আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিশ্চয়তার আতঙ্কে কোহিনূররা

নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডের মান নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক হিসেবে কাজ করতেন কোহিনূর বেগম। সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় গুরুতর আহত কোহিনূর নড়াচড়া করতে পারছেন না। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় চিত্ হয়ে শুয়ে আছেন। কোহিনূর আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না চিকিত্সকেরা। তাঁর মেরুদণ্ডে আঘাত লেগেছে।


আয় তেমন ছিল না বলে বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও সন্তান নেননি কোহিনূর। তার ওপর মা-বাবা ও দুই বোন তাঁর ওপর নির্ভরশীল। পঙ্গু হাসপাতালে এসে জানতে পেরেছেন তিনি গর্ভবতী। কোহিনূর বলছিলেন, লোকজন এখন টাকা পয়সা দিচ্ছে। পরে কী হবে জানেন না।

শুধু জানেন যে করেই হোক তাঁকে সংসার চালাতে হবে।
কোহিনূরের মতো সাভারের রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারা অথচ প্রতিবন্ধিতার শিকার শ্রমিকেরা এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে। এদের অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে, কেউ সারাজীবনের মতো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। মাঝে মাঝে সেই যন্ত্রণাকেও ছাপিয়ে উঠছে দুশ্চিন্তা।

তাঁরা জানেন না, ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিচালক খোন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভি জানান, ‘অনেক শ্রমিক বারবার অনুরোধ করেছেন হাত-পা না কাটার জন্য। জীবন বাঁচাতে আমাদের অন্য উপায় ছিল না। এদের অনেকের মাংসপেশি, রক্তনালি এমনভাবে থেঁতলে গিয়েছিল যে আর ঠিক করা যায়নি। আক্রান্ত জায়গায় পচন ধরেছিল।


হাসপাতালটিতে এখন চিকিত্সাধীন আছেন ৭২ জন। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিত্সকদের একটি দল সাভারে গিয়ে এদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। এঁদের ২৪ ঘণ্টা দেখভালের জন্য ৩০ জনের একটি দল কাজ করছে। চিকিত্সা সেবা নিয়ে কোনো অসন্তুষ্টি নেই আহত শ্রমিকদের, আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছেন কম বেশি সবাই। শঙ্কা শুধু ভবিষ্যত্ নিয়ে।


রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস এ কাজ করতেন শাপলা। তাঁর বাম হাত কাটা গেছে, পায়ের তিন জায়গায় ভাঙা, কোমরে রড ঢুকে গিয়েছিল আর মাথায় ধসে পড়েছিল ছাদ। শুধু ডান হাতটা বাইরে বের করতে পেরেছিলেন তিনি। প্রথম আলো ডট কমকে শাপলা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী টাকা দিয়ে গেছেন, বেতন পেয়েছেন, বিজিএমইএ থেকে একজন কিছু টাকা দিয়ে গেছে, অচেনা লোকজনও টাকা-পয়সা দিয়ে যাচ্ছে। ’ ‘ছেলে নিয়ে ঢাকায় থাকা অসম্ভব।

আবার বাড়িতে গিয়েই বা কী করব’—এমনই গভীর অনিশ্চয়তায় শাপলা কণ্ঠে।
পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকরা আর্থিক সহযোগিতা পেলেও রানা প্লাজায় দোকানপাটে যাঁরা কাজ করতেন তাঁরা খুব একটা সাহায্য পাচ্ছেন না। ময়নার স্বামী মো. আব্দুস সোবহান রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তাঁকেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় বাকি জীবন কাটাতে হতে পারে। পঙ্গু হাসপাতালে এই প্রতিবেদককে ময়না বলেন, ‘সকলে শুধু ব্যান্ডিজওয়ালাদের সাহায্য করতিসে।

তিনি তো কাপড়ে দোকানে কাজ করতেন। নড়াচড়া করতি পারেন না এখন। এক মেয়েকে স্কুলে পড়াতাম। ছেলেটা কথা বলতি পারে না। ডাক্তার দেখান লাগব।

প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এখানে খাবার কিনি খেতে হচ্ছে সবাইকে, বাড়ি ফিরবার টাকা হাতে থাকবি কি না! কী হবে জানিনে। ’
এমন অনেকে আছেন যাঁরা ভবিষ্যতের কথা এখনো ভাবতে পারেন না। পঙ্গু হাসপাতালের বাতাসে শুধু তাঁদের আহাজারি। কাটা বাম হাত আর অবশ বাম পা নিয়ে সারাদিন থেমে থেমে চিত্কার করছেন একজন, ‘ও আল্লাহ, ও আল্লাহ, ও বাবারে।

’ মাঝে মাঝে ধমকে উঠছেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দিনমজুর ভাইকে। কিন্তু করবেন তাঁর ভাই। অসহায় উদ্বেগ নিয়ে এমনইভাবে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন আহতদের স্বজনেরা। এই চরম দুঃসময়ে কে দেবে তাঁদের শুধু ভবিষ্যতে কোনোরকমে বেঁচে থাকার সামান্য আশ্বাস?।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.