আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"আমার সোনার বাংলা....আমি তোমায় ভালবাসি"

সবার উপরে মানুষ সত্য!

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশ কিছু খারাপ খবরের মধ্যে একটা হলো বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক আনিসুল হকের একটি কলাম "কেন রুখে দাঁড়াতে হয়? " কলামটা পড়েই ব্যাপক মেজাজ খারাপ হয়ে গেল [সেই সাথে আরেকটা দুসংবাদ.....বাসচাপায় বুয়েট ছাত্র নিহত, ক্যাম্পাস এলাকায় বাস ভাঙচুর] । তাই কিছু না লিখেই পারলাম না...মাথা ঠান্ডা করার অন্যতম উপায় হলো লেখা-লিখি করা। আনিসুল হক সাহেব উনার এই লেখার মাধ্যমে কিছু জিনিস তুলে ধরেছেন....যার সারমর্ম হলো এইরূপ: হিন্দী টিভির অনুষ্ঠানগুলো আর ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদের প্রিয় বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে....আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানে হিন্দী নাচ-গান এবং ঈদের বাজারে ভারতীয় পোশাক [লাহেঙ্গা, চলী, মাছাক-কালী] বহুল প্রচলিত। যেইখানে হবার কথা ছিল পল্লীবন্ধু জসিমউদ্দিনের গান আর মেয়েদের কেনার কথা ছিল আমাদের বাঙালি শাড়ি অথবা তাঁত বস্ত্র। কিন্তু কেন এমন হলো না? এর আগে জেনে নেই আমাদের নিজেদের অবস্থা এবং বহির্বিশ্বের কিছু কেচ্ছা!! ১) আমরা কবে আর কখন 'ব্রাদার্স ইউনিয়ন' আর 'মোহামেডান' এর মধ্যে ফুটবল খেলা বা তার ফলাফল কি তার কোনই খবর রাখি না....অন্য দিকে খবর রাখি বার্সেলোনা/মানচেস্টার ইউনাইটেড আর রিয়াল মাদ্রিদ এর খেলার খবর ।

২) আমরা খবর রাখি না 'ঢাকা ডাইনামাইটস্' আর 'রাজশাহী রেন্জা্রস' এর মধ্যেকার টি২০ খেলার......অন্য দিকে ঠিকই খবর রাখি 'কলকাতা নাইট রাইডার্স' আর 'রাজস্থান রয়েলস্' এর খেলার খবর। ৩) আমরা খবর রাখিনা আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর আর সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজ এর চলচ্চিত্র 'মন বসে না পড়ার টেবিলে' কবে শুভ মুক্তি পাচ্ছে [বরং আমরা হাসাহাসি করি]...কিন্তু ঠিকই খবর রাখি কবে আমির খান এর '3 Idiots' [আপনারা কি খেয়াল করেছেন যে একটি হিন্দী চলচ্চিত্রের নাম ইংরেজিতে রাখা হয়েছে] মুক্তি পেতে যাচ্ছে অথবা কবে টম ক্রুজের পরবর্তী চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে। ৪) আমরা সেই জাতি যে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দেই আবার রাস্তার মোড়ে মোড়ে ইংলিশ মাধ্যমের স্কুল খুলে বসে থাকি....চাকরির প্রতিষ্ঠান আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংলিশে লিখি আর কথা বলারও চেষ্টা করি.....[আমি স্পেন আর জার্মানি তে দেখলাম উল্টা কাহিনী....আমি মাত্র ১ তা ইংলিশ মাধ্যমের স্কুল খুঁজে পাইছি এই ৯ মাসে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাত্র ৩/৪ টা বিষয় ইংলিশে পড়ানো হই তাও শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক পোলাপাইনদের জন্য আর চাকরির বাজারে ওদের নিজেদের ভাষা ছাড়া তো কোনই খাতির নাই]...