আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের গ্রেফতারকৃত এ তিন নেতাই মুক্তিযুদ্ধের সময় বক্তৃতা-বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতের 'দালাল' 'চর' 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' আখ্যা দিয়ে 'খতম' করার আহ্বান জানান।


ওদের বিরুদ্ধে যত মামলা জামায়াতের গ্রেফতারকৃত শীর্ষ তিন নেতার মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবারই প্রথম গ্রেফতার হলেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এর আগে দু'বার ও মুজাহিদ একবার গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেন। নিজামী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১৮ মে পুলিশ তাকে মগবাজারের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। একই বছরের জুলাই মাসে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি দুদকের দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। একই মামলায় হাজতবাস করেন আলী আহসান মুজাহিদ। নিজামী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতাত্যাগের পর পল্টনের সহিংস ঘটনায় একটি এবং কয়েক মাস আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় শিবিরকে হুকুম দেওয়ার অভিযোগে পৃথক একটি মামলা রয়েছে। উভয় মামলায় তারা জামিনপ্রাপ্ত। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীর হলফনামা অনুযায়ী মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে।

সব মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। নির্বাচনের পর তার বিরুদ্ধে আরও সাতটি মামলা দায়ের হয়। নিজামীর বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা ১০টি। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগের অভিযোগে কেরানীগঞ্জে একটি মামলা রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে মামলা রয়েছে। মামলাটি গত বছর দায়ের করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা, জাকাতের টাকা আত্মসাৎসহ মোট সাতটি মামলা রয়েছে। সব মামলাই বর্তমানে বিচারাধীন। সাঈদী তার নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো মামলা হয়নি।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীর হলফনামায় আলী আহসান মুজাহিদ উল্লেখ করেন, তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন। জননিরাপত্তা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তিনি খালাস পান। বাকি মামলাগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ফৌজদারি অপরাধে ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে আরও চারটি মামলা দায়ের করা হয়। যত অভিযোগ জামায়াতের গ্রেফতারকৃত এ তিন নেতার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফৌজদারি অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে।

এ তিন নেতাই মুক্তিযুদ্ধের সময় বক্তৃতা-বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতের 'দালাল' 'চর' 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' আখ্যা দিয়ে 'খতম' করার আহ্বান জানান। মাওলানা নিজামী মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে 'বদর দিবস, পাকিস্তান ও আলবদর' শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, '...দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানের কিছু মুনাফিক (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের (ভারতের) পক্ষ অবলম্বন করে ভেতর থেকে আমাদের দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করেই পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে; শুধু পাকিস্তান রক্ষার আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালিয়েই এ পাকিস্তানকে রক্ষা করা যাবে না। ' তিনি এ লেখার মাধ্যমে বদর বাহিনীকে আক্রমণাত্মক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদনে (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান, মাসে দু'বার এ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে পাঠানো হতো) উল্লেখ করা হয়, একাত্তরের ১৪ জুন জামালপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় নিজামী বলেছিলেন, ইসলাম রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় নিজামীকে বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একই রকম ভূমিকা ছিল আলী আহসান মুজাহিদের। তিনি ছিলেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম সংগঠক।

১২ আগস্ট ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। '৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ২৫ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সম্মেলনে মুজাহিদ 'পাকিস্তানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান' (২৬ অক্টোবর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম) ১৯৭১ সালের বদর দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সকর্তবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু লোক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী কাজ করছে। জনগণ তাদের সম্পর্কে সচেতন। ' তিনি এদের খতমের আহ্বান জানান।

(৮ নভেম্বর ১৯৭১, দৈনিক আজাদ)।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.