আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড্রাগ কুরিয়ার-২



সিডনী কিংসফোর্ড স্মীথ এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে সাইমন বেশ দ্রুত গাড়ীর দিকে এগুতে গিয়ে হুট করে এক গাড়ীর পেছনে দাড়ীয়ে কেউ ফলো করছে কিনা তাদের দেখতে থাকে সেটা দেখে ডেভিড হাসতে হাসতে বলে ফ্লোরে পড়ে থাকা হেরোইন উঠিয়ে চলে এসেছি কেউ জানতেও চায় নি কি নিয়ে যাচ্ছো আর তুমি এখন ভাবছো কেউ ফলো করছে কিনা হা হা হা। তোমার নিজেকে কি জেমস বন্ড মনে হচ্ছে মায়ট। ডেভিডের কথা শুনে সাইমন কপট রাগের ভংগিতে বলে জ্যাক এসদের ব্যাপারে তোমার ধারনা নাই ডিক হেড। এইবার হাসি থামিয়ে হাটতে হাটতেই আবার ভাবনায় ডুবে যায় ডেভিড। জ্যাক এস বা পুলিশের কথা ঘটনার উত্তেজনায় প্রায় ভুলতেই বসেছিলো ডেভিড , এখন সাইমনের কথায় আবার মনে হলো।

কিন্তু এয়ারপোর্ট এ এত পুলিশ কাস্টমস অফিসার ছিলো অথচ কেউ কিছু বললো না ঠিক যেনো কোথাও কিছু হয় নি। সেদিন বাসায় ফিরে সাইমনই লকস্মীথ ডেকে তার বাসার দরজার চাবি বানাবার ব্যাবস্থা করেছিলো। লকস্মীথ আসতে আসতে সিডিনীর ড্রাগ দুনিয়া নিয়ে অনেক কথা বলছিলো সাইমন। তাদের আনা এই ড্রাগস কিভাবে আরো দশ হাত ঘুরে কিংস ক্রস এর বারে পাবে বিক্রি হয় সেই গল্প। কিন্তু ডেভিডের মাথায় তখনও ভারতের ছবি ঘুর ঘুর করছে কোলকাতার গম গম শব্দ, হাত পা ভাংগা ভিখারিদের ভিক্ষা করা, চারিদিকে মানুষ আর মানুষের ভিড়, হোটেলের বেয়ারাটার সহজ সরল হাসি সব কিছু ছাপিয়ে তার মনে একটা প্রশ্নই এসেছে এ কষ্ট করে মানুষ বেচে থাকে কিভাবে।

সাইমনের একটা কথাও তার মাথায় ঢোকেনা। দরজা খোলা হলে ভেতরে ঢুকে সোজা ফ্রিজ থেকে বোতল আর গ্লাস নিয়ে বসে তারপর কখন যে ঘুমিয়ে যায় টের পায় না ডেভিড। পরদিন সকালে ডেভিডের ঘুম ভাংগে দুপুর বারোটার দিকে তার পাব ম্যানেজারের ফোনে আজ বিকেল থেকে তার কাজ শুরু করার কথা সে হলিডে থেকে ফিরেছে কিনা সেটা কনফার্ম করার জন্যই ম্যানেজার রিং দিয়েছে। বিকেলে যথারিতি আবার সেই মিউজিক আর গ্লাসের টুংটাং শব্দ যেনো কিছুই বদলায় নি। পরিচিতরা জানতে চায় হলিডে কেমন কাটলো , মেয়েরা জানতে চায় শপিং কেমন হলো।

সবাইকেই হ্যা ভালো জাতীয় উত্তর দিয়ে কাটিয়ে যায়। আস্তে আস্তে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে ডেভিড এর মাঝে সাইমন এসে একদিন একটা হলুদ খাম দিয়ে যায় তার পারিশ্রমিক হিসেবে। মাস দুয়েক পর তার পাবের এক কাস্টমার পিটার প্যান একদিন হঠাত জানতে চায় সে কোনোদিন ভারতে গিয়েছে কিনা। পিটার প্যান কে ডেভিড সবসময়ই বেশ রহস্যময় মানুষ হিসেবে মনে করেছে সব থেকে বেশি টিপস দেয়ার কারনে। সেই পিটার প্যান তার সাথে ভারতের কোন অংশ কেমন সেই নিয়ে আলোচনা শুরু করে।

হাসতে হাসতেই পিটার প্যান বলে দক্ষিন ভারত অনেক সুন্দর তবে উত্তর ভারতে বেশ ভালো মানের হেরোইন পাওয়া যায়। তার কাছ থেকেই ডেভিড জানতে পারে পাকিস্তানি এজেন্ট ধরতে পারলে আরো অনেক ভালো মানের হেরোইন সস্তায় কিনে এনে অস্ট্রেলিয়া বেচতে পারলে কাপল অফ ট্রিপে মিলিওনেয়ার হওয়া ব্যাপার না। হেরোইন বিষয়ক আলোচনায় ডেভিড চুপ করে শোনে পিটার প্যান এর কথা এবং মনে মনে হিসাব কষে দেখে সাইমন তাকে অনেক ঠকিয়েছে অথবা সাইমন নিজে ঠকেছে। তারা আরেকটু খোজ খবর নিলে আরো অনেক লাভ করতে পারতো। রাতের বেলা শিফটের শেষে তার ম্যানেজার তাকে একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে পিটার প্যানের সাথে বেশি মিশতে নিষেধ করে কিন্তু ডেভিডের চোখে তখন কাপল অফ ট্রিপ আর মিলিওনেয়ার হবার স্বপ্ন।