তারা তো ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের মত কোনো আন্দোলন করে নাই? কিন্তু আমাদের আছে রফিক, জব্বার, সালাম আর আছে ইংরাজি ভাষা....!! ৫) আমরা বুয়েটের পোলাপাইন ১/২ না হইতেই GRE আর IELTS প্রস্তুতি শুরু করে দেই.....অনেকেই জার্মান, সুইডিশ, ইতালি আর ফরাসি ভাষা শেখাও শুরু করি......কিন্তু ইউরোপে তো কাহিনী দেখলাম উল্টা....এরা GRE এর কোনো পাত্তাই দেয় না। আজকাল 'ও লেভেল' আর 'এ লেভেল' এর পরীক্ষাও যেন একটা বিশাল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে...এমন ঢালাও ভাবে এইসব পরীক্ষা তো ইউরোপে দেখি না....তবে কেন বাংলাদেশে ?? ৬)আমরা ৫ মিনিট কথা বললে নিজের অজান্তেই ১০ তা ইংরাজি শব্দ উচ্চারণ করি....আমরা "কেদারা" কে 'Chair' বলি.....আমরা ১০ মিনিট কথা বলব কিন্তু কোনো ইংরাজি শব্দ উচ্চারণ করব না এমন খেলা খেলি বন্ধুদের সাথে......আমার স্প্যানিশ বন্ধুরা আমাদের বাংলায় কথোপকথন শুনে অবাক হয়ে বলে "তোমরা তো দেখি অনেক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার কর কথা বলার সময়....তাই তোমাদের সব কথা না বুঝলেও আমরা অনুমান করতে পারি কিছু কিছু"..... স্প্যানিশরা যদি সারাদিনও কথা বলে তবুও তাদের মুখ থেকে একটাও ইংলিশ শব্দ বের হবে না....এই হলো আমাদের বাঙালিপনা....! ৭) আমরা মুখে 'Nivea' আর 'Ponds' মাখি...শেভ করার সময়/পর 'Gillette' পণ্য ব্যবহার করি.....কৈ আমরা তো আমাদের দেশীয় পণ্য তিব্বত স্নো অথবা শেভিং ফোম ব্যবহার করি না...আমরা যেই ক্যামেরায় ছবি তুলি তা হয় নিকন/সনি....যে গাড়িতে বসি তা Toyota/Mercedes-Benz......কিছুই তো দেখি বাংলাদেশের না। ৮) আমরা দেশে উচ্চতর শিক্ষা নিতে চাই না.....একদা এক মুরুব্বি আমাকে বলেছিলেন "বাংলাদেশে আবার কেউ PhD করে নাকি ?".....কি যে লজ্জার বিষয়......আমরা বাংলাদেশে মাস্টার্স করার চেয়ে আমেরিকা/কানাডাতে করার জন্য দৌড় লাগাই.....বাংলাদেশের মাস্টার্স এর কোনই মূল্য নেই....মূল্য আছে উত্তর আমেরিকার মাস্টার্সের সনদের....! এই রকম হাজার উদাহরণ দেয়া যায়.....যেইখানে বাংলা অথবা বাংলাদেশের অনেক কিছুই মূল্যহীন....! আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এত সব কিছুতে আমরা যদি অন্য দেশের পণ্য অথবা ভাষাকে গ্রহণ করতে পারি তাহলে কেন আজ আমরা পারব না হিন্দী গান আর পোশাককে বুকে জড়িয়ে ধরতে? এইবার কিছু সত্যকে তুলে ধরি...যাহা নির্মম হলেও সত্য: ১) ২০০৯ সালের জুনে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল দিল্লির জাতীয় জাদুঘর ঘুরে আসার....ঐখানে গিয়ে আমি ইতিহাসকে নতুন করে জানলাম.....বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম দলিল হল "Instrument of Surrender (1971)"....যাহার মূল কাগজটি দিল্লির জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে....সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম কাগজটির উপরে লেখা "ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১"....বাপরে বলে কি? যুদ্ধ যে কে কার সাথে করেছিল আমি পুরাই হতবাক! আবার ওই দলিলে স্বাক্ষর করা আছে লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিত সিং অরোরা [যিনি ছিলেন এখন ভারতীয় নাগরিক এবং সামরিক কর্মকর্তা] এবং অপরজন যিনি স্বাক্ষর করেছেন তিনি হলেন লেফটেনেন্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি [যিনি ছিলেন এখন পাকিস্তানি নাগরিক এবং সামরিক কর্মকর্তা]।

