আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিচিতি

১২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম টিপরা) জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। এ অঞ্চল প্রাচীন বাংলার সমতট নামক জনপদের অংশ ছিল। মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অর্ন্তগত।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা গঠিত হওয়ার পূর্বে সরাইল পরগনা কার্যকর ছিল। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ রাজস্ব আদায় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার সৃষ্টি করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক কারণে সরাইল পরগনা কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে তার বিবরণ রয়েছে।

বাংলার বার ভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়া মসনদ-এ আলা ঈসা খাঁর বংশ পরিচয় থেকে জানা যায় ভারতের বাইশওয়ারা রাজ্যের এক যুবরাজ কালিদাস গজদানী সৈয়দ ইব্রাহীম মালেকুলউলামা (রাঃ) এর নিকট ইসলামধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খাঁ নাম ধারণ করেন। সোলায়মান খাঁ ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গে আগমন করেন। তিনি সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের পর থেকে সর্বপ্রথম সরাইল পরগনার জায়গীর প্রাপ্ত হন। সোলায়মান খাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠান বাহিনী মিথ্যা সন্ধির প্রস্তাবে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করে। এ সময়ে ঈসা খাঁর বয়স ছিল দশ বছর।

পরবর্তীতে স্বীয়প্রতিভা বলে তিনি ভাটীরাজ্যের এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হন। ভাটীরাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষায় ঈসা খাঁর সঙ্গে মোঘল বাহিনীর যাদ্ধ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈসা খাঁ সে সময়ে সরাইলে অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি ভাটীরাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি রূপে তাঁর শাসনকেন্দ্র সরাইল থেকে রসানার গাঁয়ে এবং সাময়িক ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জের জঙ্গল বাড়িতে স্থানান্তর করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এলাকা ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল।

১৮৩০ সালে সরাইল, দাইদপুর, হরিপুর, বেজুরা ও সতরকন্ডল পরগনা, ময়মনসিংহ হতে ত্রিপুরা জেলার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অর্ন্তগত হয়।

১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার পূর্ব পাকিস্তান অংশের নামকরণ হয় কুমিল্লা জেলা। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি মহকুমা শহর নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়। ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে।

এ জেলায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী উল্লাস কর (অভিরাম) দত্ত কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে আন্দামানে দীপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ ও গোপাল দেব প্রকাশ্য দিবালোকে তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.সি.বি স্টিভেনসকে তারই বাসগৃহে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৩০ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল হাকিম খাজনা বন্ধের আহ্বান জানান। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে চারজন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন যুদ্ধে শহীদ হন।

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ ম্যানেজার মি হ্যালিডের কুঠি সরাইল থেকে শহরের মৌড়াইলে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এটি ভেঙ্গে সরকারি অফিস ঘর করা হয়েছে। ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের সময়ে তাদের সামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে। শহরের বাণিজ্য কেন্দ্র আনন্দবাজার ও টানবাজার। আনন্দবাজার, টানবাজার, জগৎবাজার, মহাদেব পট্টি, কালাইশ্রী পাড়া, মধ্যপাড়া, কাজীপাড়া ও কান্দিপাড়া শহরের পুরাতন এলাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এ শহরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। ১৮৬৯ সালে শহরটি পৌরসভায় রূপান্তর হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এ শহরের উত্থান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.