আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়না

Somaoy Nai, Kaj Chai

আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অন্যতম ইস্যু। সেই আলোকে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনেই বলেছিলেন “জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের ম্যান্ডেট দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুর নিস্পত্তি করেছেন। ” এরপর আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলেন, শুরু হলো বাম-বামদের পক্ষ থেকে বায়বীয় প্রচারণা সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে মেনিফেস্টোতে করা ওয়াদা থেকে সরে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় বরং মানবতাবিরোধীদের অপরাধের বিচারের নামে তদন্ত সংস্থা, বিচারক ও আইজীবী নিয়োগ দেন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠে। শুরুতেই বিতর্ক ওঠে আন্তর্জাতিক মানদন্ড ও বিচারের নিরপেতা নিয়ে।

আর্ন্তজাতিক মানবতা বিরোধী ট্রাইবুনালের প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীদের মধ্যে দলীয় অনুগত আইজীবী নিয়োগ দেয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিব্রতকর অবস্থানে পরে সরকার। আওয়ামী ঘরনার আইনজীবিদের নিয়োগ দেয় সরকার এমনকি কয়েকজন দলীয় এমপিকেও তারা নিয়োগ দিতে ভুল করেন নি। যদিও তারা কয়েকদিন পরই তাদের দলীয় এমপিদের নিয়োগ বাতিল করেন। এরপর চলে আসে মতিন প্রসঙ্গ। বিতর্ক ওঠে মতিনের নিয়োগ নিয়েও।

যিনি তদন্ত সংস্থার প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করেন সমালোচনা ও চাপের একপর্যায়ে। এখন বিচারের দাবী উঠেছে ঐ মতিনের বিরুদ্ধেই। যে মতিন আর্ন্তজাতিক মানবতা বিরোধী ট্রাইবুনাল ২০০৯” কে জংলী আইন বলে মন্তব্য করেছিলেন। সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে যে, মতিন যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকুরীতে যোগ দেন এবং চাকুরী চালিয়ে গেছেন। অভিযোগ উঠে তার নিয়োগের জন্য রাজাকারদের সুপারিশ নিয়েও।

রাজাকারদের সুপারিশ নিয়ে পাকিস্তান সরকারে চাকুরীকালীণ সময়ে চাকুরী করা কী যুদ্ধাপরাধ নয়। যদিও তিনি বলেছেন, এটা নাকি উনি করেছেন তার “পরিবারের প্রয়োজনে” তাহলে যারা যুদ্ধাপরাধী তারাও বলছে তারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন তাদের পরিবারের প্রয়োজনেই। তাহলে এখন যদি তারাই দাবী তোলে মতিনের বিচারের। তখন এই মতিন কী বলবেন বড়ই শুনতে ইচ্ছে করে। তাহলে মতিনের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আর কী কোন প্রমাণের প্রয়োজন আছে।

