আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মমতার উল্টোরথ

রাজ্য নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করে ক্ষমতা নেয়ার ঠিক তিন মাস পরে তৃণমূল সরকারের তৎকালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইকে চিঠি লিখে স্থলসীমানা খসড়া চুক্তিতে সায় দিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিবের দপ্তরে ফ্যাক্সে পাঠানো ওই চিঠি শনিবার আনন্দ বাজার পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
চুক্তির পক্ষে ব্যাপারে রাজ্যের সম্মতি চেয়ে ২০১১ সালের ১৫ অগাস্ট রঞ্জন মাথাইয়ের পাঠানো চিঠির (ডিও লেটার নম্বর ১৪৩৪০/এফ এস/২০১১) উত্তরে ২০ অগাস্ট পাল্টা চিঠি লেখেন সমরঘোষ।
১৭৬-সিএস/২০১১ নং স্মারকের ওই চিঠিতে স্পষ্টভায়ায় বলা হয়, “খসড়া চুক্তিতে রাজ্য সরকারের সম্মতির কথা আমি আপনাকে জানাচ্ছি। ”
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমানা নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর বিষয়ে চুক্তির জন্য খসড়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমর্থন চেয়ে রঞ্জন মাথাই চিঠি লিখেছিলেন।


রঞ্জন মাথাইকে ওই চিঠি লেখার তিন মাসের বেশি সময় আগে ২০১১ সালের মে মাসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নেয়।
মুখ্যমন্ত্রী এবিষয়ে সম্মত না হলে মুখ্যসচিবের পক্ষে এ চিঠি পাঠানো সম্ভব হতো না। কারণ কোনো সচিবই তার রাজনৈতিক ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের চিঠি পাঠাতে পারেন না।
মমতা কামাখ্যা মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার জন্য এই মুহূর্তে আসামে রয়েছেন।
তবে স্থলসীমানা চুক্তির জন্য গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ সংসদে সংবিধান সংশোধনের বিল উথাপনের উদ্যোগ নিলে তার বিরোধিতায় মুখ্য ভূমিকা পালন করা রাজ্য সভায় তার দলের এমপি ডেরেক ওব্রেইন বলেন, “সাবেক মুখ্য সচিবের ওই চিঠিতে প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা প্রতিফলিত হয়েছে।

তা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল না। ”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাম সরকার স্থল সীমানা চুক্তিতে সমর্থন করেছিল এবং ‘আমরা ক্ষমতায় আসার’ আগে রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাই জানিয়েছিলেন মুখ্য সচিব।
“এই চিঠিটি যখন পাঠানো হয়েছিল, তখন সবেমাত্র আমরা সরকারে এসেছি। চিঠির খসড়া তৈরি হয়েছিল আগের সরকারের সময়ই। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেই খসড়া অনুযায়ী চিঠিটি চলে গিয়েছিল এবং তার বক্তব্যে বাম সরকারের মতামতেরই প্রতিফলন।


বর্তমানে অবসরে থাকা মুখ্য সচিব সমর ঘোষ চিঠি দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “বিষয়টি নতুন মুখ্যমন্ত্রীর (মমতা) কাছে পেশ করা হলে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তির বিষয়ে সম্মতি দেন। ”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একজন প্রবীণ প্রশাসক। আপনি কি মনে করেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে চিঠি লিখেছি?
“আমি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তিনি সম্মতি দিয়েছিলেন। তাই আমি রঞ্জন মাথাইকে জানিয়েছি। ”
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসা তৃণমূল নেত্রী মমতা তখন স্থল সীমানা চুক্তির বিরোধিতা করেননি।

তার কারণ মনে করা যায়, চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল হস্তান্তর করলে পশ্চিমবঙ্গ যা দেবে তার চেয়ে বেশি জমি পাবে।
তখন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করলেও সীমানা চুক্তির বিরেধিতা করেননি মমতা।
গত সপ্তাহে সংসদে সংশোধনী বিল তোলার বিরোধিতা করতে তিনি তার দলের এমপিদের নির্দেশনা দেন। এমনকি বিজেপি আগে বিরোধিতা করলেও বিল তোলার সময় বিরোধিতা করেনি।
বিজেপি এখন মনে করে, চুক্তি হলে শুধু ছিটমহলের অধিবাসীরা উপকৃত হবে।

আর তা না হলে ভারতের বন্ধুপ্রতীম হাসিনা সরকারকে অসম্মান করা হবে।
আসাম ও কাশ্মীরের সাবেক গভর্নর এসকে সিনহা এবিষয়ে বিজেপিকে টলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আর তাই তারা বিলে সমর্থন না দিলেও বিরোধিতা করেনি।
বার্তাসংস্থা এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনহা ইসলামী জঙ্গিবাদীদের দমনে কঠোর ভূমিকা পালন করায় এবং ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে গুরুত্ব দেয়া হাসিনার প্রশংসা করেন।
এখন মমতা কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন বলে কংগ্রেস যা কিছুর পক্ষে তারই বিরোধিতায় নেমেছেন তিনি।

এর মধ্যে আগে সীমানা চুক্তির বিরোধিতা না করলেও এখন অবস্থান পাল্টেছেন।
মমতার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তৃণমূল নেত্রীর দাবি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের জন্য ২৫ হাজার কোটি রুপির বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ না দেয়ায় এবং তেলেঙ্গানার নতুন রাজ্য ঘোষণার মাধ্যমে দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে নতুন করে জীবন দেয়ায় ভারত সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ মমতা।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।