ভাইরে, যুদ্ধ করলাম আমরা...৩০ লক্ষ বাঙালি জীবন দিল আর কোনো বাঙালির স্বাক্ষর নেই ওই দলিলে....এ কেমন কথা? আবার যুদ্ধের নামেও বাংলাদেশের কোনো চিহ্ন নেই....! [আমার নিজের হাতে তোলা দলিলটির ছবি এই কলামের শেষে যুক্ত আছে] তার মানে বলা যায়...বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের বিশেষ অবদান ছিল...তবে কেন আজ ভারতের কথা শুনলে আমাদের মনের মধ্যে ছ্যাৎ্ করে উঠে....?? ২) আমাদের জাতীয় সংগীত এর রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [জন্ম ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি]......আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম [জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে]। হাজার হোক উনারা বাংলা ভাষার মহান কবি....উনারা তো জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক ছিলেন.....কেন উনাদেরকে এতো মর্যাদা দিতে হবে বাংলাদেশে.....কি দোষ করেছিলেন আমাদের মহান কবি/সাহিত্যিক জীবনানন্দ দাশ [জন্ম বাংলাদেশের বরিশাল] অথবা পল্লী কবি জসীমউদ্দীন [জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর] অথবা মাইকেল মধুসূদন দত্ত [জন্ম বাংলাদেশের যশোর জেলায়]....!! আমার নিজের দেশের মাটির রত্নকে রেখে কেন বেছে নিলাম ২ জন ভারতীয় বংশভূতকে ?? কিসের কমতি ছিল জীবনানন্দ দাশ/জসীমউদ্দীন/মধুসূদন দত্তের....???? আমরা আমাদের অজান্তেই ভারতের পা চাটি আবার সুযোগ পেলেই ভারতকে বাঁশ দিতে ছাড়ি না.....! এই হলাম আমরা বাঙালি....!! ______________________________________________________________________________________________________ কিছু শেষ কথা: আমি মনে করি, আমার স্বাধীনতা আছে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তা বেছে নেয়ার....আমার যদি পূর্নিমা-সাকিবের চলচ্চিত্র দেখতে না ইচ্ছে করে তাহলে আমি শাহরুখ খান-কাজলের/টম ক্রুজ-এন্জেলিনা জোলির চলচ্চিত্র দেখব....আমার যদি লুঙ্গি পরতে ইচ্ছে না করে তাহলে আমি জিন্স পান্ট পড়ে থাকব....আমার যদি ভালো না লাগে তাহলে আমি রবীন্দ্র সংগীত না শুনে শাকিরার গান শুনব....![সমগ্র ইউরোপে / উত্তর আমেরিকায় প্রায় সকল Hollywood / Bollywood চলচ্চিত্র মুক্তি পায়...আমি চাই বাংলাদেশেও মুক্তি পাক....মানুষকে তার বেছে নেবার সুযোগ দিন.....ওই ধর্ম আর ঐতিহ্যের নামে গোঁড়ামি আর কতদিন....যার পছন্দ হবে না সে যাবে না দেখতে....!!] এখন এইটা প্রতিযোগিতা আর বিশ্বায়নের যুগ....ওই শত বছরের পুরানো দাঁত ভাঙ্গা সাহিত্য পড়ার সময় কারো নেই....এক রবীন্দ্র সংগীত আর কত শুনব....এখন সময় এসেছে নতুন কারোর জীবনানন্দ দাশ রূপে আবির্ভাবের ? বাংলাদেশে নগর পরিকল্পনা অধ্যয়ন এর ৫০ বছর [১৯৬০ সাল থেকে] হতে চলেছে....তবুও আজ কেন ঢাকা সারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বনিকৃষ্ঠতম বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে.....