা অপরাধ থেকে তরুণ-যুবকদের দূরে রাখা সম্ভব হবে। সচেতনরা বলছেন, একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী তরুণ প্রজন্ম গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলাকে তাই রাজনীতির বাইরে রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

ক্রীড়ামোদীদের খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। রাজনীতিক, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি, ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা_প্রত্যেকেই অভিন্ন দাবি তুলেছেন, বিশ্বকাপের উন্মাদনাকে কাজে লাগানো হোক, খেলাধুলার আয়োজন বাড়ানো হোক, সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ আবার ফিরিয়ে আনা হোক। পুলিশের মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কিশোর, তরুণ ও যুবকরা ইদানীং যেসব অপরাধ করে থাকে, সেগুলো গত এক মাসে অনেক কম হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা এই এক মাসে খুবই কম। তিনি বলেন, 'বিনোদনের কোনো সুযোগ না থাকায় তরুণরা মাদকের আশ্রয় নেয়।

কিন্তু বিশ্বকাপের বিনোদন গত এক মাসে তাদের সম্মোহিত করে রাখে। অবশ্যই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। ' বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ফিফার বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলার পুরস্কারজয়ী, রাজনীতিক মেজর (অব.) হাফিজ বলেছেন, 'আজকের তরুণসমাজের যে অবক্ষয়, এর জন্য আমরাই দায়ী। আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন দেখা গেছে, কারো খেলার দিকে ঝোঁক, কেউ নাটকের দল করছে, কেউ গানের দল করছে। আর এখন স্কুলের ছেলেরাও রাজনীতি করে।

নেতাদের পেছনে ঘোরে। আর কলেজ থেকে শুরু হয় নেতাদের তাঁবেদারি করা। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করা আর বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড করে তারা বিনোদন নেয়। এসবের জন্য যেমন আমরা রাজনীতিকরা দায়ী, তেমনি শিক্ষকরাও কম দায়ী নন। তাঁরাও রাজনীতি করেন।

' তিনি বলেন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মনকে কলুষমুক্ত করে। আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক আরেফিন টুটুল বিশ্বের তারকা খেলোয়াড়দের বাংলাদেশে এনে দেশের ফুটবল সংগঠন ও দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশ্বকাপের উত্তেজনা ধরে রাখা উচিত। উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে বেশি বেশি করে খেলার আয়োজন করা দরকার। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগকে আরো উন্নত করা দরকার।

তিনি আরো বলেন, 'একসময় আমাদের দেশে ঢাকা লীগ ফুটবল শুরু হলেও এ রকম উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হতো। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো দলের খেলা দেখার জন্য হাজার দর্শক স্টেডিয়ামে যেত। দেশজুড়ে পতাকায় সয়লাব থাকত। কিন্তু আমাদের আয়োজকদের ব্যর্থতার কারণে খেলাধুলার অবনতি হচ্ছে দিন দিন। তবে আমি আশাবাদী, শেখ হাসিনার সরকার খেলার পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেবে।

' একসময়ের প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের তুখোড় গোলরক্ষক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এই এক মাসে বোঝা গেছে, এ দেশের যুবক ও তরুণসমাজ কতটা ক্রীড়াপাগল। তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশে আগের মতো করে খেলাধুলার আয়োজন বাড়াতে হবে। এতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠাপোষকতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, 'এখন আমরা দেখি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় শিক্ষকরা তাঁদের পছন্দের দলের ছাত্রনেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলোকে সফল করার জন্য তাঁরা মরিয়া থাকেন।

কিন্তু আমাদের সময় সেটা ছিল না। শিক্ষকরা পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক উৎকর্ষ বাড়ানোর আয়োজনেও ব্যস্ত থাকতেন। পড়াশোনা আর খেলাধুলা ছিল আমাদের রুটিন কাজ। ' তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভালো করছে। এর বাইরে আমাদের দেশি খেলাগুলোকে প্রাধান্য না দিলে যুবসমাজকে অবক্ষয় থেকে ফেরানো যাবে না।

