আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাটপিস বনাম সিনেমার রেটিং

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

আমাদের বাড়ির পাশে একটা সিনেমা হল আছে। এই সিনেমা হলে প্রায় সময়েই ইংরেজি সিনেমা চলে। যেহেতু সিনেমার প্রতি একটা টান আছে, মাঝে মাঝে ঢুকে পড়তাম। বেশির ভাগ ছবিই আজেবাজে ছবি, মাঝে মাঝে ভালো ছবি পাওয়া যেত। আর প্রতিটা ইংরেজি ছবির মধ্যে বোনাস হিসেবে থাকত বিশেষ কাটপিস।

সিনেমা চলছে, হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই শুরু হত বিশেষ কাটপিস। যেমন, আমি সানফ্লাওয়ার ছবিটি এই সিনেমা হলেই দেখি। নায়ক ও নায়িকার একটা জড়াজড়ি দৃশ্য আছে এক জায়গায়। খুবই স্বাভাবিক একটা দৃশ্য। দম্পতিদের প্রেম ও যৌন সম্পর্ক খুব স্বাভাবিকভাবে দেখানো হয়েছে।

কিন্তু এই দৃশ্যই ওই সিনেমা হলের কাটপিসের কল্যাণে একটি ভয়াবহ অশ্লীল দৃশ্যে পরিণত হয়েছিল। অনেক পরে ডিভিডিতে সান ফ্লাওয়ার সিনেমাটি দেখে আমি হতবাক। এত চমৎকার একটা দৃশ্যকে কিভাবে তারা নষ্ট করেছে। মূলত তাদের কাজ হল, ওৎ পেতে থাকা । যে কোন অজুহাতে এবং সুযোগে কাটপিস ঢুকিয়ে দেয়া তাদের কাজ।

সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, এই সব সিনেমার দর্শক স্কুল পালানো কিশোররা। অন্যদিকে গার্মেন্টেসের শিশু শ্রমিকরাও সুযোগ পেলে এই সব কাটপিসযুক্ত সিনেমা দেখছে। সিনেমাতে কোন দৃশ্য কে দেখতে পারবে, তার ভিত্তিতে সারা বিশ্বে সিনেমাকে রেটিং দেয়া হয়। সাধারণত শিশুদেরকে বড়দের সিনেমা দেখা থেকে বিরত রাখার জন্যই এই রেটিং সিস্টেম। যতটুকু জানি বাইরের দেশে সিনেমা হলগুলোতে বড়দের কোন সিনেমা দেখতে শিশুরা ঢুকতে পারে না।

রেটিং সিস্টেম কড়াকড়িভাবে পালন করা হয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সিনেমাতে রেটিং সিস্টেম বিদ্যমান। মূলত খোলামেলা দৃশ্য ও ভায়োলেন্সকে বিবেচনা করে সিনেমাকে রেটিং করা হয়। সিনেমা রেটিংএর সাধারণ ধরন অনেকটা এই রকম। ০১) শিশুদের উপযোগী সিনেমা ০২) সকল দর্শকদের উপযোগী সিনেমা ০৩) তার শিশুর উপযোগী কিনা সেটা বাবা মা নির্ধারণ করে দেবেন।

(প্যারেন্টাল গাইডেন্স) ০৪) কিশোরদের উপযোগী সিনেমা (১২ বছরের উপরে যাদের বয়স) ০৫) প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী সিনেমা (১৮ বছরের উপরে যাদের বয়স) তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম রেটিং সিস্টেম আছে। বিস্তারিত এখানে কিন্তু আমাদের দেশে কোন রেটিং সিস্টেম নাই। আমাদের দেশে কোন ছবি শুরু হওয়ার আগে বলে দেয়া হয় না এই সিনেমাটি কোন বয়সের দর্শকের জন্য উপযুক্ত। ফলে শিশুরা আজেবাজে সিনেমা দেখছে। আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মাঝে মাঝে এমন সব সিনেমা প্রদর্শন করে যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার অনুপযুক্ত।

সারা পৃথিবীর মতো আমাদের সিনেমারও একটা রেটিং সিস্টেম তৈরি করা দরকার। আমাদের দেশে যারা এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ তারা একটা গাইড লাইন তৈরি করে দিতে পারেন। সেন্সর বোর্ড কেবল সেন্সর সার্টিফিকেট দেবে না, সেই সঙ্গে সিনেমাটিকে রেটিংও করে দেবে। সিনেমা হলগুলোতে এই রেটিং সিস্টেমের ভিত্তিতে দর্শক নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার বড়দের জন্য উপযোগী সিনেমা হলেই কিন্তু সেটা অশ্লীল সিনেমা হয় না।

বরং অশ্লীল সিনেমা সেটাই যেটা কাহিনী ও পরিস্থিতি বহির্ভুত সুড়সুড়ি মার্কা দৃশ্যসহ তৈরি করা হয়। আমরা কোন নীতিমালা তৈরি করি নি বলেই আমাদের সিনেমা হলগুলোতে অশ্লীল কাটপিস চলে, সেই কাটপিস সম্বলিত সিনেমা শিশু কিশোররা দেদারসে দেখে। ফলে তারা নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অন্য দিকে অশ্লীল কাটপিস থাকে বলেই অনেক ভদ্রলোক পরিবারসহ সিনেমা হলে যায় না। অনেক মানুষ এই সব সিনেমা দেখা ছেড়ে দিয়েছে।

ভালো গল্প ছাড়া ভালো সিনেমা হয় না। সিনেমা প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে কাটপিস ব্যবহার আমাদের সিনেমা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। কাটপিস ব্যবহার করার চেয়ে বড়দের সিনেমা তৈরি করা অনেক ভালো। কাটপিসকে পরিহার করে রেটিং সিস্টেম আমাদের সিনেমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।