কই গেল আমাদের প্রায় ১০০০ জন বিজ্ঞ নগরপরিকল্পনাবিদেরা ?? কেন আজও বাংলাদেশ নিজস্ব প্রযুক্তিতে একটা গাড়ি অথবা ক্যামেরা বানাতে পারছে না...কই গেল আমাদের সব মেধাবী তড়িৎ/যন্ত্রপ্রকৌশলীরা ?? আমরা আসল কাজে লিপ্ত না থেকে মেতে আছি অন্য মানুষের পিছনে কাঁমড় বসানোর ধান্দায়.....কই জাফর স্যার কোন মেয়ের সাথে নাঁচলো [হায়রে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের জাত গেল রে]....[ইউরোপে যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথে উদ্দাম নৃত্য আর সুরা পান করা যায়....সেটা ইউরোপে যেমন কোনো বিষয় না হতে পারে, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো বিষয়....আমার মনে হয় জাফর স্যার এমন কিছুই করেন নাই], কই কিভাবে আমাদের বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করা যায়....এই হল আমাদের কর্মকান্ড !! নিজের দেশকে নিয়ে এতো সমালোচনা করতে কারোরই ভালো লাগে না.....আমারও লাগে না.....কিন্তু যখন দেখি ছাত্ররাজনীতির নামে নিরীহ কোনো ছাত্র তার নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষে কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে/গুলির আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় মরে পড়ে থাকছে [আর পরদিন ওই লাশ কোন দলের তা নিয়ে যুদ্ধ].....অথবা কোনো ছাত্র জনবহুল একটা রাস্তায় বাস এর চাপা খেয়ে মারা যাচ্ছে....তখন আর এই দেশ কে নিয়ে সমালোচনা করতে আমার দ্বিধা লাগে না...অকপটে মুখ থেকে সব কথা বের হয়ে যায়....!! [কই আমি তো ইউরোপের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নামক কোনকিছুই দেখলাম না....তবে কেন বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির এতও দরকার ??] ______________________________________________________________________________________________________ আজ খুব করে ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ছে....আমি তখন প্রথম শ্রেণীতে পড়ি....ঘড়িতে বাজে সকাল ৭:৩০ মিনিট.....আমরা সবাই স্কুলের মাঠে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছি.....আর মুখে একটা গান গাচ্ছি....."আমার সোনার বাংলা.....♫ ♫ ♫.....আমি তোমায় ভালবাসি......♫ ♫ ♫!!" আসলেই এদেশ আর এদেশের মানুষকে আমরা ভালবাসি....তাইত এত সমস্যা থাকা সত্বেও দেশের কোনো খারাপ খবর শুনলেই মনটাও খারাপ হয়ে যায়....!! আমরা কী পারি না এইসব জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাই মিলে একযোগে বাংলাদেশকে উন্নতির পথে টেনে নিয়ে যেতে ? আমরা কী পারি না অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজেকে একটু যাঁচাই করে নিতে ?? আমরা কী পারি না কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হতে ??? তাইতো আজকের দেশের এই সঙ্কোটকালে আমার ছোট্র একটা চাওয়া......ছোটবেলার সেই গানটাই আজ না হয় গেঁথে যাক আমাদের মনে-প্রাণে..........."আমার সোনার বাংলা......♫ ♫ ♫....আমি তোমায় ভালবাসি....♫ ♫ ♫"। ©বায়েস আহমেদ মুনস্টার, জার্মানি ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ রাত্র ১০:০৪ ঘটিকা


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.