গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
নতুন পাঠক, প্রথমেই আপনাকে স্বাগতম জানাই, ছোট ছোট ছোটগল্পের জগতে। ধারাবাহিকভাবে এখানে ছোট ছোট ছোটগল্প প্রকাশিত হবে। প্রতিটি গল্প ২০০ শব্দে লেখা। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, এই পরিমাপ নির্ধারণের মূল কারণ গল্পের আকারকে একটা নির্দিষ্ট সীমায় বাঁধা। ছোট ছোট ছোটগল্প ঠিক কী মাপের হবে, কতটুকু আকৃতি হলে একটি গল্পকে ছোটগল্পের চেয়েও ছোট বলবো - এইসব ভাবনা থেকেই ২০০ শব্দের সীমানায় গল্প লেখার প্রয়াস।
কবিরা ছন্দের অনেক সীমানায় মেনেও মহত্তম কবিতা লিখেছেন, সনেট তো একদম কঠিন নিয়মেই আঁটা! কাজেই ছোট ছোট ছোটগল্পের ২০০ শব্দের সীমারেখা স্বচেষ্ট নিরীক্ষায় নিজের লেখনীকে যাচাই করার প্রবণতাও বলা যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে চাই ‘ছোট ছোট ছোটগল্প’-এর ধ্বণিগত বৈচিত্র আমার ভাল লাগে। তাছাড়া এমন লোভও হয়, একদিন হয়তো এই রকম সহস্র গল্প লিখে ‘ছোট ছোট ছোটগল্প’-এর আঙ্গিকটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। কাজেই, ‘অনুগল্প’, ‘ক্ষুদ্র গল্প’ ইত্যাদি কোন শিরোনাম নয়, আমার এ গল্পগুলোর ‘ছোট ছোট ছোটগল্প’ শিরোনামটি গৃহীত হোক সে আশা করি।
১. সমুদ্র দর্শন
একেকটা ঢেউয়ের সে কি মাতলামি! মজার ব্যাপার কী জানো, আমি একটু সৈকতে দাঁড়িয়েছি আর হঠাৎ একটা ঢেউয়ের ঝাপটা এসেই ফিরে গেলো আর আমার মনে হলো পায়ের নিচ থেকে পৃথিবী সরে যাচ্ছে।
ঢেউগুলো ফিরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বালুকে টান দেয় আর বালুতে দাড়াঁনো আমাকেও টান দেয়।
কিন্তু তুমি সমুদ্রে নামোনি?
না।
নামতে ইচ্ছে করেনি!
তবে শোন সে গল্প -
তখন রাত্রি। সব কাজ সেরে হোটেলে ফিরে ঘুমাবো। কিন্তু ঘুম আর আসে না।
ভাবলাম, কাছেই সমুদ্র, যাই গিয়ে বসে থাকি। তারপর একা একা চলে গেছি সমুদ্রের কাছে।
বা!
বাহ্ নয়, সে এক ভয়ংকর ব্যাপার।
কেন?
সমুদ্র অনেক বড়, তার কোন কূল-কিনারা নাই, ঠাঁই নাই। তার ডাক উপেক্ষা করা খুব কঠিন।
দিনের বেলা তবু পারা যায়। তখন আলো থাকে, মানুষ থাকে, কোলাহল থাকে। একা পেলে রাতের বেলা সমুদ্র এমন করে তোমাকে ডাকবে যে তোমাকে তার কাছে যেতেই হবে।
বা, গেলে ক্ষতি কি!
ওই যে বললাম, সমুদ্র অনেক বড়, ও তোমাকে এমন করে জড়াবে যে তুমি আর তোমাকে পাবে না। তাই বলি, সমুদ্রে একটু পা ডুবিয়ে এসে তুমি সারা জীবন গল্প করতে পারো, আমি সমুদ্র দেখেছি।
সমুদ্রের আঙ্গুল ছুঁয়েই খুশি থাকতে পারো। কিন্তু খবরদার, সমুদ্রের বুকে যেও না।
তাহলে তুমি কী করেছিলে?
আমি? দৌঁড়ে হোটেলে ফিরে এসেছি।
তারপর?
