আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকাপ - যার যার প্রথম ম্যাচে যা দেখলাম (ইতালী, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, জার্মানী, ইংল্যান্ড, নাইজেরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো)

সামু কি ছিল, আর কি হয়ে গেল !

বিশ্বকাপের মত এমন হাই টেনসন টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ থেকেই কোন দলের খেলা বিচার করা ঠিক না, প্রথম ম্যাচ আসলে টিম গুলোর ভুল শোধরানোর শেষ দিন। এই ব্লগটা তাই লিখবো না লিখবো না করেও লিখে ফেললাম, দেখি অন্য সবার মত কি আমার সাথে মেলে কি না। বাকি দুই ম্যাচে কেমন খেললো টিমগুলো, সেটা থেকে আমি আমার পয়েন্টগুলোও মিলিয়ে নিতে পারবো। ম্যাচ বাই ম্যাচ না লিখে টিম বাই টিম লিখি, শুধু ইম্পর্টেন্ট টিমগুলো নিয়েই। সাউথ আফ্রিকাঃ সবাই যেমন দুর্বল দল বলছিলো এদের কে, সে হিসেবে খুব একটা খারাপ খেলে নাই, যদিও সেকেন্ড রাউন্ডে যেতে পারবে কিনা এখনো নিশ্চিত না।

ডিফেন্স লাইন খারাপ না, ফরোয়ার্ড লাইন ও ফাস্ট আছে, সো সম্ভাবনা আছে। একটা জিনিষ, মেক্সিকো এক পর্যায়ে মিডফিল্ড পুরাই ডমিনেট করে খেলছে, এই পর্যায়ের খেলায় যেটা খুব গুরুত্বপুর্ন। আমার মতে, স্কিল দিয়ে যদি না পোষায়, শারিরীক সামর্থ কাজে লাগানো যায়। নাইজেরিয়া কিংবা ঘানা যে কাজটা করে (ওদের সাথে বডিট্যাকলে সবাই যেতে রাজি হয় না), সাউথ আফ্রিকান মিডফিল্ডও এই কাজটা করে দেখতে পারে। আর একটা যেটা, অপনেন্টকে আরো একটু বেশি অফসাইড ট্র্যাপের লোভ দেখানো, কাউন্টার এটাকের জন্য।

খারাপ হবে না, স্ট্রাইকারটা আসলেই বেশ ফাস্ট। মেক্সিকোঃ এটাকিং থার্ডে স্ট্রাইকারদের কাছ থেকে আর বেশি দরকার। ডি স্যান্টোস ভালো খেলছে, কিন্তু সেরকমটাই আশা করেছিলাম ভেলার কাছে। কার্লোস ভেলা অসাধারন প্লেয়ার এতে সন্দেহ নাই, ফ্রান্সকে ভালোই নাচাবে আশা করি। ফ্রান্সঃ এটা কোন বিশ্বকাপ জয়ী দলের খেলা হল? কি খেলল বুঝলাম না, দুই পাশদিয়ে বল নিয়ে অহেতুক দৌড়াদৌড়ি, কিন্তু অপনেন্ট বক্সে কেউ অফ দ্যা বল রান করল না! এমনো দেখলাম, উরুগুয়ের ডি-বক্স ফাকা, এনেলকা একা দাড়ায়ে আছে, আর গুরকাফ আর গোভু বক্সের বাইরে থেকে উলটাপালটা শট নিলো।

এটাক করতে না চাইলে কি কেউ পাত্তা দিবে? সাগনা, ডিয়াবি আর এভরা খারাপ করে নাই, এভরা তো দেখলাম ফরলানকে আটকাতেই বেশি ব্যাস্ত, ওভারল্যাপ রান কয়টা করছে? গোভু যে কবে ভালো খেলছে, আমি দেখি নাই। আমার মনেহয় গোভু কে বাদ দিয়ে সরাসরি মালুদা কে খেলানো উচিত, রি্বেরী ডানদিকে থাকবে। ডিফেন্সিভ মিডে টুলালান আর ডিয়াবী এনাফ, আর গুরকাফ আরো উপরে উঠে খেলুক। ৪-২-৩-১ এ এনেলকা সুইটেবল, শুধু রিবেরী আর মালুদা যেন আরো বেশি ডি-বক্সে ঢুকে। আর্জেন্টিনাঃ এদের খেলাটা মজা লাগছে আমার কাছে, মাঠের দুই দিকে দুই রকম খেলা হল।

মেসি আর তেভেজ ভালো খেলছে, এর মধ্যেও ম্যারাডোনা আর ভেরন চুনা লাগায়ে দিছে। প্রথমত, ভেরন যদিও বেশ কিছু ভালো পাস দিছে, কিন্তু প্রচুর বল হারিয়েছে পা থেকে। এটা ভেরনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব যে বল হারালে সেটা আবার দখলের জন্য ঝাপিয়ে পরা (যেটা বালাক করে, গাত্তুসো করে), কিন্তু এ ব্যাপারে ভেরনের কোন আগ্রহ দেখলাম না, ওর কাছ থেকেই নাইজেরিয়া বল নিয়ে অনেক এটাক করেছে। দ্বিতীয়ত, ভেরন আরে হিগুয়ান এর একটা সলিড স্পাইনাল পার্টনারশীপ দরকার মাঠের মাঝ বরাবর। হিগুয়াইন এতো রোমিং না করে পোচার হিসেবে খেলুক, তাহলে অপোনেন্ট ডিফেন্সের কিছু ম্যান মার্কিং ওর সাথে থাকবে।