যিনি প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের কে বলেছেন, তিনি রাজাকার ছিলেন না মুক্তিযুদ্ধও করেননি তবে মনে মনে মুক্তিয্দ্ধু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নতুন সংঙ্গা ‘মনে মনে মুক্তিযুদ্ধ’। আমরা এতদিন শুনে আসছিলাম মুক্তিযুদ্ধের মানে আমাদের নেতাদের অনেকে ভারতে বসে বিলাস বহুল হোটেলে প্রমোদ যাপনের ঘটনা, শুনেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধের মাঠে ঝাপিয়ে না পড়ে স্বেচ্ছায় পাকবাহিনীর কাছে গ্রেফতারি বরণ- এর নানা কাহিনী। এরপর নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রসিকিউশন টীমের প্রধান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপুকে নিয়ে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি মুক্তিযোদ্ধাতো ছিলেনই না বরং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীকে প্রধান কৌশলী নিয়োগ! বাহ! মজার! পেচাঁও না হেসে পারে না। কাদের বিচার করছেন কাদের কে দিয়ে। এ সমস্ত প্রমাণ পাওয়ার পর সরকারের উচিৎ এই গোলাম আরিফ টিপুদেরই প্রথমে বিচারের ব্যবস্থা করা। জনগণ এটাই চায়। গোলাম আরিফ টিপুর বিরোদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে যা জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধেও উঠেনি।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মন্তব্য, ‘কোথাকার কোন টিপু’। তিনি আরও বলেছেন “বাছুর দিয়ে যেমন হাল চাষ হয় না, তেমনি টিপুকে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল চলে না। ” এই কাদের সিদ্দিকী বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী থাকার প্রমাণ তুলে ধরেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জাফরুল্লাহ ও তাদের কোষাধ রংপুরের এমপি আশিকুর রহমানের আগে বিচার দাবী করেছেন। যারা নাকী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর সরাসরি দালালী এবং শান্তি কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে ভূমিকা পালন নিয়ে একাধিক আওয়ামী নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজ মেয়ে পুতুলের (সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) দাদা শ্বশুর এবং বর্তমান জনশক্তি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফদের বাবা ফরিদপুরের নূরু মিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এধরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাফাই গাইতে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন এভাবে- তার মেয়ের দাদা শ্বশুর নূর মিয়া রাজাকার বা শান্তিকমিটির কর্মকর্তা থাকলেও তিনি মানুষের কোন তি করেননি। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের সাথে তার পরিবারের গভীর এবং সুদৃঢ় সম্পর্কের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ধর্মের ঢোল বাতাসে নড়ের ন্যায় বলে ফেলেছেন তারই ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের বেয়াই প্রখ্যাত রাজাকার মুছা বিন শমশেরের প্রসংঙ্গে। যা অনেকেই জানত না। জাতি জেনেছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে।

প্রধানমন্ত্রী’র এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, তার দল, এমনকি তার পারিবারিক ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধ বা পাকবাহিনীর সাথে কোলাবরেশনের যে অভিযোগ তা সত্য। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দুটি সত্য বেরিয়ে এসেছে। সকল রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য যুদ্ধাপরাধী নন। তার এই বক্তব্যের সাথে জামায়াতের বক্তব্য মিলে যায়। জামায়াত বলছে ’৭১-এ তাদের দলীয় একটা রাজনৈতিক অবস্থান ছিল তবে তাদের দল বা দলের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত এমন কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন।

মতিন ও টিপু বিতর্কের পর নতুন মাত্রা পেয়েছে মতিনের জায়গায় যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেই সদ্য নিয়োগ পাওয়া তদন্ত সংস্থার প্রধান মেজর (অবঃ) শামসুল আরেফীনের বিরুদ্ধে। ডিজিএফআইতে চাকরি করার সময় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর কাছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি এ অভিযোগের কারণে তাকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়েছিল। তার এ গ্রেফতার সম্পর্কে নিজেও স্বীকার করেছেন। জাতির আজ প্রশ্ন কী কারণে এ ধরণের বিতর্ক।

আর কত বিতর্কের অপোয় থাকবে জাতি। বিতর্কের আর এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আর তাহলো বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী । যার পুত্রধন সাহাদাব চৌধুরীকে নিয়েও বর্তমান সরকারের মেয়াদে সৃষ্ঠ হয়েছে বিতর্ক। পলাতক থাকা অবস্থায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী থাকাকালীন আদালতে আত্মসমর্পণ না করে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয় সুদৃষ্টি বিবেচনায় দয়া পরবশ হয়ে সাজা মওকুফ করেছেন।

এই সাজেদা চৌধুরীর সুপুত্র সাহাদাব চৌধুরীর সে ঘটনা সকলের জানা। যাক সে কথা এই সাজেদা চৌধুরীর স¤প্রতিক সময়ে পাকিস্তানী সরকারের প্রতি পুরোন প্রেম নব চেতনায় উদ্ভাসিত হয়। কথায় আছে প্রেম নিবেদন করেছিলে তাই বলেকি আমি আমার দেহ দেব না। বিষয়টা ঠিক এমনই। বিএনপি মহাসমাবেশ থেকে সরকারের নানা সুকর্মের প্রতিবাদে মাত্র একদিনের হরতাল দিয়েছে।