টিভি ছেড়ে দিয়ে একটা বিয়ার খুলে বসেছি।
২. পূর্ণিমাতে সাগর সিনান
দিন তারিখ মেপে অবশেষে তারা কক্সবাজার পৌঁছে যায়।
সন্ধ্যার আলসেমি ফুরিয়ে গেলে রাত্রি নামে। তখন তাদের মনে আনন্দ আর ধরে না! এক বন্ধু বলে- এমন পূর্ণিমা আর পাওয়া যাবে না, চলো বন্ধু বেরনো যাক, চলো জ্যোৎøা-øান করি।
তারা চার বন্ধু, সঙ্গে মল্লিকা। চার বন্ধু যতো খুশি মল্লিকা তারচেয়ে অনেক বেশি খুশি। নগরীর খাঁচা ছিঁড়ে সমুদ্রের বুকে যাবে বলে ছুটে এসেছে সে।
ইচ্ছেমতো কবিতা লেখার স্বাধীনতা মনে নিয়ে চার বন্ধুর হাত ধরে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসে মল্লিকা। পূর্ণিমা ঢেলে দেবে কবিতার সুধা!
রাত্রি বাড়ে। পূর্ণিমা গাঢ়তর হয়। সমুদ্র পোয়াতি হয়। সৈকতে কাঁকড়া হেঁটে যায়।
চার বন্ধুর সঙ্গে মল্লিকা গান ধরে, মদ খায়। নেশা জমে উঠে। চার বন্ধু বড়ই পুলকিত হয়। মল্লিকাও খুশি। শালা, এমন রাত্রি আর জীবনেও আসবে না- ভাবে সকলেই- অতএব নিঃশর্ত ফূর্তি হোক আজ।
আনন্দ আদিম হয়ে ওঠে। আগুন জ্বালানো হয়। পুরুষেরা প্রাচীন হয়ে ওঠে, মল্লিকা একাই রমণীকুল। আর দেখো, মল্লিকার শাড়িতে জ্যোৎøা ও বালু লুকোচুরি খেলে। দু’বন্ধু মল্লিকার বুক হাতড়ায়, অন্যেরা নিজেদের শিশ্ন।
আবার বদলী রীতিতে অবস্থান পাল্টে যায়। সবচেয়ে পুরনো কায়দায় নারী-পুরুষের শিৎকার জমা হয়।
সৈকত ভারী হয়ে ওঠে। ভোর এগিয়ে আসে ধীরে। সূর্য ওঠে।
বন্ধুরা ক্লান্ত হয়। মৃত মাছের মতো সৈকতে চিৎ হয়ে থাকে ওরা।
নেশা আর এ জন্মের মতো কাটে।
দূরে পুলিশের গাড়ি দেখা যায়।
৩. পালকের গল্প
পাখির গায়ে লেগেছিলাম আমি।
কেমন করে যেন খসে পড়েছি। পড়তে পড়তে আমি ঠাঁই পাই এক বাঁশ ঝাড়ের পায়ের তলায়। আর পাখি উড়ে গেলো দূরে। আমি পড়ে থাকলাম একা।
অনেকদিন পর একটি বালক আমাকে কুড়িয়ে পেলো।
তখন ছিলো শীতকাল। বালকটি দূরবীন হাতে ঘুরছিলো। কুয়াশায় ভেজা আমার শরীর। প্রথমে তার জুতার নীচে চলে গেলাম আমি। বালক পা উঠাতেই আমাকে দেখতে পেলো।
দেখতে পেলেই বা কী! অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে আমার সেই রঙ হারিয়ে গেছে। আমি জানতাম কেউ আমাকে নেবে না। সে-ও আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছিলো, কিন্তু কী যেন কি ভেবে আবার ফিরে এলো! আমাকে উঠিয়ে নিলো। তার সরু দুই আঙুলের আদরে পরিষ্কার করলো আমাকে। তারপর তার ডায়রির পাতায় শুইয়ে আমাকে নিয়ে এলো ঘরে।
সেই থেকে আমি এই ঘরে আছি। আরও কয়েকজন ঝরা পালকের সঙ্গে আমি একটা ফুলদানীতে গলা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। সারাদিন যায়। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। আমরা কয়েকজন পালক সন্ধ্যার অপেক্ষায় দিন কাটিয়ে দেই কোনভাবে।
সন্ধ্যায় বালকটি ঘরে ফিরে এসে সব খুলে দেয়। তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই আমি। কিন্তু শান্তি পাই না। কেননা, রাত বাড়তেই আলো নিভিয়ে জোরে গান ছেড়ে বালকটি বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদে, প্রতিরাতে কাঁদে।
আর বালকের কান্নায় আমার মনে পড়ে, পাখির শরীর থেকে খসে গেছি আমি আর পাখি একবার আমার দিকে না-তাকিয়ে উড়ে গেছে দূরে, অনেক দূরে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।