আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়া দুইটা কথা : আমি কেন এইবারও বাংলাদেশরে সাপোর্ট করুম?মডুরা আমার ব্লগের হেডে বাংলাদেশের পতাকা দাও!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

৯০ এর বিশ্বকাপের কথা কই। আব্বা একদিন একটা বিশাল পোস্টার আনিয়ে ঘরে টাঙ্গিয়ে দিলো। যেই আসতো বলতো,"এইটা হইলো ৮৬ ওয়ার্ল্ডকাপের ডেনমার্কের টিম। " আমি তখন চিন্তা করতাম আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হইয়া কেন ডেনমার্ক লাগাইলো।

তখন আবাহনী মোহামেডানের যুগ শেষের দিকে, মানে ঢাকার ফটুবলের অবনতি কেবল শুরু আরকি। যাই হোউক, মনে পড়ে প্রথম বিশ্বকপের সময় বাসায় লোকজন ভরে গেলো। আসলে তখন ফরিদপুরের খাবসপুর এলাকায় খুব কম লোকের বাসায় টিভি ছিলো আর এই খুব কম লোকের বাসায় টিভি থাকবার কারনে এলাকার যাদের বাসায় টিভি নাই তারা তারও খুব কম লোকের বাসায় টিভি দেখার সুযোগ পেতো। যথারীতি রাতের বেলা খেলাগুলো শুরু হতো আর চারিদিক থেকে লোক এসে মেঝেতে ভরে যেতো। আশ্চর্য্যের ব্যাপার আমাদের বাসায় কখনো চুরি হয়নি।

তবে আমার মা ব্রাজিলের সাপোর্টার হলেও বাসার সবাই এবং এলাকার অধিকাংশ মানুষ আর্জেন্টিনা। ৯০ এর বিশ্বকাপের যেই থিম সংটা আছিলো "টু বি নাম্বার ওয়ান" জর্জিও মারডর প্রজেক্টের গাওয়া , আমার কাছে মনে হয় বিশ্বাকপ ফুটবলের যত এন্থেম আছে তার সবার চাইতে বেস্ট এমনকি রিকি মার্টিন বা কুইনেরটার চাইতে। ম্যরাডোনা যখনই ক্যামেরুনের ডি বক্সে বল নিয়ে এগুতো তখনই সবাই হৈ হৈ করে উঠতো। কিন্তু সে খেলায় মনে হয় ম্যারাডোনার দল ২ গোলে হেরে যায়। কিন্তু তবু আমার মাঝে ম্যারাডোনা প্রীতি কমে নি।

স্কুলে গিয়ে পাশের শাহীন ভাইয়ের দোকান থেকে কত না ভিউ কার্ড কিনেছি, ম্যারাডোনa, মার্ক ভন বাস্টেন, রূড গুলিট, শিলাচীর ভিউকার্ড। ক্লাশে সবার সাথে একটা প্রতিযোগীতা থাকতো কার কত বেশী ম্যারাডোনার ভিউকার্ড আছে। তারপর কেউ আবার ঢাকা থেকে ছবি কিনে আনতো, কেউ আবার ৮৬ ওয়ার্ল্ড কাপের ভিউকার্ড এনে দুইটাকার জায়গায় ২০ টাকায় বিক্রি করতো। আমি তো তখন নাদান শাহ বাপের পকেট থিকা চুরি কইরা কিনতাম আর রাইতে বাসায় মাইর খাইতাম। আফসোস সেই বার ময়ারাডোনারা হাইরা ক্লিন্সম্যান লোথার ম্যাথুস গো টিম জার্মানী কাপ নেয়।

১৯৯৪ বিশ্বকাপেও চরম আশা নিয়া খেলা দেখতে বসলাম ম্যারাডোনার কিন্তু বেচারা এফিড্রিনে ধরা খাইয়া যখন বাইর হইয়া গেলো তখন গালাগালি শুরু করলো সবাই সেফ ব্লাটাররে। বললো সব ফিফার প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটারের দোষ, মনে পড়ে বাংলাদেশে নাকি হরতালও হইলো কোনো কোনো জায়গায়। আমি দুইরাইত কানছিলাম। তারপরের থিকা আমি পরানের আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করা ভুইলা যাই। ১৯৯৮ ওয়ার্ল্ড কাপের সময় রংপুর যখন যাই তখন দেখি ফরিদপুর ঢাকা কিছু না, বাংলাদেশে ফুটবল পাগল বইলা যদি কেউ থাকে তাইলে রংপুর।

