আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান...

"এই বিংশ শতাব্দীতে আলো আঁধারের আরেক রকম মানে, যেখানে সূর্যের আলো বা প্রদীপের ব্যবহার নেই; সেখানে অন্ধকার..."

এমন দিনে মনে বর্ষা ভর করে। বাইরের আনমনা হাওয়া দোল দিয়ে যায় পুরাতন স্মৃতিতে...স্কুল শেষ করে কারো অপেক্ষায় গলির মোড়ে অপেক্ষা করা মনে পড়ে...স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখার কথা মনে পড়ে...স্কুলে না গিয়ে সারাদিন মাঠে কাটিয়ে দেয়ার কথা মনে পড়ে। জীবন মানে একটা চলন্ত ট্রেন। ট্রেনটার জ্বালানী কতটুকু চালক জানে না। সে শুধু জানে তাকে ছুটতে হবে...কোন রাস্তায় তা বেছে নেয়ার অধিকার তার আছে।

সব রাস্তার শেষেই লুকিয়ে আছে নিদারুণ হতাশা। সে-ই হতাশাকে আলিঙ্গন করবার নিয়তে তবুও নিয়ত ভ্রমণ। নিজেকে সে-ই দিকভ্রান্ত চালক বলে মনে হয় মাঝে মাঝে। মাঝে মাঝে চলতে ইচ্ছে করে না, চুপ করে বসে থেকে ফেলে আসা পথের মায়া মাখতে ইচ্ছে করে। আজ থেকে আরো দু’দশ বছর পর হয়তো আজকের এ রাতটাকেও মধুর মনে হবে...হৃদয়ে বাঁধিয়ে রাখার মতো।

এই পুরাতন শহরের অলিগলিতে ঝরে পড়া বৃষ্টির কণা’য় হয়তো অমরতা পায় রাতগুলো; এমনি করে। মন পড়ে বহু পুরাতন দিনের কথা। এমন বর্ষার দিনে আশপাশের সমবয়সীদের চিৎকারে খুব সকালবেলায় ঘুম ভাঙতো সবসময়। দল বেঁধে যাওয়া হতো মাছ ধরতে, আমাদের গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে একটা ঝিলের মতো ছিলো। তার উপর ছোট্ট কালভার্ট; দু’শ গজ ছাপিয়ে আরেকটা।

বর্ষার সকালে ছোট জাল নিয়ে কালভার্টের নিচে বয়ে যাওয়া স্রোতে নেমে পড়তাম। বর্ষার ঢলের সাথে পানির তোড়ে অনেক মাছ ভেসে আসতো, পুঁটি, মলা, কই, টাকি এমনকি মাগুরও...কারো কারো কপাল পুড়তো ঝুম বৃষ্টিতে। বর্ষার জল আগুন ধরিয়ে যেত তাদের ভবিষ্যতে...কপাল পোড়া সে সব গৃহস্থের মাছগুলো বর্ষার জলে নেমে আসতো পুকুর ছেড়ে। সে-ই সব বড় মাছের কোন একটা যদি ধরা পড়তো কারো জালে তা নিয়ে চলতো উন্মত্ত উল্লাস। ঘটনা ছড়িয়ে পড়তো বারুদের মতো, বিভিন্ন জায়গায় মাছের আশায় উঁত পেতে থাকা মৎস্যশিকারীরা মিছিলের মতো জাল পেতে দিতো সে-ই জায়গায় যেখানে ভাগ্য কাউকে বড় উপহার দিয়েছে।

অর্থহীন এসব কথা মনে পড়ে...মনে পড়ে কদম ফুল। প্রতি বর্ষায় এই একটা বিষয় নিয়ে আমাদের রোজ ঝগড়া হতো। আমাদের মানে আমাদের, আমার আর আপুর। অপু-দূর্গার মতো দু’জনে মিলে রোজ বিকেলে কদম ফুলের কাছে টেনে নিয়ে যেতাম বড় কাউকে...খুব কষ্ট করে সে হয়তো একটা ফুল পেড়ে দিতো...সেই নিয়ে তুমুল ঝগড়া হতো দু’জনার। ঝগড়ার শেষদিকে আমরা কদমের পাঁপড়িগুলো ভাগ করে নিতাম...হাতের মুঠোয় পাঁপড়িগুলো নিয়ে সারাটা বিকেল ঘুরে বেড়াতাম এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি।

কী দারুণ সব দিন আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। শুধু এই বর্ষাটুকুই রয়ে গেছে আগের মতোই। আপু এখন এ শহরেই থাকে। যেখানে বসে লিখছি সেখান থেকে বাসে মিনিট বিশেকের পথ হয়তো। মুখোমুখি দেখা হলে আমরা অনেক গল্প করি, আমাদের সম্ভাবনার কথা, আমাদের হতাশার কথা।

ছোটবেলার গল্পগুলো দু’জনে মিলে কখনো করি না। হয়তো লজ্জায়, হয়তো ভয়ে...স্মৃতিটুকু হাতড়ে বেদনা জাগাবার ভয়। এই উত্তাল বর্ষায়ও আমার মনে ভয় উঁকি দেয়...এতদিন ধরে চালিয়ে আসা ট্রেনটা যদি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.