আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোকটির ব্যক্তি হয়ে ওঠা

সামুদ্রিক বিভ্রম

লোকটি হাঁটছিলো। না, ‘লোক’ নয়, ‘ব্যক্তি’টি হাঁটছিলো- ঠিক যেন পথিক। অর্থাৎ লোকটি পথিকের মতো হাঁটছিলো। বঙ্কীম বাবু হলে হয়তো বলতেন, পথ হারাইয়াছ বাছা? কিন্তু আমি পথিকের চিন্তায় ব্যাকুল নই। আমি ভাবছি হারামজাদাটা এই ভরদুপুরে এখানে এভাবে ঘুরছে কেন! বিষয়টাতো বেশ সন্দেহজনক।

নাহ্, একে ব্যক্তি বলা যাবে না; ‘সন্দেহজনক’ শব্দটির সাথে ‘লোকটি’ শব্দটিই যথাযথ। ১. লোকটি যখন জীর্ণ মাদার গাছটির নিচে এসে দাড়ালো (দারুণতো, ‘লোকটি’ ‘গাছটি’ কেমন মিলে গেল!) অমনি আশ্চর্য এক দৃশ্যের অবতারনা ঘটলো: অ্যানিমেটেড সিনেমার দৃশ্যের মতো গাছটির শীর্ণ কাঁটাগুলো আরো স্পষ্ট আর তীক্ষ্ণ হতে লাগলো, দাউদাউ আগুনের মতো গাছটির সমস্ত ডাল লাল ফুলে ভরে উঠলো। আর কী আশ্চর্য, লোকটির লুঙ্গির প্রতিটি রিপুর দাগ গুচ্ছগুচ্ছ মাদার ফুল হয়ে জ্বলতে লাগলো আমারই চোখের সামনে। ২. পুকুর পাড়ে বসে হারামজাদাটা কী ভাবছে? এ চিত্রকল্পটি ভাবতে ভাবতেই লোকটি এসে সত্যি সত্যি ডোবার পাড়ে এসে বসলো। ডোবাটি ব্যবহৃত হয় হাসপাতাল পাড়ার ডাস্টবিন রুপে।

ফলে এখানে জমে উঠে, পঁচে উঠে, আমের খোসা ও আটি, মাছের কান্কা, মড়া বেড়ালের ছানার সাথে মানুষের অসম্পূর্ণ ছানার ছাইপাশও। সেই নোংরা যায়গায় লোকটি বসলো বেশ আয়েশ করেই। হারামজাদার বসার ভঙ্গিটাতো অশ্লীল- হাঁটুর বেশ উপরে লুঙ্গিটা তুলে রেখেছে, তার উপর বাম হাতটা যথাস্থানে ঢোকানো, বেশ উদাস ভঙ্গিতে চিপায় চুলকাচ্ছে। আরামে হারামজাদাটার চোখ বুজে আসছে। কিন্তু একি! চুলকানি সংক্রান্ত ক্রিয়াকর্ম সেরে লোকটি যেই ডোবার দিকে তাকালো অমনি ডোবাটি পরিণত হলো গেলে টলটলে জলের স্বচ্ছ দীঘিতে।

সেখানে একটি পানকৌড়ি ডুবসাঁতার খেলছে আপন মনে। ৩. এবার লোকটিকে এনে দাঁড় করায়ে দিলাম বিধ্বস্ত এক হাইব্রীড মাঠে। দেখি হারামজাদাটা এবার কী করতে পারে। ওমা, বদমায়েশটা মাঠের দক্ষিণ কোনায় গিয়ে বসে পড়লো স্মরণীয় ভঙ্গিতে। পানি বিয়োজন শেষে যেই সে উঠে দাঁড়ালো, কঙক্রিটের মাঠ ভরে গেল জ্যোৎস্নাঘন সবুজ ঘাসে।

সেখানে এখন মাঝে মাঝে পেঁচা কাঁধে নিয়ে বৈকালিক ভ্রমণে বের হন কেউ কেউ। ৪. লোকটাকে আমি শেষমেশ রাস্তায় এনে ছেড়ে দিলাম। সে পাশের টি’স্টলে ঢুকে একটা বিড়ি ধরালো এবঙ যথরীতি তার সেই জ্বলন্ত বিড়ি থেকে ধুঁয়ার বদলে কলকল করে এক ঝাঁক শিশু হামা দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল অনতি দূরে অপেক্ষমান একটি কিণ্ডার গার্টেনের দিকে। ৫. অতঃপর সে পুনরায় পথিক হয়ে গেল। মানে শহরের সব চেয়ে ব্যস্ততম সড়ক ধরে নির্বিকার হাঁটাহাটিতে মন দিল।

তাকে তখন অবিকল রূপসীবাংলার মতো দেখাচ্ছিল। একবিংশ শতকের ট্রাক তাকে চাপা দিতে উদ্যত হতেই মুহূর্তে সেটি পরিণত হয়ে গ্যালো ব্যালেনৃত্যরতা সুনীল রাজহাঁসে- এ দৃশ্যটি অবশ্য আমি নিজে দেখিনি। আমারই এক postmodernist বন্ধু একটি হলুদ ব্যাঙের চোখে এ দৃশ্য দেখেছিলো মেডিকেলের হিমড্রয়ারে বসে। ০৩-০৫-১৯৮২ অবশেষে সুহৃদ ডাক্তারবর্গের আপত্তির কারনে লোকটি একদিন ভুল-রোগে ভূগে মারা গেলো। এবং এটি ছিলো লোকটির ব্যক্তিগত মৃত্যু।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।