মেসি আর তেভেজ যেহেতু নিচে এসে বল নিতে পারে, আর দুজনেরই সামর্থ আছে একক প্রচেস্টায় ডিফেন্স ভেঙ্গে গোলে শট নিতে, এরা দুইজন যত স্বাধীন খেলবে ততই ভালো। তৃতীয়ত, গুতিয়ারেজকে রাইট ব্যাকে না খেলানোই উচিত, উপর থেকে নিচে এসে ডিফেন্স করতে গিয়ে বাজে কিছু ফাউল করে। সে তো আর ডিফেন্ডার না। পরের ম্যাচে হয়ত ওটামেন্ডি অথবা বুরদিসো খেলবে, ভালো, কার কি মনে হয়েছে জানি না কিন্তু ম্যারাডোনা আর ২টা ম্যাচের মধ্যেই জানেত্তিকে মিস করা শুরু করবে এই পজিসনের জন্য। নাইজেরিয়াঃ এরা আরেক ফ্রান্স, অনেক সিলি ফাউল করেছে, আর মিডফিল্ড পুরাই ঘুমায়ে ছিলো।

ওবিসা বেশ ভালো এফোর্ট দিছে, কিন্তু ওই যে, সাপোর্টিং কাইকে পায় নাই। এভাবে খেললে সাউথ কোরিয়ার কাছেও হারবে নাইজেরিয়া। জার্মানীঃ এখনো পর্যন্ত বেস্ট খেলা দেখালো জার্মানী, ম্যান অসাধারন! শোল্ডার রান যেগুলা করেছে এরা, অস্ট্রেলিয়া কেন, খুব ভালো ডিফেন্স লাইনও বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ছোট ছোট কিছু পার্টনারশীপ গুলা ভালো কাজে দিয়েছে, যেমন, খাদিরা-মুলার, মুলার-ওজিল, লাম-মুলার আর লাম-ওজিল। লাম তো অসাধারন, মুলার আর ওজিল টুর্নামেন্টে আরো যাদু দেখাবে।

সেই হিসেবে কিন্তু জার্মানী বামদিক দিয়ে বেশী কিছু কাজ করে নাই। ব্যাডস্টুবার বেশী ওভারল্যাপিং করে নাই লামের মত, আর পোডলস্কি-ক্লোসা পার্টনারশীপ টাও এখনো ঠিক জমে নাই (পোডলস্কি এবার আরো নিচে নেমে খেলছে বলেই এই অবস্থা)। খাদিরার খেলা দেখে ইমপ্রেসড আমি, বালাকের রোল প্লে করা সহজ না একেবারে। খেলা শেষে একটা কথা মনে হয়েছিলো, সুয়াইনস্টাইগার এখনো চেতে নাই, চেতলে আরো ২০তা বুলেট আসতো মাঝমাঠ থেকে। তবে গতবার যা দেখেছিলাম, সুয়াইনস্টাইগার অনেক বেশী ম্যাচিওরড এবার।

অস্ট্রেলিয়াঃ কাহিল কে লোন স্ট্রাইকারে খেলানো অনেক বড় বোকামি লেগেছে, ও আর একটু নিচে এসে খেললে দলের জন্য ভালো হত। লোন স্ট্রাইকার হিসেবে কেনেডি বেস্ট, বল বক্সে নিয়ে প্যাচাতে পারলে কাহিল আর গার্সিয়া সুযোগ বানাতে পারতো। কাহিলের লাল কার্ড সব কিছু ভজকট বানায়ে ফেলছে, কুলিনা গ্রেলা এমার্টনের সাধ্য নাই কাহিলের অভাব পুর্ন করে। অস্ট্রেলিয়া এবার আগেই বাদ পরবে মনে হয়। ইংল্যান্ডঃ যদিও গ্রিনের দোষ ফাউ ফাউ একটা গোল খাওয়ার জন্য (ভুল সবাই করলেও এরকম বেসিক ভুল করা উচিত না), ইংল্যান্ডের আরো অনেক কিছু চেঞ্জ করার আছে।

