আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তরুণী, গন্তব্য আর জোনাকি



১. তরুণী : রিক্সা ছুটছে। এই শহরের একটি ব্য্যস্ততম সড়ক ধরে। রিক্সার গন্তব্য এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। আরোহীনি বুঝতে পারছে না – তার গন্তব্য কোথায় ? রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলল, ভাড়া মিটিয়ে উল্টো পথে হাটা ধরল। ভাবছে কোথায় যাবে ? কিভাবে পার হবে সময় ? পা চলছে তার আরো শত যানবাহনের ভিড়ে আর মানুষের গুঞ্জনে।

তবু তার মন যেন ইতিউতি খুজে ফিরছে – পথের শুরু ! সত্যি বলতে সে থমকে গেছে, সময়ের পাকচক্রে, নিজের হেয়াঁলীর জালে। তাইতো উদ্দ্যেশ্যহীন তার চলা। ঘন্টা-খানেক হাটার পর একটা সাইনবোর্ডে তার দৃস্টি স্থির হল। রাস্তার পাশে ফুটপাথের উপর অটোমোবাইলের দোকানের পাশ ঘেষে নির্জন সিড়ি বেয়ে উঠে এল দ্বিতীয় তলায়। থাই গ্লাস ঠেলে প্রথম এমন জায়গায় প্রবেশ করল।

- সাইবার ক্যাফে। ধিমি আলোর ঘর জুরে অনেকগুলো কম্পিউটার ছোট ছোট খোপের মধ্যে। অনির্দিস্টভাবে কোণার একটি খোপের দিকে এগুলো সে। এরপর প্রায় প্রতিদিন আসতে লাগল, একটি নির্দিস্ট প্রহরে। কিছু ঘন্টা কাটতে লাগল – আলো আধাঁরীর ওই রুমে।

এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর আবার এক ঘেয়েমীতা ঘিড়ে ধরল তাকে। ঘড়ির কাটা চলে, তবু সময় যেন থমকে থাকে – এই অস্থির তরুণীর মত। ছুটল আবার তরুণ প্রান বৈচিত্রময়ী সময়ের সন্ধানে ! ২. গন্তব্য : আবার ছুটলো রিক্সা, পার হল কত রাস্তার, কত মোড় ! দৃষ্টি ছুড়ে দেখে ফিরছে ফুটপাথের জীবন, বাক্স-বন্দি মানুষের চলাফেরা – যেন জীবন্ত আর্ট গ্যালারী ! এ সবের ভীড়ে শুধু তার নিজের ছবিটাই সে খোঁজে পায় না। কে জানে – হয়ত খোজেঁও না ! শহরের বড় রাস্তা ধরে হেটে, ঝলমলে শপিং মল ঘুরেও কোন কিছুই তাকে আকর্ষন করে না। শুধুই একটি ছায়া হয়ে ফিরছে নিজেকে ভুলতে ! একদিন ক্ষণিকের জন্যে সে এক সঙ্গী পেল – পথিক সঙ্গী ।

সেই কিছু মূহুর্ত যেন নীরব সঙ্গীত হয়ে বাজছিল। দীর্ঘ পদ-ভ্রমনে আধেক শহর ঢু-মারল দু জোড়া পা। অদ্ভুত সময়ের দেখা পেয়েও হারিয়ে ফেলল তরুণী। পথিক হয়ে উঠা সেদিনের সেই গানে সে জানল মানুষও চড়ুই হয় ! এবার যেন পথও তার কাছে দূর্বিষহ! ক্লান্ত প্রাণ বাহিরের মায়া ছাড়িয়ে ঘরে ফিরল। আবারও এক চড়ূই কথা সঙ্গী হল।

থমকে থাকা অস্থির সময়ে সেই কন্ঠ একটু বেশি জানতে চায়, একটু বেশি শুনতে চায়। কিছুটা বিরক্তি আর অনেকটা শ্রোতা হয়ে সময় কাটানোর নতুন বাহানা পেল – সময়ের বন্দিনী। ক্রমশ অপরিচিত কন্ঠটা তার সময় হয়ে উঠল, আর সময়ের পাজরে ডানা গজাতে লাগল। এই বন্ধুত্বের সুর মায়া ছড়াতে শুরু করল। শব্দের শক্তি তরুণীর অস্থিরতা শুষে নিচ্ছিল।

এই সব কিছুর উষ্ণতায় ব্যস্ত হতে থাকল জমাট সময়। স্থির হতে লাগল অস্থিরতা যত। কন্ঠটি হয়ে উঠেছিল তরুণীর দিনপঞ্জি। মায়া ছড়ানো সুর একদিন ভাষা পেল, স্বপ্নের দোয়ার খোলে ঝাপ্টা হাওয়ায় উড়তে লাগল সে প্রাণ, খোঁজে পেতে শুরু করল – পথের শুরু। ৩. জোনাকি : আত্মমগ্ন তরুণী উড়তে উড়তে এতো দূর এগিয়ে গেল যে, গানের সুর কবে থেমে গেছে খেয়ালও করল না ! মুঠোফোন খোঁজে দেখল – নতুন কোন শব্দ ভেসে উঠে না ! কান পেতে শুনতে গিয়ে বুঝল – সুরের মায়া কেটে গেছে।

কেউ একজন দিকভ্রষ্ট তরুণীকে পথের দিশা দেখিয়ে আবার মিলিয়ে গেল – এই শহরে লক্ষ চড়ুইয়ের ভিড়ে। হারিয়ে গেল তার মায়া জড়ানো সুর কিচিমিচি গুঞ্জনে। তরুণী জানল, এই শহরের কোলাহলে চড়ুই মুখোশে জোনাকিও থাকে। যারা নিঃসঙ্গ পথিকের পথ চলার শক্তি জুগিয়ে – ফের পথেই লুকায়। আজো তরুণী রিক্সার আরোহীনি হয়, দৃপ্ত মনে পথিক হয়ে উঠে রোজ – গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সময়ের সাথে সন্ধি পেতে সু-স্থির প্রাণ ঘরের বাইরে পা দেয়। ক্যান্টিনের প্রিয় কোণার টেবিলে বসে নিজেতে মগ্ন হয়, নিজের সাথে কথা কয় আর এই অদ্ভূত শহরের প্রেমে পরে। যখনি কোন নিঃসঙ্গ পথিকের আওয়াজ পায় – জোনাকি মুখোশে ঋণ শোধানোর চেষ্টায় নিমগ্ন হয় !

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।