কিন্তু আমি সেই যে খেলা দেখা ছাড়লাম আর বিশ্বকাপ দেখি নাই। তবে মাঝে মাঝে ঢাাক স্টেডিয়ামে যাইতাম খেলা দেখতে। তার আগে আরেকটা স্মৃতির কথা কই, ডানা কাপে ৯০ এর দিকে মনে হয়, বাংলাদেশীরা যখন বয়স ক্যালেংকারী কইরা পুলাপান গো হারাইয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হইয়া দেশে আইলো তখন ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আইছিলো ফরিদপুর আবাহনীর বিপক্ষে খেলনের লিগা। মনে হয় ফরিদপুর বাসী তাগো ফরিদপুর আবাহনীরে ৫ গোলে হারতে দেইখাও বখতিয়াররে কান্ধে তুইলা নাচছিলো। সেই নাচনের ঠ্যালা এতই ছিলো আমার বড় কাকা বাপেরে ভূগোল বুইঝাইয়া শীতের সকাল ৬ টার সময় উঠাইয়া স্টেডিয়ামে নিয়া যাইতো খেলা শিখাইতে।

মন চাইতো কাকাজানের দুই ঠ্যাং টান দিয়া মুরগীর মতো ফাইরা ফেলাই। শীতের সকালে ১৯ নম্বর বলে লাথ্থী মারলে পাও যা টাটাইতো এইডাও অহনো বুইড়া কালে অনুভব করি। যাই হোউক, ঢাকা স্টেডিয়ামে যখন খেলা দেখতে যাইতাম তখন আসলেই কিছু ফুটবল পাগল লোক দেখতাম। মনে হতো পারলে এরা চ্যায়ার ভেঙ্গে ফেলে। কিছু ক্ষন খেয়াল করলেই বুঝতে পারতাম আসলে ঘটনা কি, ব্যাটা বাজী লাগছে এবং চামে চামে যেই প্লিয়ারের বংশের পিন্ডি চটকাইতাছে খিস্তি খেউড়ে তার সাথে সে একটা গোপন ফিটিংও দিছে।

আমি শেষে খেলা বাদ দিয়া তার গালাগালি শুনতাম আর কান্ড দেখতাম। কত নতুন গাইল যে শিখছিলাম। জানি না তথ্যটা সঠিক কিনা, ১৯৭৮ এর দিকে ফিনল্যান্ড থেকে একটা দল আসছিলো বাংলাদেশে প্রীতিম্যাচ খেলবার জন্য। বাংলাদেশ নাকি সে খেলায় ৩-১ গোলে জিতেছিলো। আরও কিছু খেলার কথা মনে পড়ে, একসময় ঢাকা মাঠে সাব্বির যখন কর্নার কিক নিতো তখন একটা গোল হতোই।

কায়সার হামিদের হেড মানে গোলকী পাড়ের খাচারাম আত্মাছাড়া। মনে পড়ে একবার আবাহনী মোহামেডানের খোল দেখবার জন্য ঢাকা থেকে ফরিদপুর এসে বাসায় না গিয়ে সাউদ আন্কেল বাসায় এসে পড়েছিলো খেলা দেখতে। সেটা ১৯৮৬ এর কথা। তখনকার আবাহনী মোহামেডান মানে একটা টানটান উত্তেজনা। এলাকার ছেলেরা দুভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া।

কারো হাতে লাঠিসোটা কারো হাতে কিরিচ কারো হাতে ড্যাগার। আজকে যদি মোহামেডান হারে তাহলে এলাকায় সব আবাহনীর পোলাপান ঘর ছাড়া হবেই। আর আবাহনীর সাপোর্টাররা সেজন্য ডিফেন্স হিসাবে দল ভারী রাখা। সেরকম কোনো একটা সময়ে শুনেছিলাম এই খেলার জন্য তিতুমীর মার্কেটের মোড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো। তখন মানুষ ফুটবল বলতেই অজ্ঞান, বিকেল হলেই পোলাপান তাল তলার মাঠে বল নিয়ে, লাল দল আর নীল দল অথবা ঝিলটুলীর এসিমিলান।

না ভাই, তোরা যে যা বলিস ভাই, আমি বিশ্বকাপ হোক বা অন্যকিছু বাংলাদেশের সাপোর্ট করবোই। চান্স পাক কি না পাক। এমনও হতে পারে আমার মরে যাবার অনেক বছর পরে তারা বিশ্বকাপ খেললো, তাতেও দুঃখ নাই। তখন হয়তো দলে খেলবে না সাব্বির, কায়সার হামিদ, সালাউদ্দিনের মতো কেউ, সে খেলা দেখার জন্য বাবা, সাউদ আন্কেল, এলাকার পাগলা সেই সাপোর্টার তো দূরের কথা আমিই হয়তো বেচে থাকবো না, তাতে কি! দল বলতে বাংলাদেশ যত খারাপই খেলুক আর লোকাল টিম মানে মোহামেডান! আমি মরে গেলেও আর্জেন্টনা অথবা ব্রাজিল অথবা অন্য কোনো দেশের সাপোর্ট করবো না তারা যত ভালোই খেলুক না কেন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.