গ্যারেথ ব্যারী কি নাই এবার, ল্যাম্পার্ডকে ওই জায়গায় খেলতে দিয়ে পুরা খেলাটাই নস্ট হয়ে গেছে, লাম্পার্ড না এটাকে যেতে পারছে, না ডিফেন্ড করতে পারছে। মিলনার যে কি খেলছে, বেচারা এই বিশ্বকাপে আর মাঠে নামে কিনা সন্দেহ আছে। জো কোলের অবস্থা কি এতো বাজে যে মিলনার আর রাইট ফিলিপ্সকে লেফটে খেলতে হবে? ব্যারীর জায়গায় ব্যারী থাকুক, খুব বেশি ক্যারিককে নামানো যায়, লাম্পার্ড আর জেরার্ড পাশাপাশি না, আর ল্যাম্পার্ডকে খেলাতে চাইলে লেফটে, ইনসাইড স্ট্রাইকার হিসেবে। রুনি-ক্রাউচ ঠিক আছে, গ্রীনকে বাদ দেয়া উচিত, আর উপায় না থাকলেও মনেহয় ক্যালামিটি ক্যারাঘারকে বারবার দেখতে হবে। নেদারল্যান্ড, জাপান, ক্যামেরুন আর কোরিয়ার খেলা দেখার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু আমার ইচ্ছার সাথে আবার বিদ্যুত বিভাগের ইচ্ছা মিলে নাই।

সবশেষে ইতালীঃ সেই একই ইতালি, বড় টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে খারাপ করবেই, তারপরও কোয়ালিফাই করবে। এই ইতালি খেলে বেশ ভালোই, আবার অনেক কিছু নাই। প্রথম হাফে তো বল পজেশন নিতেই বেশি ব্যাস্ত ছিলো, গোল খাওয়ার পরই তাদের খেলা অনেক উন্নতি করেছে। এটা একটা ভালো দিক, চাপে পড়লে এরা ভালো খেলে। বুফনের ইনজুরিটা আশা করি বড় কিছু না, হলে খবর আছে।

সেন্ট্রাল ডিফেন্সে ক্যানাভারোর হজবরল অবস্থা। হেডারের বল বেশ কয়েকটা মিস করেছে, কিছু জায়গায় ট্যাকলে গিয়ে স্টেপ মিস করেছে (এটা অবশ্য বৃস্টি মাঠের জন্যও হতে পারে)। জামব্রোত্তা আর কিইয়েলিনি ওকে, ক্রিসকিতোও খারাপ খেলে নাই উপরে গিয়ে, কিন্তু একটু ভালো রাইট উইঙ্গার আসলে ক্রিসকিতোকে বলে কয়ে নাচাবে। যে গোলটা হয়েছে, পুরা ডিফেন্সের দোষে, দুই জনের মাঝেথেকে একজন হেড করে কিভাবে! মিডফিল্ডে ডি রসি ব্রিলিয়ান্ট, বাট আরো বেশী শট নেয়া উচিত। মন্টোলিভো পিরলোর জায়গায় খুব একটা খারাপ করে নাই সেকেন্ড হাফে।

মারকিসিও কি করলো বুঝলাম না, টাইম পাস করতে আসছিলো মনে হয়। সবচেয়ে বাজে অবস্থা হল স্ট্রাইকার। গিলার্ডিনো একটা রহস্য, সিজার প্রান্দেলি ছাড়া আর কারো সাথে ভালো খেলে না, পুরাই ভুয়া। পেপে প্রথম হাফে খালি দৌড়াদৌড়ি করছে, বরং সেকেন্ড হাফে লেফট উইঙ্গারে ভালো খেলছে। আগের চেয়ে একটু নিচে নেমে খেলা, স্পীড দিয়ে মার্কারকে ভালোই নাচাতে পারবে।

আমার মনে হয় ৪-৩-৩ এর জায়গায় ৪-৪-২ খেলা ভালো, লিপ্পি একগুয়ের মত ৪-৩-৩ এর পিছে পড়ে আছে। নেক্সট ম্যাচে গিলার্দিনোকে বাদ দিয়ে পাজ্জিনি অথবা ডি নাতালে কে নামালে ভালো, ইয়াকুইন্তার সাথে স্ট্রাইক পার্টনারশীপের জন্য। পিরলো আর ডি রসি মাঝে থেকে দুই পাশে কামরানেসি আর পেপে খেলুক। লিপ্পি মিয়া যত সব অকাজ করছে, উইঙ্গার হিসেবে খেলার মত প্লেয়ার আনছে শুধু এই দুজনকেই। ৪-৩-৩ এর পিছে লাগছে, অথচ পুরা অদ্ভুত কারনে এই ফর্মেশনের তিন বেস্ট প্লেয়ার কাসানো, রসি আর গ্রসোকে নেয় নাই।

কি জানি ভাই, দিন শেষে লিপ্পিই ভরসা। আর একটা জিনিষ, বল উইনের পর যে থ্রি-ম্যান ট্রায়াঙ্গল করে ইতালি এটাকে উঠতো, সেটা এবার মাত্র একবার দেখলাম। যাই হোক, আর বাকি থাকে ব্রাজিল, পর্তুগাল, আইভরি কোস্ট, চিলি, স্পেন। এদের প্রথম ম্যাচ কাল পরশুর মধ্যেই শেষ হবে, তখন দেখি আর একটা পোস্ট লেখা যায় কি না। মতামত সুস্বাগতম।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.