সপ্তাহ দুয়েক পর আরেক রাতে পিটার প্যান তাকে বাজি ধরার টাকা দিয়ে পাঠায় বাজি ধরতে পাশের ক্লাবে সাথে মোটা অংকের টিপস। ফিরে আসলে নানা বিষয় আলোচনার মাঝে লম্বা ঝাকরা চুলের প্রায় তারই সমবয়সি এক ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় পিটার প্যান তার নাম জ্যাসন। সেই সাথে এটাও যোগ করে জ্যাসন ভারত যাচ্ছে সামনের সপ্তাহে সাতদিন থাকবে সাতদিনে যাওয়া আসার খরচ দিয়ে তিরিশ হাজার ডলার এর কন্ট্রাক্ট। ডেভিড কে অবাক করে দিয়ে পিটার প্যান জানতে চায় সে আগ্রহী কিনা। মনে মনে ফাক ইয়াহ বলে লাফ দিয়ে উঠলেও বাইরে শান্ত ভাব ধরে রেখে জানতে চায় কত দেবে তাকে।

জ্যাসন এর সমান এমাউন্ট শুনে একটু ভেবে কাল জানাবো বলে চলে আসে ডেভিড। পরদিন সাইমনের বাসায় যেয়ে হাজির হয় ডেভিড এটা সেটা কথার পর তার ওভারসিসের পরিকল্পনার কথা জানতে চায়। সাইমন জানায় তার কোনো আপত্তি নেই ডেভিডের ব্যাবসায় । তার কন্টাক্ট অনেকদিন থেকে কিছু বলছে না আর এইসব ট্রিপ ঘন ঘন দিতে নেই পুলিশ একেবারে কাঠালের আঠার মত লেগে থাকে পেছনে সেই কারনেও সাইমন আগ্রহী নয়। সেদিন রাতেই পিটার প্যান কে তার সম্মতির কথা জানায় ডেভিড।

পরদিন তার বাসা থেকে পাসপোর্ট নিতে আসে জ্যাসন ক্যানবেরা যাবে ভারতের ভিসা নিতে। সিডনী থেকে ক্যানবেরা বেশ কাছেই মাত্র তিন ঘন্টার ড্রাইভ তার বাবার সাথে বহুবার গিয়েছে ডেভিড। ক্যানবেরার কথা শুনে তার মায়ের কথা মনে পড়লো ডেভিডের অনেকদিন তার মায়ের সাথে যোগাযোগ নেই। আগে তার মা রাতের বেলা ফোন করে খোজ খবর নিতো খেয়েছে কিনা কাজ কেমন চলছে , আবার পড়াশুনা শুরু করবে কিনা, কোনো মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে কিনা , বাবার সাথে শেষ কবে কথা হয়েছে ঠিক মনে করে উঠতে পারে না ডেভিড। গেলো ক্রিসমাসও বাড়ীতে কাটিয়েছে ডেভিড কিন্তু চাপা স্বভাবের কারনে বাবার সাথে ঠিকমত কথা বলা হয়ে ওঠেনি।

নাহ এবার এর ট্রিপ থেকে এসেই বাবার সাথে কথা বলতে হবে ভাবে ডেভিড। এর মাঝে একদিন রাতের শিফট শেষে পাবের পার্কিং লটে পিটার প্যান আর জ্যাসন এসে হাজির। ডেভিডের হাতে পাসপোর্ট আর টিকেট দিয়ে জানায় সামনের শনিবার টিকেট কনফার্ম করা হয়েছে। সে যাবে সিংগাপুর হয়ে দিল্লি সেখানে তাকে রিসিভ করবে এন্ড্রু নামের একজন। এন্ড্রুই হবে তার লোকাল কন্টাক্ট সেই সব ব্যাবস্থা করে দেবে ডেভিড শুধু তার কাপড় এর সাথে কয়েকটা ব্যাগ নিয়ে আসবে।

অহ আরেকটা সমস্যা হয়ে গেছে জানায় পিটার হোয়াটস আপ জানতে চায় ডেভিড ফাকেন জ্যাসন এর বউ সিরিয়াসলি প্র্যাগনেন্ট তাই সেই ফাকহেড যেতে পারবে না। ঘাবড়ানোর কারন নাই এন্ড্রুই সব ব্যাবস্থা করবে আর অস্ট্রেলিয়ান কাস্টমস এ আমার লোক আছে কোথাও সমস্যা হলে তোমাকে ব্যাকাপ দেবার মত ক্ষমতা আমার আছে জানায় পিটার। নো ওয়ারিস মায়ট বলে আশ্বস্ত করলেও মনের ভেতর আবার সেই প্রথম ট্রিপের ফিলিংস টা কেনো যেনো ফিরে আসছে বারবার ডেভিডের। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.