' একসময় যিনি মাঠ ছাড়া কিছুই বুঝতেন না, সেই ফুটবলার বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, 'খেলাধুলা যারা করে, তারা কখনো ইভ টিজিং করতে পারে না। মাদক সেবন এবং দুর্নীতি করতে পারে না। কারণ খেলাধুলার মাধ্যমে যে তরুণ বড় হবে, তার মানসিক ও শারীরিক পূর্ণতা অন্যদের থেকে আলাদা হবে। আমি এখনো যে পরিশ্রম করতে পারি, আজকের ছেলেমেয়েরা তার কিছুই করতে পারবে না। আমি বলব, যা হবার হয়েছে, অন্তত ফুটবলসহ দেশি খেলাগুলোকে আরো বেশি সামনে নিয়ে আসুন।

সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর, পরিকল্পিত সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানোর। সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিকীকরণ না করে খেলাপ্রেমীদের কাজে লাগানো হোক। ' কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'আমাদের সরকারগুলো খেলাধুলার ব্যয়কে বিলাসিতা মনে করে। এটা খুবই ভুল। রাজনৈতিক সরকার ও রাজনীতিকরা চান, কোনো একটি শিশুও যেন নিরপেক্ষ না থাকে।

তারা যেন রাজনীতি করে। এভাবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে রাজনীতিতে উৎসাহিত করে নষ্ট করা হচ্ছে। শিক্ষকরা নেতাদের পিছে ঘোরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রনেতাদের কথায় ওঠেন-বসেন। এর জন্য ছাত্ররা মোটেই দায়ী নয়।

এর জন্য আমরা দায়ী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ' জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেছেন, খেলাধুলাকে শুধু বিনোদন বললে কম বলা হবে। শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্যও খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। তরুণদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতিযোগিতা থাকলে তারা সন্ত্রাস, নেশা, ইভ টিজিং_এসব আর করবে না।

সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চাকে অবশ্যই প্রাধান্য দেবে। কারণ তিনি শুধু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান নন, তিনি একজন ক্রীড়ামোদী এবং ক্রীড়া সংগঠক পরিবারের সন্তান। সাজেদা চৌধুরী বলেন, 'গত এক মাসের অপরাধের তালিকা দেখলেই মনে হবে, খেলা কতটা বিনোদন দিতে পারে মানুষকে। নির্মল আনন্দ আর বিনোদন খেলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে বলব, খেলাধুলাকে যেন আরো বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

' খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে এ সময়ের তরুণ-যুবকরাও। তরুণ সুরকার ও গীতিকার প্লাবন কোরেশী বলেন, 'খেলা দেহ ও মন দুটোকেই সজীব-সতেজ রাখে। সরকারের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, খেলাধুলাকে উৎসাহিত করুন। এ জায়গাটাকে রাজনীতিমুক্ত রাখুন। ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাহিদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাধুলার আয়োজন রাখতে হবে রাউন্ড দ্য ইয়ার।

তরুণ প্রজন্মকে সুষ্ঠু বিনোদন দিতে হলে অবশ্যই খেলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার অবারিত সুযোগ করে দিতে হবে। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রী রাফিয়া বলেন, 'আমাদের সরকারগুলো যুবসমাজকে নিয়ে ভাবনায় অস্থির। কিন্তু কোনো চেষ্টা নেই। আমার বাবার মুখে শুনেছি, তাঁদের সময় ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ফুটবল, বৌচি খেলেছে। এখন এটা ভাবাই যায় না।

আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? এখনই আমাদের ফেরা উচিত। ' মনোবিজ্ঞানী ডা. মোহিত কামাল বলেন, 'খেলাধুলার চর্চা হতাশা থেকেও তরুণদের মুক্তি দেয়। আমি তো বেশির ভাগ রোগীকেই খেলাধুলা করার, গান শোনার পরামর্শ দিই। এতে অনেক কাজ হয়। ' ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আবদুল আহাদ আলী সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার এ ব্যাপারে বেশ সচেতন।

এ বছরও এ খাতে বরাদ্দ গতবারের তুলনায় বেশি বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও খেলাধুলাকে উৎসাহী করার পক্ষে। * বিশ্বকাপের এক মাসে ইভ টিজিং কমেছে ৯০ শতাংশ, * খুন ধর্ষণ সন্ত্রাস কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ সৌজন্য উম্মুল ওয়ারা সুইটি কালের কন্ঠ পোষ্টটি১৪/০৭/২০১০ বুধবার দৈনিক কালের কন্ঠ অনলাইন সংস্কনে প্রথম পাতায় প্রকাশিত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.