আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেউ ফিরিয়ে দিবে না

দেখে যা অনির্বান কি সুখে আছে প্রাণ...
আজ এই ঈদের দিনে ঈদ মাঠে গিয়ে হঠাৎ হারিয়ে যাই স্মৃতির সাগরে। আমার কচি ছোট হাত দিয়ে বাবার হাত ধরে হেঁটে এই মাঠে আসতাম। কখনও দাদার হাত ধরে। আজ দাদা শুধুই স্মৃতি। আজ আমি পূর্ন যুবক।

এখন আর পারি না বাবার হাত ধরে ঈদ মাঠে আসতে। ইচ্ছা করে এখনও তা করি। কিন্তু পারি না। এটা কি বয়সের বাঁধা? একটি মাঠেই আমার প্রায় সব ঈদের নামায পড়া হয়েছে। যতদুর মনে হয় ৫-৬ টা ঈদের নামায অন্য মাঠে হয়েছে।

কিন্তু এই মাঠের মতো কোন মাঠে নামায পড়ে তৃপ্তি পাই না। হয়তো এটা মানসিক একটা অনুভ’তির ব্যপার। একবার নানা বাড়ি গেলাম ঈদ করতে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার আরেক খালাতো ভাইও আছে। ঈদের আগের দিন নানা আমাদের জেলা শহরে নিয়ে গেলেন।

আমি আমার ভাই ও খালাতো ভাই। নানা তিন জনকে শহরের সেরা দোকানে ঢুকিয়ে বললেন- তোদের কোন পাঞ্জাবী-পায়জামা পছন্দ হয় দেখ। আমাদের তিন জনকে নতুন পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিয়ে ষ্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে এক সাথে আমাদের বেশ কিছু ছবি তুললেন। নানা চলে গেছেন অনেক দিন হলো। তার সাথে তোলা একমাত্র ছবি গুলো হারিয়ে ফেলেছি।

এখন শুধুই স্মৃতি। ছোট বাচ্চারা যখন মাঠে গিয়ে দোকানে বিভিন্ন কিছু কেনাকাটা করছিল তখন ফিরে গেলাম সেই দিনের কাছে। যেদিন আমিও বিভিন্ন প্রকার খেলনা কিনে হাত ভরে বাড়ি ফিরতাম। বিশেষ করে টমটম গাড়ি চালিয়ে বড়দের মাথা ধরিয়ে দিয়ে বকুনি খেতাম। কাগজের চরকা নিয়ে দৌড় দিতাম একপাক তা ঘুরনোর জন্য।

ঈদের চাঁদ দেখার জন্য সে কি প্রতিক্ষা। কত উদ্দীপনা। কত আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত ঈদের চাঁদ দেখে। চাঁদকে মেহেদী রাঙ্গানো হাত দেখানো। গ্রামের সকল ছেলেমেয়ে মিলে ঈদের চাঁদ দেখে হইচই করেতে কখন যে সন্ধা গড়িয়ে রাত নেমে আসতো তা ভুলে যেতাম।

বড়দের বকুনি খেয়ে বাড়ি ফিরতাম। ফিরার পর এবার প্রতিক্ষার পালা কখন বাবা নতুন জামা নিয়ে আসবে। কেন যে বাবা এতো দেরি করে ফিরতো এই দিনে। খুব রাগ হতো বাবার উপর। সকাল সকাল এলে কি এমন হয়।

তারপর বাবা যখন ফিরেন নতুন জামা নিয়ে। তখন সে কি উচ্ছলতা আমার। বাবা বলতেন গয়ে দিয়ে দেখ। আমি বলতাম- কাল সকলে পরবো। কিছুতে বাবা-মা রাতে পরাতে পারতেন না।

ঈদই যেন হতো না নতুন জামা না হলে। যদিও সব ঈদে নতুন জামা পেতাম না। বড় পরিবার। সবার আবদার রাখা যে কত কষ্টের ছিল এখন বুঝি। নতুন জামার না পাবার বেদনা ঈদের দিন কখন যেন হারিয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না।

আর্থিক ভাবে অতটা সচ্ছল না হলেও বড় পরিবারের জন্য এক-দুইটাকা করে হলেও তখন অনেক টাকা ঈদ পরবি পেতাম। যখন একটু বড় হলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন। কাঁচের গুলি খেলার ধুম পরে যেত ঈদকে কেন্দ্র করে। কারন এই একটি সময়ই এই খেলাটার সুযোগ পেতাম। অন্য সময় গুলি খেললেই পারিবারিক বিচারের কাঠগড়ায় কঠিন শাস্তি।

গুলি খেলা কেন অপরাধ আজও বুঝতে পারিনাই। এরপর দুরন্ত কৈশর। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হওয়া। কোথায় যাচ্ছি কি করছি কোনই ঠিক নেই। ঈদের আগের দিন পারার সকল ছেলেরা পুকুর ঘাট সুন্দর করে পরিস্কার করতাম অতি উৎসাহে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম মা-চাচীরা সবাই পিঠা, পায়েস ও বিভিন্ন মিষ্টি তৈরিতে ব্যস্ত। গরম পিঠা হাতে নিয়ে ঘুরতাম আর খেতাম। কিছুক্ষণ পর সবাই হই-হল্লা করতে করতে পুকুরে এক সথে গোসল করতাম নতুন সাবানের মোড়ক খুলে। গোসল শেষে পিঠা, মিষ্টি খেয়ে চলে যেতাম মাঠে। বাপ-চাচারা সাত ভাই আর আমরা চাচাতো-জেঠাতো ছয় ভাই এক সথে মাঠে যেতাম।

এখনও আমরা এক সথে মাঠে যাই সাতে ভাতিজা-ভাগিনাসহ আরো কিছু সদস্য বেড়েছে। তবে এখন বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী করার জন্য দুই-চারজন থাকতে পারেন না। ঈদুল আজহার দিন নামাজ পরে এসইে কুরবানি দেয়া দেখার জন্য দুরে দাড়িয়ে থাকতাম। গরুর পর্দা দিয়ে ঢোল তৈরী করে বাজাতাম। এখনও ঈদ আসে আগের মতই।

কিন্তু সেই চাঁদ দেখা, নতুন জামার প্রতিক্ষার প্রহর, টমটমগাড়ি, গুলি খেলা, পুকুর ঘাট পরিস্কার কিছুই হয় না। এখন ঈদে আগের মত আর বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার আসেনা। এখন ঈদ আমার কাছে মনে হয় একটা ছকে বাঁধা ফরমেটের মতো। কিছু আনুষ্ঠানিকতা। সেই উচ্ছাস, সেই উত্তেজনা, সেই নির্মল আনন্দ আর পাই না।

কেউ কি ফিরিয়ে দিতে পারে আগের মতো সেই ঈদ যা পেয়েছি শিশু-কিশোর বয়সে। আস্তে আস্তে মনে হয় ঈদ আনন্দ আরো কমে যাবে। তাহলে এটাই কি নিয়ম? নির্মল আনন্দের সময় কি শুধু শিশু-কিশোর বয়স।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.