এই হরতাল দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ২১মে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সম্মেলনে সাজেদা চৌধুরী বলতে ভুল করেননি যে, বিএনপি পাকিস্তানের কথায় হরতাল ডেকেছে। আসলে ওনারই ভাল জানার কথা কারণ, পুরাতন প্রেমিক বলতে কথা। ’৭১ এ যুদ্ধকালীন সময়ে কিভাবে একদিকে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবের তথা স্বাধীনতাকামী মানুষের সাথে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে প্রতারণার আর বিশ্বাসঘাতকতার নিষ্ঠুর ছলনা কীভাবে করা যায়। কথায় আছে না, “রান্না ঘরে কে? রে- আমি কলা খাই না। বাংলার জনগণ এ ইতিহাস হয়তো জানতো না।

কিন্তু সাজেদা চৌধুরীর এ বক্তব্যের পরপরই পত্র পত্রিকায় যুদ্ধকালীণ সময়ে পাকিস্তানিদের “আস্থা অর্জনকারী” তৎকালীন আওয়ামীলীগের ৮৮জন এমপির তালিকায় ৮৪তম স্থানে সাজেদা চৌধুরীর নামসহ প্রমাণপত্র প্রকাশিত হওয়ার ফলে সাজেদা চৌধুরীসহ আওয়ামীলীগের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। জাতি জানতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধে কার কি অবস্থান। এটা আরও পরিষ্কার হলো এ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। ’৭১ -এ দেশ যখন এক মহাসংকট কাল অতিক্রম করছিল ঠিক তথনই কারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে পাকসরকারের সাথে গোপনে আতাঁত করেছিল, এ দলীল তারই প্রমাণ।

এ দলীল আরও প্রমাণ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল আওয়ামীলীগ। পরে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আরো কয়েকজন নির্বাচিত হয় যাদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরীও ছিলেন। ১৯৭১ সালে ৭ আগষ্ট পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সাংবাদিক সম্মেলন করে ৮৮জন আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত এমপিকে এমএনএ নিশ্চিত করা হয়। যারা পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর আস্থাভাজন ছিলেন তাদের কেই এমএন এ বলা হয়। এরাই পাক সরকারের সাথে যুদ্ধকালীন সময়েও গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করেছিল।

এই তালিকায় আর যাদের নাম ছিল তারা পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল। এ তালিকায় ছিলেন মাওলানা আঃ রশিদ তর্কবাগিশ, আঃ মালেক উকিল, সালাউদ্দিন ইউসূফ, সৈয়দ কামাল বখ্ত, আসাদুজ্জামান খান, এ কে ফাইজুল, শওকত আলী খান, টাঙ্গাইলের আজমত আলী সিকদার, হাতেম আলী, বি চৌধুরী বাবা কফিল উদ্দিন চৌধুরী, সিলেটের ওবায়দুর রাজা চৌধুরী, নোয়াখালীর ওবায়দুল্লাহ মজুমদার উল্লেখযোগ্য। এ বিতর্কের শেষ কোথায়। সামপ্রতিক সময়ে বিতর্কের নতুন মাত্রা পেয়েছে বর্তমান সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম কে নিয়ে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে তিনিও নাকি রাজাকার পরিবারের সন্তান।

যুদ্ধপারধীদের বিচার চায় বাংলার মানুষ তবে এ সমস্ত দলীলীক প্রমাণে প্রমাণিত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, ঘরের শত্রু বিভীষণদের বিচার বাংলার মানুষের সাথে সাথে আওয়ামী সাধারণ সমর্থক নেতাকর্মীরাও চায়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.